×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

থ্যালাসেমিয়ার শেষ দেখতে চান গবেষকরা

হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-23 11:22:42

থ্যালাসেমিয়া। হ্যাঁ, এ রোগের নামটা শুনলেই কেমন জানি ভয় লাগে, তাই না? এ রোগ ঘিরে আজও মানুষের হাজারো ভয়, হাজারো উৎকন্ঠ এবং শেষমেষ হাজারো জিজ্ঞাসা। আসলে এ রোগ হওয়ার মানেই বারে বারে রক্ত দেওয়া আর যার শেষ পরিণতি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া। কিন্তু সত্যিই কি তাই? বোধহয় না। এ রোগ নিয়ে জোরকদমে গবেষণা চলছে সারা পৃথিবী জুড়ে। বিশ্ববিজ্ঞানীদের সঙ্গে কলকাতার বিজ্ঞানীরাও গবেষণা চালাচ্ছেন জোরকদমে। প্রাজ্ঞ ব্যক্তিরা বলে থাকেন রক্তের জোরেই নাকি মানুষ বেঁচে থাকে। কিন্তু যে রক্তের জোরে মানুষ বেঁচে থাকে সেই রক্তেই যদি রোগ বাসা বাঁধে তবে তো বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়। রক্ত হল এক ধরনের কানেকটিভ টিস্যু বা যোগকলা। এর কাজ সমস্ত শরীরের মধ্যে বিভিন্ন শিরা-উপশিরা, ধমনীর মধ্য দিয়ে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে যোগাযোগ রাখা। রক্তের লোহিতকণিকার মধ্যে লোহাযুক্ত হিমোগ্লোবিন নামে এক রকমের প্রোটিন থাকে আর সে জন্যই রক্তের রঙ লাল। বিশুদ্ধ রক্ত ফুসফুস থেকে সমস্ত কোষে পেীঁছয়। আর কোষগুলো থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড ফুসফুসে এসে ঢোকে। রক্তে আবার তৈরি হয় অস্থিমজ্জা বা বোনম্যারোতে। রক্ত এক ধরনের ঘন জলীয় পদার্থ। এর প্রধান উপাদান হল তরল প্লাজমা। রক্তের মধ্যে রক্তরস ও রক্তকণিকা থাকে। রক্তকীণকার আবার তিনটে ভাগ-লোহিত রক্তকণা, শ্বেতকণা ও অনুচক্রিকা। থ্যালাসেমিয়া বংশগত রোগ। এ রোগে আক্রান্ত লোকজনের রক্তের লোহিত কণিকায় থাকা হিমোগ্লোবিন নামের প্রোটিনটি ঠিকঠাক তৈরি হতে পারে না। অথবা কম তৈরি হয়। ফলে এসব লোকজন রক্তল্পতা বা অ্যানিমিয়ার ভোগেন। থ্যালাসেমিয়া রোগকে তিনভাগে ভাগ করা যায়—মেজর, ইন্টারমিডিয়েট ও মাইনর। ইন্টারমিডিয়েট থ্যালাসেমিয়া রোগের ভয়াবহতা মেজর থ্যালাসেমিয়া রোগের থেকে অনেক কম। এ রোগে রোগীকে তিন-চার বছর অন্তর রক্ত দিতে হয়। কখনও কখনও এ সময়ের ফারাক আরও বাড়ে। আবার কখনো কখনো রক্ত দিতেই হয় না। ইন্টারমিডিয়েট রোগীদের ক্ষেত্রে দু’-তিন বছর বয়স থেকে ছ’-আট বছরের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। মাইনর যারা তারা আসলে কেরিয়ার বা বাহক। থ্যালাসেমিয়া বাহক বা কেরিয়ার আসলে কোনো রোগী নয়। কিন্ত্তু দু’জন কেরিয়ারের মধ্যে বিয়ে হলে তাদের সন্তানের মধ্যে এ রোগ দেখা দেবার প্রবণতা থাকে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ। থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগে আক্রান্ত শিশু জন্মানোর ছ’মাস থেকে দু’বছর বয়সের মধ্যেই ধরা পড়ে রোগটি। এ রোগে শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যায়, শরীরে ঝিমিুনি ভাব থাকে, কাজে কোনো উৎসাহ থাকে না। এর সঙ্গে থাকে মাথাঘোরা ও দুর্বলতার মতো উপসর্গ। কিছুদিন পর প্লীহা, যকৃত বা লিভারের আকার বাড়ে। হিমোগ্লোবিন খুবই কমে যায়। এদের নিয়মিত মাসে একবার, দু’বার, কখনও কখনও তিনবারও রক্ত দিতে হয়। আর সেই সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো সারাক্ষণ নজরে রাখতে হয়। থ্যালাসেমিয়া মাইনর যারা তারা রোগের বাহক বা কেরিয়ার। এই বাহক বা কেরিয়ারের জীবন রোগের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এরা সুস্থ ও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনযাপন করে। তবে পরবর্তী প্রজন্মে এ রোগটি সংবাহিত হওয়ার সম্ভবনা থাকে। শরীরে অধিক পরিমাণে লোহা সঞ্চয়ের  ফলে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর যকৃত, প্লীহা ও বিভিন্ন গ্রস্থির কর্মক্ষমতা ক্রমশ কমে যায়। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে রক্ত দেওয়া, এর সঙ্গে নিয়মিত শরীরে জমা হওয়া লোহা বের করে দেওয়ার কাজ চালাতে হয়। এ চিকিৎসাও খরচসাপেক্ষ। কর্ড ব্লাড ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন অথবা বোনম্যারো প্রতিস্থাপন করে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। তবে দু’টো পন্থাই খরচসাপেক্ষ। সব কোষের একই সংখ্যার ক্রোমজোম একইরকম জিন পাওয়া যায়। কিন্ত্ত কোনো অজ্ঞাত কারণে বিশেষ কোষে শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ জিনই উত্তেজিত বা এক্সপ্রেসড হয়। যার দরুন বিভিন্ন কোষের আকৃতি ও কাজ বিভিন্ন হয়। যেমন অগ্ন্যাশয়ের বা প্যাংক্রিয়াসের বিটা কোষে ইনসুলিন (প্রোটিন)-এর জিন এক্সপ্রেসড হয়। গ্লোবিন হল এক ধরনের প্রোটিন যা হিম নামক একটিা আয়রন কমপ্লেক্সের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত হয়ে একটি বিশেষ আকারে লোহিত কণার মধ্যে বর্তমান থাকে। এক বলে হিমোগ্লোবিন বা এইচ.বি। হিমোগ্লোবিন প্রায় প্রতিটিই আমাদের শরীরের লোহিত কণিকায় কিছু পরিমাণে বর্তমান থাকে এবং বয়স অনুপাতে তাদের মাত্রার তারতম্য ঘটে। তাই প্রাকৃতিক বা অজ্ঞাত কারণেই এ জিনগুলি ওই নির্দিষ্ট বয়সেই উত্তেজিত থাকে ও তাদের প্রোডাক্ট তথা গ্লোবিনগুলো ওই নির্দিষ্ট বয়সেই পাওয়া যায়। আমাদের আর.বি.সি-র পূর্বসুরির মধ্যে এগারো ও ষোল নম্বর ক্রোমোজোমে বিভিন্ন আলফা, বিটা, গামা, ডেল্টা জিনগুলোর কথা বলা আছে, সেই জিনগুলোর মধ্যে মূলত আলফা ও বিটা বেসের কিছু পরিবর্তনেরজন্য বিভিন্ন ধরনের বিকৃত হিওমাগ্লোবিন তৈরি হয়। আর এদের কমবেশি উপস্থিতিতেই থ্যালাসেমিয়া রোগের উৎপত্তি। যদি আলফা গ্লোবিন জিনের মধ্যে পরিবর্তন হয়ে থাকে তখন তাকে আলফা থ্যালাসেমিয়া বলে আর যদি বিটা গ্লোবিন জিনের মধ্যে পরিবর্তন হয়ে থাকে তবে তাকে বিটা থ্যালাসেমিয়া বলে। আর বিটা থ্যালাসেমিয়া ট্রেট বা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রোগীর সংক্যাই বেশি। যেহেতু থ্যালাসেমিয়া হল হিমোগ্লোবিন মূলত গ্লোবিন উৎপাদনের এক জিনগত রোগ তাই জিন থেরাপি হল এর চিকিৎসা। এ পদ্ধতিতে অস্থিমজ্জার লোহিত কণিকার পূর্বসূরির ক্রোমোজোমের মধ্যে সুস্থ জিন ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তবে ক্রোমোজোমের মধ্যে জিন ঢোকানো সহজ কাজ নয়। পরবর্তী ধাপে এসব লোহিত কণার পূর্বসূরিরা বিকৃত হিমোগ্লোবিনের সাথে বা পরিবর্তে সুস্থ বা নর্মাল হিমোগ্লোবিন তৈরি করে। এ প্রক্রিয়া যদি স্থায়ী হয় তবে রোগীর সম্পূর্ণ রোগমুক্ত হবার সম্ভবনা থাকে। সিরাম থ্যালাসেমিয়া প্রিভেনশন ফেডারেশনের বায়োটেকনোলজিস্ট সঞ্জীব আচার্যের মতে, থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর। অর্থাৎ সেরে ওঠার থেকের রোগ যাতে না হয় অর্থাৎ প্রতিরোদই বড় কথা। প্রতিরোধের ক্ষেত্রেই তারা চালাচ্ছেন নানান গবেষণা। থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক বা কেরিয়ার কারা এবং এই বাহকদের খুঁজে বার করা ও সে বিষয়ে গবেষণা চালানোই মুখ্য উদ্দেশ্য। এই রোগ-বাহকদের মধ্যে আবার নানাধরনের শৈলি বা প্যাটার্ন তারা লক্ষ করেছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে দেখেছেন যে ভারতে আনুমানিক এর সংখ্যা বারো থেকে চোদ্দ কোটি। অর্থাৎ প্রতি দশ থেকে বারো জন ক্যারিয়ার বা বাহক। সধারণ সুস্থ রোগমুক্ত মানুষ, আর এ রোগের বাহকের মধ্যে কোনো ফারাকই নেই। রোগের বাহকদের মধ্যেও আবার নানান শৈলী বা প্যাটার্ন তারা লক্ষ করেছেন। থ্যালাসেমিয়া স্ক্রি নিং নিয়ে সিরাম থ্যালাসেমিয়া প্রিভেনশন ফেডারেশনের সর্বশেষ রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে যে তারা নানা ধরনের থ্যালাসেমিয়া প্যাটার্নযা গবেষণার মাধ্যমে লক্ষ করেছেন, সেগুলো হল এইচ.পি.এল.সি টোটাল টেস্ট, নরমাল প্যাটার্ন, বিটা থ্যালাসেমিয়া, এইচ.বি.ই বিটা থ্যালাসেমিয়া. এইচ.বি.ই ট্রেট, সিকল সেল ডিজিজ, এইচ.বি.ই ডিজিজ, এইচ.বি.ডি ট্রেট, এইচ.বি.লেপার, এইচ.বি.জে, এইচ.বি. এইচ., ডাবল হেটারোজাইগাস স্টেট অফ এইচ.বি.এস অ্যান্ড এইচ.বি.ডি, ডাবল হেটারোজাইগাস স্টেট অফ এইচ.বি.এন অ্যান্ড এইচ.বি.ই। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চের আয়ত্তাধীন ভাইরাস ইউনিট ইন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কলেরা অ্যান্ড এন্টারিক ডিজিজের (নাইসেড) সায়েন্টিস্ট ডঃ প্রভাস সাঁধুখা থ্যালাসেমিয়া রোগীদের নিয়ে গবেষণা চালাতে গিয়ে দেখেছেন যে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের বারে বারে রক্ত দেওয়ার সময় তাদের শরীরে এইচ.আই.ভি এবং হেপাটাইটিস-সি, যা কিনা একধরনের নিঃশব্দ ঘাতক, তাতে আক্রান্ত হবার সম্ভবনা অনেক বেড়ে যায়। তাই গবেষক হিসাবে ডাঃ সাঁধুখা বারেবারে যে বিষয়টির ওপর জোর দিতে চেয়েছেন তা হল ক্যাম্পে যখন রক্ত নেওয়া  হয় সেই রক্তদান শিবিরে রক্তকে যথেষ্ট সতর্কভাবে গ্রহন করতে হবে এবং সেই রক্ত ভালোভাবে পরীক্ষা  করে দেখে নিতে হবে তাতে কোনো এইচ.আই.ভি বা হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস রয়েছে কি না। না হলে সতর্কতার অভাবে থ্যালাসেমিয়া রোগীরা অজান্তেই এ রোগের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলবে। কলকাতা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের হেমাটোলজিস্ট প্রফেসর মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্যও থ্যালাসেমিয়া জিন মাইক্রোম্যাপিং নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। তিনি তার গবেষণার মাধ্যমে জানতে চাইছেন কীভাবে এসব রোগীদের জিনগত ক্রটি এবং তার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে এবং শেষমেশ জিনগুলো কীভাবে মিউটেটেড হয়ে যাচ্ছে এবং এসব মিইটেটেড জিনের গতি-প্রকৃতিআ বা কেমন তাও বিশদভাবে জানার চেষ্টা করছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজি ও বসু বিজ্ঞান মন্দিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে এসব প্রতিষ্ঠানের গবেষণাগারে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে কোনোরকম গবেষণা ইদানীং হচ্ছে না। সবশেশে যে খবর না জানলে খুবই অন্যায় হবে তা হল থ্যালাসেমিয়ার মতো বিরাট সমস্যার মোকাবিলায় বড়সড় পথ দেখাচ্ছে সাইপ্রাস নামে ভূমধ্যসাগরে একটি ছোট্ট দ্বীপ। সাইপ্রাসে বিটা থ্যালাসেমিয়ার একসময় প্রচন্ড প্রাদুর্ভাব ছিল। ওরা একটা জাতীয় প্রকল্পের মাধ্যমে বিয়ের আগে সকলের বিটা- থ্যালাসেমিয়ার পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে। একেই বলে প্রি-ম্যারাইটাল স্ক্রি নিং। এছাড়া বাচ্চার জন্মের আগে অ্যান্টিনেটাল স্ক্রি নিং করে র্ভ্রণের  বিটা থ্যালাসেমিয়া আছে কি না নির্ণয় করে দরকার পড়লে ওরা র্ভ্রণহত্যাও করায়। এভাবেই বিটা- থ্যালাসেমিয়া মেজর শিশুর জন্ম ওরা রুখে দিতে সক্ষম হয়েছে। একইভাবে ইরানেও ১৯৯৭ সালে ন্যাশনাল বিটা- থ্যালাসেমিয়া প্রোগাম চালু হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের দেশে এ ধরনের কোনো জাতীয় কর্মসূচি এখনও পর্যন্ত নেই বলেই জানা গেছে। সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন