শিশুদের কানে শোনার সমস্যা
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-17 11:23:32
জন্মের সাথে সাথেই একটি শিশু তার পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের বিকাশের দ্বারা এই বৃহৎ পৃথিবীকে বুঝতে শেখে, জানতে শেখে। এই বিকাশের জন্য আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সঠিক কার্যক্ষমতা বিশেষভাবে প্রয়োজন। কোনো একটির সমস্যা থাকলেই এই সুন্দর বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং বিকাশ অসম্পূর্ণ হয়ে যায়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল কানে শোনার সমস্যা বা বধিরতা। এই সমস্যা জন্ম থেকেই থাকতে পারে, আবার বড় হয়েও সৃষ্টি হতে পারে। তবে জন্মগত হলে বা কম বয়সে এই সমস্যা থাকলে তার পরিণতি ভীষণ ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।
বাচ্চার কানে শোনার সমস্যা আছে কি না বোঝার উপায়
নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি থাকলে বুঝতে হবে বাচ্চার কানে শোনার সমস্যা থাকতে পারে।
- জোরে আওয়াজ হলেও বাচ্চা চমকে ওঠে না।
- নাম ডাকলে সবসময় সাড়া দেয় না বা তাকায় না।
- আওয়াজের দিকে ঘুরে তাকায় না।
- জোরে আওয়াজে বাচ্চার ঘুম ভাঙে না।
- মায়ের গলঅর আওয়াজ বা গান কিছুতেই আলাদা প্রতিক্রিয়া থাকে না (যেমন –গান শুনে বা মায়ের গলা শুনে হেসে ওঠা)।
- বাচ্চার সাথে কথা বললেও কথা নকল করে না বা করতে চেষ্টা করে না (যেমন-বাবা, মা,)।
- ১ বছর বয়সেও ২ থেকে ৩টি সম্পূর্ণ শব্দ বলছে না।
- কথা না বলে ইশারা করে বোঝায়।
বাচ্চার কানে শোনার সমস্যা থাকলে
বাচ্চার বয়স যতই হোক কানে শোনার সমস্যা আছে মনে হলে মীঘ্রই কোনো অভিজ্ঞ অডিওলজিস্টের সাথে যোগাযোগ করুন। উনি বাচ্চার প্রয়োজনীয় কানের পরীক্ষা করে বলে দেবেন কানে শোনার সমস্যা আছে কি না বা থাকলে কী ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন।
- বাচ্চার বয়স তিন বছর, দুটো কানেই শোনার সমস্যা আছে। ৬ মাস হল হিয়ারিং এড পরছে, কিন্তু এখনও কথঅ বলছে না—কী করা উচিত?
হিয়ারিং এড পরলে বাচ্চা কানে শোন শুরু করে, কিন্তু কথাবার্তা বুঝতে ও বলতে দুটি জিনিস থাকতে হয়। প্রথমটি হল কানে শোনার ক্ষমতা অনুযায়ী সঠিক হিয়ারিং এড নির্বাচন এবং তারপর সঠিক স্পিচ থেরাপি। সঠিক হিয়ারিং এড নির্বাচন না হলে বাচ্চা শুনতে পাবে না। ফলে কথাবার্তা বলতেও শেখে না। তাই কোনো অভিজ্ঞ অডিওলজিস্টের সাথে পরামর্শ করুন এবং জেনে নিন সঠিক হিয়ারিং এড নির্বাচন হয়েছে কি না। তারপর কোনো কোয়ালিফায়েড ও অভিজ্ঞ স্পিচ থেরাপিস্টের সাথে যোগাযোগ করুন।
- বাচ্চার বয়স ১ বছর, পরীক্ষায় বোঝা গেছে কানে শোনার সমস্যা আছে। অডিওলজিস্ট হিয়ারিং এড নিতে বলেছেন। এত কম বয়সে কি কানের মেশিন লাগানো ঠিক হবে?
অবশ্যয়। মনে রাখতে হবে আমাদের প্রত্যেকের ভাষা শেখার একটা নির্দিষ্ট বয়স আছে। সেই বয়সের পর আমাদের ভাষা শৈখা অসম্পূর্ণ হয়ে যায়। যেমন বড় হয়েও আমরা অন্য ভঅষা পূর্ণভাবে রপ্ত করতে পারি না, ছোট বয়সে না শোনা বা শেখার জন্য। তাই যত কম বয়সে হিয়ারিং এড পরবে ততই স্বাভাবিক পরিবেশে মানিয়ে নিতে এবং কথাবার্তা বলতে শিখবে। আন্তজার্তিক নিয়ম অুযায়ী ৬ মাস বয়সেই বাচ্চাকে পরীক্ষা করে সঠিক হিয়ারিং এড দিতে হয়।
- বাচ্চার শোনার সমস্যার জন্য কী ধরনের হিয়ারিং এড দেওয়া উচিত??
কানের সঠিক পরীক্ষার পর শোনার ক্ষমতা অনুযায়ী হিয়ারিং এড নির্বাচন করা হয়। মেশিনের পাওয়ারের সাথে সাথে শব্দের গুণগত মানও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পরিস্কার শুনতে না পেলে কথা শেখার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই অবশ্যই ডিজিটাল হিয়ারিং এড নির্বাচন করা উচিত এবং তা দুই কানের জন্যই। পরীক্ষায় প্রমাণিত দু’ কানে দুটি হিয়ারিং এড পরলে আমরা ভালো শুনতে পারি এবং শব্দের উৎস বুঝতে পারি। সুতরাৎ বাচ্চার জন্য দুটি কানের ডিজিটাল হিয়ারিং এড দেওয়া উচিত।
- কে করেন এই হিয়ারিং এডের সঠিক নির্বাচন ?
একমাত্র অডিওলজিস্ট-ই এই সঠিক নির্বাচন করেন। একজন অডিওলজিস্ট ৫ বছরের ডিগ্রি কোর্স (BASLP) এবং ২ বছরের মাস্টার্স কোর্স (MASLP) করে তারপরই বাচ্চাদের কানে শোনার চিকিৎসা করেন। ভারত সরকারের নির্দিষ্ট কাউন্সিল (RCI) এর জন্য একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেন প্রত্যেক অডিওলজিস্টকে। তাই বাচ্চাকে দেখানোর আগে এগুলি দেখে নিতে ভুলবেন না।
- হিয়ারিং এড পরার পর স্পিচ থেরাপি কেন প্রয়োজন ?
হিয়ারিং এড পরার পরই কানে শোনা শুরু হয়। কিন্তু সমস্ত শব্দকে বা কথাকে শুনে বোঝার জন্য স্পিচ থেরাপির বিশেষভাবে প্রয়োজন। অডিটরি ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে স্পিচ থেরাপিস্ট ভিন্ন ভিন্ন শব্দকে শিখে কথা বলার ক্ষমতা তৈরি করতে সাহায্য করেন। স্পিচ থেরাপিতেই বাচ্চার পরিস্কার করে কথা বোঝার ক্ষমতা তৈরি হয় যা পরিস্কার উচ্চারণ করতেও সাহায্য করে। যেমন ‘কালো’ ও ‘আলো’-র মধ্যে পার্থক্য বোঝা।
- হিয়ারিং এড সারাজীবন পরে থাকতে হবে?
হ্যাঁ। মনে রাখতে হবে, হিয়ারিং এড আমাদের ভালো শুনতে সাহায্য করে, কান ভালো করে দেয় না। তাই হিয়ারিং এড পরলেই কানে শোনা সম্ভব। তবে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে হিয়ারিং এডের আকার ক্রমশই ছোট হচ্ছে। এখানে তাই অর্দশ্য হিয়ারিং এড আছে যা কানের ভিতরে থাকে এবং কথাবার্তা বোঝার ক্ষমতাকেও উন্নত করেছে।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন