×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

স্বরযন্ত্রের ক্যানসার

ডাঃ কুন্তল মাইতি
2018-12-17 16:38:03

স্বরযন্ত্রের ক্যানসারের সমস্যাটা আমাদের দেশে কেন সারা পৃথিবীতেই একটা বড় সমস্যা। বর্তমানে পশ্চিমী দুনিয়ায় এই ধরনের ক্যানসারের ঘটনা কমে আসছে কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে এই ধরনের রোগ ক্রমশ বাড়ছে। কারণ প্রধান কারণ হল ধূমপান এবং যে কোনো তামাক জাতীয় জিনিস মুখে নেওয়া, চিবোনো, যেগুলো লাল-রসের মাধ্যমে এবং ধোঁয়ার মাধ্যমে নেশা করে মানুষ। এছাড়া অ্যালকোহল বা মদ্যপান দু’টোর নেশা একসাথে হতে পারে বা আলাদা আলাদা হতে পারে। যারা দ’টো নেশা একসাথে করেন তাদের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াটা জোরদার হয় বেশি। অর্থাৎ দুটোর আলাদা আলাদা যে ঝুঁকি তার থেকে অনেক বেশি ঝুঁকি থাকে দু’টোর মিলিত নেশাতে। এছাড়া কিছু ভাইরাল কারণ থাকতে পারে। কিছু প্যাপিলোমা ভাইরাস শরীরের বিভিন্ন জায়গাকে আক্রান্ত করে। চামড়ার মধ্যে আঁচিল হতে পারে, মুখের মধ্যে প্যাপিলোমা হতে পারে। কয়েকটি বিশেষ সাবটাইপ ভাইরাল ইনফেকশন থেকেও গলার ক্যানসার হতে পারে। কীভাবে হয় স্বরযন্ত্র ল্যারিংসের তিনটে ভাগ হয়। ওপর বা সুপ্রাগ্লটিস, মাঝখানের অংশ গ্লটিস যেখানে আমাদের শব্দতরঙ্গের কম্পন তৈরি হয় আর সাব গ্লটিস বা নীচের অংশ। প্রধানত টিউমার বা ক্যানসার দেখা যায় গ্লটিস এবং সুপাগ্লটিসে সাবগ্লটিসে কম হয়, কিন্তু হয়। কীভাবে বোঝা যাবে ক্যানসার হঠাৎ করে ধীরে ধীরে কারো গলা বসে যাচ্ছে, খুসখুসে কাশি, কন্ঠস্বরের পরিবর্তন, দুই বা তিন সপ্তাহের বেশি যে কোনো কারণেই যদি গলা বসে থাকে তাহলে কিন্তু অবশ্য। ডাক্তারবাবুরা পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ সাধারণ ঠান্ডা লেগে বা চেঁচামেচি করে গলা বসে গেলে সেটা দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়। তা না হলে অবশ্যই ডাক্তারবাবুকে দেখিতে নিন। তার মানে যে ক্যানসারই হয়েছে তা নয় কিন্তু নিশ্চিত থাকুন পরীক্ষা করিয়ে। গ্লাটিক কারসিনোম যেহেতু ভোগাল কর্ডের ওপরেই থাকে সেজন্য সব থেকে আগে এর অস্বাভাবিকতা চেখে পড়ে। দেখা যায় গলাটা  আস্তে আস্তে যাচ্ছে এবং সেটা ক্রমশ বাড়তে থাকে। কিংবা হঠাৎ করে গলা বসে গেলে, স্বর বেরোচ্ছে না। তখন নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে। ডাক্তারবাবুরা দেখে পরীক্ষা করে বলে দিতে পারেন অনেক সময়, ক্যানসার জাতীয় কিছু সাসপেক্ট করেন। সুপ্রাগ্লটিসের ক্যানসার কিছু কিছু ক্ষেত্রে খাদ্যনালীর অংশের সাথে যুক্ত থাকে। এই ক্যানসারগুলো প্রকাশ পায় দেরিতে। কারণ এটা নজরে আসে অনেক দেরিতে। এই ক্ষেত্রে প্রথম দিকে কথা বলার খুব একটা অসুবিধে হয় না। একদম শেষেও রোগী সাধারনভাবে কথা বলে। এক্ষেত্রে কী কী সমস্যা হয় গলার মধ্যে কিছু একটা আটকা থাকার প্রবণতা অর্থাৎ মনে হয় একটা কিছু গলার আটকে আছে যেটা আস্তে আস্তে বাড়ছে। ঢোক গিলতে সমস্যা, খাবার আটকে যেতে পারে অথবা আটকাচ্ছে না কিন্তু ঢোক গিলতে একটা বাধা অনুভব করা, যেটা অনেক দিন থাকে, যাচ্ছে না সহজে, বাড়ছে। এর সাথে গলার ব্যথা। এই অংশের ক্যানসারে অনেক সময় কানে ব্যথা হয় যেটা কিন্তু কানের কোনো অসুখ নয়। রেফার্ড ওটালজিয়া। মানে একটা অংশের ব্যথা অন্য অর্গানে গিয়ে দেখা দেয়। যেহেতু দেরিতে বোঝা যায় রোগটা তাই সমস্যাটা একটু বেশি হয়। ল্যারিংসের ভোকাল কর্ডের নীচের ক্যানসারও কিন্তু দেরিতে ধরা পড়ে। এক্ষেত্রে রোগটা উপস্থিত হয় শ্বাসকষ্ট দিয়ে। এই ক্যানসারগুলো যদি ল্যাংরিংস-এর বাইরে ছড়িয়ে পড়ে তখন গলাতে লাম্প দেখা যায় বা গ্ল্যান্ডের মতো ফোলা ফোলা অংশ দেখা যায়। এছাড়া এই ক্যানসার শরীরের অনেক দূর পর্যন্ত ছড়াতে পারে। যেমন লাংস, কিডনি, ব্রেন, লিভার, হার্ট, হাড় প্রভৃতিতে যেতে পারে। এগুলো একদম শেষের দিকে দেখা যায়। ভোকাল কর্ডে ক্যানসার হলে গলা বসে যাওয়ার কারণে রোগী সাবধান হয়ে যায়। বাকি যে সাবগ্লটিস ক্যানসার শ্বাসকষ্ট দিয়ে উপস্থিত হয় তখন অনেকটা ছড়িয়ে গেছে, সুপ্রাগ্লটিস বা ওপরের অংশে যখন গলার বাধা কিছু একটা আছে বলে মনে হয় তখনও অনেকটা ছড়িয়ে যায়। ওপর ও নীচে অনেকটা শেষ স্টেজে গেলেও স্বর নর্মাল থাকে যার জন্য রোগী অতটা গুরুত্ব দেন না। যখন রোগী শরীরের অস্বস্তির কারণে ডাক্তারের কাছে গেলেন, ডাক্তারবাবু সাসপেক্ট করলেন ক্যানসার তখন তিনি বায়োপসির পরামর্শ দেন। বায়োপসি করলে তো ধরা পড়বেই ক্যানসার থাকলে। অনেক সময় ডাক্তারবাবুর অভিজ্ঞ চোখই বলে দিতে পারে রোগটি ক্যানসার। ক্যানসার মানে কি জীবন শেষ, চিকিৎসা কী কী হতে পারে যদি ক্যানাসার প্রথম অবস্থায় ধরা পড়ে তবে তো প্রথমেই যে কথাটা বলার, ভীত হবার কিছু নেই। চিকিৎসার এখন নানা উপায় আছে। তাই ক্যানসার মানেই জীবনের শেষ নয়। ছোট্ট ক্যানসারকে ইন্সট্রুমেন্ট দিয়ে অপারেশন করা যায় কিংবা লেসার দিয়েও করা যায়। এইভাবে অপারেশন করে পুরো ক্যানসারটাকে বাদ দিয়ে দেওয়া সম্ভব। ছোট অবস্থায় ধরা পড়লে বাইরে থেকে কাটাছেঁড়া না করে অজ্ঞান করে মুখের ভিতর দিয়ে যন্ত্রপাতি বা লেজার দিয়ে পুরোটা বাদ দেওয়া হয়। প্রথম অবস্থায় রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপির দরকার হয় না। রোগীর সারাজীবনে আর ওই অঙ্গে ক্যানসার হয় না এবং রোগী পুরো স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন। শুধু গলাটা একটু বসে যায়। আর একটা অপশন আছে। ছোট অবস্থাতেই রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপি দেওয়া। যাদের অপারেশনে ভয় থাকে, রোগটা ছোট থাকলে রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। টিউমার যদি বড় অবস্থায় ধরা পড়ে, অনেক সময় অবহেলায় যেটা হয়, ছড়িয়ে গেছে, অনেকটা অ্যাডভান্স স্টেজে, তাতে যদি অপারেশন করে পুরোটা বাদ দেওয়ার মতো সম্ভাবনা থাকে তাহলে তাকে অপারেশনের কথা বলতে হবে। কিন্তু ছড়িয়ে যাওয়া ক্যানসারে অপারেশনের পরেও রেডিওথেরাপির প্রয়োজন পড়ে। এ সব ক্ষেত্রে অপারেশন বাইরে থেকে করতে হয়, মুখের ভেতর দিয়ে হয় না। অপারেশনটা অনেকটা সময় ধরে চলে। কিন্তু যারা অপারেশন করতে চান না তাদের রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। এখন এতসব ভালো ওষুধ বেরিয়ে গেছে যে রে এবং কেমোর ফলাফল খুবই ভালো পাওয়া যাচ্ছে। রেডিয়েশন মেশিনও অনেক উন্নত হয়েছে। রোগীদের অনেকেই ভালো থাকেন পাঁচ, দশ, কুড়ি বছর। অপারেশন করে রে এবং কেমো দিলে তার ডোজটা অনেকটাই কমে যাবে। অপারেশন না করে রে এবং কেমো নিলে তার ডোজটা স্বাভাবিকভাবে অনেকটাই বেশি লাগে। যাদের খুব বেশি ছড়িয়ে গিয়ে গ্ল্যান্ড চলে গেছে অর্থাৎ লিম্ফগ্ল্যান্ডে চলে গেছে সেক্ষেত্রে বড় অপারেশন করতে হয় বাইরের থেকে খাদ্যনালী ও স্বরযন্ত্রের ওপর। তার সাথে গ্ল্যান্ডগুলোকে বাদ দিতে হয়। একে বলে টোটাল ল্যারিঙ্গোটমি নেক ডিনেকশন। তারপরে তার স্টেজ অনুযায়ী রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে দুটোই একসাথে করা হয়। অপারেশনের পর রোগী সুস্থ হলে রে এবং কেমোর প্রোটোকল চালু হয়। একটা কথা বলা দরকার। যাদের খুব বেশি অ্যাডভান্সড স্টেজ, কিছুটা বাদ দিলে হবে না তাদের ক্ষেত্রে পুরো স্বরযন্ত্রটাই বাদ দিতে হয়। চিকিৎসার পরে রোগী কী করে কথা বলবে যে সমস্ত রোগীর পুরো স্বরযন্ত্রটাই বাদ দেওয়া হয় তাদের কথা বলার একটা সমস্যা থাকে। এ সব ক্ষেত্রে আজকাল অনেকরকম বিকল্প ব্যবস্থা আছে। রোগীকে বিশেষভাবে ট্রেনিং দেওয়া হয় যাতে রোগী ঢোক গেলার মতো হাওয়াকে গিলে নেন। তার পরে সেটাকে বার কেরে জিভ দিয়ে কথা বলেন। সেই স্পীচটা কম জোরালো হলেও কিন্তু বোঝা যায়। একে বলে ইসেফেজিয়াল ভয়েস। অনেক রোগী আছে যারা সাধারণভাবে কমিউনিকেট করতে পারে, শুধু চিৎকার করতে পারে না। কথা বলতে এদের খুব একটা অসুবিধে হয় না। আর এক ধরনের উপায় আছে, যাদের শরীরে আর্টিফিসিয়াল ভয়েস ভালভ বসানো যায়, যাতে রোগীর যখন দরকার হবে ভালভের ওপর চাপ দিয়ে কথা বলতে পারবে। একটা মেকানিক্যাল শব্দ তৈরি হয়। সেই শব্দটাকে রোগী নর্মাল ভয়েস কনভার্ট করে নিতে পারেন। ভয়েসটা অতটা মধুর না হলেও কাজ চলে যায় কমিউনিকেটের ব্যাপার। তাই স্বরযন্ত্রবাদ দেওয়া হল মানে যে রোগী আর কথা বলতে পারবে না তা কখনও নয়। আর্লি স্টেজ বা প্রাথমিক অবস্থায় রোগীর অপারেশন হলেও রোগী যথেষ্ট ভালোভাবে কথা বলতে পারেন। যাদের শেষ অবস্থায় ধরা পড়ে অনেকটা ছড়িয়ে গেছে শরীরে, সেক্ষেত্রে রোগী ও বাড়ির লোকের সাথে কথা বলে অপারেশনটা না করে শুধুমাত্র রেডিও এবং কেমোথেরাপির ব্যবস্থা করা হয়। কারণ এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে ভালো লাইফস্টাইল দেওয়া সম্ভবন হয় না। কারণ রোগটা তখন শরীরে ছড়িয়ে গেছে অনেকটাই। তাই সেক্ষেত্রে কিছু না করার থেকে রে এবং কোমো দেওয়া হয়। এইধরনের অপারেশনের পর দুই, তিন, ছয় মাস অন্তর অন্তর ফলোআপে যেতে হয় রোগীদের। কারণ টুকটাক কিছু না কিছু সমস্যা থাকেই। রোগী ভালো থাকলে এক বছর বা দু’বছর অন্তর অন্তর ডাক্তারববুর কাছে ফলো আপে যেতে হয়। অপারেশন খরচ এখন অনেকটাই সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে চলে এসেছে এবং এগুলো নিয়ে ভীতিও কমেছে। স্ট্যান্ডর্ড অফ লিভিং-ও ভালো দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এইসব ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন মানুষ ভালো থাকেন চিকিৎসায়। তাই ভয়েল কোনো ব্যাপার নেই। ডাক্তারবাবু যদি একটু সহৃদয় হন এবং তার নিজের চেষ্টা ও যোগ্যতা থাকে তাহলে তিনি রোগীকে অনেক ভালো জীবন উপহার দিতে পারেন। শুধু রোগীর  একটু আস্থা ও সহযোগিতা দরকার। রোগীর বাড়ির লোকের সমর্থন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অপারেশনের পর রোগীর কথা বলার অসুবিধা, খেতে অসুবিধা থাকে, তাই মানসিক সাপোর্টটা জরুরি। এটা সব ধরনের ক্যানসান রোগীদের জন্যই প্রযোজ্য। প্রতিরোধ তামাক জাতীয় কোনো জিনিস না খাওয়াম ধূমপান, মদ্যাপান থেকে বিরত থাকা, পান মশলা, গুটখা জাতীয় জিনিস নেওয়া বন্ধ করতে হবে। যাদের অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা থাকে সেগুলো একটু নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। লাইফ স্টাইল বা জীবনশৈলী ঠিক রাখতে হবে। সঠিক সময়ে খাওয়া-দাওয়া এবং সঠিক পরিমাণে স্বাস্থ্যকর জিনিস খাওয়া দরকার। ফল, সবজি, দানাশস্য বেশি খেতে হবে। ফাস্টফুড কম খেতে হবে। হোটেল, রেস্টুরেন্ট কম খাওয়া, চিৎকার, চেঁচামিচে কম করা, আস্তে আস্তে কথা বলার অভ্যাস তৈরি করা—এগুলো মেনে চললে সহজেই ভালো থাকা সম্ভব। ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন