ব্লাডপ্রেসারের গন্ডগোলেও হতে পারে থ্রম্বোসিস
ডাঃ পার্থ বিষ্ণু
2018-12-17 16:26:51
রক্তের যে ধমনীগুলো থাকে, যার মধ্যে দিয়ে রক্ত চলাচল করে, সেই ধমনীর ভিতরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ফলে থ্রম্বোসিস হয়। ব্রেনের গতিপথে রক্ত জমাট বেঁধে হতে পারে সেরিব্রাল থ্রম্বোসিস।
কাদের হতে পারে
যাদের ডায়াবেটিস আছে, ব্লাডপ্রেসার আছে বেশি, যাদের পারিবারিক ইতিহাসও আছে তাদের হবার সম্ভবনা বেশি। এই রোগ সাধারণত মধ্যবয়স্কদের বেশি হয়।
কীভাবে রক্ত জমাট বাঁধে
ধমনীর মধ্যে কোলেস্টেরল বা লিপিড জাতীয় পদার্থ জমে যাবার ফলে রক্ত চলাচল কমে যায় এবং ধীরে ধীরে সেই স্থানে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। সেই কারণে যে ধমনীগুলো রক্ত সঞ্চালন করত তারা সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়ে।
রোগের লক্ষণ কী কী
- শরীরের একদিক অসাড় হয়ে যায়।
- অনেক সময় রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
- একদিকে ঝিঁ ঝিঁ ধরতে পারে।
- কিছুক্ষণের জন্য মুখটা বেঁকে যায় কারো কারো।
- কথা বলার অসুবিধে হয়, পরে ঠিক হয়ে যায়।
- মাথা ঘোরে, ব্যালেন্সের সমস্যা দেখা দেয়।
- মাঝে মাঝে শরীর টলমল করে।
সেরিব্রাল এম্বলিজম কাকে বলে
অল্পবয়স্কদেরও এই রোগ হতে দেখা যায়। কোনো ধমনী থেকে আসা জমাট বাঁধা রক্ত যখন ব্রেনের ধমনীতে আটকে যায় তখন রক্ত চলাচল করতে পারে না। একে বলে সেরিব্রাল এম্বালিজম।
করোনারি থ্রম্বোসিস কেন হয়
জমাট রক্ত যখন ব্রেনে চলে যায়, তাকে করোনারি থ্রম্বোসিস বলে।
টি.আই.এ.কী
ব্রেনের ধমনীর স্বল্পকালীন সংকোচনের ফলে ব্রেনের ধমনী ছিঁড়ে রক্তপাত বা ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে রক্তসঞ্চালন বন্ধ হতে পারে এই রোগে।
থ্রম্বোসিস আর কোথায় হতে পারে
চোখ, হার্ট, পা-তে হতে পারে। চোখের ধমনীর মধ্যে রক্ত চলাচল বন্ধ হলে চোখে অন্ধকার নেমে আসে। পায়ের ধমনীতে হতে পারে থ্রম্বোসিস। যারা খুব স্মোকিং করেন তাদের পায়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে থ্রম্বোসিস হতে পারে। এমনকী পায়ে গ্যাংগ্রিনও হয়ে যেতে পারে। এটা বোঝা যায় সাধারণত হাঁটবার সময় পায়ে ব্যথা হয়, ঝিঁ ঝিঁ ধরে। রোগী যদি স্মোকিং করেন তাহলে অবশ্যই সাবধান হতে হবে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
সি.টি.স্ক্যান, এম.আর.আই করে মস্তিষ্কের শিরায় বা অন্য কোথায় থ্রম্বোসিস হয়েছে কি না তা নির্ণয় করা হয়।
ওষুধের দ্বারা ব্রেনের ধমনীতে রক্ত চলাচল ঠিক রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। প্রয়োজনে রক্তের ক্লটকে তরল করার জন্য ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল ঠিক রাখার জন্য চিকিৎসা করতে হয়। রক্তের লিপিড প্রোফাইলকে ঠিক রাখা বা কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়।
প্রতিরোধ কীভাবে
থ্রম্বোসিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। বর্তমানে যে উন্নত ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে তাতে থ্রম্বোসিস প্রতিরোধযোগ্য।
ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন থেকে সাবধান হতে হবে। স্মোকিং থেকে দূরে থাকতে হবে। ডায়েট ঠিক রাখতে হবে। ভূষি আটা, পালিস না করা চাল, কার্বোহাইড্রেট, পরিস্রুত জল, সবুজ শাকসবজি ও ফল নিয়মিত খাওয়া দরকার।
প্রয়োজনে কোনো ডায়াটিশিয়ানকে দিয়ে খাবারের চার্ট বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
শরীরের ফিটনেস বজায় রাখার জন্য বি.এম.আই নর্মাল রাখতে হবে। কর্মক্ষম রাখতে হবে নিজেকে। এরোবিক্স এবং যোগার মাধ্যমে শরীরের ফিটনেস বজায় রাখতে হবে। সব থেকে ভালো এক্সারসাইজ হল প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটা। বর্তমান জীবনে প্রায় প্রতিটি মানুষ স্ট্রেস ও টেনশনে ভোগেন। স্ট্রেস ও টেনশন থেকে নিজেকে দূরে রাখতে মেডিটেশন ও প্রাণায়াম করা যেতে পারে। জীবনশৈলী ঠিক রাখতে হবে। আস্তে-আস্তে কথা বলা, চটজলদি রেগে না যাওয়া এ সবই লাইফ স্টাইলের মধ্যে পড়ে। কারো যদি থ্রম্বোসিসের লক্ষণগুলো দেখা যায় তাহলে অবশ্যই একজন নিউরো ডাক্তারের কাছে যান কিংবা এমন কোনো হসপিটালে যেখানে সবরকম চিকিৎসার সুব্যবস্থা আছে।