×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

গ্রামে বুট জুতোও ঝেড়ে পরবেন

হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-28 12:28:34

সর্প দংশন হল সাপের কামড়ে সৃষ্ট আঘাত। তবে সর্প দংশন মৃত্যুর কারণ হয় তখনই, যখন সাপটি  বিষাক্ত হয়। তবে এটা মনে রাখা উচিত যে, সব সাপ বিষাক্ত নয়। আর সর্প দংশনে মৃত্যুর হারে ভারতবর্ষের স্থান প্রথম। কেননা একবিংশ শতাব্দীতেও ভারতবর্ষের মানুষ সর্প দংশন নিযে সচেতন নয়। এখনও গ্রামীণ এলাকার মানুষ সর্প দংশনে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন ওঝা-ঝাড়ফুকের ওপর ছেড়ে দিয়েই বেশি নিশ্চিন্তবোধ করেন। এবং এটাই এদেশে মৃত্যুর প্রধান কারণ। অথচ এই ধরনের জরুরি অবস্থায় যত তাড়াতাড়ি আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ‘অ্যান্টি ভেনম’ দেবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণত গ্রামের মানুষ বিশেষত যারা মাঠে ঘাটে কাজ করেন বা জলা জায়গায় কাজ করে জীবিকা নির্বিাহ করেন তারাই সব থেকে বেশি সর্প দংশনের শিকার হন। তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রতি বছর বিষাক্ত সর্প দংশনে আক্রান্তের সংখ্যা ২.৫ মিলিয়ন। এর ফলস্বরূপ সারা বিশ্বে প্রতি বছরে ১.২৫ লক্ষ মানুষের মুত্যু হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ব্রাজিল, আফ্রিকার কিছু অংশ এবং ভারতবর্ষে বহু মানুষের মৃত্যু হয় সাপের কামড়ে। সারা বিশ্বে সাপের কামড়ে মৃতের সংখ্যা ভারতবর্ষে সবথেকে বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর ভারতবর্ষে ৮৩ হাজার মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয় এবং তার মধ্যে ১১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় প্রতি বছরে। এই মৃত্যুর প্রধান কারণ হল দংশিত ব্যক্তিকে সঠিক সময়ে হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়া। আমাদের দেশে সাধারণত ২৭০ প্রজাতির সাপ দেখা যায়। যার মধ্যে ৬০ টি প্রজাতির সাপ খবউ বিষাক্ত। ভারতবর্ষে সব থেকে বিষাক্ত ছ’টি সাপ হল—

  • কোবরা: কোবরা আবার ‘নাগ’ বলেও পরিচিত। কোবরা সাধারণত প্রচন্ড বিষাক্ত। এরা জঙ্গল এলাকায় থাকে। কখনো কখনো জনবসতিতেও দেখা যায়। এই প্রজাতির সাপের মধ্যে গোখরা ও কেউটের প্রাদুর্ভাব সব থেকে বেশি লক্ষ করা যায়।
  • সাধারণ ক্রেট: ক্রেট প্রজাতির সাপের দংশনে মৃত্যুর হার যথেষ্ট বেশি। ক্রেট সাপের কামড়ে মস্তিস্কের স্নায়ু ভীষণভাবে দুর্বল হয়ে যায়। ভারতে ১২-১৩ টি ক্রেট প্রজাতির সাপ দেখা যায়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল করেত, কালাজ, শাঁখামুটি।
  • রাসেলর্স ভাইপার: এই প্রজাতির সাপের মধ্যে চন্দ্রবোড়া খুবই বিপদজনক। সাধারণত এই প্রজাতির সাপ ৮ ফুট লম্বা হয়  এবং গাঢ় বাদামি বর্নের দেখতে হয়।
  • স্কেলড্ ভাইপার: এই প্রজাতির সাপ সাধারণত খসখসে ত্বকের হয়। চোখ এবং মাথার আকৃতিও বড় হয়।
  • পিট ভাইপার: সাধারণত সবুজ রঙের দেখতে হয় এবং বাঁশ ঝাড়ের ধারেপাশে বেশি দেখা যায়।
কাউকে সাপে কামড়ালে সম্ভব হলে প্রথমেই সাপটা বিষাক্ত কিনা জানবার চেষ্টা করুন। সাধারণত বিষাক্ত সাপের কামড়ে দুটো গভীর বিষ দাঁতের দাগ লক্ষ করা যায়। যে সাপের বিষ নেই তাদের কামড়ে শুধু দু’সার সাধারণ দাঁতের দাগ থাকে, বিষ দাঁতের দাগ থাকে না। সাপের কামড়ের লক্ষণ কামড়ের ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে সাধারণত যে লক্ষণগুলো দেখা যায়---
  • তীব্র যন্ত্রণা।
  • ফুলে যাওয়া (চন্দ্রবোড়ার ক্ষেত্রে একটু বেশি ফুলে যায়)
  • দংশনের স্থান থেকে রক্তপাত।
  • কামড়ের জায়গায় চারিদিকে চামড়ারর রঙের পরিবর্তন।
  • গোখরো ও করেত সাপের বিষ স্নায়ু ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়। সেক্ষেত্রে ‍ঘুম ঘুম ভাব, পেশির দুর্বলতা, পেশির পক্ষাঘাত, শ্বাসতষ্ট প্রভূতি দেখা যায়। চন্দ্রবোড়ার বিষ রক্তকে সংক্রামিত করে। চন্দ্রবোড়ার কামড়ের ক্ষেত্রে মাথা ঘোরা, গা বমি বমি ভাব, কাশির সাথে রক্তের ছিটে বেরোনো, শকের লক্ষণ দেখা যায়।
প্রাথমিক চিকিৎসা
  • রোগীকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। রোগীর মানসিক উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন। কারণ রোগীর মানসিক উত্তেজনা হৃৎপিন্ডের গতিকে বাড়িয়ে তোলে এবং বিষ সারা শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
  • রোগীকে বেশি নড়াচড়া করতে দেবেন না।
  • আক্রান্ত জায়গায় কোনো আংটি বা গয়না সামগ্রী থাকলে খুলে ফেলুন। কারণ জায়গাটি ফুলতে পারে।
  • চেষ্টা করুন যাতে আক্রান্ত জায়গা হার্ট লেভেলের নীচে থাকে।
  • দংশনের জায়গাটা যদি ফুলতে থাকে এবং রঙ পরিবর্তন হতে থাকে তাহলে বুঝবেন সাপটি বিষাক্ত।
  • যদি সম্ভব হয় রোগীর শরীরের তাপমাত্রা, নাড়ির গতি এবং রক্তচাপ দেখুন।
  • যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যান যাতে অ্যান্টি স্নেক ভেনম-এর ব্যবস্থা করা যায়।
কী করবেন না
  • আক্রান্ত জায়গায় কোনো সাবান বা কোনো রাসায়নিক মিশ্রণ ব্যবহার করবেন না।
  • আক্রান্ত জায়গাকে কোনোভাবে কাটাকুটি করে বিষ তোলার চেষ্টা করবেন না।
  • কোনোরকম বৈদ্যুতিক শক ব্যবহার করতে দেবেন না।
  • কোনোরকম ঝাড়-ফুঁক বা ওঝার সাহায্য নেবেন না।
  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনোভাবেই মদ্যপান করানোর চেষ্টা করবেন না।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ প্রয়োগ করবেন না।
অ্যান্টি স্নেক ভেনম বিষাক্ত সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে অ্যান্টি স্নেক ভেনম হল একমাত্র জীবনদায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা। ভারতবর্ষে সাধারণত পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টি স্নেক ভেনম পাওয়া যায়। যা চার ধরনের বিষাক্ত সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে কার্যকরী। অ্যান্টি স্নেক ভেনম সাধারণত একটি বিশেষ বায়োটেকনোলজিক্যাল পদ্ধতির মাধ্যমে সাপের বিষ থেকেই তৈরি করা হয়ে থাকে। অ্যান্টি স্নেক ভেনম তখনই দেওয়া উচিত যখন আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে সুনির্দিষ্ট ভাবে বিষাক্তভাব লক্ষণ দেখা যাবে (যেমন রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা, স্নায়বিক অসুস্থতা ইত্যাদি)। অ্যান্টি স্নেক ভেনম রক্তে গিয়ে রক্তের বিষক্রিয়াকে প্রশমিত করে। অ্যান্টি স্নেক ভেনম শরীরে প্রয়োগ করলে কিছু ক্ষেত্রে অ্যানাফাইল্যাকটিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। সেজন্য অ্যান্টি স্নেক ভেনম কখনোই নিজে নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়। অ্যান্টি স্নেক ভেনম প্রয়োগের সময় অবশ্যই সেখানে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন, যিনি জরুরী অবস্থাকে সামাল দিতে পারবেন। সাপে কাটা রোগীর মধ্যে বিষক্রিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে প্রথমেই ৮-১০ ভায়েল অ্যান্টি স্নেক ভেনম প্রোয়োগ করা হয়। নিউরোলজ্যিক্যাল লক্ষণ দেখা দিলে অ্যাট্রোপিন ও নিওস্টিগমিনের ব্যবহার হয়। সর্প দংশন কীভাবে এড়াবেন
  • কখনোই সাপ নিয়ে খেলা করতে যাবেন না । সে ছোট সাপ হলেও। বিশেষ করে গ্রামের দিকে কিছু অতি সাহসী মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
  • রাতে বাইরে বেরোলে অবশ্যই সঙ্গে টর্চ লাইট নিয়ে বেরোবেন এবং সতর্ক থাকবেন।
  • সাপ শুধু শুধু কাউকে কামড়ায় না। এরা সাধারণত ভয়ে কামড়ায়। কোবরা জাতীয় সাপ সামনের দিকে ভর দিয়ে উঠে গিয়ে ফণা তুলে ছোবল মারে। ভাইপার জাতীয় সাপ হঠাৎ ঘুরে গিয়ে কামড়ে ধরে।
  • একটা জিনিস মাথায় রাখবেন। সাপ কিন্তু মাটির কম্পন অনুভব করে কামড়ায়। হঠাৎ কখনও সাপের মুখোমুখি হলে উত্তেজিত হয়ে দৌড়াদৌড়ি করবেন না। দৌড়াদৌড়ি করলে সাপ কিন্তু ভয় পেয়ে কম্পন অনুভব করেও কামড়ে দিতে পারে। চেষ্টা করবেন শান্ত থাকার। যতটা সম্ভব আস্তে আস্তে নিরাপদ দূরত্বে চলে যান এবং সাপটিকে চলে যেতে দিন।
  • পারলে বড় গামবুট ব্যবহার করতে পারেন যখন জঙ্গল এলাকাই যাবেন।
  • বাড়িতে বুটজুতো পরার সময় সবসময় ঝেড়ে পরবেন।
  • বাড়ির বাথরুম বা রান্না ঘরে জল বেরোনোর পাইপের মুখে জালি লাগিয়ে রাখবেন। না হলে সেই পথে সাপ বাড়িতে ঢুকে যেতে পারে।
  • বাড়ির জানালার জাল লাগিয়ে রাখবেন।
  • বাথরুম আলোর সুইচ সবসময় বাথরুমের বাইরে রাখবেন। যাতে বাইরে থেকে আলো জ্বালিয়ে তবেই বাথরুমে প্রবেশ করা যায়। তাতে যদি বাথরুমে কোনোভাবে সাপ ঢুকে থাকে আগে থেকে দেখা যাবে।
  • বাড়ির চারপাশে নিয়মিত ব্লিচিং পাউডার বা কার্বলিক অ্যাসিড ব্যবহার করবেন। তাতে করে সাপ বাড়ির আশপাশে আসবে না।
সাপে কাটা একটি জরুরী অবস্থা। সাপে কাটা রোগীকে কখনোই ঝাড়-ফুঁক করাতে যাবেন না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যান যাতে ব্যক্তিটির জীবন রক্ষা পায়। সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন