গর্ভাবস্থা থেকেই নিন শিশুর হার্টের যত্ন
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-09 12:24:59
হার্টের সমস্যা শুধুমাত্র যে বড়দের হয়, এই ধারণা ভুল। ছোটদের বিশেষত শিশু গর্ভে থাকাকালীনও হার্টের সমস্যা হতে পারে। আর এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। তাই শিশুদের হার্টের সমস্যা, গর্ভে থাকাকালীন মায়ের সাবধানতা ইত্যাদি নিয়ে এই আলোচনা। হার্টের সমস্যায় বয়স কোনও ফ্যাক্টর নয়। যেকোনো বয়সে এমন সমস্যা হতে পারে। তাই যদি সন্তানের হৃদস্পন্দনের হার স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি দেখেন তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। এটা অবহেলার বিষয় নয়। কিংবা শিশুর হৃদস্পন্দনের হার যদি অনিয়ন্ত্রিত হয় তাহলে সন্তানের ‘‘এরিথমিয়া’ হতে পারে। এই রোগের চিকিৎসা প্রথম থেকেই করা উচিত। নইলে এর প্রভাব খারাপ হতে পারে। এই “এরিথমিয়া” হলে শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস কষ্ট হয়। প্রয়োজনের তুলনায় কম শ্বাস-প্রশ্বাস হতে থাকে। এছাড়া ‘সাইনাস এরিথমিয়া’ –ও হতে পারে। এই রোগটাও ‘এরিথমিয়া’-র মতোই অনেকটা। শিশুদের আর একটি হার্টের সমস্যা হতে পারে। যাকে বলে পেডিয়াট্রিক কার্ডিও মায়োপ্যাথি। এই রোগটি হলে শিশুর মাসল ফাইবারে কিছুটা অনিয়ন্ত্রণ দেখা যায়, হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। কার্ডিও মায়োপ্যাথির জন্য এই উপসর্গগুলো প্রাথমিকভাবে ধরা পড়ে। এই সময় চিকিৎসা শুরু না করলে তা বড় রোগের আকার নেয়। যার ফলে শিশুর শরীরে অন্য সমস্থ রোগও বাসা বাঁধতে শুরু করে। হার্টের আরও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন-হার্টে রক্ত সঞ্চালন কম হতে পারে। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কম বা রক্তচাপ বাড়তে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় ১ লক্ষ শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয় প্রতি বছর। যাদের বয়স কমবেশি ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। ডিলেটেড অথবা কনজেস্টিভ, হাইপারট্রফিক, রেসট্রেক্টিভ কিংবা সবগুলোই একসঙ্গে বা পৃথকভাবে কারও কারও মধ্যে দেখা যায়। এছাড়াও অনেক ধরনের সমস্যা হয় শিশুদের। ক্রমিক রোগ শরীরে বাসা বাঁধে। এছাড়া শিশুদের শরীরে হাই কোলেস্টেরলও দেখা দিতে পারে। এই ধরনের সমস্যাগুলো যদি শিশুদের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত হারে বাড়তে থাক, তাহলে শিশু যে কোনো মহুর্তে হার্টফেল করতে পারে। তবে সবসময় শিশুর মৃত্যু ঘটে তা নয়, অনেক সময় শিশু বিকলাঙাগও হয়ে যায়। এই ধরনের রোগাক্রান্ত শিশুদের হার্ট ফেলিওর হলে প্রথমে একে ‘ওভারসার্কুলেশন ফেলিওর’ বলা হত। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অবস্থাকে হার্ট ফেলিওর-ই বলা হয়। যখন হার্ট একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়, কোনো কাজ করে না তখনই এই ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ শিশুদের হার্ট ফেলিওর হতে পারে ওভারসার্কুলেশন এবং পাম্প ফেলিওর হলে। শিশুদের এইসব সমস্যা রুখতে কী কী করণীয়। শিশু যখন গর্ভে থাকে সেই সময় গর্ভবতী মায়ের অনেক নিয়ম মেনে চলা উচিত। আজকাল আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে বটে, তবে তা সব সময় অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন জনিত সব অসুখ কখনোই রোধ করতে পারে না। যে সমস্ত মহিলারা ধূমপান, ঘুমের ষেুধ কিংবা মদ্যপানে অভ্যস্ত, তাদের গর্ভবতী থাকাকালীন এই অভ্যাসগুলো অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে। কারণ এই ধরনের ড্রাগগুলো হার্টকে খুব ডিসর্টাব করে। আর মায়ের হার্ট ডিসর্টাব হলে শিশুরও হার্টের ক্ষতি হয়। সুতরাং মায়ের হার্টের ক্ষতি হলে বাচ্চার মৃত্যুর সম্ভবনা থাকে ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই। এছাড়া মায়ের মাথায় যদি খুসকি থাকে তাহলেও তা সন্তানের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই গর্ভবতী অবস্থায় ড্রাগ নেওয়া বা নিজেকে অপরিস্কার রাখা থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। জন্মানোর পর শিশুর নানা কারণে হার্টের সমস্যা হতে পারে। যেমন পরিমাণমতো খাবার না খেলে বা শারীরিক ওজন বৃদ্ধি পেলে কিং বা রক্তচাপ বেশি থাকলে অথবা কোলেস্টেরল বেশি থাকলেও হার্টের সমস্যা হতে পারে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি ২ সেকেন্ডে ১ জন করে ভারতীয় শিশু হার্টের সমস্যায় মারা যায়। কারণ তারা বা তাদের বাব-মায়েরা জানেন না গর্ভবতীর কী খাওয়া উচিত আর কী খাওয়া উচিত না। গর্ভবতী মায়ের এবং শিশুর রোজকার সুস্থ থাকার ডায়েট খাওয়া-দাওয়ার আগে যেটা প্রথম করা দরকার তা হল প্রতিবার খাওয়ার আগে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধোওয়া। প্রতিদিন দু’ থেকে তিন রকম শাকসবজি আর দিনে অন্তত দুটো মাছ খান। ডিম খেলে ডিমের হলুদ অংশটা না খাওয়ার চেষ্টা করুন। শুধুমাত্র ডিমের সাদা অংশটা খান। অনেকে বলেন, দিনে একটার বেশি ডিম খেতে। কিন্তু ডিমের বদলে একাধিক মাছ খেলে তা শরীরের পক্ষে ভালো। ছানা, ঘি, মাখন, দুধ খাওয়া যাদের অভ্যাস গর্ভাবস্থায় তারা দুধ খেতে পারেন। দোকান বিক্রি হওয়া কোল্ড ড্রিস্কসের বদলে ডাবের জল বা নারকেলের জল, (বাদাম দুধ) খান। অথবা দই দিয়ে বানানো ঘোলও খেতে পারেন। কোলাড ড্রিস্কস-এ অতিরিক্ত পরিমােণ চিনি, ক্যাফেন, ফসফোরিক অ্যাসিড থাকে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। প্রতিদিনের খাবারের মধ্যে যেন কমপক্ষে ৪ ধরনের ফল থাকে। ফলের মধ্যে থাকা অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। বেশি তেল, ঘি, মশলা দেওয়া খাবার একেবারেই খাবেন না। অ্যালার্জি হয় এমন খাবারও খাবেন না । জাঙ্ক ফুড যতটা সম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করবেন। ধূমপান, মদ্যপান,ঘুমের ওষুধ ইত্যাদি সেবন করবেন না। সবশেষে প্রতিদিন এক্সারসাইজ, মেডিটেশন, যোগ প্রতিদিন নিয়ম করে করুন ডাক্তারি পরামর্শে। এর ফলে সুস্থ থাকার পাশাপাশি অবসাদ মুক্ত এবং ফুরফুরে মেজাজেও থাকতে পারবেন। সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন