সোয়াইন ফ্লো আতঙ্ক নয়, চাই সচেতনতা
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-10 13:30:43
সোয়াইন ফ্লু হল শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাসঘটিত রোগ। এই রোগের ভাইরাসের নাম হল এইচ.ওয়ান.এন.ওয়ান (H1N1) বা ইনফ্লুয়েঞ্জা এ-ওয়ান ভাইরাস। আগে মনে করা হত রোগটা শূকর থেকে ছড়াই। কিন্তু পরে দেখা গেছে শূকরের সয়স্পর্শ ছাড়াই যে কোনো মানুষের এই রোগ হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য ২০০৯ সালের জুন মাসে বিশ্বের ৭৪টি দেশে নতুন এইচ.ওয়ান এন.ওয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জ ভাইরাসের আর্বিভাবে এই রোগের সাম্প্রতিক অবস্থাকে বিশ্বব্যাপি মহামারি বলে চিহ্নিত করেছে। রোগের কারণ সংক্রামিত ব্যক্তির হাঁচি, কাশির মাধ্যমে জীবাণু বাতাসে ছড়াই। তারপর তা সহজেই আশপাশেই মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে। এই ভাইরাস কি ছোঁয়াচে এই রোগ ছোঁয়াছে। একজন সংক্রামিত মানুষের হাঁচি বা কাশির থেকে জীবাণু একজন সুস্থ মানুষকে খুব সহজেই আক্রান্ত করতে পারে। সংক্রামিত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র থেকেও সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে থেকেও সুস্থ মানাষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে এই জীবাণু। তবে খাবার-দাবার বা রক্তের মাধ্যমে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ছড়াই না। উপসর্গ সোয়াইন ফ্লু’য়ে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই। সর্দি-জ্বর, হাঁচি-কাশি, মাথাব্যথা, গলা ও শরীর ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ক্ষুধামান্দ, ক্লান্তিবোধ, ওজন হ্রাস, শারীরিক দুর্বলতা, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া। কারো কারো ক্ষেত্রে ডায়ারিয়া এবং বমির সম্ভবনা থাকে। সংক্রামিত ব্যক্তি কতদিন পর্যন্ত রোগটা ছড়াতে পারে একজন সংক্রামিত ব্যক্তি তার উপসর্গ শুরুর একদিন আগে থেকে সাতদিন পর্যন্ত কিংবা তারও বেশিদিন পর্যন্ত অন্য ব্যক্তিতে এ রোগ ছড়াতে পারে। কমবয়সী শিশু ও বয়স্কতের জন্য সোয়াইন ফ্লু বিপজ্জনক। এছাড়া হাঁপানি এবং হৃদরোগে আক্রান্ত মানুষেরও সোয়াইন ফ্লু সম্পর্কে সাবধান। সাবধান থাকা উচিত যারা এমন রোগে ভুগছেন যাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, যেমন এইডস রোগী। প্রতিরোধ কী করণীয় সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধের জন্য আগে শরীর সুস্থ রাখার সব রকম চেষ্টা করতে হবে। পরিস্কার জলে হাত বারবার ধোওয়া উচিত। এসময়ে প্রচুর স্বাস্থ্যকর খাবার, জলপান করা উচিত। জ্বর, কাশি আছে এমন লোকের সং স্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। সংক্রামিত ব্যক্তির কোনো জিনিস বা এমন কোনো জিনিস যেখানে ভাইরাস থাকার সম্ভবনা, হাত না দেওয়া উচিত। নিজের ফ্লু হলে তা যেন অন্যকে আক্রান্ত না করতে পারে. তার জন্য করণীয় হাঁচি বা কাশির সময় মুখে রুমাল ব্যবহার করতে হবে। দরজার হাতল, কম্পিউটারের কী বোর্ড, মাউস ইত্যাদি ব্যবহৃত নির্জীব বস্তু জীবাণুনাশক দিয়ে পরিস্কার করতে হবে। কফ ও থুথু পরিষ্কার করার সময় টিস্যু পেপার ব্যবহার করে তা নিরাপদ স্থানে ফেলতে হবে। সবসময় হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। স্কুল-কলেজ বা কাজের জায়গায় না গিয়ে বাড়িতে বিশ্রাম থাকতে হবে। রোগ হলে করণীয় ডক্তার দেখাতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখা উচিত। প্রকাশ্য স্থানে থুথু ফেলা উচিত নয়। চোখ, মুখ, নাক-এ হাত লাগানো উচিত নয়। উপযুক্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত বাড়িতেই। রোগের ওষুধপত্র হ্যাঁ, ওসেলটামিভির, যার বাজারি নাম ট্যামি ফ্লু। এটি এই রোগের চিকিৎসায় এবং প্রতিরোধক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। রোগ নির্ণয় রোগীর থুথু ও কফের নমুনা সংহগ্রহ করে পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা হয়। বর্তমানে অত্যাধুনিক রিয়েল টাইম রির্ভাস ট্রান্সক্রিপশন পি.সি.আর-এর মাধ্যমে খুব তাড়াতাড়ি ভাইরাসের উপস্থিত ও সংখ্যা নির্ণয় করা সম্ভব। ভাইরাস বাইরের পরিবেশে কতক্ষণ বাঁচে বাইরের পরিবেশ এই ভাইরাস দু’ঘন্টা বাঁচে। বারবার সাবান বা অ্যালকোহল যুক্ত জল দিয়ে হাত ধুয়ে ফেললে এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। চিকিৎসা এই রোগের চিকিৎসা সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই। চিকিৎসা করা হয় অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ দিয়ে। আন্টিবায়োটিক কোনো ভূমিকা নেই। এটি একটি সেলফ লিমিটিং ডিজিজ অর্থাৎ নিজে থেকেই সেরে যায়। কমবয়সী শিশু, অন্তঃস্বত্ত্বা মহিলা বা বয়স্ক মানুষদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বলে এদের ক্ষেত্রে রোগটা জটিল হতে পারে। এছাড়া অন্যদের অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন