মার খেতে খেতেই শিশুরা কিন্তু জেদি, অভিমানী, একগুঁয়ে হয়ে ওঠে
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-22 15:39:10
বাচ্চাকে জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া নয়। ওদের স্বাধীনভাবে সব কাজ করতে দিন। প্রয়োজন হলে বাড়িতেই বিভিন্ন সরঞ্জাম যেমন, রঙ, তুলি, কাগজ, গানের রেকর্ড, খেলনা, মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট ও বিভিন্ন খেলার সরঞ্জাম যেমন- বল, র্যাকেট, দাবা ইত্যাদি ব্যবস্থা রাখুন। সব কিছুই হালকা মনে আনন্দের সঙ্গ করুণ ও লক্ষ্য রাখুন বাচ্চা কী ভালোবাসছে। বলা যায় না, আপনার সন্তান খেলার ছলে কোনও খেলনা মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টস নিয়ে নাড়াচাড়া করতে কিংবা টুংটাং আওয়াজ শুনতে শুনতে একদিন হয়তো বড় মিউজিশিয়ান হয়ে উঠতে পারে। অথবা খেলনা, র্যাকেট, ব্যাট-বল ওকে পৌঁছে দিতে পারে খেলার জগতে। কারণ, শিশুর সম্ভবনাময়। প্রত্যেক শিশুর মধ্যেই কিছু না কিছু গুণ ঘুমিয়ে বা সুপ্তভাবে থাকে। যাকে বলা যায়, ‘লেটেন্ট কোয়ালিটিস’—তা শুধু বাবা-মায়ের চিন্তাভাবনা, পরিশ্রম ও বাড়ির পরিবেশের প্রভাবেই বেরিয়ে আসতে পারে।
সতরাং প্রথমেই আপনার সন্তানকে বুঝুন ও তার ইচ্ছা আগ্রহের ওপর জোর দিন। যেটুকু যা করতে পারল, তাতে কিছু প্রশংসা বা উৎসাহ ওরা আশা করে। সব কাজযাতে মজার সঙ্গে করতে পারে তার দিক নির্দেশ করা প্রাথমিকভাবে অভিভাবকদেরই কর্তব্য। এক কথায়, বাচ্চাদের মনের সঙ্গে আপনাকে একীভূত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। না হলে বিশেষঙ্গ সাহায্য নিন।
এবার একটু শিবমের কথা বলি। শিবেমকে ছোটবেলা থেকেই দেখা গিয়েছিল ও ভীষণ ট্যালেন্টড থেকেই দেখা গিয়েছিল ও ভীষণ ট্যালেন্টেড।পড়াশুনোয় ভীষণ ভালো। ক্লাসে ফার্স্ট অথবা সেকেন্ড। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছবি আঁকা, গান, সাঁতার—কোনো ব্যাপারেই ওর যেন প্রতিভার অভাব নেই। ওর চাবিকাঠিটা হল নিষ্ঠা, ভালোবাসা, পরিশ্রম আর সর্বোপরি কাজে মনঃসংযোগ। আমি যখন প্রথম ওর দায়িত্ব হাতে নিইম তখন কিন্তু ও ছিল ভিন্ন প্রকৃতির। পড়াশুনোয় মনোযোগ তো ছিলই না, বরং বাড়িতে মার খেতে খেতে ও একরকম জেদী, অভিমানী আর একগুয়েঁ হয়ে উঠেছিল। ওকে বাবা-মাকেও কিছু ডিরেকশন দেওয়া হয়েছিল। আসলে বাচ্চাদের মদ্যে যে যে গুণ লুকিয়ে রয়েছে, সেসবের বাইরের জগতে প্রকাশ ঘটা দরকার। আর বাবা-মাকেও যেমন প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন একজন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির। অন্য বাচ্চাদের তুলনায় শিবম হয়তো কিচুটা ব্যতিক্রম। কিন্তু প্রতিটি বাচ্চার ক্ষেত্রেই তার নিজস্বতাটুকু খুঁজে বের করতে হবে। সব মিলিয়েই তো হবে তার ব্যক্তিত্বের উন্নতি।
- শিশুর কৌতুহল প্রবৃত্তি প্রশমিত হওয়া শিশুর মদ্যে অনুভূতি ও পর্যবেক্ষণ শক্তি তীক্ষ্ণ হওয়ার ফলে বিভিন্ন ঘটনা, দৃশ্যাবলী, কথাবার্তা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে ওদের মদ্যে জেগে ওঠে কৌতূহল এবং সঙ্গে ভীড় করে আসা হাজার প্রশ্ন। যেগুলোকে উত্তর দিতে গিয়ে অভিভাবকেরা প্রায়শই হিমশিম খান। কিন্তু মনে করুন, এমন কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা অভিভাবকতের পক্ষে খুব একটা সহজ হয় না। যেমন যৌনতা বা যৌন সম্পর্ক নিয়ে।
বাব-মায়ের বাচ্চাদের এইসব প্রশ্ন অতি সন্তর্পণে এড়িয়ে যান বা এর জন্য বকাবকি শুরু করেন। একটা সাত বছরের ছেলে আমায় জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘আন্টি, বিয়ে হলে তবেই বাচ্চা হয়, কিন্তু বিয়ে না হলে হয় না—কেন?’ ও অবশ্য নিজেই ওর ফর্মলাটা ঠিক করে নিয়েছিল। বলল, ‘আমার মনে হয়, একসঙ্গে শোওয়ার ফলেই অমন হয়।’ বললাম,‘হ্যাঁ, ঠিকই বলেছিস। একটি মেয়ে আর একটি ছেলে তাদের যদি বিয়ে হয়ে যায় তাহলে তারা একসঙ্গে শুলে বাচ্চা হতে পারে।’
আসলে এমন একটা প্রশ্ন শুনে ‘বড্ড পেকেছিস না’? কিংবা অন্য কোনোভাবে মৌখিক রাগ প্রকাশ করাটা ঠিক নয়। বরং শিশুটির এরকম প্রশ্ন করার জন্য তার বুদ্ধিমত্তারই তারিফ করতে হবে। এবং এর উত্তর দিতে হলে তা হবে একান্ত শিশুসুলভ কায়দায়।
শিশুরা জন্মরহস্য সম্পর্কে বরাবরই কৌতূহলী। সেই যে খোকার প্রশ্ন ছিল,‘….এলেম আমি কোথা থেকে/ কোনখানে তুই কুড়িয়ে পেলি আমারে….’ তার উত্তরে মা শিশুটিকে কতরকম উপায়েই না বোঝাতে চেয়েছেন।
বাবা-মাকে বিছানায় আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেললে শিশুর চিত্তচাঞ্চর্য ঘটে। শিশু এসব ঘটনা গোপনই করে। কখনো কোনো প্রশ্ন প্রকাশ্যে আনে না। কিন্তু গোপন ঘটনা অচেতন মনে চলে গিয়ে পরে নানা মানসিক জটিলতা তৈরি করতে পারে।
অন্য একটি ঘটনার দেখা যাচ্ছে, শিশুটি লক্ষ করছে বাবা তাকে ভীষণ বকাবকি করেন। যখন-তখন গালে চড়ও মারেন। কিন্তু ঘরের মধ্যে আলো-আঁধারিতে মাকে চুমু খেয়ে আদর করেন। শিশুর মন দ্বিধা বিভাজিত হয়, তাহলে মা কি কোনো দুষ্টুমিই করে না? বাবার ওপর অযাচিত কারণে রাগ অথবা মায়ের ওপর হিংসা ভাব জগতেই পারে। কেস স্টাডি করার সময় দু’ একটি ক্ষেত্রে বাচ্চাদের পড়াশুনোয় অমনোযোগিতার কারণ খুঁজতে গিয়ে ব্যাপারগুলো গোচরে আসে।
- শিশুর পরিবেশ অর্থাৎ পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশে তার পক্ষে অভিযোজন ক্ষমতা অধিকারী হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাড়ির পরিবেশ যদি সুস্থভাব থেকে বিচ্যুত হয়, তাহলে শিশুর মদধ্যে মানিয়ে চলার ক্ষমতা নষ্ট হতে পারে। এক্ষেত্রে শিশুর নানাদিক দিয়েই মানসিকতা দুর্বলতা আসা স্বাভাবিক। শিশুদের অনুভূতি ও পর্যবেক্ষণ শক্তি তীক্ষ্ণ হলেও তারা বড়দের মতো করে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে পারে না। অভিজ্ঞতার স্বল্পতাও এর একটা কারণ। সুতরাং পরিবেশজনিত ভয়, উত্তেজনা ও বিবাদ ওদের মধ্যে মানসিক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। বাব-মায়ের কলহকে কখনোই ওরা ভালো চোখে দেখে না। রাগের নানা প্রকাশভঙ্গী ওদের বীত ও সন্ত্রস্ত করে তোলে। কখনো এরা উত্তেজিত হয়েও যায়। দৈহিক চাঞ্চর্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। আবার কখনো শান্ত ও নির্জীব হয়েও বসে থাকে। এর সঙ্গে অসহায়তা, নিরাপত্তাহীনতার শিকার হয় ওরা। বাড়িতে সু-পরিবেশ গড়ে না উঠলে ওদের পড়াশুনোর জন্য যে একাগ্রতা ও ধের্য প্রয়োজন তা বাধাপ্রাপ্ত হয়। সতরাং শিশুর মানসিক গঠনে বাড়ির পরিবেশ নিয়ে বড়দের চিন্তাভাবনা করা উচিত।
শিশুর ব্যক্তি মানসকে সুসংগঠিত করে গড়ে তুলতে হলে ছোটবেলা থেকেই তাকে সামাজিক সম্পর্কের শিক্ষা দেওয়া উচিত। যে শিশু বাড়ির আবহাওয়ার মদ্যেই বাবা-মা,ভাই-বোন, আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে দিব্যি সুন্দরভাবে মিলেমিশে বড় হতে পেরেছে এবং নিজেকেও যথেষ্ট আত্মসচেতন করে গড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে, তার পক্ষে সমাজের বিভিন্ন পরিবেশে যেমন সাকুলের সহপাঠিদের সঙ্গে অথবা ক্লাবে বা কোনো প্রতিষ্ঠানে সমবয়সী বন্ধু বা অন্যদের সঙ্গে একটা সহজ সরল মেলামেশার সম্পর্ক গড়ে তোলা অসম্ভব নয়।
স্বাবলম্বিতা
শিশুর স্বাবলম্বিতার সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের যোগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শিশু যখনই কোনো কাজ নিজে নিজে করতে শেখে বা করেও, যেমন নিজের হাতে খাওয়া, হাত পরিস্কার, পোষাক পরিধান, পায়ের মোজা পরা, জুতোর ফিতে বাঁধা-ইত্যাদি, তখন অবশ্যই তার মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাসও তৈরি হয় ধীরে ধীরে। ‘আমি নিজে নিজে সব করেছি, মা আমি বড় হয়ে গেছি’- এই ধরনের একটা অনুভূতি আসে তার মধ্যে। আত্মবিশ্বাস থেকে দায়িত্ববোধ, শৃঙ্খলাবোধও জন্ম নেয়্ তার এইসব তার চলার পথে পাথেয় ও অনুপ্রেরণা যোগায়।
মূল্যবোধ বলতে আমরা কী বুঝি? কেন এই বোধ শিশুর মদ্যে জাগ্রত হওয়া উচিত? মূল্যবোধের শিক্ষার শিশুর ব্যক্তিত্বের উন্নতি হয়। শিশু ক্রমশই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে থাকে। এই ব্যক্তির তার মানসিক সংগঠনকে করে তোলে সুসংহত, সুদৃঢ় ও সুন্দর। মূল্যবোধের ট্রেনিং ছোটবেলা থেকে বাড়ির পরিবেশেই শুরু হওয়া প্রয়োজন।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন