পোকার কামড় না হারপিস জোস্টার
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-28 12:00:57
আজকাল চিকেন পক্স হলে, হাতে গোনা কিছু মানুষকেই পাওয়া যাবে যারা মায়ের দয়া হয়েছে বলে, মা শীতলার থানে গিয়ে হত্যে দেন। কেননা এখন বেশির ভাগে মানুষই জানেন, এটা একটা ভাইরাস ঘটিত রোগ। চিকেন পক্স রোগটা হয় ভ্যারিসেলা জোস্টার ভাইরাসের দ্বারা। এই একই ভাইরাস আর একটা রোগের জন্য দায়ী, সেই রোগটির নাম হারপিস জোস্টার। চিকেন পক্স বা জলবসন্ত সাধারণত ৯৮% পূর্ণবয়স্ক মানুষের জঅবনে কোনও না কোনও এক সময় হয়। এই একবার চিকেন পক্স হলেই শরীরে হারপিস জোস্টারের বীজ বপন হয়ে যায়। চিকেন পক্স-এর সময়ে ভ্যারিসেলা জোস্টার ভাইরাস ত্বকের সংবেদী স্নায়ুবাহিত হয়ে সংবেদী স্নায়ুগ্রন্থিতে সারাজীবনের জন্য ঘুমন্ত অবস্থায় বাসা বেঁধে থাকে। এরপর কোনো কারণে যদি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটু কমে যায়, ভাইরাসগুলো আবার পুনর্জীবিত এবং সক্রিয় হয়ে ওঠে। তখন এই ভাইরাস আবার স্নায়ুবাহিত হয়ে ত্বকের একটা বিশেষ অংশ হারপিস জোস্টার-এর ফোস্কা তৈরি করে। এই রোগের মূল কারণ হল জীবনে একবার চিকেন পক্স হওয়া এবং সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া। সুস্থ সাধারণ মানুষেরও বড় কোনো অসুখ, বেশি শারীরিক বা মানসিক ধকল, গরম আবহাওয়া এইসব কারণে সাময়িকভাবে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন কিছুটা কমে, তখন হারপিস জোস্টারের লক্ষণ দেখা যায়। এছাড়াও সুস্থ-সবল মানুষেরও হারপিস জোস্টার হতে পারে। এইডস রোগী, অঙ্গ প্রতিস্থাপন ও তার পরবর্তী চিকিৎসায়, ক্যানসার রোগ ও তার চিকিৎসায়, হজকিন্স রোগ বা অন্য কোনো রোগের চিকিৎসা যার জন্য দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ যা প্রতিরোধতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এমন ওষুধ যাদের খেতে হয় এবং যারা ডায়াবেটিস রোগী তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে বাড়ে এই রোগের সম্ভবনা। ভ্যারিসেলা জোস্টার ভাইরাস শরীরের সংবেদী স্নায়ুকে আক্রমণ করে এবং শুধু সেই অঞ্চলেই রোগটি প্রকাশ পায়। শরীরের দু’দিকে আলাদা আলাদা সংবেদী স্নায়ু থাকে বলে সাধারণত হারপিস জোস্টার শরীরের একদিকেই হয়। সাধারণত রোগ প্রকাশের দু’তিন সপ্তাহ আগে থেকে আক্রান্ত অঞ্চলে ব্যথা অনুভব হতে পারে। এরপর সেই জায়গায় ছোট ছোট জলভরা ফোস্কার মতো বেরোয়। ফোস্কাগুলো কয়েকদিনের মধ্যেই ঝাঁকে ঝাঁকে বেরোয়। কখনো কখনো জলের সঙ্গে রক্তও থাকতে পারে। কিছুদিন পরে জলটা পুঁজ হয়ে যায়। এই সময়ে আক্রান্ত অঞ্চলে অসহ্য ব্যথা হয়। পিন ফোটানোর মতো, জ্বলে-পুড়ে যাওয়ার মতো, ছরি বেঁধার মতো কনকনে ফোস্কার সঙ্গে হালকা জ্বর, গায়ে-হাতে-পায়ে ব্যথা, ম্যাজমেজে ভাব সবই হতে পারে। বাড়িতে কারো হারপিস জোস্টার হলে সেই বাড়িতে এমন কোনো শিশু যদি থাকে যার আগে চিকেন পক্স হয়নি তারও চিকেন পক্স হওয়ার সম্ভবনা থাকে। ভ্যারিসেলা জোস্টার ভাইরাসের প্রতিরোধী টিকা বেরোনোর পরে চিকেন পক্স এবং স্বাভাবতই হারপিস জোস্টারও ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। অনেকসময় গ্রীষ্ম বা বর্ষাকালে পোকার কামড়ে চামড়ায় যে ফোস্কা পড়ে, তাকে অনেক সময় হারপিস জোস্টার বলে ভুল করা হয়। আবার হারপিস সিমপ্লেক্স বা ফোস্কা অনেকটা একই রকম। কিন্তু সাধারণত এই রোগ মুখ বা নাকের ফুটোর পাশেই হয়, এর ভাইরাসও আলাদা। শুরুতেই অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ খেলে খুব ভালো উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া ফোস্কার জায়গাতে ক্যালামাইন লোশন লাগাললেও ব্যথার ওষুধ খেলে কষ্টের একটু উপশম হয়। চোখে এই রোগ হলে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের বিশেষ যত্ন নিতে হয়। কাজেই এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিনি। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন