টিউবাল ব্লক : ম্যাজিক দেখায় ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-10 14:53:34
টিউবাল ব্লক ইনফর্টিলিটির অন্যতম কারণ। দু’দিকের ওভারি থেকে ইউটেরাসে যে সংযোগ, তা ফ্যালোপিয়ান টিউবই স্থাপন করে। ওভারি থেকে ওভাম যদি মর্সণভাবে এই টিউব পৌছাতে না পারে তাহলে স্পার্মের সঙ্গে মিলিত হয়ে ফার্টিলাইজেশন সম্ভবনা না। মহিলাদের মধ্যে অন্তত ২৫%ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের কারণ টিউব ব্লক। আগে প্রচলিত পন্থায় যে অপারেশন হত তাতে সাফল্যের সম্ভবনা ছিল মাত্র ২৫%। এখন ল্যাপারোস্কোপি সামগ্রিক ছবিটা আমূল বদলে দিয়েছে। আমরা নিয়মিত ল্যাপারোস্কোপের সাহায্যে যে টিউবাল সার্জারি করছি, তাতে ৭০%-এর বেশি সাফল্য আসছে। ফ্যালোপিয়ান টিউব সমস্যা হয় কেন? কারও ক্রটি জন্মগত। কারণ টিউবে সংক্রমণ হলে আক্রান্ত অংশ সরু হয়ে ব্ল তৈরি করতে পারে। পেটের মধ্যে কোনো সার্জারির পর অ্যাডহেশন দেখা দিতে পারে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে কারও ফ্যালোপিয়ান টিউবে এক্টোপিক প্রেগনেন্সি হলে সর্বনাশ। টিউব নষ্ট হয়ে যায়্ অনেকে জানতে চান, টিউবে ইনফেকশন কীভাবে হতে পারে? বাইরে থেকেই আসে সংক্রমণ। হয় গনোকক্কাল নয়তো ক্ল্যাসাইডিয়ার উৎপাত বেশি। তবে দেখা গেছে এ ধরনের যৌনসাংক্রমণ মূলত পুরুষঙ্গীর কাছ থেকেই পাওয়া। তবে অবিবাহিতদেরও কখনও কখনও ভুগতে হয়। তার কারণ ব্যাড হাইজিন। অপরিচ্চন্নতা বিপদ ডেকে আনে। আসলে জরায়ুমুখ বা সার্ভিক্সে তো সব সময় কিছু ব্যক্টেরিয়া বাসা বেঁধে থাকে। মুশকিল অন্যত্র। টিউবে ব্লক শুরু হচ্ছে বা হতে পারে-এর তেমন কোনো ডেঞ্জার সিগনাল নেই। ইনফেকশনে পেটে সামান্য ব্যথা হতে পারে। অনেকের হোয়াইট ডিসচার্য হয়। তবে লিউকোরিয়ার একমাত্র কারণ টিউবাল ইনফেকশন নয় কিন্তু। অন্যান্য সমস্যাতেও এমন হয়। টিউবাল ব্লক বেশি ধরা পড়ে যখন কেই আমাদের ক্লিনিকে এসে তার ইনফার্টিলিটির ব্যাপারটা ব্যক্ত করেন। রুটিন চেক-আপে স্পষ্ট হয়ে যায় সবকিছু। ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লক রয়েছে কি না বুঝতে কয়েকটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্য নিতে হয়। যেমন এইচ.এস.জি বা হিস্টোস্যালপিঙ্গোগ্রাম। সার্ভিক্স দিয়ে একটা ডাই বা রঞ্জক প্রবেশ করালে এক্স-রে’তে পিরো টিউবটা দেখা যায়। তাছাড়া জরায়ুমুখ থেকে ব্রাশ করে লিভি সেল তুলে আমরা কালচার করে ইনফেকশনের ধরনটা বুঝে যাই। ক্লামাইডিয়া পি.সি.আর টেস্ট হয়। তাছাড়া ডায়াগনোস্টিক ল্যাপারোস্কোপি ডাই টেস্টের সাহায্যে টিউবের বাইরের দোষক্রটি সরাসরি বোঝা যায়। ডায়াগনোস্টিক হিস্টোরোস্কোপি ইউটেরাসের ভেতরটা সুন্দরভাবে দেখায়। আমরা এটাও বোঝার চেষ্টা করি যে ফ্যালোপিয়ার টিউবের মধ্যে সিলিয়াগুলো কতটা অ্যাক্টিভ। টিউবস্থিত এই সিলিয়ারি মুভমেন্টেই তো ওভারি থেকে ওভামের অগ্রগতি ত্বরন্বিত হয়। অধিকাংশ ইনফেকশনে এই সিলিয়ার নড়াচড়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এই ব্যাপার প্রথমেই বুঝে নেওয়া ভালো যে টিউবাল ব্লক কোনো ওষুধে সারে না। সার্জারি ছাড়া এক্ষেত্রে গতি নেই। কোনো জীবণ খুঁজে পেলে ইনফেকশন কমানোর ওষুধ তো দিতেই হবে। তবে সেটা গোটা প্রক্রিয়ার সামান্য অংশমাত্র। টিউবাল ব্লক সরানোর রিয়্যাল ম্যাজিক এখন ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি। ওষুধ খাইয়ে ইনফেকশন কন্ট্রোল করে নিয়েই অবশ্য আমরা সেটা করি। আমরা অনেব রোগী অবশ্য অপারেশনের পর বেশ মজা করেই বলেন ‘কই, আপানি তো কাটাছেঁড়া তেমন করলেন না’। ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারিকে আমরা গভীরভাবে চর্চা করে সত্যি শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। প্রযুক্তি প্রতিদিন পাল্টাচ্ছে। যখন ব্যাপারটা শিখেছিলাম আর তারপর আজকে মনে হয় টেকনোলজি কয়েক হাজার কিলোমিটার এগিয়েছে। হারমোনিক স্ক্যালপেল, ডায়াথার্মি সিজার্স ব্যবহারের ফলে সবচেয়ে সুবিধা হয়েছে রোগীদেরই। ব্যথার নামমাত্র নেই। ব্লিডিং হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। স্কারমার্ক কী ব্যাপার আমার রোগীরা জানেনই না। ডায়াগনোস্টিক ল্যাপারোস্কোপির সময় আমরা ছোটখাটো প্রবলেম তখনই সারিয়ে দিতে পারি। ধরা যাক টিউব হয়তো জড়িয়ে গেছে। স্যালপিঙ্গোস্কোপির সময় সেটা ছাড়িয়ে দেওয়া হয়। এক বলে স্যালপিঙ্গোলাইসিস। ওভারিতে অ্যাডহেশন থাকলে ওভারিওলাইসিস, অ্যাডহেশন ছড়াতে অ্যাডহেন্সিওলাইসিস। তাছাড়া আগে লাইগেশন হয়ে থাকলে ল্যাপারোস্কোপি সার্জারিতে টিউবো-টিউবাল অ্যানাস্টোমাসিস করা যায় অর্থাৎ ব্রিজিং সম্ভব। ফ্যালোপিয়ান টিউবে সামান্য বাধা অনেক পরিবারকে রোজ ভাঙনের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সেটুকু সরিয়ে দিলেই ইনফার্টিলির্টি দূর করা যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেয়াড়া সমস্যায় হয়তো আ.ভি.এফ বা টেস্ট টিউববেবির প্রয়োজন হতে পারে। টিউবাল ব্লক যেন কারও জীবনে অভিশাপ না হয়। সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন