ঋতু পরিবর্তনের ফলে ত্বকে হাজারো সমস্যা
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-16 11:50:38
পুরো দেহটই তো আমাদের ত্বকে মোড়া। দেহের মোট ওজনের ষোলো ভাগের এক ভাগই হর ত্বক। এর আবার দুটো স্তর। বাইরেরটা এপিডারমিস বা বহিঃত্বক এবং ভিতরের ডারমিস বা অন্তঃত্বক। বহিঃত্বকেরে একেবারে ওপরে থাকে মৃত কোষের স্তর কেরাটিন। আমাদের অজান্তেই যা খসে পড়ে যায়। বহিঃত্বকে কোনো রক্তনালী নেই। রক্তনালী থাকে অন্তঃত্বকে, সঙ্গে থাকে স্নায়ু, ঘর্ম ও তৈলগ্রস্থি এবং বিশেষ ধরনের কিছু কোষ। অনেক কাজ করে আমাদের এই ত্বক। বাইরের আঘাত থেকে দেহকে রক্ষা করে। জল ও নানা খনিজ লবণের ভারসাম্য রক্ষা করে, দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া ভিটামিন ‘ডি’ সংশ্লেষ করে দেহের নানা বজ্র্য পদার্থকে ঘামের মাধ্যমে বার করে দেং। স্পর্শেন্দ্রিয়ের কাজ করে। দুশ্চিন্তায় যেমন চোখের তলার কালি পড়ে, তেমন অপুষ্টিতে ত্বক হয় শুষ্ক আর পুষ্টির প্রতিফলনের ত্বক হয়ে ওঠে লাবণ্যে ভরপুর। শরীর, মন ও ত্বক পরস্পরের সাথে জুড়ে থাকে। আর এই ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রতিনিয়ত কসমেটোলজিস্টদের কাছে, কখনোবা ডার্মাটোলজিস্টদের কাছে ছুটে যান নানা বয়সের মানুষ। ত্বকের সেই সব রোগ নিয়ে এখানে আলোচনা করা হল। একটা কথা মাথার রাখা দরকার, ত্বকের রোগে কখনো নিজে থেকে ওষুধ কিনবেন না বা হাতুড়েদের কাছে যাবেন না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। প্রকৃতিতে ঋতুর সমাহার থাকলেও মূলত তিনটি ঋতুকেই গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে ধরা হয়। এই তিনটি ঋতুতেই ত্বকের নানান ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। শরৎ বা হেমন্ত কিংবা বসন্তে প্রকৃতি সুন্দর থাকে বলে আমাদের ত্বকে সেরকম কোনো সমস্যা সচরাচর দেখা যায় না। ঋতু পরিবর্তনের ফলে ত্বকের সমস্যা সাধারণত ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে নানা ধরনের ত্বকের সমস্যা সৃষ্টি হয়। শীতে ত্বকের কেরাটিন স্তর শুকনো হয়ে যাবার ফলে নানা ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণ হয়। শুষ্ক ত্বকের কারণে সোরিয়াসিস, ইকথায়োসিস, অ্যাটোপিক একজিমা ইত্যাদি রোগ শুরু হবার সম্ভবনা তৈরি হয়।
- ইকথায়োসিস ভালগারিস: এই রোগ প্রধানত বংশগত। এই রোগে গায়ের চামড়া মাছের আঁশের মতো হয়ে যায়। কারোর বেশি, কারোর কম হয়। প্রধানত শীতকালে এই রোগটা হয়। এবং শীতের শেষ বা গরমের শুরু পর্যন্ত এই রোগটা থাকে।
- চিকিৎসা: এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে সব থেকে ভালো চিকিৎসা হল স্নানের পরে সারা গায়ে ভালো করে তেল মাখা। তেল ছাড়াও আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ক্যাপসুল ব্যবহার করা যেতে পারে। এই রোগ হলে ফেলে না রেখে সত্বর চিকিৎসা করা উচিত।
- অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস: এক ধরনের একজিমাকে ডাক্তারি পরিভাষায় অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস বলা হয়। বর্ষার ভিজে আবহাওয়ায় এবং শীতে শুকনো পরিবেশে অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিসের প্রবণতা বাড়ে। যেকোনো বয়সের মানুষের এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে বাচ্চাদের এই অসুখ বেশি হয়। এগুলি দেখতে অনেকটা লালচে রঙের ছোট ছোট জলভরা ফোস্কার মতো। খুব চুলকায়। এই একজিমা দু’গালে, কনুইয়ে ও হাতের খাঁজে, হাঁটু এবং হাঁটুর পিছনে, পায়ে-হাতে দেখা যায়। এই অসুখের যথার্থ কারণ আজও জানা যায়নি। এই রোগের নতুন ওষুধ ট্যাক্রোলিমাস ক্রিম। ওষুধ হিসাবে অ্যান্টিহিস্টামিন ড্রাগ এবং স্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার করা হয়।
- সোরিয়াসিস: এই রোগেনখ মোটা হয়ে যায়, নখ চামড়া থেকে খুলে আসে। ত্বকে লাল লাল চাকা ভাব ফুটে ওঠে। আক্রান্ত স্থান থেকে মাছের আঁশের মতো ত্বক উঠতে দেখা যায়।
- আর্টিকেরিয়া: অনেক সময় শুষ্ক ত্বকের প্রভাবে ত্বক ভীষণ চুলকাতে থাকে। এগুলোকে চলতি কথায়‘ আমবাত’ বলে। এটা দেখতে লাল, চাকা চাকা। ভীষণ চুলকায়। এইসব রোগীদের ক্ষেত্রে শরীরের কোনো জায়গায় লাল হয়ে বেশ কিছু সময় ফুলে থাকে। ডাক্তারি পরিভাষায়ে একে আর্টিকেরিয়া বলা হয়। এটা সাধারণত থাইরয়েডের অসুখ, পেটের কোনো অসুখ (পরজীবী সংক্রামণ জাতীয়), ডায়াবেটিস অথবা অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। এমনকী শরীরের অভ্যন্তরীণ কোনও সমস্যার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে।
- সাবান: এই সময় সবরকম সাবানই ব্যবহার করা যায়। তবে যাদের ত্বক রক্ষ ও খসখসে তাদের ক্ষেত্রে গ্লিসারিন জাতীয় সাবান ব্যবহার করাই ভালো।
- তেল: নারকেল তেল লাগানো যেতে পারে। কখনো সরষের তেল মাখাবেন না।
- স্নানের জল: স্নানের জল খুব ঠান্ডা হওয়া উচিত নয়। হালকা গরম জলে স্নান করানো উচিত।
- শ্যাম্পু: সপ্তাহে দু’বার শ্যাম্পু করানো উচিত। এতে চুল পরিষ্কার থাকে। তারপর যেকোনো ভালো তেল লাগানো যায়। এর ফলে চুল রক্ষা হয়ে যায় না।
- খাবার-দাবার: ডায়েটে যেন ভিটামিন-‘এ’ এবং ভিটামিন-‘সি’ বেশি পরিমাণে থাকে। প্রতিদিনের ডায়েট প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল থাকা উচিত।
- পোষাক: শিশুর পোশাক সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত। সুতির ঢিলেঢালা পোশাকই পরানো ভালো।