×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

হঠাৎ করে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ বন্ধ করে হোমিওপ্যাথি নয়

ডাঃ ডি. কর
2018-12-14 12:54:06

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেন সম্বন্ধে ছোট থেকে বড় প্রত্যেকেরই অল্প বিস্তর ধারণা আছে। প্রত্যেকেই জানে উচ্চ রক্তচাপের অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ খাওয়া একবার খাওয়া শুরু হলে আর বন্ধ করার উপায় নেই।বন্ধ হলেই প্রেসার বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ ছাড়াও নিম্ন রক্তচাপ বা রক্তচাপের ওঠা-নামার সমস্যাও থাকতে পারে। এই রক্তচাপ জনিত সমস্যাও তার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করব। উচ্চ রক্তচাপ বলতে কী বোঝায় প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক রক্তচাপ হল ১২০/৮০ থেকে ১৪০/৯০। যদি পরপর তিনবার বা তার বেশিবার বিভিন্ন সময়ে বা বিভিন্ন দিনে রক্তচাপ ১৪০/৯০ থেকে বেশি হয়, তাহলে তাকে উচ্চ রক্তচাপের রোগী বলা হবে। উচ্চ রক্তচাপের প্রকারভেদ সাধারণত দুই প্রকারের হয়—প্রাইমারি ও সেকেন্ডরি। প্রাইমারি উচ্চরক্তচাপ বলতে বোঝায় যেখানে নির্দিষ্ট করে কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এই ধরনের রোগীর সংখ্যা প্রায় ৯৫ শতাংশ। যেখানে রোগের কারণ সঠিকভাবে পাওয়া যায় তাকে বলে সেকেন্ডরি উচ্চ রক্তচাপ। সেকেন্ডরি উচ্চ রক্তচাপের কিচু গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল নিয়মিত মদ্যপান, কিডনির রোগ, থাইরয়েড বা প্যারাথাইরয়েড হরমোনের আধিক্য, ডায়াবেটিস, পুরাতন গাউট, এথেরোস্কেরোসিস, গর্ভনিরোধক বড়ির দীর্ঘ ব্যবহার, ব্যথার ওষুধ, মানসিক চাপ ইত্যাদি। ক্লিনিক্যালি উচ্চ রক্তচাপ আবার দু’ধরনের-তরুন ও পুরাতন। হঠাৎ করে প্রেসার বেড়ে গেলে বলা হয় তরুণ উচ্চ রক্তচাপ। যারা রোজ ওষুধ খেয়ে ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখেন তারা হলেন পুরাতন হাইপারটেনশন রোগী। লক্ষণ

  • বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ পাওয়া যায় না। অন্য কোনো কারণে ডাক্তার দেখাতে গেলে ডাক্তারবাবুর রুটিন পরীক্ষার সময় ধরা পড়ে।
  • উচ্চ রক্তচাপের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হল মাথার মাঝখানে বা পিছনে দিকে দপদপানি ব্যথা, ঝিমুনি ভাব, সামান্য কারণেই বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট, রাতে ঘুম ঠিকমতো না হওয়া ইত্যাদি।
  • অনেক সময় বুকে ব্যথা হয় (এঞ্জাইনা পেক্টোরিস)—সামান্য পরিশ্রম বা সিঁড়ি ওঠার পরেই বুক ধড়ফড় করা, বুকের মাঝখানে চাপা ব্যথা, ব্যথা অনেক সময় বাম হাত দিয়ে নেমে আসা। খানিকক্ষণ বিশ্রামনিলেই ব্যথা কমে যায়।
এই ব্যথা হওয়া কিন্তু মন্দের ভালো। কারণ ব্যথা হলে লোকেরা সতর্ক হয়, চিকিৎসা করায়, ফলে সুস্থ থাকে—জীবন নিয়ে টানাটানির সম্ভাবনা কম থাকে। কিন্তু যারা দীর্ঘ দিনের সুগার রোগী তারা এই ব্যথা অনুভব করেন না। ফলে হঠাৎ করে এক দিন মারাত্মক কিছু হয়ে যেতে পার। যেমন—ব্রেন হেমারেজ, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি। তাই সুগারের রোগীরা নিয়মিত প্রেসার মাপবেন।
  • আর্টেওস্ক্লেরোটিক লক্ষণ—অর্থাৎ শরীরের মোটা ধমনীতে চর্বি জমা। আমাদের রক্তে চর্বি বা ফ্যাট বা তেলের পরিমাণ বেশি হলে তা মোটা মোটা ধমনীগুলোর মধ্যে জমে যায়। ফলে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়। এদের ডাক্তারি নাম হল কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড ইত্যাদি। এই অর্টেরিওস্ক্লেরোসি শাথায় ধমনীতে হলে ব্রেনে রক্তক্ষরণ হতে পারে, রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে, খিঁচুনি বা প্যারালাইসিসও হতে পারে। চোখের ধমনীতে অর্টেরিওস্ক্লেরোসিস হলে দৃষ্টিশক্তি লোপ পেতে পারে। কিডনি বা ধমনীতে অর্টেরিওস্ক্লেরোসিস হলে প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে রাত্রে। প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তও বেরোতে পারে।
নিম্ন রক্তচাপ নিম্ন রক্তচাপ বলতে বোঝায় ব্লাড প্রেসার ১২০/৮০-র নীচে নেমে গেলে। এখনকার দিনে প্রেসার একটু কম থাকাই ভালো। কারণ এখন প্রতিটি মানুষ প্রচুর মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন। ১১০/৭০ প্রেসার থাকলে ভালো। প্রেসার বেশি কমে গেলে মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা, বমি ভাব, চোখে অন্ধকার দেখা ও জ্ঞান হারাতে পারে। রক্তচাপের ওঠানামা: অনেক সময় প্রেসার হঠাৎ বেড়ে যায় ও কমে যায়। অর্থাৎ কখনো ১৪০/৯০-এর বেশি, আবার কখনো ১২০/৮০-এর নীচে নেমে যায়। এটি ভালো লক্ষণ নয়। এই লক্ষণটি স্ট্রোকের সতর্কীকরণ লক্ষণ। এর প্রধান কারণগুলি হল হাইপারটেনশনের ওসুধের ডোজ বেশি হেলে, দীর্ঘ রোগভোগের ফলে এড্রিনালিনের ক্ষমতা কমে গেলে, কোলেস্টেরল বা ক্যালসিয়ামের পরিমাণ রক্তে বেড়ে গেলে, ধমনীগুলি স্টিফ হয়ে গেলেও রক্তচাপ ওঠানামা করতে পারে। এখানে প্রেসার বেড়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও প্রেসার কমে গেলে নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণ প্রকাশ পায়। ইনভেস্টিগেশন উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ই.সি.জি, চেষ্টা এক্স-রে, লিপিড প্রোফাইল, রুটিন ব্লাড করতেই হবে। ই.সি.জি-তে বা অন্যান্য রিপোর্ট কোনো দোষ থাকলে হার্টের ইকোকার্ডিওগ্রাফি করতে হবে। ম্যানেজমেন্ট
  • উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের সবসময় কম নুন দেওয়া খাবার খেতে হবে। ভাতে বা অন্য কোনো খাবারে কাঁচা নুন (অর্থাৎ অনাবশ্যক নুন) খাওয়া চলবে না। যখন রক্তচাপ খুব বেশি থাকে তখন নুন ছাড়া খাবার খেতে হবে। এখানে নুন বলতে সাদা নুন, সন্ধক নুন, বীট নুন, ভাজা নুন সব ধরনের নুনকেই বোঝায়।
  • রক্তে কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড বা অন্য কোনো লিপিডের পরিমাণ বেশি থাকলে ফ্যাট জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। এক্ষেত্রে রান্নায় তেলের পরিমাণ কমাতে হবে। ঘি, মাখন, চিজ, ফাস্ট ফুড, বেশি তেল-মশলাযুক্ত খাবার।
  • প্রেসার কম থাকলে নুন-চিনির জল ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, সঙ্গে স্বাভাবিক ঘুম হলেই ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু ১০০/৬০-এর নীচে নেমে গেলে ওষুধের দরকার হয়।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা অ্যাকিউট এবং ক্রনিক উভয় ক্ষেত্রেই উপযুক্ত হোমিওপ্যাথিক ওষুধ আছে। অ্যাকিউট বা তরুণ উচ্চ রক্তচাপ বলতে বোঝায় হঠাৎ করে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে মানসিক উত্তেজনা, মানসিক চাপ, মানসিক অশান্তি, অধিক নেশাভাঙ, অত্যধিক শারীরিক প্ররিশ্রম, ভুঁরিভোজ, রেসপিরেটরি ট্রাক্ট ইনফেকশন, স্টম্যাক ইনফেকশন ইত্যাদি কোনো এক্সাইটিং কারণ নিশ্চয় থাকবে। এই কারণ অনুযায়ী হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দিলে খুব তাড়াতাড়ি আরাম পাওয়া যায়। যেমন—মানসিক উত্তেজনার কারণে ক্যামেলিয়া, টেনশনের জন্য আর্জেন্টাম, ইগনেশিয়া, ন্যাট্রাম মিউর, রাত্রি জাগরণের জন্য কোকুলাস, নেশাভাঙের জন্য নাক্সভম, অধিক ভোজনের জন্য লাইকো ইত্যাদি ওষুধগুলি খুব ভালো কাজ করে। এই সব ক্ষেত্রে বেশিদিন ওষুধ খাবার প্রয়োজন হয় না। ক্রনিক ক্ষেত্রে অবশ্য রোগীর ধাত ও লক্ষণ অনুযায়ী ওষুধ দিতে হয়। সেই সঙ্গে রক্তের লিপিড প্রোফাইল ও ই.সি.জি দেখার প্রয়োজন আছে। প্রথম থেকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করলে কয়েক মাস ওষুধ খাবার পর ওষুধ বন্ধ করলেও কোনো অসুবিধা হয় না। যারা দীর্ঘদিন ধরে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ খাচ্ছেন, হঠাৎ করে অ্যালেঅপ্যাথিক ওষুধ বন্ধ করে হোমিওপ্যাথি করবেন না। তাহলে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের উইথড্রয়াল এফেক্টে প্রেসার বেড়ে যাবে। এইসক রোগীদের ক্ষেত্রে যদি দেখা যায় অ্যালোপ্যাথি খেয়েও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না, বরং একটির জায়গায় দুটি ট্যাবলেট খেতে হচ্ছে, সেখানে অ্যালোপ্যাথির সঙ্গে ে হোমিওপ্যাথি খেলে সহজেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। পরে রোগীর অবস্থা দেখে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের ডোজ ক্রমশ কমাতে কমাতে একদিন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে রোগী অনেক ভালো থাকে। ওষুধের খরচ কমে যায় তাই মানসিক শান্তিও থাকে। যাদের বংশে উচ্চ রক্তচাপ বা স্ট্রোকের ইতিহাস আছে তারা প্রত্যেকেই ৪০ বছর বয়সের পর থেকে মাসে অন্তত একবার করে রক্তচাপ মাপান এবং শরীর সম্বন্ধে একটু সতর্ক থাকুন। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে যদি হোমিওপ্যাথিক ওষুধ খানও নিয়ম মেনে চলেন তাহলে বিপদের সম্ভাবনা অনেকটাই কম থাকে। সর্পগন্ধা, ক্রাটিগাস, ক্যাকটাস, লাইকোটাস, অর্জুন, ভিসকাম ইত্যাদি ওষুধগুলি উচ্চ রক্তচাপে ভালো কাজ করে, তবে কোনো কনস্টিটিউশনাল মেডিসিনের সাথে। কাজেই রক্তচাপের কোনো ওষুধই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না। সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন