×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

কেন হয় প্রেসারের গোলমাল

ডাঃসওকত আলী
2018-12-14 11:35:35

দেহের ভিতরে রক্তের চাপই হল রক্তচাপ। আমরা আমজনতা যাকে বলি প্রেসার, ব্লাডপ্রেসার। ব্যাপারটা ভালো করে দেখে নেওয়া যাক। রক্ত দেহের নানান অংশে যাতায়াত করে। যেমন আপ-ডাউন ট্রেন তেমনি রক্ত আপ-ডাউন করছে সর্ব শরীরে। এই প্রবাহের কেন্দ্রে রয়েছে হৃৎপিন্ড। সেটি হল গুরুত্বপূর্ণ পাম্প। নির্দিষ্ট গতিতে, ছন্দে ও পরিমাণে প্রতিনিয়ত হৃদযন্ত্রটি রক্ত পাম্প করে চলেছে সারা শরীরে। এই আপ-ডাউন ব্যাপারটা ভাবতে গেলে বুঝতে হবে কিছু রক্ত প্রতিনিয়ত হৃৎপিন্ডে আবার ফিরেও আসছে। হৃদযন্ত্রের চারটি প্রকোষ্ঠের কাজই হল এই আসা-যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা। যে সমস্ত রক্তনালী বা নালিকা দিয়ে হৃদযন্ত্রে রক্ত প্রবেশ করে তাদের বলা হয় ভেন বা শিরা, অনেকটা আমাদের ঘরের ড্রেনের বা প্রণালীর মতো। আর শক্তপোক্ত যে সমস্ত নালী বা নালিকার সাহায্যে চাপ দিয়ে হৃৎপিন্ড রক্তকে হয় ফুসফেুসে না হয় দেহের নানান অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাঠায় তাদের বলে আর্টারি বা ধমনী। শিরার মধ্যে রক্ত প্রবাহটা অনেকটা অপ্রত্যক্ষ বা প্যাসিভ, অন্যদিকে ধমনীর মধ্যে প্রবাহটা ভীষণভাবে সরাসরি বা অ্যাক্টিভ। সাধারণভাবে ধমনীর মধ্য দিয়ে তার চলাচল। উপরিভাগ বা শাখা-প্রশাখার মধ্য দিয়ে দেহে ছড়িয়ে পড়ার জন্য একটা চাপ দরকার। এই চাপকে সহজভাবে আমরা রক্তচাপ বলে থাকি। সেটি হৃদযন্ত্র থেকে যত দূর যাবে তত তার গুরুত্ব বাড়বে। এই যে নানান অঙ্গে, চারদিকে প্রসারিত অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট নালীর চাপ তাকেই আমরা ব্লাডপ্রেসার বলে থাকি। আসলে এটি পেরিফেরাল আর্টারিয়াল প্রেসার। রক্তচাপ: উৎস কী স্বাভাবিক ভাবে হৃদযন্ত্রই হল চাপের প্রধান স্থপতি। হৃদযন্ত্রের মাংসপেশি সংকোচর ঘটালে তার প্রকোষ্ঠের আয়তন কমে যায়। অভ্যন্তরে থাকা রক্ত চাপ যায় বেড়ে। সেই রক্ত তখন তুলনামূলক কম চাপে থাকা কোনো রস্তা ধরে হৃৎপিন্ড থেকে বেরিয়ে গিয়ে সেই চাপকে কমানোর চেষ্টা করে। ফলে রক্ত হৃৎপিন্ড থেকে বাইরে রক্তনালী বা অ্যাওর্টাতে এসে পৌঁছয়। কল্পনা করুন আমাদের জল সরবরাহের ব্যাপারটা। ট্যাঙ্কে জল রাখা আছে চাপে। সেই চাপ প্রবাহিত হয় নলের মধ্যে। অর্থাৎ নলের মধ্যে একটা চাপ বর্তমান থাকে। ট্যাঙ্কে জল ভর্তি হয় পাম্পের সাহায্যে। তফাদের ব্যাপারটা হল যে পাইপটা জল বহন করছে সেটা সাধারণত লোহার এবং কঠিন ও শক্ত। মানুষের দেহে কিন্তু তা নয়। রক্তনালিকা বা ধমনীর প্রাচীর তৈরি যে পদার্থ দিয়ে সেগুলো স্থিতিস্থাপক। অর্থাৎ চাপ বাড়লে এটিও একটু প্রসারিত হয়। সুতরাং শক্ত পাইপে জল প্রবাহের গতি ও চাপ এক থাকলেও দেহের রক্তনালিকার স্থিতিস্থাপকতার জন্য তার হেরফের ঘটে। রক্তচাপের মূল উৎস অবশ্যই হৃৎপিন্ড। অপ্রধান প্রভাব সৃষ্টিকারী ব্যাপারগুলোর মধ্যে রক্তনালীর ছিদ্রপথের পরিমাপও তার দেওয়ালের স্থিতিস্থাপকতার ওপরও ভীষণভাবে নির্ভরশীল। প্রকৃতপক্ষে এইগুলোর রোগ সৃষ্টিকারী উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কার্যকারণ হয়ে দাঁড়ায়। মনে রাখতে হবে দেহের রক্তের মূল উপাদান জল। এই জলের কম-বেশির ওপর মোট রক্তের আয়তন ও পরিমাণ নির্ভরশীল। মোটামুটি পাঁচ লিটার রক্তের পরিমাণ এই জলের সাথে সাথে বাড়ে-কমে। স্বভাবতই পরিমাণের ওপর রক্তের চাপও কমে-বাড়ে। এই জলকে নিয়নন্ত্রণ করার প্রধান অঙ্গ হল কিডনি। শুধু তাই নয়, রক্তনালীর দেওয়াল বা ঝিল্লির স্থিতিস্থাপকতা বা টোন নির্ভর করে তার মধ্যে কোষ ও কোষের বাইরে থাকা জল ও লবণের পরিমাণের ওপর। এই লবণ বা আয়ন (অর্থাৎ সোডিয়াম)-এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণেও মুখ্য ভূমিকা পালন করে কিডনি। বেশি সোডিয়াম থাকলে সাথে সাথে থাকবে জল। ফলে রক্তবাহী নালীর প্রাকারে জলের পরিমাণ বেশি থাকবে। ফলে ফুলতে পারবে না আগের মতো। একে বলে কম স্থিতিস্থাপক বা লো কমপ্লিয়েন্স। নিট ফল অভ্যন্তরে থাকা রক্তের চাপ বেড়ে যাওয়া। তাহলে এক কথায় দাঁড়াল যদি কিডনি গোলমাল করে তবে তার ফলে রক্তনালীতে জল তথা সোডিয়ামের হেরফের ঘটবে। পরিণাম রক্তচাপের ওঠানামা। স্বাভাবিক লক্ষ্মী ছেলের মতো কিডনি কাজ করলে সর্বদা এর পরিমাণ সাম্য থাকে, ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। হৃদযন্ত্র কেন্দ্রীয় উৎস কোনো সন্দেহ নেই। প্রত্যেকবার সংকোচনের ফলে যে পরিমান রক্ত বেরোতে থাকে বলা হয় স্ট্রোক ভলিউম। মিনিটে নির্দিষ্ট গতিতে হৃদযন্ত্র চলতে থাকে এবং প্রতি ক্ষেত্রে স্ট্রোক ভলিউম এক থাকলে মিনিটে রক্ত উগরে দেওয়ার আয়তনকে বলা হয় আউটপুট। এই পরিমাণ রক্ত নালিকাতে ছড়িয়ে পড়ে। যদি কোনো কারণে আউটপুট বেড়ে যায় তার ফলে নালীতে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায়, কম উচ্চ চাপে। আবার হার্টের গতি যদি বাড়ে এবং স্ট্রোক ভলিউম একই থাকে (সাধারণত একটু কমে যায়) তবে আউটপুট যায় বেড়ে। সুতরাং হৃদযন্ত্রের গতি ও স্ট্রোক ভলিউমের ওপর রক্তচাপ ভীষণভাবে নির্ভরশীল। সোয়িয়াম ছাড়াও নানারকম হরমোনাল স্নায়ুতন্ত্রের রাসায়নিক পদার্থ রক্তনালীর ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। কেউ কেউ তাকে প্রসারিত করে আবার কেউবা সংকুচিত। এইসব নানান ফ্যাক্টর একত্রে সাম্যের অবস্থা সৃষ্টি করে জটিল প্রক্রিয়াতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশেষত স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকলাপ সমব্যথী। আবার মানসিক চিন্তা, চাপ ও অবস্থার ওপর নির্ভর করে। এই স্নায়ুতন্ত্র তার নিঃসৃত রাসায়নিক পদার্থের সাহায্যে হৃদযন্ত্রের গতি-প্রকৃতি ও রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা প্রভাবিত করে। তাই মানসিক অবস্থা ও রক্তচাপের অন্যতম প্রভাব সৃষ্টিকারী উৎপাদক। এতক্ষণ যা আলোচনা করলাম তার সার সংক্ষেপ করলে স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় অবস্থায় রক্তচাপ সাম্যাবস্থায় থাকার কারণগুলো হল—

  • হৃদযন্ত্রের প্রভাব।
  • রক্তনালীর শরীর সংস্থাগত অবস্থা
  • রক্তে জল ও লবণের পরিমাণের নিয়ন্ত্রণ
  • কিডনির প্রভাব
  • স্নায়ুতন্ত্র তথা মানসিক অবস্থার প্রভাব।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন