মিনারেল ওয়াটার থেকে হার্টের রোগ
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-23 12:01:33
জলের আর এক নাম জীবন। কিন্তু এদেশে এখন প্রকৃতির উৎস থেকে যে জল পাওয়া যায় তার বেশিরভাগটাই দূষিত। এখন তো আবার জলে আর্সেনিক দূষণ। সেই জল খেয়ে জনগণের কী দশা হচ্ছে তা খবরের কাগজের পাতা ওল্টালেই অহরহ চোখে পড়ে।
সদূর গ্রামের কথা থাক, খোদ শহর ঢাকাতে টাইম কলের জলের যে কী হাল, সে তো আর কহতব্য নয়। কোথাও টাইম কল খুললেই ঘোলা জল পড়ে। তা খেলে অবধারিত পেটখারাপ।
পেট খারাপ বা ডায়রিয়া এদেশে মহামারীর মতোই একটি রোগ। প্রায় ষাট শতাংশ লোকেরই পেট খারাপ। এই পেটের রোগের কারণ কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দূষিত জল।
তাই এই পেটের রোগের হাত থেকে রেহাই পেতেই হবে। সেজন্য মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির সৌজন্যে নানাবিধ জল পরিশোধনের যন্ত্র বা ওয়াটার ফিল্টার বাজার ছেয়ে গেচে। কিন্তু এই জল পরিশোধন যন্ত্রের ক্যান্ডেল বারবার বদলাতে হয়। সে এক ঝামেল!
বিগত শতকের শেষ থেকেই মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির সৌজন্যে এদেশে মিনারেল ওয়াটার আমদানি। প্রথম প্রথম এই মিনারেল ওয়াটার বহুমূল্য পার্টিতে বা বক্তৃতা সভায় শুধুমাত্র বক্তাদের টেবিলেই পরিবেশিত হত। আর তখন ওই মিনারেল ওয়াটারের দাম আকাশ ছোঁয়া না হলেও বেশ চড়া ছিল।
আমরা যে জল খাই তা জলের ধরন-ধারণ অনুযায়ী দু’ প্রকার—খর জল বা হার্ড ওয়াটার এবং মৃদু জল বা সফট ওয়াটার।
খর জলে বিভিন্ন প্রকার লবণ দ্রবীভূত থাকে। ফলে জলটার স্বাদ একটু নোনতা হয়। আর মৃদু জলে ওসব কিছুই থাকে না, ফলে জলের স্বাদ সুমষ্টি হয়। খর জলকে ফুটিয়ে নিয়ে ঠান্ডা করলে সমস্ত লবণ থিতিয়ে পড়ে, তার ফলে খর জল মৃদু জলে রূপান্তরিত হয়।
আমাদের প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোস্যাল মেডিসিন বলছে (পৃঃ ১৯৭৯, পর্ক, ষষ্ঠ সংস্করণ), বিভিন্ন দেশে হার্টের রোগের প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে জলের খরতার একটা ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক রয়েছে। যেসব দেশের যে সমস্ত অঞ্চলে মৃদু জলেরই সরবরাহ, সেই সব অঞ্চলে কিন্তু হার্টের রোগী তুলনায় বহুগুণ বেশি। এই সমীক্ষাটি অবশ্য ধরা পড়েছে ঘটনাক্রমে। এবং এ নিয়ে বিস্তরিত ও বিশদ পর্যালোচনা ও অনুসন্ধানের সুযোগ রয়ে গেছে।
কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই অনুসন্ধানের কাজ হঠাৎ করেই সুকৌশলে ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছে। ইন্টারনেটে দেয়ইনি (ডব্লু.এইচ.ও-১৯৭২- হ্যাজার্ডস অব দ্য হিউম্যান এনভায়রনমেন্ট-জেনেভা)।
পানীয় জল এই প্রসঙ্গে মধ্যম খর জল হওয়া উচিত। জলকে যখন মৃদুকরণ করতেই হয় তখন তার খরতা বহুগুণ বেড়ে গিয়ে তা প্রায় পানের অযোগ্য হয়ে পড়ে। (পি.এস.এম—পর্ক, ষষ্ঠ সংস্করণ)।
মিনারেল ওয়াটার সাধারণত মৃদু জলেই তৈরি হয়। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তো ঘন্টা বাজিয়েই রেখেছে এই শতকে তৃতীয় বিশ্বে অন্তত পঞ্চাশ শতাংশ মানুষ হার্টের রোগী হবে।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন