×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

চর্বি-ভুঁড়ির মধুচন্দ্রিমায় অশেষ বিপদ

হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-23 10:56:56

জীবন বড়ই জটিল। মেপে মেপে কাঁটা এড়িয়ে পা ফেলতে না পারলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জীবনের রঙ্গমঞ্চে যবনিকা পড়ে যাবে। চর্বি নামক সুস্বাদু ও শরীরের অতিপ্রয়োজনীয় বস্ত্তুটি কেমন করে কাটাতে রূপান্তরিত হয়ে জীবনের বেলুন চুপসে দেয়, স্বাস্থ্যবিঞজ্ঞানীদের কাছে সেটাই এখন প্রধান গবেষণার বিষয়। প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যবস্ত্তু থেকে যেখানে মাত্র চার কিলো ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায় সেখানে সমপরিমাণ চর্বি জাতীয় খাদ্য ন’ কিলো ক্যালোরিরও বেশি শক্তি দেয়। মানবমস্তিস্কের চর্বি দিয়ে তৈরি। চর্বি হৃদযন্ত্রের জ্বালানি। চর্বির দৌলতে চেহারার এত গ্ল্যামার। চর্বির গদি মূল্যবান দেহযন্ত্রগুলোকে বাইরের আঘাত থেকে আগলে রাখে। অন্য দিকে, অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাদ্যগ্রহণের কারণে অথবা ধূমপান ও মদের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকার দরুন চর্বি হজমের ক্ষমতা কমে গিয়ে রক্তরসের চর্বির মাত্রা বেড়ে যায়। একে হাইপারকোলেস্টেরলেমিয়া বলে। ফলস্বরূপ চর্বি নামক বস্ত্তুটির বিভিন্ন অংশীদারদের অনুপাতেও হেরফের ঘটে। একে ডিসলিপিডেমিয়া বলে। এল.ডি.এল, এইচ.ডি.এল, ভি.এল.ডি.এল ও ট্রাই গ্লিসারাইডের মতো সদস্যদের নিয়ে চর্বির জমাটি সংসার। এদের মধ্যে এল.ডি.এল-ই চর্বিকাঁটা। এটিই যত নষ্টের গোড়া। একে দুষ্ট চর্বি নামেও ডাকা হয়। এইচ.ডি.এল উপকারী চর্বিকণা। এইচ.ডি.এল ধমনীর গায়ে চর্বি জমার চাকাকে উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ধর। চর্বিকণা রক্তরসে একা একা থ্কতে পারে না। চর্বিকে ইংরেজিতে লিপিড বলে। লিপিড প্রোটিন কণার সঙ্গে জুটি বেঁধে লাইপোপ্রোটিন নাম নিয়ে রক্তস্রোব ভাসতে থাকে। রক্তরসে লিপিডের মাত্রা বেড়ে গেলে দেহকোষের পেটে চর্বি ঢুকে নাদুসনুদুস রূপ নেয়। পুরুষ মানুষের নিতম্ব সরু হলেও মধ্যপ্রদেশ মাটি ছুঁই ছুঁই করে। ভুঁড়িওয়ালা লোকটি সকলের নজর কাড়েন। বাড়তি চর্বি মহিলাদের নিতম্বে জমা পড়ে। ললিতাদের গ্ল্যামার বাড়িয়ে দেয়। ঘাটের মড়াদেরও হৃদয় তোলপাড় হয়ে যায়। চর্বি-ভুঁড়ি-নিতম্বের মধুচন্দ্রিমা শেষে বিপদ ডেকে আনে। দেহের গুরুত্বপূর্ণ ধমনীদের দেওয়াল হিপারন, কেরাটন ও কনড্রয়টিন সালফেট নামক আঠা লাইপোপ্রোটিনদের ধমনীর ভিতরে ইনটিমা স্তরে আটকে দেয়। আটকে পড়া লাইপোপ্রোটিনের ভালোমানুষি চেহারা নিমেষে উধাও হয়। সে নিজেকে বদলে ফেলে পি.ও.ভি.পি.সি, পি.জি.পি.সি ও পি.ই-ওয়ান. পি.সি ইত্যাদি শয়তানের রূপ নেয়। এই জটিল রাসায়নিক শয়তানেরা ধমনীর ভিতরে ইনটিমা স্তরের এন্ডোথেলিয়াল কোষেদের উস্কে দেয়। এই সব কোষ থেকে ভি.সি.এ.এম ও আ.সি.এ.এম নামকে ফেবিকলের মতো আঁঠা বের হয়।সেই আঁঠার সংস্পর্শে এসে বহমান রক্তের মনোসাইট ও লিম্ফোসাইট নামক চর্বিখেকো শ্বেতকণিকা তথা ম্যাক্রোফেজ আটকা পড়ে। এরা এন্ডোথেলিয়াল কোষের পর্দা  ফুটো করে ধমনীর দেওয়ালে ঢুকে পড়ে। সেখাসে জমাপড়া এল.ডি.এল গিলে এর নধর ফোম কোষে রূপান্তরিত হয়। ফুলেফেঁপে ওঠা কোষেদের চাপাচাপিতে জটলার কেন্দ্রে থাকা কোষগুলোতে পচন ধরে। একটি নেক্রোটিক কোর তৈরি হয়। চর্বিতে ভরপুর নধর ফোমকোষেরা সংযুক্ত হয়ে ফ্যাটিস্ট্রিক নামক আঠালেঅ প্লাক তৈরি করে। ধমনীর দেওয়াল ফুলে ওঠে। ধমনীর ফোলা অংশটিকে অ্যাথেরোস্ক্লেরেসিস বলে। শুধুমাত্র বয়সের কারণেও মানুষের চর্বি হজম করার ক্ষমতা কমে গিয়ে ধমনীর দেওয়ালে হজম না হওয়া চর্বি জমে যায়। ধমনীটি পুরু ও শক্ত হয়ে যায় এবং বাইরে থেকে ধমনীর গায়ে হাত ঠেকিয়ে তা অনুভব করাও যায়। রক্তবাহ নালীর ভেতরের ফাঁপা অংশ পুরু হতে থাকা দেওয়ালের কারণে সরু হতে থাকে। এমন ঘটনা মস্তিস্কের ধমনীতে ঘটলে মস্তিস্কের কোষে রক্ত চলাচল মারাত্মক রকম কমে যেতে থাকে। অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের কারণে চোখ, কিডনি, লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ন অঙ্গগুলোতেও রক্ত সরবরাহ ভাঁটা পড়ে। দ্রূত বার্ধক্য নেমে আসে। দৃষ্টি ঝাপসা হয়। হজম করার ক্ষমতা কমে। যৌন ইচ্ছা  কমতে শুরু করে। মনে রাখার ক্ষমতা কমে। কমতে থাকে শারীরিক সক্ষমতা। তার ওপর বদ খাদ্যাভ্যাস ও বদ লাইফ স্টাইলের দৌলতে ধমনীর দেওয়ালে চর্বির পাহাড় তৈরি হয়ে অ্যাথেরোমার বাইরের টুপিতে চাপ বাড়তে থাকে। এক সময় সেটি ফেটে যায়। অ্যাথেরোমার উপাদানগুলো বহমান রক্তের রক্তদঞ্চনে সাহায্যকারি উপাদানদের সরাসরি সংস্পর্শে চলে আসে। রক্তকণিকা, ফাইব্রিনোজেন জমে তৈরি হয় থ্রম্বাস। এই থ্রম্বাস রক্তস্রোতের ছিন্ন হয়ে মূল স্রোতে ভাসতে শুরু করে। দেহের মস্তিস্ক,হৃদযন্ত্র, কিডনি, চক্ষু,লিভার ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো সরু ধমনীগুলোতে এই থ্রম্বাস আটকে গিয়ে জীবনের গতি থমকে দেয়। এমন আক্রমণ মস্তিস্কে ঘটলে তাকে সেরিব্রো ভাসকুলার অ্যাক্মিডেন্ট তথা স্ট্রোক ও হৃদযন্ত্রের ধমনী আক্রান্ত হলে তাকে করোনারি আর্টেরিয়াল ডিজিজ তথা হার্ট অ্যাটাক বলে। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, গর্ভনিরোধক বড়ি, ধূমপান ও মদ্যপানের নেশা অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস ইন্ধন যুগিয়ে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র,হৃদযন্ত্র, কিডনি, লিভার, রেটিনা ইত্যাদি মূল্যবান অঙ্গসমূহে রক্তপ্রবাহের গতি কমিয়ে দেয়। চূড়ান্ত পরিণতি হিসাবে জীবনের প্রবাহ থেমে যায়।  অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস যুগের আতঙ্ক। মনে করা হচ্ছে ২০২০ সালের মধ্যে মোট অসুখের সিংহভাগ শুধুমাত্র অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস নামক চর্বিকাটার কারণেই ঘটবে। রক্তনালীর দেওয়াল সুস্থ জীবন থেকে এক একটি বছর অসুস্থতা ও অক্ষমতা ডালি হয়ে ঝরতে থাকভে। বর্তমনি জাতীয় স্বাস্থ্য নির্দেশিকাতে প্রতিটি চল্লিশ পেরোনো লোকেদের জন্য বছরে অন্তত একবার লিপিড প্রোফাইল মাপার কথা বলা হচ্ছে। জাতীয় কোলেস্টেরল এডুকেশন প্রোজেক্ট মোতাবেক স্টো্রকের ঝুঁকিসম্পন্ন লোকেরা অবশ্যই খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে পুষ্টি বিশারদদের পরামর্শ মেনে চলবেন। প্রতিটি মাঝবয়সী স্ত্রী ও পুরুষ স্টোকের ঝুঁকি কমানোর জন্য অবশ্যই ফিজিসিয়ান দেখিয়ে নিজ নিজ ঝুঁকির বিষয়গুলোর তালিকা তৈরি করাবেন। রিস্ক ফ্যাক্টর ছয় সংখ্যা ছাড়ালে তাকে হাইরিস্ক ও ছয়ের কম হলে তাকে লো রিস্ক জোনে ফেলা হবে। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানোর জন্য খাদ্য তালিকায় রদবদল, লাইফ স্টাইলের মডিফিকেশন, কায়িক পরিশ্রম, ব্যায়াম, প্রাণায়াম, উচ্চরক্তচাপ ও মধুমেহ নিয়ন্ত্রণ, ডিসলিপিডেমিয়া কারেকশন ইত্যাদি মেডিকেল ট্রিটমেন্টের সঙ্গে চূড়ান্ত হাই রিস্ক জোনে থাকা রোগীদের জন্য ক্যারোটিড অ্যান্ড আর্টেরেক্টমির মতো সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্টেরও সুপারিশ করা হয়। সেলিব্রিটিরা যেখানে ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর জন্য নিজের স্তন কেটে বাদ দিতে পারেন সেখানে ব্রেন অ্যাটাক রুখতে এটুকু তো করতেই হবে। সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন