বারবার প্রসাব মানে কি সুগার?
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-16 11:04:33
বারবার প্রস্রাবের সংক্রমসণ শুধু সুগারের জন্যই নয়, এর পিছনে আরো অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন ছেলেদের পঞ্চাশ বছর পরে প্রস্টেটের সংক্রমণ, প্রস্টেটে টিউমার এবং প্রস্টেট ক্যানসারের সূচনায় হতে পারে বার বার প্রস্রাব। অল্প বয়স্ক মেয়েদের বিশেষ করে আঠারো বছরের নীচে মেয়েদের পিরিয়ডের গন্ডগোল থেকে হতে পারে। আঠেরো বছর পর থেকে বিবাহিত মহিলাদের বার বার প্রস্রাবে সংক্রমণ হতে দেখা যায়। ইউরিনারি ট্র্যাক্টে সংক্রমণ হলেও হতে পারে শুধু নয় সেই সম্ভাবনাই বেশি দেখা যায়। এছাড়া বাচ্চা হবার পরে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হতে পারে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে মেয়েদের ইউরিনারি ট্র্যাক্ট সংক্রমণ থেকে বারবার প্রস্রাব হতে পারে অথবা হরমোনাল পরিবর্তনের জন্য হতে পারে। সুতরাং সবটাই ডায়াবেটিস বলে ধরে নিলে চলবে না। চিকিৎসার ব্যাপারে প্রথমেই দেখে নিতে হবে ডায়বেটিসকে। কারণ ডায়বেটিস যে কোনো বয়সেই হতে পারে। এমনকী অল্প বয়সেই। যাকে বলে জুভেনাইল ডায়বেটিস। আর বয়স বাড়লে যে ডায়াবেটিসটা হয় সেটার পিছনে পারিবারিক ইতিহান থাকতে পারে। অথবা ডায়বেটিস হতে পারে ওভার ওয়েটের জন্য। তাই চিকিৎসার প্রথম ধাপ হকে ডায়বেটিসে আছে কি না জেনে নেওয়া। এটা করতে গেলে শুধু ফাস্টিং বা পি.পি. ছাড়া আরো একটা পরীক্ষা করতে হবে, যাকে বলে এইচ.বি.এ.ওয়ান.সি। এই পরীক্ষা ডায়বেটিসটা সত্যি সত্যিই দীর্ঘদিনের নাকি সদ্য হয়েছে—এর একটা মূল্যায়ন করে দেবে। ডায়বেটিসকে সঠিকভাবে চেক করে নিয়ে অন্যান্য কারণগুলোকে দেখতে হবে সমস্যাটা কী কারণে হচ্ছে।কারণ নির্ধারণটা হচ্ছে জরুরী। শুধু ডায়বেটিস কেন, অনেক সময় দুটোই থাকতে পারে, যেমন প্রস্টেট সংক্রান্ত সমস্যা এবং ডায়বেটিস কিংবা ডায়বেটিস এবং ইউরিনারি ট্র্যাক্ট সংক্রমণ। সতরাং মূল্যায়ন যদি সঠিকভাবে না হয় তবে ডায়বেটিসকে সবসময় দোষ দেওয়া যায় না। ডায়বেটিস ধরা পড়লে আগে ডায়বেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সেটা ওষুধ দিয়ে হোক কিংবা ইনসুলিন দিয়ে। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করার পরেও যদি বারবার প্রস্রাব হতে থাকে তখন দেখতে হবে অন্য কোনও রোগ রোগীকে কষ্ট দিচ্ছে কি না। সেটা করতে গেলে প্রস্রাবের রুটিন ও কালচারটা করতে হবে। রুটিন কালচার যদি সংক্রামণ ধরা পড়ে তার চিকিৎসা ঠিকাক করতে হবে। এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার পরেও যদি দেখা যায় বারবার প্রস্রাবের সমস্যাটা থেকে যাচ্ছে তখন আমাদের জানতে হবে আর কী কারণ রয়েছে, সেটাকে খঁজতে হবে। এই খোঁজার মধ্যে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হল বয়স, বিবাহিত বয়সের মূল্যায়ন এবং মাসিক বা পিরিয়ডের হিসেব। এখানে আর একটা জিনিসও মনে রাখতে হবে, যমন মহিলা রোগীর কোনো অপারেশন হয়েছে কি না। কোনো কারণে যদি কম বয়সে ইউটেরাস বা ওভারি বাদ দেওয়া হয় তাহলে তাদের আর্লি মেনোপজাল লক্ষণ দেখা দেয় এবং যাদের মেনোপজ হয়েই গেছে তাদেরও বারবার প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তখন হরমোন দিতে হবে। এখানে মনে রাখা দরকার চল্লিশ বা পঞ্চাশ বছর বয়সের পর হরমোন দিতে গেলে বার বার ভাবতে হবে যে কীরকম হরমোন দেওয়া হবে কারণ এই হরমোন কিন্তু ব্রেস্ট ক্যানসারের আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং তা মনে রেখে ঠিকমতো হরমোন দিতে হবে। আরো একটা বিষয় আমাদের দেশে এখন খুব দেখা যাচ্ছে যেটা থেকে বহুমূত্র, তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে, সেটা হল ভিটামিন-ডি ডেফিসিয়েন্সি। সচরাচর সে-সব মহিলাদের হয় যারা বাড়ির ভিতরে থাকে, বাইরে কোজে বেরোয় না, রোদের সংস্পর্শে আসে না। কারণ রোদের সংসাপর্শে আমাদের স্কিন ভিটামিন-ডি তৈরি করে। তাদের ক্ষেত্রে সেটির ঘাটতি হয় । কারো শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি আছে কি না রক্তের একটা পরীক্ষা করলেই বোঝা যাবে। এছাড়াও চল্লিশের পরে যেকোনো মহিলারই ক্যালসিয়াম ডেফিসিয়েন্সি হতে পারে। সেখানে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টেশন, ভিটামিন-সি-র সাথে অতবা ভিটামিন-সি ব্যতীত এবং হরমোন ডেফিসিয়েন্সি-এই তিনটে বিষয়কে একসঙ্গে মাথায় রেখে তাদের চিকিৎসা করতে হবে। পোস্ট মেনোপজাল এবং পোস্ট হিস্টেরেক্টমির ক্ষেত্রে রোগীদের এভোবে চিকিৎসা করতে হবে তার ফলে বারবার হওয়া প্রস্রাবকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। এটা জেনে রাখা দরকার এই সাপ্লিমেন্টেশন একবার চালু হলে সারাজীবনই চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে তার হরমোন আপনা থেকে ফিরবে না তবে ভিটামিন-ডি’টা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে রক্তের রিপোর্ট দেখে, সেটাকে কমিয়ে দেওয়া বা বন্ধ করে দেওয়া যাবে। সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন