অণু নির্ণয়ের নতুন পদ্ধতি নতুন মাইক্রোস্কোপ
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-23 11:26:25
বিজ্ঞানের যে কোনো শাখায় ক্ষুদ্রতম কণাদের দেখতে পাবার ব্যাপারটা খুবই জরুরি। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত প্রচলিত মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে ক্ষ্রদ্র জিনিস দেখার কাজ করার মধ্যে ছিল একটা বড়সড় সীমাবদ্ধতা। মনে করা হচ্ছিল যে শূন্য দশমিক দুই মাইক্রোমিটারের নিচে নামা বোধহয় আর সম্ভব নয়। কিন্তু সম্প্রতি আমেরিকার দু’জন ও জার্মানির একজন বিজ্ঞানীর প্রচেষ্টায় আরও ক্ষুদ্রাদিক্ষ্রদ্র কণাদের দেখার কাজটা সম্ভব হয়েছে। আর এই তিন প্রথিতযশা বিজ্ঞানীকে নোবেল পুরস্কারের মতো বিরল সম্মানে সম্মনিত করেছে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেুম অব সায়েন্সেস। আমেরিকার এরিক বেটজিগ ও উইলিয়াম মোয়েরনারের সঙ্গে নোবেল পেয়েছেন জার্মানির কিজ্ঞানী স্টেফান হেলও। রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেুম অব সায়েন্সেসের মতো, এবার গবেষকরা ন্যানো ডাইমেনশনে গিয়ে অপটিক্যাল মাইক্রোস্কোপে কাজ করতে পারবে স্বচ্ছন্দে। আর এই গবেষণালব্ধ ফলাফল যে এক বড়সড় সাফল্য প্পে কথা বলতে কোনো দ্বিধা নেই। গবেষণালব্ধ এমন বিস্ময়কর ফলাফলের জন্যই তিনজনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এই গবেষণার হাত ধরে বিজ্ঞানের যে কোনো শাখার ক্ষুদ্রতম কণাদের দেখতে পারা যাবে। প্রথিতযশা এই তিন বিজ্ঞানী ফ্লুরোসেন্ট মলিকিউলের মাধ্যমে প্রচলিত মাইক্রোস্কোপের সীমাবদ্ধতা ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছেন। এর ফলে কোষের ভেতরকার কণার কীভাবে কাজ করছে তা দেখা যাচ্ছে স্বচ্চন্দে যা কি না আগে ভাবাই যেত না। বিজ্ঞানীদের এই গবেষণার পথ ধরে এখনও পর্যন্ত সব থেকে ক্ষুদ্র কণা দেখা সম্ভব হয়েছে। সাতান্ন বছরের বেটজিগ কাজ করেন ভার্জিনিয়াম হাট্টয়ার্ড হিউজ মেডিকেল ইনস্টিটিউটে। চৌষট্টি বছরের মোয়েরনার ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আর চুয়ান্ন বছরের স্টেফান হেল কাজ করেন জার্মানির গোয়েটিঙ্গনের ম্যাক্স প্যাষ্ক ইনস্টিটিউট ফর বায়োফিজিক্যাল কেমিস্ট্রির ডিরেকটর হিসাবে। এই তিন বিজ্ঞানীরা মধ্যে এক-একজন এক একটি বিভাগে কাজ করেছেন। কেউ দেখেছেন কীভাবে ভ্রুণের মধ্যেকোষ বিভাজন ঘটছে। কেউ দেখেছেন স্নায়ুকোষের মধ্যে কীভাবে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলে আর কেউবা হানটিংটন অসুখের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রোটিনের কাজ-কারবার লক্ষ করেছেন। বিজ্ঞানী হেল বলেছেন যে এই আবিষ্কারে তিনি আনন্দিত, পুলকিত এবং শেষমেষ রোমাঞ্চিত। আর বিজ্ঞানী মোয়েরনার বলেছেন বেটজিগ ও স্টেফান হেলের সঙ্গে একত্রে এই পুরস্কার পেয়ে তিনি সত্যিসত্যিই আনন্দিত এবং রোমাঞ্চিত। বিজ্ঞানীদের এই গবেষণার ফলে বিজ্ঞানের নানা শাখা উপকৃত হবে বলে জানিয়েছেন আমেরিকার কেমিক্যাল সোসাইটির সভাপতি টম বার্টন। তাঁর মতে এবার থেকে জীবাণু বা ব্যাক্টেরিয়ার ভেতরে কী রয়েছে তাও দেখা যাবে যা কিনা এতদিন পর্যন্ত দেখা যেত না। সভাপতি বার্টনের মতে, পনেরো বছর আগেও এটা ভাব যেত না। তত্ত্বের দিক থেকে এ ঘটনা অসম্ভব বলে মনে হত। তাই স্বপ্নেও যাকে ভাবা যেত না তা এখন খাতায়-কলমে সম্ভব করল এই তিন বিজ্ঞানী। অণু নির্ণয়ের নয়াপদ্ধতি নোবেল অতি ক্ষুদ্র ও জমাট অণুর ত্রিমাত্রিক ছবি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য গবেষণার জন্য ২০১৭ সালে রসায়নে নোবেল পেলেন জ্যাকুস ডুবোশেট, জোয়াকিম ফ্র্যাষ্ক ও রিচার্ড হেন্ডারসন। ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে এই তিনজনের শীতল পদ্ধতি ইলেকট্রন বিমের ব্যবহার শিখিয়েছে আর এর ফলে কোনো কোষের ক্ষুদ্রতম গঠনও ধরা যাচ্ছে। গবেষক তথা বিজ্ঞানীরা এখন জীবাণুর চলাফেরা তথা গতিবিধিকে আটকে দিতে পারছেন। আর পুরো প্রক্রিয়াটিই তারা ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছেন। অতীতের দিনে এমন সুযোগ থাকা তো দূরের কথা, কল্পনাতেও আনা যেত না। মানুষের রোজকার জীবনযাত্র ও ওষুধ শিল্পে এই গবেষণালব্ধ ফলাফলের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। এমনকী জিকা ভাইরাসের দাপট ঠেকানোর ক্ষেত্রেও এই গবেষণালব্ধ ফলাফল দারুণ কাজে আসবে। আর অ্যালজাইমারের মতো রোগের পেছন যে উৎসেচক থাকে তাকেও ভালোভাবে কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। এবং এটা যদি সত্যিই সম্ভব হয় তাহলে আর সুদিন আসতে দেরি কোথায়। সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন