×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

ডায়াবেটিসের ওষুধ ‘মেটফরমিন’ চমকে দিচ্ছে চিকিৎসা জগতকে

হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-17 10:49:27

ডায়াবেটিসের ওষুধ মেটফরমিনকে অনেকেই চেনেন। ভারতবর্ষে চারজন টাইপ-টু ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে তিনজন রোগী মেটফরিন ব্যবহার করেন। এম.বি.বি.এস ছাত্রদের ওষুধ বিজ্ঞানের পাঠ্যক্রম মেটফরমিন ডায়াবেটিসের জন্য ‘প্রয়োজনীয় ওষুধ’-এর তালিকা ভুক্ত ওষুধ। শিক্ষকদের একাংশ মনে করেন ডায়াবেটিসের ওষুধ মেটফরমিন সম্পর্কে সাধারণ তথ্যাবলি না জেনে পরীক্ষা-হলে যাওয়া উচিত না। ডায়াবেটিসের ওষুধ হিসাবে মেটফরমিন সমাজে এমন পরিচিত লাভ করেছে যে অন্যান্য রোগে বা সমস্যাতে চিকিৎসকরা মেটাফরমিন ব্যবহারের পরামর্শ দিলে রোগীরা অবাক হন। পরিচিত ডাক্তারদের সাথে আলোচনা করে ব্যবহার শুরু করেন। রোগীরা মনে মনে ভাবেন ‘আমার ডায়াবেটিস রোগ নেই অথচ ডাক্তার কেন এই ওষুধ দিলেন’। অনেক বয়স্ক চিকিৎসক আমাকে ফোন করে জানতে চান মেটফরমিনের বহুমুখী কার্যকারিতার কথা। মজার ব্যাপার, এই বহুমুখী কার্যকারিতা সম্পন্ন মেটফরমিনকে ওষুধ বিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য অনেক পথ হাঁটতে হয়েছে। ১৯২০ সালে ওষুধটি ফরাসি দেশের এক গুল্ম থেকে সংশ্লেষিত হলেও ৩৭ বছর পর ১৯৫৭ সালে ডায়াবেটিস রোগে প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মুখোমুখি হয়। ১৯২২ সালে প্রথম বিজ্ঞান পত্রিকায় জানা যায় মেটফরমিনের রক্তে গ্লুকোজ কমানোর ক্ষমতা রয়েছে। পরবর্তীকালে বিভিন্ন রিপোর্ট প্রকাশিত হয় ‘মেটফরমিনের গ্লকোজ খেয়ে নেওয়ার কথা’। সেইজন্য প্রথম বাণিজ্যিক নামের ফরমুলেশন ছিল গ্লুকোফেজ। আমার ধারণা, ১৯২০-১৯৫৭ সাল সময়কালে মানব সভ্যতার ইতিহাসে সোভিয়েত রাশিয়ার বেড়ে ওঠা (সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসাবে) এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনাবলী, মেটাফরমিনকে ডায়াবেটিসের ওষুধ হিসাবে প্রতিষ্ঠালাভে দেরি করিয়ে দেয়। ১৯৫৮ সালে প্রথম ইংল্যান্ড ব্যবহৃত হয়। ব্রিটিশ ন্যাশনাল ফর্মূলারিতে (বি.এন.এফ) অন্তর্ভুক্তি ঘটে। ১৯৭০ সালে অন্য বাইগুয়ানাইড (মেটফরমিন বাইগুয়ানাইড দলভুক্ত ওষুধ) বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়। ফেনফরমিন এখন বাজারে পাওয়া যায় না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্যই ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১৯৯৫ সালে আমেরিকাতে ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। দেখা যাচ্ছে, ২০১০ সালে আমেরিকাতে ৪৮ মিলিয়ন প্রেসক্রিপশনে মেটফরমিন ব্যবহৃত হয়েছে। ওষুধ বিজ্ঞানে মেটফরমিন

  • মেটফরমিন বাইওয়ানাইড দলভুক্ত ওষুধ। বাইওয়ানাইড শব্দের অর্থ দুই গোয়ানিডিন যৌগের এক সাথে থাকা। মেটফরমিনের আনবিক গঠনে কার্বন ও নাইট্রোজেনের শৃঙ্খল রয়েছে। ফলে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জৈব অনুর সাথে বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক গড়া সহজ হয়।
  • মেটফরমিন কীভাবে কাজ করে: সাধারণ ভাকে যে কোনো ওষুধের মতোই মেটফরমিন জীবনের রাসায়নিক ক্রিয়ায় প্রতিফলন ফেলে। বা আন্তঃসম্পর্ক ঘটিয়ে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটায়।
  • রক্ত থেকে গ্লুকোজকে শরীরের বিভিন্ন কোষে ঢুকতে সাহায্য করে। ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়। সাধারণ ভাবে গ্লুকোজ ইনসুলিন সাহায্য নিয়ে কোষের মধ্যে ঢোকে। গ্লুকোজ কোষের খাবার। কোষের জৈব অনুব রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় অংশ্রহণকারী এক গুরুত্বপূর্ণ যৌগ। কোষকে অর্থাৎ জীবনকে শক্তি যোগায়। ইনসুলিনের অনুপস্থিত বা অক্ষমতার (অকার্যকারিতা) জন্য কোষে গ্লুকোজ ঢুকতে পারে না। মেটফরমিন কোষের দেওয়ালকে গ্লুকোজ ঢোকানোর জন্য প্রস্তিুত করে তোলে।
  • ক্ষুদ্রান্ত্রে খাদ্য থেকে তৈরি হওয়া গ্লুকোজকে রক্তে ঢুকতে বাধা দেয়। ফলে ডায়াবেটিস রোগে রক্তের বেড়ে যাওয়া গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • লিভার প্রোটিন ও চর্বি থেকে গ্লুকোজ তৈরি বন্ধ রাখে। ফলে রক্তে চিনির মাত্রা বাড়ে না। লিভার কোষের মাই টোকনড্রিয়া, অ্যাডিনোসাইন মনোফসফেট ইত্যাদির সাথে জটিল স্পর্ক তৈরি করে চর্বি েপ্রোটিন থেকে গ্লুকোজ উৎপাদন আটকে দেয়।
  • মেটফরমিন ক্যানসার কোষের বিভাজনকে ধীরগতির করে। ফলে ক্যানসার কোষের ছড়িয়ে পড়া কিছুটা আটকে যায়। যে জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় এ ঘটনা ঘটে তা জানার চেষ্টা চলছে।
  • মেটফরমিন কোষের চলমান জঅবনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে তাকে ধীর গতির করে। ফলে কোষের আয়ু বেড়ে যায়। ক্ষয় রোধ হয়। হয়তো একদিন যৌবনকে ধরে রাখা না গেলেও প্রলম্বিত করা যেতে পারে। এটা ভাবনা।
  • অ্যাডিনোসাইন মনোফসফেট কাইনেজ-এর কাজ বাড়িয়ে সাইক্লিকে এ.এম.পি তৈরি বাড়ায় যা হৃদযন্ত্রের পেশিকোষকে দ্রুত ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষা করে। মেটফরমিন ব্যবহারকারীদের হৃদযন্ত্র বোধ হয় এই জন্য ভালো থাকে।
  • গ্লুকাগন নির্ভর সাইক্লিক এ.এম.পি বাড়ানো আটকে দেয়। এ ঘটনা সিরোসিস লিভার বা ক্যানসার রোগীর উপকার আসে।
  • মেটফরমিন কোষের মধ্যে ক্ষতিকারক অকক্সিজেন অনুর সংখ্যা অল্প মাত্রায় বাড়ায়। ফলে কোষ দ্রূত মরে না। কোষের আয়ু বেড়ে যায়। যৌবন থাকার সময়কাল মেটফরমিন একদিন এভাবেই বাড়িয়ে দেবে।
  • মেটফরমিন মোটা মানুষের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বফূর্ণ প্রথম সারির ওষুধ হতে চলেছে। সম্প্রতি মোটা হওয়াতে মেটফরমিনের ব্যবহার বাড়ছে।
  • পার্শ্বক্রিয়া: বমি, বমিভাব, পেটে অস্বস্তি, পেট ব্যথা, খিদে কমে যাওয়া (মোটা রোগের ক্ষেত্রে কাজ দেয়), বেশি মাত্রায় খেলে রক্তে ল্যাকটিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
  কোন ধরনের ডায়াবেটিসে মেটফরমিন ব্যবহার করা যাবে না:
  • ডায়াবেটিস কিটো অ্যাসিডোসিস এবং যে ডায়াবেটিস রোগীর কিডনি ও লিভার ঠিকমতো কাজ করছে না।
  • প্রসূতি ও বাচ্চাকে দুধ দিচ্ছেন এমন মায়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা উচিত নয়।
  • মেটফরমিন খাচ্ছেন এমন রোগীর মদ খাবেন না।
  • মেটফরমিনের সাথে বিভিন্ন সালফোনিল ইউরিয়া জাতীয় ওষুধ (গ্লিপিজাইড/গ্লিমিপিরাইড ইত্যাদি) মেশানো ফরমূলেশন বাজারে পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহার না করাই ভালো।
  • মেটফরমিনের মাত্রা: ৫০০ মি.গ্রা বা ১০০০ মি.গ্রা, ৬৫০ মি.গ্রা বড়ি পাওয়া যায়।
শরীরের ওজন ও গ্লুকোজের মাত্রা নির্ণয় করে মেটফরমিনের পরিমাপ ঠিক করা হয়। দিনে দু’বার খেতে হয়।
  • বাজারে বিভিন্ন বাণিজ্যিক নামের মেটফরমিন ৫০০ মি.গ্রা বড়ি ১-২ টাকা দামে পাওয়া যায়। সরকারি ন্যায্যমূল্যের দোকান থেকে সংগ্রহ করতে পারলে খরচ অর্ধেক হবে।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন