×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

রোগের রাজা-‘রাজরোগ’

হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-23 11:55:15

আমি তখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। তখন আমার বাংলার মাস্টারমশাই বলেছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা গেছেন। কবির ঘরেতে অনন্ত অভাব। দু বেলা খাওয়া জুটতো না। তাই অপুষ্টিতে ভুগতে ভুগতে তিনি এই রাজরোগে আক্রান্ত হন এবং অকালে তাঁর জীবনদীপ নিভে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যাদের পুষ্টির অভাব তাদরেই যক্ষ্মা রোগ বেশি হয়। আমি মাস্টারমশাইকে বললাম, এ তো গরিবের ঘোড়ারোগ। তবে এর নাম রাজরোগ হল কেন? মাস্টারমশাই বললেন, মনে হয় যক্ষ্মারোগ হল রোগের রাজা। এই রোগের চিকিৎসায় খরচ প্রচুর। একমাত্র রাজা-বাদশাদের মতো বিত্তশালী হলেই তবে এ রোগের চিকিৎসা খরচ বহন করা সম্ভব। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, স্যার, রাজারা তো ভোগী, তাহলে রাজাদের নিশ্চয়ই এ রোগ হয় না? মাস্টারমশাই বললেন, কে বলল হয় না? রবীন্দ্রনাথ তো জমিদার পরিবারে জন্মেছিলেন, তাহলে তাঁর কন্যা কেন যক্ষ্মারোগে মরল? আসলে কি জানো, অপুষ্টির কারণে যক্ষারোগ হলেও কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণী বা সামাজিক অবস্থান বা অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর উপরে যক্ষ্মা-সৎক্রমণ নির্ভর করে না। যক্ষারোগে বিশ্বের মধ্যে সব চেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ভারতেবর্ষে ৫৪ জন। ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা মারাত্মকভাবে ছড়াচ্ছে। যে সব যক্ষারোগী ওষুধ খেতে খেতে মাঝপথে ছেড়ে দেন মূলত তাদের শরীরে এই জীবাণু স্থায়ীভাবে ঘরকন্ন শুরু করে। সেই জীবাণুদের ঘরছাড়া করা যায় না। ভারতর্ষে বাইশ লক্ষ যক্ষ্মা রোগীর মধ্যে সাত লক্ষ ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষারোগে ভুগছে। নতুন নতুন শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার সঙ্গে তাল রেখে জীবাণুরা চরিত্র বদলাচ্ছে, ফলে নতুন ওষুধ কাজ করছে না। যে সব ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে , সেগুলোর যেমন পার্শ্বাপ্রতিক্রিয়াও যতেষ্ট তেমনি এই সব ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার বিরুদ্ধে এবার লড়াইয়ে নেমেছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। তারা যক্ষ্মার জীবাণু মারতে বেছে নিয়েছেন হলুদকে। তারা বলছেন হলুদে কারকুমিন নামক অতিসূক্ষ্ম কণা আছে। এই কণা একদিকে যেমন যক্ষ্মার জীবাণুকে পুরোপুরি কাবু করে দেয়, তেমনি ভবিষ্যতে তা যাতে আর না হতে পারে, শরীরের মধ্যে সেই প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। একমাত্র যক্ষারোগ বিষয়ে সচেতনতাই এই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ। রোগের লক্ষণগুলো জেনে নিতে হবে। দু’তিন সপ্তাহ টানা কাশি, খুসখুসে জ্বর, ওজন কমে যাওয়া এসব লক্ষণ দেখা দিলেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া জরুরি। আর এই সচেতনাতা দিয়েই প্রথম স্তরে যক্ষ্মা ধরা পড়লে চিকিৎসা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। এই রোগের ছড়িয়ে পড়া নিয়ে নানান ভুল ধারণা আছে।যেমন অনেকে মনে করেন যক্ষ্মা রোগ দারুণ ছোঁয়াছে। প্রকৃতপক্ষে তা কিন্তু নয়। কেবল স্পর্শে এই রোগ ছড়াই না। এই রোগ ছড়াই হাঁচি,কাশি আর কফের মাধ্যমে। তাই রাস্তাঘাটে হাঁচি-কাশির বেগ এল মুখে রুমাল চাপা দেওয়া উচিত। ক’জনই বা সে নিয়ম মানেন! কারোরই যত্রতত্র কফ ফেলা উচিত নয়। অনেকে আবার লজ্জায় এই রোগ গোপন করে। গোপনে ওষুধ কিনে খায়, তাও নিয়মিত নয়। এরা ডেকে আনে মরণ। একটা ঘটনা বলি। আমার পাড়ার একটি ছেলে যক্ষারোগে আক্রান্ত হয়। কফ পরীক্ষায় সে জানতে পারে যে সে যক্ষা রোগক্রান্ত। জানাজানি হয়ে গেলে কোনো মেয়ের বাবা তাকে পাত্র হিসাবে বিবেচনা করবে না, তাই নে এই রোগ গোপন রেখেই তার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরে জানাজানি হয়ে যায়, তখন লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেও তাকে বাঁচানো যায়নি। অভিমানে তার স্ত্রী আত্মহত্যা করে। আর একটি ঘটনা বলি।আমার পরিচিত এক গরিব বাউল সারাদিন পথে পথে গান গেয়ে ভিক্ষে করে দিন যাপন করে। সে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। প্রথম পর্যায়ে দু’মাসে তাকে চব্বিশটি ডোজ খাওয়ানো হয়, ঘরে খাওয়ার জন্য ভিটামিন ওষুধ দেওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চরে সে। ছ’মাস পরে রক্ত আর কফ পরীক্ষা করে জানা গেল সে যক্ষ্মা রোগমুক্ত। এই সেই বাউলবন্ধু পথে পথে গান গেয়ে মানুষকে যক্ষ্মা বিষয়ে সচেতন করে চলেছেন। তার গানের কথাগুলো কানে বাজে— ‘চাইনা আমি গাড়িবাড়ি চাইনা সোনাদানা, এই দেশেতে যক্ষ্মা রোগে মরতে কারেও দেব না।’ সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন