×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

হাঁপানিতে মহিলারাই বেশি কষ্ট পান

হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-15 15:13:47

হাঁপানি রোগীর সংখ্যা সারা পৃথিবীতে হু হু করে বাড়ছে। বাতাসের দূষণ ও শিশদের ঘন ঘন শ্বাসনালীর ভাইরাসঘটিত রোগ আমাদের দেশে হাঁপানি, কাশি হওয়ার কারণ। দিল্লি ও কলকাতার বায়ুদূষণ বেশি বলেই এই দুই মহানগরে শ্বাসকষ্টের সমস্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় পাঁচ থেকে দশ শতাংশ মানুষ হাঁপানি রোগের শিকার। ইউরোপ ও তৃতীয় বিশ্বের কিছু দেশে শিশুদের বেশি বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানোর অভ্যাসের জন্য হাঁপানি, অ্যালার্জি ও একজিমা রোগ কম হয়। হাঁপানি রোগীর ফুসফুস আর শ্বাসনালীতে এক বিশেষ ধরনের পরিবর্তন ঘটে যায়। শ্বাসনালীর গায়ে মিউকাস গ্রস্থি, মাস্ট কোষ, নিউট্রোফিল, ইয়োসিনোফিল আর লিম্ফোসাইট রয়েছে। ঘিরে রয়েছে পাতলা মাংপেশি। মিউকাস গ্রন্থির তরল, ঝিল্লি আবরণে জড়ো হওয়া নানা ধরনের কোষ এই আবরণকে স্ফীত করে। এই সকল পরিবর্তন ঘটে মাস্ট কোষ ভেঙে বেরিয়ে আসা নানা ধরনের রাসায়নিকের অঙ্গুলি হেলনে। পেশিতন্ত্তর সংকোচনে শ্বাসনালীর পথ সরু হয়ে যায়। ফলে শ্বাসনালীর পথে বায়ু চলাচলে বাধা পায়। হাঁপানি রোগীর শ্বাসনালী সরু হয়ে আসা কিন্ত্ত স্থায়ী নয়। রোগের প্রথম দিকে বা পরেও এই সংকোচন চলে যায়, স্বাভাবিক বাতাস চলাচল শুরু হয়। এম্ফইসিমাতে বায়ুথলিগুলি বড় হয়ে যায়, স্থায়ী চেহারা নেয়, এগুলি আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না। কিছু কিছু ভাইরাস আমাদের শ্বাসনালীকে আক্রমণ করে থাকে। একে সাধারণ সর্দি বা ‘কমন কোল্ড’ বলা হয়। এই ভাইরাসগুলো সাধারণত রাইনোভাই রাস, কোরোনাভাইরাস ও এডিনোভাইরাস। এই ভাইরাসগুলো বিটা রিসেপটার নষ্ট করে দেয়, সাময়িক ক্ষতি হলে অল্প সময়ের জন্য হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট হয়। কখনো কখনো বিটা রিসেপটার স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে অ্যালর্জি না থাকলেও এই ধরনের মানুষেরা শ্বাসকষ্টে ভোগে দীর্ঘদিন। রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাসের আক্রমণে শিশুরা প্রায়শই আক্রান্ত হয়। এই ধরনের ভাইরাস আক্রমণের পর বেশ কিছুদিন শিশুদের হাঁপানি হতে পারে। ইদানিং সারা পৃথিবীতে বয়স্ক মানুষের মধ্যে হাঁপানি রোগ বেড়ে চলেছে। ভারতবের্ষও তার ব্যতিক্রম নয়। এই বয়সে পুরুষের থেকে মহিলারা হাঁপানি রোগে বেশি কষ্ট পায়। কুড়ি থেকে তিরিশ বছর বয়সের রোগীদের অনেকেই ছোটবেলায় শ্বাসকষ্টে ভুগছে। তবে চল্লিশ ছাড়িয়ে যারা এই রোগে আক্রান্ত তাদের বেলায় রোগের ধরন খানিকটা অন্যরকম। এদের ক্ষেত্রে রোগের কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যালার্জি ঘটিত নয়। বয়স্ক মানুষদের হাঁপানির কারণ হল শ্বাসনালীর প্রদাহ ও বায়ু দূষণ। এদের রোগের তীব্রতা বেশি, রোগের চিকিৎসাও খানিকটা জটিল। পঁয়ষট্রি বছর বয়সেও শতকরা দশজন নতুন হাঁপানির রোগী পওিয়া যাচ্ছে। বয়স্ক মানুষের মধ্যে অনেকেই ক্রনিক ব্রম্কাইটিস  ও এম্ফাইসিমা রোগে ভোগে। তাই এদের হাঁপানির কষ্টও অনেক বেশি। প্রতি ১০০ জন গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে অন্তত একজন হাঁপানি রোগের শিকার। গর্ভধারণের সময় হাঁপানিতে ভোগা মায়েদের তিনরকম অবস্থা দেখা দিতে পারে। একভাগের কষ্ট বেড়ে যায়, অন্যভাগের কষ্ট একইরকম থাকে এবং বাকি এক ভাগের রোগ কমে যেতে পারে। শিশু জন্মানোর তিন মাসের মধ্যে হাঁপানি রোগীরা তাদের আগের অবস্থায় ফিরে যায়। হাঁপানিতে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের সন্তানের কোনোরকম দোষক্রটি দেখা দেয় না বা গর্ভবতী হবারও কোনো ভয় নেই। তবে সময়ের আগেই সন্তানের জন্ম হতে পারে। অবশ্য গর্ভে শিশু থাকার সময় মা যদি খুব বেশি শ্বাসকষ্টে ভোগে তবে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কম হতে পারে। এর ফলে শিশুর বৃদ্ধি কমে যায়। গর্ভের ২৮ থেকে ২৬ সপ্তাহের মধ্যে হাঁপানির প্রকোপ বেশি হতে দেখা যায়। স্টেরয়েড এক আশ্চর্য দাওয়াই আমাদের দু’পাশের দুটো বৃক্কের ওপর ছোট টুপির মতো দুটো অঙ্গ রয়েছে-নাম অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি। এই গ্রন্থির দুটো ভাগ-ভেতরের অংশকে মেডালা এবং বাইরের অংশকে কর্টেক্স বলা হয়। মেডালা থেকে অ্যাড্রিনালিন ও নরঅ্যাড্রিনালিন হরমোন তৈরি হয়। কর্টেক্স থেকে তিন ধরনের হরমোন পাওয়া যায়-গ্লুকোকর্টিকয়েড, মিনারেলোকর্টিকয়েড এবং সেক্স হরমোন। হাঁপানি রোগে কর্টিজোন নানভাবে উপশম ঘটায়। কর্টিজোন শ্বাসনালীর রস নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। এর ফলে শ্বাসনালীর ফোলা ভাব ও প্রদাহ কমে যায়। প্রদাহ শুরু হলে যে সমস্ত কোষ লড়াই চালাতে ছুটে আসে তাদের পরিমাণ কমিয়ে দেয় ও মাস্ট কোষ থেকে নানারকম রাসায়নিক বস্ত্তর বেরিয়ে আসা রুখে দেয়। ফলে হাঁপানি রোগের একেবারে গোড়ায় কাজ করতে পারে কর্টিজোল। এর ফলে শ্বাসনালীল অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা কমে যায়। হাঁপানির উপসর্গ খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়।কর্টিজোন এখনও পর্যন্ত একমাত্র ওষুধ যার সাহায্যে শ্বাসনালীর স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে পারে ও নষ্ট হয়ে যাওয়া ঝিল্লি আবরণ আবার সুস্থ হয়ে ওঠে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, কর্টিজোন যদি দিনে একবার শুধুমাত্র সকালে অথবা একদিন ছাড়া প্রয়োগ করা হয় তবে অনেক বিপদকেই ঠেকিয়ে রাখা যায় অথচ হাঁপানির শ্বাসকষ্ট কমতে অসুবিধা হয় না। মুখে খাওয়া স্টেরয়েডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আটকানোর জন্য আবিষ্কৃত হল এমন ধরনের স্টেরয়েড ওষুধ যা ‍সরাসরি শ্বাসনালীর ভেতর কাজ করে। এই ওষুধগুলো বাষ্পের মতো খুব মিহি অবস্থায় শ্বাসের সাথে নিতে হয়। এর ফলে স্টেরয়েড ওষুধ রক্তে মিশতে পারে না। ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া একেবারেই কম হয়। এ ধরনের ওষুধ ব্যবহারের পদ্ধতিকে এরোজল বলে। মাঝারি থেকে ভারী ধরনের শ্বাসকষ্টে ইদানিং পাঁচ থেকে পনেরো দিনের কর্টিজোন চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে বেশি মাত্রায় স্টেরয়েড ওষুধ দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি ওষুধ করে দেওয়া হয়। এভাবে অনেক হাঁপানি রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বন্ধ করতে পারা যাচ্ছে। বছর চার থেকে পাঁচবার এই চিকিৎসা করা যেতে পারে। বেশিরভাগ সময় প্রেডনিসোলোন নামের স্টেরয়েড বড়ি প্রতিদিন ৩০ থেকে ৬০ মিগ্রা মাত্রায় শুরু করে দ্রুত কমিয়ে আনা হয়। ছোটদের বেলায় ডোজটা আরও কম। এইভাবে সাত থেকে পনেরো দিনের মধ্যে স্বাভাবিক ক্ষমতা ফিরে আসে ফুসফুসের। একবার ওষুধ ব্যবহার করলে কয়েকমাস পর্যন্ত এর সুফল পাওয়া যায়। একেবারে হঠাৎ বন্ধ না করে কিছুদিন সময় নিয়ে ধীরে ধীরে স্টেরয়েডের মাত্রা কমিয়ে দিলে ফল বেশি পাওয়া যায়। কোন কোন অবস্থায় স্টেরয়েড দিয়ে চিকিৎসা

  • খুব বেশি রকমের হাঁপানিতে রোগী কষ্ট পেলে, বারে বারে হাসপাতাল যেতে হবে।
  • কর্টিজোন ইনহেলার ও এমনকী সাধারণ ইনহেলার বারে বারে ব্যবহার করার পরও শ্বাসকষ্ট না কমলে।
  • হাঁপানির রোগী দূরে কোথাও বেড়াতে গেলে। যেখানে আধুনিক চিকিৎসা পাবার অসুবিধা রয়েছে।
স্টেরয়েড জাতের ওষুধ খাবার বড়ি ও তরল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বিটামেথাজোন গ্রুপের ওষুধ ফোঁটা হিসাবে বাচ্চাদের জন্য ব্যবহৃত হয়। ট্যাবলেট হিসাবে প্রেডনিসোলোন, ডেক্সামেথাজোন পাওয়া যায়। ব্যবহার কিছুদিন আগে পর্যন্ত স্টেরয়েড ব্যবহার নিয়ে মানুষের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। অনেকেই মনে করেন স্টেরয়েডই হাঁপানির শেষ ওষুধ। এটি ব্যবহার করলে আর অন্য কোনো হাঁপানির ওষুধ কাজে আসে না-এটা কিন্ত্ত ভুল ধারণা। স্টেরয়েডই হাঁপানির একমাত্র চিকিৎসা। তবে একথা ঠিক, অনেক চিকিৎসকই স্টেরয়েডের সঠিক ব্যবহার জানেন না। আর তার ফলে শরীরে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আর সেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে কাটিয়ে উঠতে ইনহেলারের মাধ্যমে ব্যবহারের ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। মাঝারি থেকে ভারী ধরনের শ্বাসকষ্টে পাঁচ থেকে পনেরো দিন স্টেরয়েড দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। হঠাৎ মারাত্মক ধরনের হাঁপানিতে (স্ট্যাটাস অ্যাজমাটিকাস) স্টেরয়েড ওষুধ ব্যবহার করা ছাড়া উপায় নেই। তাছাড়া হাঁপানির অন্যান্য ওষুধ যখন শ্বাসকষ্ট কমাতে ব্যর্থ হয় তখন স্টেরয়েড ওষুধের ওপর নির্ভর করতেই হবে। রোগের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে বেশি মাত্রায় ওষুধ দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া হয়। শিশুদের অ্যাকিউট হাঁপানির আক্রমণে পাঁচ থেকে চোদ্দ দিন স্টেরয়েড ওষুধ (ট্যাবলেট কিংবা সিরাপ) খেতে বলা হয়। এতে হাঁপানির টান কমে যায়। তাই শর্ট টার্ম স্টেরয়েড ওষুধের ব্যবহার করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হয়। কর্টিজোন ওষুধ দিনে একবার সকালে অথবা একদিন অন্তর ব্যবহার করতে বলা হয়। সাত থেকে পনেরো দিনের মাথায় ফুসফুসের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। বর্তমানে চিকিৎসকের স্টেরয়েড ওষুধ হঠাৎ বন্ধ করতে নিষেধ করেন। ধীরে ধীরে ডোজ কমিয়ে আনতে বলা হয়। হঠাৎ ওষুধটা বন্ধ করলে শরীরে নানা বিপত্তি দেখা দেয়। যেমন দুর্বলতা, খিদে কমে যাওয়া, অস্থিরতা, নার্ভাসনেস, গাঁট ও মাংসপেশির ব্যথা ইত্যাদি। কিছুদিন স্টেরয়েড ব্যবহার করলে ওষুধের ওপর নির্ভরতা চলে আসে। কর্টিজোন ইনহেলার ও বিটা-২ অ্যাগনিস্টইনহেলার ব্যবহার করা সত্ত্বেও শ্বাসকষ্ট না কমলে স্টেরয়েড ট্যাবলেট কিংবা ইঞ্জেকশন ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া দেখা গেল স্টেরয়েড ইনহেলারে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে অথচ হঠাৎ কোনো ভাইরাসের আক্রমণে কিংবা অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার ফলে হাঁপানির কষ্ট বেগে গেল। তখন স্টেরয়েড ওষুধের সিরাপ, ট্যাবলেট কিংবা ইনঞ্জেকশন ব্যবহার করতেই হবে। বাচ্চাদের জন্য ড্রপ পাওয়া যায়। ট্যাবলেট হিসাবে প্রেডনিসোলোন, প্রেডনিসোস, ডেক্সামেথাজোল, বিটামেথাজোল। হঠাৎ মারাত্মক হাঁপানির কষ্টে স্টেরয়েডের ইন্ট্রাভাসকুলার বা ইন্ট্রাভেনাস ইনঞ্জেকশনও দেওয়া হয়।   সতর্কতা যদি হাঁপানির সঙ্গে ডায়াবেটিস, যক্ষ্মা, উচ্চ রক্তচাপ, সাইকোসিস, গ্লুকোমা, পেপটিক আলসার জাতীয় কোনো রোগ থাকে, তাহলে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খুব সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োগ করতে হবে। স্টেরয়েড জাতের ওষুধ কিছু খাওয়ার পর কিংবা অ্যান্টাসিডের সাথে খেলে ভালো হয়। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্টেরয়েড ওষুধ প্রয়োগ অজস্র অসুবিধা আছে। তবুও মারাত্মক হাঁপানিতে কিংবা দীর্ঘস্থায়ী হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে স্টেরয়েডের জুড়ি নেই। স্টেরয়েড নিয়ে জনমানসে একটা ভীতি আছে, তবুও বলব শর্ট টার্ম স্টেরয়েড থেরাপি হাঁপানির চিকিৎসায় খুবই প্রয়োজনীয়। বেশিদিন স্টেরয়েড ব্যবহার করলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি। বেশিদিন স্টেরয়েড ব্যবহার করলে কতকগুলো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। যেমন-রাক্ষুসে খিদে, মাংসপেশির খিঁচুনি, বুক জ্বালা, পেপটিক আলসার, মেজাজের হঠাৎ পরিবর্তন, মুখে ব্রণ, অনিয়মিত ঋতুস্রাব, শরীর ফুলে যাওয়া, হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া, মুখে লোম গজানো (হারসুটিজম), শরীরে অতিরিক্ত মেদ, উদরী হওয়া, চোখের ছানি পড়া, শিশুদের বৃদ্ধি কমে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়। এরোজল কোনো তরল বা কঠিন বস্ত্ত যদি সূক্ষ্ম মাপে বাষ্পের সঙ্গে মিশে থাকে তবে তাকে এরোজল বলা হয়। এই তরল বা কঠিন কণার মাপ এতই ছোট হয় যে তারা সহজে থিতিয়ে পড়ে না। উচ্চচাপে এই ধরনের এরোজল প্রশ্বাসের সঙ্গে টানলে তা শুধু শ্বাসনালীর ভিতরে জমা হয়, রক্তে ওষুধের পরিমাণ কম থাকে। ফলে শরীরের অন্যান্য জায়গায় ওষুধটির প্রভাব পড়ে না। এরোজল ইনহেলারে ধাতুর তৈরি ছোট কৌটার উচ্চচাপে ওষুধ ভরা থাকে। এই কোটোর থেকে স্প্রের মতো বেরিয়ে আসে ওষুধ। তাই এদের এরোজল ইনহেলার বলা হয়। এরোজল যে ওষুধটি শ্বাসনালীতে পৌঁছে দেওয়া যায় তার সূক্ষ্ম কণার মাপ সবসময়ের পাঁচ মাইক্রনের কম হওয়া উচিত। এক মিলিলিটারের এক হাজার ভাগের এক ভাগ হল এক মাইক্রন। ছোট আকারের এই ইনহেলারগুলিতে ওষুধের অনেকগুলি মাত্রা একসঙ্গে থাকে। প্রতিবার নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ বের হয়। এজন্য একে মিটারডোজ ইনহেলার বলা হয়। এই যন্ত্রে ওষুধটি মিহি পাউডার হিসাবে থাকে আর থাকে ছড়ানোর কাজ করে এমন একটি রাসায়নিক (ডিসপারসাল এজেন্ট) এবং ওষুধের পাউডারকে ঠেলে বার করে এমন একটি রাসায়নিক (প্রপিলান্ট সিস্টেম)। এই ইনহেলারের গোড়ায় টিপলে প্রতিবারই একটি নির্দিস্ট মাত্রায় ওষুধের ধোঁয়া বের হয়। যাকে বলা হয় পাফ্ বা টান। কর্টিজেন ওষুধের এরোজল বাজারে আসার সাথে সাথে চিকিৎসক সহলে বিপুল আলোড়ন তৈরি হয়েছে। এই নতুন কর্টিজোন এরোজল বা ইনহেলার ওষুধগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে তারা শুধুমাত্র নির্দিস্ট জায়গায় কাজ করবে। সপ্তাহে এক বা দু’ বারের বেশি হাঁপানি রোগের কষ্ট পায় এমন যেকোনো মানুষ এই ওষুধ ব্যবহার করতে পারে। ইনহেলার কর্টিজোন প্রতিদিন ব্যবহার করতে হয়। দিনে দুই থেকে তিনবার। ইনহেলার কর্টিজোন শিশুদের বেলায় ব্যবহার করে যথেষ্ট ভালেঅ ফল পাওয়া যায়। ফুসফুসের স্বাভাবিক ক্ষমতা তাড়াতাড়ি ফিরে আসে। যে সমস্ত শিশু স্টেরয়েড বড়ি বা তরল না খেলে শ্বাসকষ্টের হাত থেকে রেহাই পেত না তাদের বেলায় ইনহেলারের স্টেরয়েড দিয়ে দেখা গেছে প্রায় সত্তর থেকে নব্বই শতাংশ খাবার ওষুধ কম করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কর্টিজোন ইনহেলার দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে মুখে ছত্রাক জন্মাতে পারে, গলার আওয়াজ কর্কশ হতে পারে। এ ধরনের উপসর্গ ঠেকাতে ইনহেলার ব্যবহার করার পরই মুখ ধুয়ে নিতে হয়। স্পেসার নামক একরকমের যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ওষুধ ব্যবহার করলে এই অসুবিধা অনেক কমে যায়। শিশুদের শ্বাসকষ্ট বাড়াবড়ি পর্যায়ে পৌঁছলে বেবিমাস্ক লাগিয়ে নেবুলাইজার খুবই উপকারী। যেকোনো বয়সে রোগের তীব্রতা বেড়ে গেলে এই যন্ত্র খুবই কাজ দেয়। বর্তমানে লং অ্যাক্টিং বিটা-টু এগনিস্ট ও কার্টিকোস্টেরয়েড যুক্ত ইনহেলার সাহায্যে নেওয়া হল হাঁপানির দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসার প্রধান স্তম্ভ। সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন