শ্বাসের কষ্ট যোগাতে ভ্রষ্ট
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-16 10:46:30
হাঁপানি বা অ্যাজমা আসলে এক ধরনের শ্বাসকষ্ট। ঘনঘন নিঃশ্বাস- প্রশ্বাসের অসুবিধা বা বাধাপ্রাপ্তি। একে এয়ারওয়ে ডিজিজ অথবা অবস্ট্রাকশনিং ডিজিজ বলা হয়ে থাকে। আমাদের শরীরে নাক থেকে ফুসফুস পর্যন্ত যে শ্বাসের ক্রিয়া ঘটে, তাকে শ্বাসনতন্ত্র বা রেসপিরেটরি সিস্টেম বলে। নাসাপথ ও দুটো ফুসফুস অবলম্বনে শ্বাসের ক্রিয়া বৈচিত্র্যময়। এতে সংশ্লিষ্ট নাক, গলা বা ফ্যারিংস, ল্যারিংস, শ্বাসনালী বা ট্রাকিয়া, দুটো ব্রম্কাস ও ফুসফুস প্রভৃতি যন্ত্রাদি নিয়ে শ্বসনক্রিয়া সম্পন্ন হয়। নাসাপথ ব্যতীত খাদ্যপথ মুখ দিয়েও আমরা শ্বাস গ্রহণ করতে পারি। আমাদের শ্বাসনালী ফুসফুসে পৌঁছানোর আগে দুটো ব্রম্কা থেকে ছোট ছোট অসংখ্যা শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়েছে। এদের ব্রম্কা বা ব্রম্কি বা ব্রম্কাস বলা হয়ে থাকে। ফুসফুসে ব্রম্কাই আরো ক্ষুদ্র শাখা ব্রম্কিয়াসে বিভক্ত হয়েছে।ব্রম্কিওল আরো ছোট ছোট শাখাপ্রশাখা রূপে ফুসফুসের গভীরে পৌঁছে এয়ার স্যাক বা অ্যালভিওলাইতে এসে শেষ হয়েছে। আমরা শ্বাস নেওয়ার সময় বায়ুর সঙ্গে যে অক্সিজেন নিই তা এই পথে ফুসফুসে পৌঁছয়। এর মাধ্যমেই ডিফিউসান পদ্ধতিতে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাইঅক্সাইড বিনিময় ঘটে। মাঝে মাঝে বাইরে থেকে আসা বেশ কিছু বস্ত্ত আমাদের শরীরে ঢুকে পড়ে। এইগুলো থেকে অ্যালার্জি হয়। এগুলো শরীরে সহ্য হয় না। এগুলোকে অ্যালার্জেন বলে। এই অ্যালার্জেনের জন্য ছোট ছোট ব্রম্কার পথ বা প্যাসেজগুলো সরু হয়ে যায়। শ্বাস স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারে না। এবং এটা মাঝে মাঝেই ঘটে থাকে। এটাকেই আমরা ব্রম্কিয়াল অ্যাজমা বা হাঁপানি বলে থাকি। বিভিন্ন শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। সব রকমের শ্বাসকষ্টই অ্যাজমা নয়। অ্যালার্জি বা কোনো কারণে শ্বাসনালী ট্রাকিয়ার মধ্যে প্রদাহ বা আইটিস বা ইনফেকশন হলে বলি ট্রাকিয়াইটিস। ফ্যারিংসে হলে বলি ফ্যারিংজাইটিস, ল্যারিংস বা স্বরযন্ত্রে প্রদাহ হলে বলি ল্যারিংজাইটিস ইত্যাদি। এছাড়া রাইনাইটিস, সাইনাইটিস সহ বিভিন্ন কারণ থেকে শ্বাসকষ্ট হয়। নিয়মিত ভাবে শ্বাসের ব্যায়াম, আসন ও প্রাণায়াম করা দরকার। তাতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পায়। অক্সিজেন কনজামশন বাড়ে। ব্রম্কোডায়েলেশন বাড়ে। তাই ব্রিদিং এক্সারসাইজ, বিশেষ আসন ও প্রাণায়ামকে ন্যাচারাল ব্রম্কোডায়ালেটর বলা হয়। এছাড়া হজমের গন্ডগোলে ও গ্যাসের প্রকোপ ফ্লেটাস ডিসটেনশন হয়েও রেসপিরেটরি অবস্ট্রাকশন তৈরি হয়ে কিছুটা হাইপো ভেন্টিলেশন হয়ে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এটাও শ্বাসকষ্টের বা ব্রম্কোস্পাজমের অন্যতম কারণ। যোগাসন শ্বসনতনত্র এবয় পরিপাক তন্ত্র উভয়কে যতাযথ কার্য সম্পাদনে সাহায্য করে। ফলে সহজে শ্বাসকষ্ট হতে পারে না। তাই কার্য করে বলা যায় ‘শ্বাসের কষ্ট যোগাতে ভ্রষ্ট’। হাঁপানি, সরকার্শি ও অ্যালার্জি নিরাময়ে বিভিন্ন প্রকার আসন সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল। ধনুরাসন পদ্ধাত: উপুড় হয়ে শুয়ে পা দু’টো হাঁটুর কাছ থেকে ভাঁজ করে গোড়ালি দুটো জোড়াভাবে নিতম্বের কাছে আনুন। এবার দু’হাত দিয়ে পায়ের গোছ দুটো বেশ শক্ত করে ধরে বুক এবং ঊরু মাটি থেকে ওপরের দিকে টেনে তুলুন। তলপেট মাটিতে ঠেকে থাকবে। দৃষ্টি সামনে ও ঘাড় পেছন দিকে হেলে থাকবে। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের মনে মনে দশ থেকে ক্রমশ বাড়িয়ে তিরিশ গুনুন, তিনবার অভ্যাস করুন। প্রতিবারের পর উপুড় হয়ে শুয়ে শবাসনে বিশ্রাম নিন। শশঙ্গাসন পদ্ধতি: বজ্রাসনের ভঙ্গিতে বসে হাতের বুড়ো আঙুল বাইরের দিকে রেখে দু’হাত দিয়ে দু’পায়ের গোড়ালি ধরুন। সামনের দিকে ঝুঁকে মাথার তালু হাঁটুর সামনে মাটিতে রাখুন। কপাল হাঁটুতে ঠেকে থাকবে। ডিগবাজি খাওয়ার ভঙ্গিতে নিতম্ব ওপর দিকে তুলুন (কিন্তু ডিগবাজি খাবেন না)। এ অবস্থায় স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসে মনে মনে দশ থেকে ক্রমশ বাড়িয়ে তিরিশ গুনুন এবং শরাসনে বিশ্রাম নিন। এরূপ তিনবার অভ্যাস করুন। মৎস্যাসন পদ্ধতি: পদ্মাসন করে দুটো কনুইয়ের সাহায্যে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দুটো মাথার দু’পাশে মাটিতে রেখে তার ওপর ভর দিয়ে পিঠটাকে মাটি থেকে তুলুন। ঘাড় হেলিয়ে দিয়ে মাথার তালু মাটির ওপর রাখুন। এবার দু’হাত দিয়ে দু’পায়ের বুড়ো আঙুল ধরে টানুন আর বুক উঁচু করুন। কনুই মাটিতে লাগান। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে মনে মনে দশ থেকে ক্রমশ বাড়িয়ে তিরিশ গুনুন। এরপর হাত মাথার পাশে এনে পিঠ আলগা ও মাথা সোজা করে শবাসিনে বিশ্রাম নিন। এরূপ তিনবার। উষ্ট্রাসন পদ্ধতি: হাঁটু গেড়ে (নিলডউন ভঙ্গিতে) বসুন। পিছনদিকে হেলে দু’হাত দিয়ে পায়ের গোড়ালি ধরে মাথা পিছনের দিকে ঝুলিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে পেট সামনের দিকে এগিয়ে দিন। ডান হাতের বুড়ো আঙুল ডান গোড়ালির ভিতর দিকে ও অন্যান্য আঙুলগুলো বাইরের দিকে থাকবে। এবং বাঁ-হাত বাঁ-গোড়ালির ওপর অনুরূপভাবে থাকবে। পায়েল পাতা মাটিতে পাতা থাকবে। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে মনে মনে দশ থেকে ক্রমশ বাড়িয়ে তিরিশ গোনার পর শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে। এরূপ তিনবার। বদ্ধপদ্মাসন পদ্ধতি:পদ্মাসনে বসে দু’হাত পেছন দিক দিয়ে ঘুমিয়ে ডান পায়ের বুড়ো আঙুল ডান হাতে এবং বাঁ-পায়ের বুড়ো আঙুল বাঁ-হাতে ধরুন। মেরুদন্ড সোজা রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। এটি হল বদ্ধপদ্মাসন। দশ সেকেন্ড থেকে ক্রমশ বাড়িয়ে এক মিনিট অভ্যাসের পর শবাসনে বিশ্রাম নেবেন। এরূপ তিনবার। বৃষাসন পদ্ধতি: ডান পা হাঁটু থেকে মুড়ে গোড়ালির ওপর জননেন্দ্রিয় রেখে বসুন। বাঁ-পা পেছনের দিকে ছড়িয়ে দিন। বাঁ-পা সোজা ও পায়ের পাতা পাতা থাকবে। দু’হাত ডান হাঁটুর ওপর রেখে মাথা হেলিয়ে দিয়ে মেরুদন্ড পেছনের দিকে বেঁকান। স্বাভাবিক শ্বাসে দেহের ভারসম্য বজায় রেখে কুড়ি সেকেন্ড থাকুন। এরূপ তিনবার। বাতক্রম কপালভাতি পদ্ধতি:প্রথমে হাঁটু মুড়ে বজ্রাসনের ভঙ্গিতে বসুন। যারা পারবেন না তারা সুখাসনে বা বাবু হয়ে মাটিতে বসবেন। যারা মাটিতে বসতে পারবেন না তারা চেয়ারে বসে দু’হাত দু’হাঁটুর ওপর রাখুন। এবং দু’নাক দিয়ে দ্রুত শ্বাস ছাড়ুন এবং সঙ্গে সঙ্গে পেট টানুন। এইভাবে দ্রুত নাক দিয়ে দশবার টানা-ছাড়া করুন। এই হল একটি সেট। এভাবে দু’তিন সেটে অভ্যাস করুন। অভ্যাস হয়ে গেলে ক্রমশ বাড়তে পারেন। প্রতিটি সেটের পর বিশ্রাম নিন। কামারের হাপরে মতো টানা-ছাড়া হয় বলে অনেকে একে ভস্ত্রিকা বলে অভিহিত করেন। হাঁপানি-সর্দিকাশি-অ্যালার্জির বিরুদ্ধে একমাত্র প্রতিরোধের ব্যবস্থা হল যোগাসন। যোগ ছাড়া এই রোগগুলো রোখার কোনও উপায় নেই।