সিঁড়ি ভাঙার সময় কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম? অ্যাঞ্জাইনা নয়তো
ডাঃ শষ্কর কুমার চ্যাটার্জি
2018-12-17 16:22:42
অপ্রতুল সরবরাহের কারণে যখন হার্ট মাসল রক্তাল্পতায়ভোগে, হার্টের সেই অবস্থাকে বলে ইস্কিমিক হার্ট। দীর্ঘদিন রক্তল্পতায় ভোগার জন্য হার্ট মাসলের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে, সে অবস্থায় ক্ষমতার তুলনায় একটু বেশি কাজ করতে গেলেই বুকে ব্যথা হয়। হার্টের কারণে এই বুকে ব্যথাকে বলে অ্যাঞ্জাইনা। তবে বুকে ব্যথা হওয়া মানেই যে অ্যাঞ্জাইনা সেটা ধরে নেওয়া ঠিক নয়। কারণ বুকের ব্যথা সব সময় যে হার্টের কারণেই হবে তার কোনো মানে নেই। অনেক সময় বুকে যে পাঁজর থাকে তার কারণে অর্থাৎ পাঁজরে ইনফেকশন হলে বুকে অসহ্য ব্যথা হতে পারে। যাকে কস্টোকনড্রাটিস বলা হয়। এছাড়া গ্যাসের ঊর্ধ্বগতির কারণেও বুকে চাপ ধরা ব্যথা হতে পারে। নির্ণয়ের উপায় প্রশ্ন হল, কীভাবে জানা যাবে বুকের এই ব্যথা হার্টের অর্থাৎ অ্যাঞ্জাইনার কারণে নাকি অন্য কোনো কারণে যেমন কস্টোকনড্রাইটিস বা গ্যাসের কারণে? অ্যাঞ্জাইনার ব্যথা সাধারণত হাঁটাচলা,সিঁড়ি ভাঙা ইত্যাদি কায়িক পরিশ্রমের কারণে হয়। হঠাৎ কোনো খারাপ খবর পাওয়ার পর বুক ধড়ফড় করে উঠে চাপধরা যে ব্যথা হয় সেই ব্যথার কারণ অ্যাঞ্জাইনা। অন্য কোনো কারণে এরকম ব্যথা হয় না। রাস্তায় হাঁটার সময় বা সিঁড়ি ভাঙার সময় কপালে বিন্দু ুবন্দু ঘাম, বুকে চাপে ধরার মতো অনুভূতি, যখনই হাঁটা বন্ধ করলেন চাপধরা কমে গেল, বুকটা যেন হালকা হয়ে গেল, আবার হাঁটালেই বুকের যন্ত্রণা শুরু। এটাই অ্যাঞ্জাইনা। অন্য কোনো ব্যথাদে এরকম অনুভূতি হয় না। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন পেটটা ভারি, বুকের ভেতর চাপ ধরার অনুভূতি। এক গ্লাস জল খেয়ে নিন, ঢেকুরের সাথে অনেকটা গ্যাস বেরিয়ে গেল, বুক সাথে সাথে হালকা। এর সাধে অ্যাঞ্জাইনার কোনো সম্পর্ক নেই। নিয়মিত অ্যান্টাসিড বা এনজাইম খাওয়াই এই ধরনের রোগ প্রতিরোধের উপায়। পথ চলার সময় বুকে ব্যথা, ঘুম থেকে ওঠার পর বুকে চাপ ধরা ব্যথা, সিঁড়ি ভাঙার সময় কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিলে একটা ৫ মি.গ্রা সরবিট্রেট ট্যাবলেট জিভের নীচে দিন। ঘড়ির কাঁটার দিকে লক্ষ্য রাখুন কতক্ষণে ব্যথা কমে। যদি অ্যাঞ্জাইনা হয় তবে দু’-তিন মিনিটের মধ্যে ব্যথা কেমে বুক ভারমুক্ত হবে। আর যদি দশ মিনটেও ব্যথা না কমে তাহলে বুঝতে হবে এই ব্যথা হার্টের ব্যথা বা অ্যাঞ্জাইনা নয়। এ ব্যথা অন্য কোনো কারণে। আনস্টেবল অ্যাঞ্জাইনা বুকে চাপ ধরা ব্যথায় সরবিট্রেট ব্যবহারের পর সাধারণত সেই ব্যথার পুনরাবৃত্তি হওয়ার কথা নয় অন্তত কয়েক ঘন্টার মধ্যে। কিন্তু সরবিট্রেট দেওয়ার পর যদি ব্যথা থেমে যায়, এবং কিছুক্ষণের মধ্যে সে ব্যথা আবার ফিরে আসে (কখনও কখনও আরো তীব্রভাবে) বারে বারে, তাকে আনস্টেবল অ্যাঞ্জাইনা বলে। বুকে ব্যথা হলে সরবিট্রেট দেওয়ার পর ব্যথা কমে গেলে তখন আর কিছু করার দরকার নাও হতে পারে। যত শীঘ্র সম্ভব একটা ই.সি.জি করে কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিন্তু আনস্টেবল অ্যাঞ্জাইনার ক্ষেত্রে রোগীকে বাড়িতে রাখা উচিত নয়। সরবিট্রেট দেওয়ার পর ব্যথা বন্ধ হয়েও যদি আবার ফিরে আসে তবে সাথে সাথে হসপটালে কার্ডিওলজি ডিপার্টমেন্টে ভর্তি করে নাইট্রোগ্লিসারিন ড্রিপ দিতে হবে যত শীঘ্র সম্ভব। এক্ষেত্রে রোগীকে আই.সি.সি.ইউ-তে রেখে চিকিৎসা করা উচত। তারপর সাধারনত ধীরে ধীরে ব্যথা কমে যায়। ব্যথা কমার পর আবার ই.সি.জি করে দেখতে হবে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কি না। যদি ই.সি.জি-তে হার্ট অ্যাটাকের চিহ্ন বা সম্ভবনা থাকে তখন রক্তের কার্ডিয়াকে এনজাইম (সি.পি.কে, সি.কে., এম.বি, এস.জি.ও.টি) পরীক্ষা করা হয়। যদি ট্রপটি পজিটিভ থাকে অথবা কার্ডিয়াক এনজাইম সাধারণ মাত্রার থেকে বেশি থাকে তখন স্ট্রেপটোকাইনেজ ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় যত দ্রুত এই ইঞ্জেকশন দেওয়া হবে তত তাড়াতড়ি রোগী আরোগ্য লাভ করবে। এই ইঞ্জেকশনেরে উল্টো প্রতিক্রিয়াও হতে পারে। যদি কেউ হার্ট অ্যাটাক হওয়ার বারো ঘন্টা বাদে এই ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে তবে রোগীর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। জীবণ সংশয় পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই স্ট্রেপ্টোকাইনেজ যেমন একদিকে জীবনদায়ী ওষুধ তেমনি দিতে হয়ে গেলে জীবন সংহারক ওষুধে রূপান্তরিত হতে পারে। তাই স্ট্রেপ্টোকাইনেজ দেওয়ার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। প্রতিকার সাধারণ হার্টের রক্ত চলাচল ঠিকমতো না হলে হার্ট যে রক্তাল্পতায় ভোগে সেখান থেকেই অ্যাঞ্জাইনার উৎপত্তি। অ্যাঞ্জাইনা যাতে না হয় সেদিক লক্ষ্য রাখা দরকার। শরীরে কোনো কষ্ট না থাকলেও চল্লিশোর্ধ্ব পুরুষ বা মহিলার একবার ই.সি.জি করে দেখা উচিত। যদি ই.সি.জি ঠিক থাকে তবে ছ’মাস বাদে আর একবার রিপিট করা উচিত। যদি ই.সি.জি-তে ইস্কিমিক পরিবর্তন থাকে তবে সাথে সাথে তার চিকিৎসা করা প্রয়োজন। ইস্কিমিয়ার চিকিৎসা করলে অ্যাঞ্জাইনা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। মনে রাখতে হবে অ্যাঞ্জাইনা বিপদের সঙ্কেত। হার্ট বিপদসংকেত কিন্তু বারবার দেয় না। এক-দু’বার দেওয়ার পরেও যদি আপনি সতর্ক না হন তবে পুনরায় বিপদ সঙ্কেতের পরিবর্তে আপনাকে সত্যিই বিপদে ফেলে দিতে পারে হার্ট অ্যাটাককে ডেকে এনে। সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন