×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

মহিলাদের হার্টের অসুখ

হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-08 15:30:57

সম্প্রতি সারা পৃথিবীতে হৃদরোগ মহামারির আকার দেখা দিচ্ছে। প্রচলিত বিশ্বাস এই যে হৃদরোগ প্রধানত পুরুষদের বেশি আক্রমণ করে। মহিলাদের মধ্যে সংখ্যাটা নাকি কম। সাধারণ বিশ্বাস আরও হওয়ার প্রবণতা পুরুষদের তুলনায় বেশি তবে ঘটনা হল এটাই যে তিনজন মহিলার মধ্যে একজন কোনো না কোনো একটি হৃদরোগ শিকার হন।     রোগের আগ্রাসন সমগ্র বিশ্বে ৮.৬ মিলিয়ন মহিলা হৃদরোগে প্রতি বছর মারা যায়। এই মৃত্যুহার মহিলাদের সামুগ্রিক মৃত্যুহারের এক-তৃতীয়াংশ। ৩ মিলিয়ন অর্থৎ ৩০ লক্ষ  মহিলা স্ট্রোকজনিত কারণে মারা যায়। স্টোকে মহিলাদের মৃত্যুহার ১১ শতাংশ, যেখানে পুরুষদের মৃত্যুহার ৮.৪ শতাংশ। অর্থাৎ পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের মৃত্যুহার বেশি। প্রতি বছর হার্ট অ্যাটাকে মহিলাদের মৃত্যুহার যেখানে ৪২ শতাংশ, সেখানে পুরুষদের মৃত্যুহার ২৪ শতাংশ। উল্লেখ্য,৩৫ শতাংশ মহিলা হার্ট অ্যাটাকের পর পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে পুনরায় হার্ট অ্যাটাকের পর পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে পুনরায় হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন। মহিলাদের রজঃনিবৃত্তির পর করোনারি হার্টের অসুখ তিনগুন বৃদ্ধি পায়। হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকেন তাদের অধিকাংসই পুরুষদের অপেক্ষা তুলনামূলক বেশিদিন হাসপাতালে শয্যাশয়ী থাকেন। পঞ্চাশ বছরের কম বয়সী মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুহার পুরুষদের দ্বিগুণ। ভারতে যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৩ লক্ষ মহিলা হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়, সেখানে তার ছ’ গুণ স্তনের ক্যানসারে মৃত্যু বরণ করে। অপরদিকে আরও ৩০ হাজার মহিলা প্রতি বছর হার্টের (কনজেস্টিভ হার্ট) ক্রিয়া বন্ধের কারণে মারা যায়। যা সমগ্র হার্টের ক্রিয়া বন্ধের মৃত্যুহারের ৬২.৬ শতাংশ। উল্লেখ্য, আমাদের সমাজে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের হার্টের অসুখে পরিচর্যার যথেষ্ট অভাব দেখা যায়। মহিলাদের হার্টের অসুখের চিকিৎসায় কম পরিমাণে বিটা ব্লকার্স এবং অন্যান্য আনুসঙ্গিক জরুরী ওষুধ আছে যেগুলি রোগের উপশমে মৃত্যুহার কমাতে সহায়ক। একইরকমভাবে মহিলাদের অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি এবং বাইপাস সার্জারির প্রয়োগও কম হয়। আমাদের সমাজে মহিলাদের উৎকৃষ্ট মানের সার্জারি করার চেয়ে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা অপেক্ষাকৃত বেশি পছন্দের। হার্টের চিকিৎসামূলক গবেষণাতে প্রকাশ, শতকরা মাত্র ২৫ জন মহিলা গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত। সেজন্য হার্টের অসুখ, চিকিৎসা এবং ফলাফল , রোগের গতিপ্রকৃতি সমন্ধে এই যে, মহিলাদের হার্টের অসুখে ইস্ট্রোজেন হরমোন নাকি সুরক্ষা দেয়। কিন্তু এটা সঠিক নয়। ভারতীয় মহিলাদের হৃদরোগের বিস্তারিত সমীক্ষা প্রকাশ মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের সুরক্ষা বিভিন্ন কারণে ব্যাহত হয়। যেমন দৈনন্দিন উদ্বেগপূর্ণ জীবনযাপন প্রণালী, জটিল মানসিক ও শারীরিক চাপ ও আরও অন্যান্য অঞ্জাত আনুষঙ্গিক মারাত্মক কারণ বিশেষত ডায়াবেটিস। গত পাঁচ বছরে মহিলাদের মধ্যে হার্টের অসুখ ১৬-২০% বেড়েছে। হার্টের অসুখের লক্ষণ বুকে ব্যথা, শ্বাসের কষ্ট মহিলাদের মধ্যে কম হতে দেখা যায়। ৭১ শতাংশ মহিলাদের হৃদরোগ প্রাথমিক লক্ষণ ফ্লু হলে যেমন হঠাৎ শারীরিক দুর্বলতা কোধ করতে দেখা যায় সেরকম। কিন্তু বুকে মোটেই সেভাবে ব্যথার লক্ষণ অনুভূত হয় না। মহিলদের হৃদরোগের সাধারণ লক্ষণ দুর্বলতাবোধ, আলস্য, সামান্য পরিশ্রমে কাঁধের হাড়ের মাঝে অস্বস্তি ও বেদনাবোধ, পিঠে ব্যথা. পেটে ব্যথাবোধ ইত্যাদি। এছাড়া অস্বাভাবিক দুর্বলতা, অল্প পরিশ্রমের ক্লান্তি এবং শ্বাসের কষ্টবোধ ইত্যাদি সাধারণত মহিলাদের হার্টের অসুখের লক্ষণ। ভয় পেয়ে ঘর্মাক্ত শরীর, মস্তিস্কের অন্যান্য লক্ষণ। মহিলাদের হার্টের অসুখের এরকম অসম্পূর্ণ, ক্ষীণ ও দুর্বল লক্ষণ হার্টের চিকিৎসকের পক্ষে সঠিক রোগ সনাক্তকরণের পক্ষে যথেষ্ট নয় বলে রোগ নির্ণয় কঠিন হয়ে পড়ে। হার্টের অসুখের আক্রান্ত প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মহিলাদের মৃত্যু হতে দেখা যায় যাদের বুকে ব্যথা হওয়ার কোনও লক্ষণ আদৌ প্রকাশ পায়নি বা হতে দেখা যায়নি। আর এখন তো মহিলাদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ধূমপনের অভ্যাস প্রচলিত। উপরন্ত্ত এখন মহিলাদের মধ্যে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত দৈহিক ওজনের অধিকারী সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজকাল অনেক মহিলা কর্মরত। সেই সঙ্গে তাদের যাবতীয় সাংসারিক কাজও করতে হয়। কর্মস্থলের ও গৃহস্থলির সম্মিলিত কাজের ঝুকিঁ, চাপ ও অনুসঙ্গিক দায়িত্ব মহিলাদের হার্টের অসুখ হওয়ার প্রবণতা বাড়িয়েছে। মহিলাদের ধূমপান আসক্তি, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য ঝুঁকি বহুল কার্জের দুশ্চিন্তার চাপে নষ্ট হতে চলেছে ইস্ট্রোজেনের সুরক্ষা। যেসব মহিলা ধূমপান আসক্ত, তারা অধূমপায়ীদের তুলনায় ১৯ বছর আগেই হার্টের অসুখে আক্রান্ত হতে পারেন বলে জানা গেছে। উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে এমন মহিলাদের ৩.৫ গুণ বেশি করোনারি হার্ট ডিজিজে আক্রান্তহতে দেখা যাচ্ছে বিশেষত তুলনামূলকভাবে যাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক তাদের থেকে। উচ্চ রক্তচাপ সেই সব মহিলাদের বাড়েছে যারা গর্ভনিরোধক বড়ি খেয়ে থাকেন এবং স্থূলকায়াদের মধ্যে বিশেষত এমন প্রবণতা বেশি। ডায়াবেটিস আক্রান্তরা যাদের ডায়াবেটিস হয়নি তাদের চেয়ে দ্বিগুন সংখ্যায় হার্ট অ্যাটাকের সমস্যায় ভোগে। তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা প্রযোজ্য নয়। ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্ত পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের অধিক সংখ্যায় হার্টের অসুখে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। বিবাহিত জীবনের সমস্যা ও সাংসারিক দায়িত্বের চাপ হার্ট অ্যাটাক হওয়ার প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয়। সমাজে যৌন সংক্রান্ত বিষয়ে অঙ্গতা ও পক্ষপাতিত্ব মহিলাদের চিকিৎসা শুধু প্রভাবিত নয়, সমস্যা সৃষ্টি করে। আর হার্টের অসুখের কারণ হিসাবে সেটাও সমানভাবে প্রযোজ্য। মহিলাদের ইমার্জেন্সি বিভাগে চিকিৎসার জন্য কদাচিৎ উপস্থিত হয়। কেননা  তাদের ই.সি.জির রেখাচিত্র ও বুকের ব্যথার অভাব  হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা সন্ধান কদাচিৎ নির্দেশ করে। হার্ট অ্যাটাকের পরবর্তী পর্যয়ে চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত মানের ওষুধ পায় না। আনুসঙ্গিক অন্যান্য পরিচর্যা যা অসুখ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া ও বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যক তাও অমিল।  পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে কখনো কখনো অ্যাঞ্জিওগ্রাফি অথবা অ্যাজ্ঞিওপ্লাস্টি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর ফলে  মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের জটিলতা বেড়েই চলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। সমীক্ষায় প্রকাশ যে প্রথম হার্ট অ্যাটাকের পর এক বছরের মধ্যে ২৫% পুরুষ এবং ৩৮% মহিলা মারা যায়। পুরুষদের তুলনায় মহিলারা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অক্ষম হয়ে পড়ে। বাইপাস সার্জারির পর পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের দুই থেকে তিন গুণ মারা যাওয়ার সম্ভবনা দেখা দেয়। কম বয়সী মহিলাদের মধ্যে ৪০ থেকে ৪৯ বছর বয়স্কদের সমবয়স্ক পুরুষদের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি সংক্যায় মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেন মহিলাদের হার্টের অসুখের প্রবণতা বেশি দৈহিক স্থলতা, উচ্চ রক্তচাপ, প্রাতহিক ব্যায়ামের অভাব মহিলাদের মধ্যে স্বভাবতই দেখা যায়।  একই সঙ্গে অফিস ও গৃহস্থলির কাজ বাস্তবে কষ্টদায়ক মহিলাদের পক্ষে। মহিলাদের দৈনিক স্থলতায় প্রধান উপসর্গ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অস্টিও আথ্রাইুটস,ইউরিক অ্যাসিডের আধিক্য মূলত হার্টের অসুখের সৃষ্টিকারক। এখন আর ধূমপানরত মহিলাদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। এমনকী আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলেও বহু গরিব মহিলা বিড়ি খায়। একইভাবে সুরাপানে আসক্তিও মহিলাদের মধ্যে বাড়ছে এবং বেশি সংখ্যার ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ ভুগতে দেখা যাচ্ছে কমবয়সীদের। কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ ভাজাভুজি, জাঙ্ক ফুড, স্নেহজাতীয় খাদ্য খাওয়ার আসক্তি সাকুল ও কলেজের মেয়েদের এবং কর্মরত মহিলাদের মধ্যে রয়েছে। আজকাল ছোট ছোট সংসারে মহিলাদের মধ্যে দুশ্চিন্তার প্রবণতা বাড়ছে। অনুরুপভাবে যারা বিদেশে কাজ করে তাদের মধ্যেও দুশ্চিন্তায় জন্ম দিচ্ছে। রোগ আরোগ্যের চেয়ে রোগ প্রতিরোধ শ্রেয় যদিও মহিলাদের মধ্যে হার্টের অসুখের হার পুরুষদের চেয়ে ভয়াবহ, কিন্তু মহিলাদের জীবনযাপন পরিবর্তনমূলক উপদেশ বেশি সংবেদনশীল ও কর্তব্যপরায়ণ। যদি সমাজে যথার্থ সচেতনতা গড়ে তোলা যায় তবে মহিলাদের মধ্যে হার্টের অসুখ প্রতিরোধ করা অনেক বেশি সহজ হবে। ধূমপান সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। মদ্যপান মহিলাদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং দৈহিক স্থূলতা এই তিনটিই হার্টের অসুখের প্রধান কারণ। তা সত্ত্বেও পেটে বায়ু, সামান্য পরিশ্রমে ক্লান্তিবোধ হলে, বুকে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট হলে যত শীঘ্র সম্ভব হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসের মতামত নিতে হবে। এক্ষেত্রে একবার হার্টের অসুখ সনাক্ত হলে যতদূর সম্ভব ভালো চিকিৎসা অবিলম্বে শুরু করতে হবে এরং রোগীর সকল আত্মীয়স্বজনকে সমবেতভাবে রোগীর প্রতি মনোযোগী ও সহানুভূতি সম্পন্ন হতে হবে। এক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রয়োজন সচেতনতা সৃষ্টি করা।দৈহিক স্থলতা ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহ রক্তের গ্লুকোজ, কোলেস্টেরল এবং লিপিড প্রোফাইল জানা আবশ্যক। ধূমপান বন্ধ করতে হবে। মদ্যপান নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। উত্তেজনা প্রশমন ও দুশ্চিন্তা কমাতে হবে। যাবতীয় উপসর্গের শুরুতে কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া অত্যাবশ্যক। পুরুষদের মতোই মহিলাদের জন্য অত্যাবশ্যক। পুরুষদের মতোই মহিলাদের জন্য প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর তত্ত্ববধানে উপযুক্ত যত্নে রোগীকে রাখা দরকার। এটা লক্ষ্য করা গিয়েছে যে স্বাস্থ্যকর খাদ্য, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, নিয়ন্ত্রিত ব্যায়াম, দেহের ওজন হ্রাসের উদ্যোগ সহ অবিলম্বে বিশেষজ্ঞ  চিকিৎসকের পরামর্শ সহ চিকিৎসা শুরু করলে হার্টের অসুখ নিয়ন্ত্রণে থাকে। দেখা গিয়েছে যে মহিলারা পুরুষদের তুলনায় এসব বিষয়ে বেশি তৎপর। উপসংহার মহিলারা সমাজের স্তম্ভস্বরূপ। এটা অত্যন্ত জরুরি যে সমাজে মহিলাদের স্বাস্থবতী হওয়া আবশ্যক। আর তবেই প্রতিটি পরিবার সুস্বাস্থের অধিকারী হবে। দেশের পক্ষে স্বাস্থ্যসম্পন্ন সমাজ আবশ্যক। মহিলাদের হার্টের অসুখে বিশেষ নজর দেওয়া আবশ্যক। একজন স্বাস্থ্যবতী স্ত্রী ও সুস্বাস্থ্যসম্পন্ন মা একটি সুস্থ পরিবার গড়ে তুলতে পারে। বহু সংখ্যক পরিবার একটি স্বাস্থ্যসম্পন্ন সমাজ গড়ে তুলতে পারে। আর বহু স্বাস্থ্যসম্পন্ন সমাজের সমন্বয়ে একটি যথার্থ সুস্বাস্থের অধিকারী জাতির জন্ম দিতে পারে। সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন