×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

গরমে ত্বকের দফারফা রেহাই পাবেন কীভাবে

ডাঃ শান্তনু মুখার্জি
2018-12-17 15:54:34

আমাদের গ্রীষ্মপ্রধান দেশে শীতল হল ক্ষণিকের অতিথি। এসেই তার যাওয়ার তাড়া। শীতের শেষে মধু মাস ফাল্গুন-চৈত্র বসন্তকাল। দোল উৎসব, বাসন্তীপুজো শেষ হতে না হতেই প্রচন্ড দাবদাহ নিয়ে গ্রীষ্ম এসে কড়া নাড়ে আমাদেরর দরজায়। চড়া রোদ আর গরমে ত্বকের দফারফা। গরমে চড়া রোদ ত্বকের নানা ক্ষতি করে। সূর্যরশ্মিতে নানা ধরনের আলট্রাভায়োলেট বা অতিবেগুনি রশ্মি থাকে, যাদের বলে এ বি ও সি। এ ও বি রশ্মি ওজোন স্তর ভেদ করে পৃথিবীতে এসে পড়ে এবং আমাদের ত্বকের এপিডারমিস স্তরকে উত্তেজিত করে। এই স্তরের প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিড এই তেজস্ক্রিয় রশ্মিকে শোষণ করে নেয়। ফলে এপিডারমিসের ডি.এন.এ-র অস্থায়ীভাবে গঠনগত পরিবর্তন হয়। কিন্তু বারে বারে অতি বেগুনী রশ্মি ত্বকে এসে পড়লে ত্বকের কোলাজেন তন্তু ভেঙে স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয় এবং ত্বকের ঔজ্জ্বল্যতা হারায়, ত্বকের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়ে। সানবার্ন গরমে রোদে বেশি ঘোরাঘুরি করলে দেখা দেয় সানবার্ন। এত ত্বকে প্রদাহ হয়, লাল চাকা চাকা দাগ দেখা যায়, সঙ্গে চুলকানি ও জ্বালা হতে পারে। অতিরিক্ত সূর্যালোক ত্বকে লাগার কারণে ত্বকে ঘন বাদামি ছোপ পড়ে। দেহের আঢাকা অংশে মেলাজমা বেশি হয় সেটা গরমকালে বেড়ে যায়। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে রোদে বের হলে ছাতা অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। সুযোগ পেলে চোখে-মুখে জলের ঝাপটা দিন। যেখানে সানবার্ন হয়েছে সেখানে বরফের টুকরো ঘষুন। রোদে বেরোবার তিরিশ মিনিটি আগে হাই পাওয়ার এস.পি.এফ-১৫/৩০ সানস্ক্রিন লোশন বা সানব্লক লাগান। আপনার স্কিনে কত পাওয়ারের সানস্কিন লাগাবে সেটা একজন ডার্মাটোলজিস্টকে দেখিয়ে জেনে নিন। গরমে দিনেরবেলায় ত্বককে কখনোই বেশি প্রসাধনে সাজাবেন না।  ঘাম এবং ঘামাচি আমাদের শরীরে ছোট ছোট ঘর্মগ্রন্থি বা সোয়েট পোর থাকে তার মাধ্যমে ঘাম ত্বকের ওপর বেরিয়ে আসে। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের ত্বকে ত্রিশ লক্ষ ঘর্মগ্রন্থি থাকে। ঘামের শতকরা নিরানব্বই ভাগই জল, বাকি এক ভাগের মধ্যে নান ধরনের লবণ, অ্যানিড, ইউরিয়া, প্রোটিন, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি থাকে। ঘাম আমাদেরর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, দেহের জলের পরিমাণ ঠিক রাখা, ত্বককে আর্দ্র রাখা, রোগজীবাণু প্রতিরোধ, অ্যাসিড ও ক্ষারের সমতা ঠিক রাখা প্রভৃতি কাজ করে। তাই ঘাম হলে অস্বাস্তি হলেও অতিরিক্ত ঘাম কিন্তু কোনো অসুখ নয়। গরমে যেমন ঘাম বাড়ে তেমনি ঘামাচিও হয়। কোনো কারণে ত্বকের ঘর্মছিদ্র বন্ধ হয়ে গেলে নির্গথ ঘাম ঘর্মনালী বেয়ে আর ত্বকের ওপর আসতে পারে না, ত্বকের নীচেই জমে থাকে, ফুসকুড়ি মতো দেখায়, এদের বলে ঘামাচি। অনেক সময় এগুলো ভীষণ চুলকোয়, নখে ময়লা থাকলে নিউমোকক্কাল বা স্টেপ্টোকক্কাল ইনফেকশন হয়ে ফোঁড়া হতে পারে। ঘামাচি হলে ভালো করে সাবান দিয়ে দু’বার স্নান করতে হবে, অ্যান্টিসেপটিক সাবান হলে ভালো হয়। জলে কোলন ফেলে স্নাস করলে ঘামের গন্ধ দূর হবে। গরমকালে সিস্থেটিক পোশাক পরলে ঘাম বেশি হয় তাই গরমে সূতি বা লিনেনের পোশাক পরা ভালো। অনেকে এই সময় খুব করে পাউডার মাখেন ঘামের জন্য। কিন্তু পাউডার ঘর্মনালীর মুখে জমে যায়। ফলে ঘাম বেরোতে পারে না। ছিদ্রমুখে জমে গিয়ে একসময় ফেটে যায়, বাইরের ত্বকে ছোট ছোট দানার মতো ঘামাচি ছড়িয়ে পড়ে। বাইরে থেকে ঘুরে এসে ঘাম নিয়েই স্নান করবেন না। ঘাম শুকিয়ে স্নান যান। শরীরে ঘাম নিয়ে হঠাৎ হঠাৎ এসি ঘরে প্রবেশ করলে ব্রঙ্কাইটিস, সর্দিকাশি, সাইনাসে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। সব সময় ঘাম থেকে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও শুকনো রাখুন। নিজের আন্ডার গার্মেন্টস ও বাচ্চাদের জামাকাপড় বার বার পাল্টান। ঘামে ভেজা জামাকাপড় বেশিক্ষণ গায়ে রাখবেন না। সামার বয়েল গরমকালে অনেকের খুব ফোঁড়া হয়। বাইরের ধুলোবালি, ময়লার সংস্পর্শে ত্বকের ঘর্মছিদ্র বন্ধ হয়ে সেখানে প্রদাহ হয় এবং জীবাণু সংক্রমণের ফলে জায়গাটা লাল হয়ে ফুলে উঠতে পারে, অসহ্য ব্যথাও হতে পারে। কিছুদিন বাদে পুঁজ হয়। এই ধরনের ফোঁড়াকে টেপাটেপি না করাই উচিত। কারণ এর ফলে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। গরমজলে জীবাণুনাশক স্যাভলন বা ডেটল ফেলে সেঁক দেওয়া ভালো। প্রয়োজনে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খেতে হতে পারে। শিশুদের হাতের নখ নিয়মিত কেটে দিতে হবে। অনেক সময় ওই নখ দিয়ে চুলকাতে গিয়ে ফোঁড়া বিষিয়ে যেতে পারে। দাদ-ছুলি ঘাম থেকে আমাদের শরীরে ফাঙ্গাস বৃদ্ধি পায়। ডার্মাটোফাইট জাতীয় ফাঙ্গাসের কারণে দাদ হয়। হাতের আঙুল এবং পায়ের আঙুলে ছত্রাক জাতীয় ফাঙ্গাস হয়। মেলাজামিয়া নিয়ে আসে ছুলি জাতীয় রোগ। এটা ইস্ট জাতীয়। এই ফাঙ্গাসগুলো আমাদের শরীরের ঢাকা জায়গায় হয়। অর্থাৎ কুঁচকি, বগল, মেয়েদের কোমরে, ভারি স্তনের নীচে দেখা যায়। পায়ের আঙুলে ঘাম বসে বসে বিশ্রী গন্ধ হয়। এর জন্য দায়ী ক্যানডিডা জাতীয় ফাঙ্গাস। নাইলন মোজা না পরে সুতির মোজা পরাই ভালো। মোজা পরার আগে একটু পাউডার পায়ের আঙুলের ছড়িয়ে দিন। এছাড়া অ্যান্টি ফাঙ্গাস লোশন লাগানো যেতে পারে। গ্রীষ্মকালে ছুলি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ছোট ছোট সাদা দাগের মতো হয় এবং কিছুটা হলেও ছোঁয়াচে। তাই তোয়ালে বা গামছা, সাবান আলাদা থাকাই ভালো। ছুলিতে সেলেনিয়াম সালফাইড লোশন, কিটোকোনোজল ক্রিম, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড লাগালে উপকার হবে। সাবধান হবেন কীভাবে তীব্র গরমের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করতে হলে জল বেশি করে খেতে হবে। বাড়িতে তৈরি লেবু ও চিনির জল, ঘোল, আমপোড়া শরবত বেশি করে খান। সারাদিনে কমপক্ষে দু’ থেকে তিনলিটার জল খান। দিনে দু’বার স্নান অথবা একবার স্নান করে দু’বার ভালো করে গা ধুয়ে ফেলুন। ঘামের গন্ধ থেকে রক্ষা পেতে কোনো ভালো ওডিকোলন বা অ্যারোমা অয়েল মিশিয়ে নিন জলে। চুল কখনও ভিজে অবস্থায় বেঁধে রাখবেন না। এতে বিশ্রী গন্ধ হবে। গরমে প্রচুর ফল পাওয়া যায় যেগুলোর মাধ্যমে শরীরে জল ঢোকে। যেমন তরমুজ, শশা, জামরুল ইত্যাদি বেশি বেশি খান। এছাড়াও অনেক রকম ফল পাওয়া যায় যেমন ফুটি, পাকা পেঁপে, জাম আম, সবেদা এগুলোও খান। রাস্তার কোনো কাটা ফল কিংবা রঙিন পানীয় বা শরবত খাবেন না। কারণ এইসব জিনিসের মাধ্যমে শরীরে সংক্রমণ ঘটে। গরমকালে ট্যানিং ও ফোটা এজিং-এর জন্য টম্যাটো ও গাজর বেশি করে খান। হালকা মাছের ছোল, ডালের স্যুপ, লাউ, করলা, ঢেঁঢ়শ, ঝিঙে, চারপোনা থাকুক খাবারের তালিকায়। বেশি মশলাদার রান্না, ফাস্টফুড এড়িয়ে চলাই ভালো। জল ও খাবার সব সময় ঢেকে রাখা উচিত। এই সময় টাইট জামাকাপড়ের বদলে হালকা সুতির ঢিলেঢালা জামা-কাপড় ব্যবহার করা উচিত। রোদে বেরোতে হলে সানস্ক্রিন, টুপি, ছাতা, রোদ-চশমা সঙ্গে রাখতে হবে। গরমে চামড়ায় ট্যান পড়ে, তাই ফুলস্লিভ জামা পরা ভালো। এসি ঘর থেকে বেরিয়ে রোদে যাওয়া বা রোদে থেকে সরাসরি এসিতে না ঢোকই ভালো। কারণ এতে ফ্যারেঞ্জাইটিস ও ল্যারিঞ্জাইটিসের সম্ভাবনা থাকে। খুব বেশি দরকার না হলে সকাশ দশটা থেকে তিনটে অবধি বাইরে না বেরোনোই ভালো।  ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন