আলসারেটিভ কোলাইটিসে প্রাণ সংশয়
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-14 15:02:32
আলসারেটিভ কোলাইটিস। ইনফেকশন থেকে কোলাইটিস হতে দেখা যায়। বয়স্ক লোকেদের ইসকিমিক কোলাইটিস হয় ইসকিমিয়ার জন্য। এছাড়া কোলনে রক্ত সরবরাহ কম হলে কোলনে আলসার হয় এবং ইনফ্লামেটরি বাওয়াল ডিজিজও হয়। কারণ ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিজের দুটো কারণ-একটা হল ইডিওপ্যাথিক আলসারেটিভ কোলাইটিস এবং অপরটি হল ক্রোনস ডিজিজ ইডিওপ্যাথিক আলসারেটিভ কোলাইটিস। আমাদের দেশে খুব কমন নয়। এটা মূলত পশ্চিমী দেশের অসুখ। সম্প্রতি আমাদের দেশে এই অসুখটি বেশে দেখা যাচ্ছে। সাধারণত পরিবেশ ও খাদ্যভাসই এর জন্য দায়ী থাকে বলে মনে করা হলেও যথার্থই সঠিক কারণটা এখনও জানা যায়নি। বর্তমানে ভাবা হচ্ছে শরীরের ইমিউন মেকানিজমের কাজ কম হওয়ার জন্য এই অসুখের সৃষ্টি হয়। আমাদের কোলনের মধ্যে কিছু উপকারি ব্যাক্টেরিয়া থাকে যেগুলো শরীরকে আক্রমণ করে না, কিন্তু বাইরে থেকে কোনো ব্যাক্টেরিয়া কোলনে প্রবেশ করলে তখন শরীরের ইমিউন সিস্টেম তাকে আক্রমণ করে শরীরের ইমিউন সিস্টেম তাকে আক্রমণ করে শরীরে থেকে বার কেরে দেয়। শরীরের এই ইমিউন প্রক্রিয়াটা টি.এইচ. ওয়ান সিস্টেম দ্বারা বন্ধ হয়। সাধারণত ভাবা হয় টি.এইচ. টু সিস্টেমটা বন্ধ হওয়ার গন্ডগোলের জন্য ইমিউন প্রক্রিয়াটা সাধারণভাবে বসবাসকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলোকেও আক্রমণ করতে থাকে ফলে এই অসুখের সৃষ্টি হয়। এই অসুখে হেরিডিটি বা জিনগত কারণ তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। রোগীদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার বয়স লক্ষ করলে দেখা যাবে পনেরো থেকে ত্রিশ বছর বয়সী মানুষেরই বেশি আক্রান্ত হন। অবশ্য যে কোনো বয়সেই এই ইডিওপ্যাথিক আলসার দেখা দিতে পারে। লক্ষণ ক্রনিক ডায়ারিয়া, মলের সাথে রক্ত এবং কখনো কখনো এর সাথে অল্প মাত্রায় জ্বর, অ্যাবডোমিনাল ক্রাম্পস নিয়ে রোগী ডাক্তারবাবুর কাছে আসেন। কোলনের সমস্যা ছাড়াও চোখ লাল হতে পারে, আর্থ্রাইটিস দেখা দিতে পারে বা স্কিনে যন্ত্রণাদায়ক নডিউলও হতে পারে। ধরন এই অসুখ বিভিন্ন রকমের হতে পারে। এটা সাধারণত রেক্টম থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন দৈর্ঘে কোলনকে জড়িত করে। রেক্টমে যদি হয় তাকে বলা হয় প্রোকটাই টিস। রেক্টম ও সিগময়েড জড়িত হলে বলা হয় প্রোকটো সিগময়ডাইটিস। বাঁ-দিকের কোলেনটি জড়িত হলে তাকে বলা হয় লেফট সাইডেড কোলাইটিস। পুরো কোলন জুড়ে অসুখটি দেখা দিলে তাকে বলা হয় প্যান কোলাইটিস। কোলনের কতটা দৈর্ঘ আক্রান্ত হয়েছে তার ওপর অসুখের তীব্রতা নির্ভর করে এবং এর চিকিৎসা হিসাবে বাঁ-দিকের কোলন পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে এনিমা ও ফোম দিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। এগুলো দেওয়া হয় পায়খানার দ্বারা দিয়ে। সংক্রশমণ পুরোটা হলে ওরাল মেডিসিন দিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। ওরাল মেডিসিন অনেক সময় উমিউনো সাপ্রেসড স্টেরয়েড এবং ইমিউনো সাসপেসসের প্রয়োজন হতে পারে। অসুখটি ওষুধের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই অসুখ জীবনের ঝুঁকির কারণ হতে পারে না। কিন্তু কখনো কখনো ফুলমিন্যান্ট কোলাইটিস টুক্সিক মেগাকোলন বা কোলনের পারফোরেশন (ফুটো) হলে জীবন সংশয় হতে পারে। সেক্ষেত্রে সত্নর অপারেশনের প্রয়োজন হয়। ডায়াগনোসিস এই অসুখটি ডায়াগনোসিস মূলত সিগময়ে ডোস্কোপি, কোলোনোস্কোপি বা বেরিয়াম এনেমার দ্বারা সহজেই করা যায়। কী ধরনের খাবার কাওয়া উচিত সাধারণত এই অসুখে ল্যাক্টোস বিরোধী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার না খাওয়ার বা পরিহার করা বাঞ্ছনীয়। তাছাড়া অন্য কোনো খাবারে নিষেধ নেই। যখন এই অসুখটি বাড়াবাড়ি হয় তখন হোল গ্রেন এবং শাকসবজি না খেলে বাড়াবাড়িটাকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। কিন্তু অসুখটি যখন নিয়ন্ত্রণে থাকে তখন স্বাভাবিক খাবার কোনো নিষেধ নেই। এই অসুখ বহুদিন ধরে থাকলে, প্রায় দশ-পনেরো বছর যদি প্যান কোলাইটিস থাকে তাহলে ক্যানসার হওয়ার সম্ভবনা থাকে। এই কারণে মাঝে মাঝে ডাক্তারদের পরামর্শ মতো স্ক্রিনিং করে নেওয়া ভালো, তাছাড়া সব সময় ফলো-আপে থাকা উচিত। সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন