শীতের সর্দি আয়ুর্বেদে নির্মূল
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-15 15:32:34
শীত ঋতু নিঃসন্দেহে অধিকাংশ মানুষের পক্ষে আরামদায়ক। অবশ্য যাদের শীতবস্ত্র কেনার মতো সামর্থ নেই কিংবা এখনও যারা স্থায়ী নিজস্ব ঘরের অভাবে এখানে-ওখানে কোনোমতে জীপন যাপন করছেন তাদের কাছে শীতকালে সদ্য হওয়া বা কোনো ক্রনিক রোগের প্রকোপ ভুগতে থাকেন, তাদের পক্ষেও শীতকাল অভিপ্রেত নয়। যে সমস্ত রোগে বিভিন্ন মানুষ ভুগতে থাকেন, সেগুলোর মধ্যে খুবই সাধারণ একটা অসুখ হল সর্দি। সর্দিকে আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় প্রতিশ্যায় বলা হয়েছে। সর্দির কারণ ঠান্ডা জলে স্নান, ঠান্ডা লাগানো, নাকে ধোঁয়া-ধুলোর প্রবেশ, দিনে ঘুমানো, রাত্রি জাগা, ঋতু-বিপর্যয় প্রভৃতিকারণ কফ ঘন হয়, তখন বায়ু কুপিতে হয়ে সর্দি সৃষ্টি করে। সর্দিতে পিত্ত, কফ ও রক্তেরও যোগ থাকত পারে। সর্দি শুরু হওয়ার পূর্বের লক্ষণ মাথাভার , গা ম্যাজম্যাজ করা, নাক থেকে জল গড়ানো এই সমস্ত লক্ষণ প্রকাশ পায়। সর্দিতে বায়ুর প্রকোপ থাকলে নাক দিয়ে হলদে রঙের গরম ধারা গড়িয়ে পড়ে, রোগীর শারীরিক গঠন সাধারণত কৃশ বা পাতলা হয়। সব সময় গরম অনুভব হতে থাকে। মনে হয় নাক দিয়ে ধোঁয়াসহ আগুন বেরিয়ে আসছে। কফের প্রকোপ থাকলে কফের প্রাধান্য বা প্রকোপ থাকলে নাক দিয়ে প্রচুর পরিমাণে সাদা রঙের ঠান্ডা কফ বের হয়, প্রচুর পরিমাণে সাদা রঙের ঠান্ডা কফ বের হয়, রোগীর চোখ ও শরীর ফ্যাকাসে দেখায়। তাছাড়া মাথাভার লাগে। গলা, ঠোঁট, তালু চুলকোয়। মাঝেমধ্যে কাশি হয়। বায়ু, পিত্ত, কফের প্রকোপ তিনটি দোষেরই প্রকোপ থাকলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হয়, ঘ্রাণশক্তি কমে যায়, নাক কখনো খোলা থাকে। আবার সর্দিতে রক্তের প্রকোপ থাকলে নাক দিয়ে রক্ত পড়ে, চোখ লাল হয়, মুখে ও নিশ্বাসে দুর্গন্ধ হয় এবং ঘ্রাণশক্তি থাকে না। এক্ষেত্রে জ্বর, কাশি প্রভৃতি লক্ষণও প্রকাশ পায়। প্রতিশ্যায়ের কৃচ্ছ্রসাধ্য লক্ষণ যে সমস্ত প্রকাশ পেলে রোগ নিরাময়ে কষ্ট তা জানা দরকার। যে প্রতিশ্যায়ে নাসারন্ধ্র কখনও ভেজা, কখনও শুকনো, কখনো বন্ধ, কখনো পরিষ্কার এবং রোগীর ঘ্রাণশক্তি নষ্ট ও নিঃশ্বাসের সঙ্গে দুর্গন্ধ বের হয়, সেই প্রতিশ্যায়ের চিকিৎসা যথাসময়ে না করলে, রোগই অসাধ্য হয়ে থাকে। পুরাতন প্রতিশ্যায়ে কফ থেকে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কৃমি সৃষ্টি হয়। এর থেকে মাথার রোগও সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া ঘ্রাণশক্তি অল্পতা, প্রবল চোখের রোগ, কাশি, অগ্নিমাদ্য প্রভৃতি রোগও সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। যাইহোক, সাধারণ সর্দিকাশি থেকেও যে অন্যান্য রোগ হতে পারে এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। সর্দি যাতে সহজে না হয় সে বিষয়ে পূর্ব থেকে সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে। আয়ুর্বেদ সূত্রানুসারে যে কোনো দোষের সঞ্চয় প্রথমে হয়। পরে যথাক্রমে প্রকোপ, প্রসর ও স্থান সংশ্রয় হয়ে রোগ উৎপত্তি হয়। এক্ষেত্রেও শীতঋতু আসার পূর্ব থেকেই যে সমস্ত কারণে সর্দি বা প্রতিশ্যায় হতে পারে, সেই সমস্ত কারণগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। উল্লেখ আছে যে, হেমন্তে সঞ্চিত কফ শীতে প্রকোপিত হয়ে রোগ সৃষ্টি করে। সর্দি হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পূর্বে হাতের কাছে সহজপ্রাপ্য ভেষজ ব্যবহার করলে অনেকটাই উপশম হবে।
- তুলসি:
- প্রাপ্ত বয়স্করা: তুলসী পাতার রস দু’চা-চামচ (দশ মিলিলিটার) ও মধু আট-দশ ফোঁটা প্রত্যেকদিন খেতে হবে।
- ছোটদের ক্ষেত্রে: চার থেকে দশ ফোঁটা তুলসীর রস ও দু’ থেকে চার ফোঁটা মধুসহ (বয়সানুসারে) দিনে দু’বার।
- আদা:
- আদার রস এক চা-চামচ মধুসহ নিয়মিত খেতে হবে।
- শুঁঠ, পিপুল, গোলমরিচ তিনটিকে সমান মাত্রায় গুড়ো করে আড়াইশো মিলিগ্রাম মধুসহ সকাল ও সন্ধ্যায় কয়েকদিন খেলে উপকার হবে।
- ছোট পরিস্কার কাপড়ের টুকরোতে কালোজিরে নিয়ে পুটলি করে ঘ্রাণ নিলে সদ্য হওয়ার প্রতিশ্যায়ে নাক থেকে জলপড়া আরোগ্য হয়।
- একটু আদা, দু’টো তেজপাতা, দু’টো গোলমরিচ, তিন-চারটে কাবাব চিনি, দু’টো লবঙ্গ সহ এককাপ জল পাত্রে নিয়ে তা ঢাকা দিয়ে ফুটিয়ে, ছেঁকে এক চামচ চিনি মিশিয়ে(মধুমেহ থাকলে চিনি বাদ) ঈষদুষ্ণ অবস্থায় চায়ের মতো দিনে এক-দু’বার পর পর কয়েক দিন খেলে উপকার হবে।
- আদা ও পেঁয়াজ একসঙ্গে ভেজে খেলেও উপশম হয়।
- সামান্য শক্ত হয়ে বসে যাওয়া সর্দি বা কফ তুলতে বাসকপাতা তিন-চারটি গোলমরিচ ও কাবাবচিনি ও মিছরি মিশিয়ে সেদ্ধ করে খেলে দারুণ কাজ দেয়।
- প্রতিশ্যায়ের পূর্বরূপ বা রূপ প্রকাশ পেলে স্নান ও পানে ঈষদুষ্ণ জল ব্যবহার করা উচিত।
- কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে মৃদু বিরেচন (ইসবগুল) জাতীয় ওষুধ খাওয়া আবশ্যক।
- মাথা ও কান ঢেকে রাখা উচিত।
- একটি গামলা বা বালতিতে হালকা গরম জল রেখে তাতে দশ থেকে পনেরো মিনিট দু’পা ডুবিয়ে রাখলে বিশেষ উপকার হয়। জল থেকে পা তুলে শুকনো কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখতে হবে, যেন ঠান্ডা না লাগে।