×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

যক্ষ্মামুক্ত পৃথিবী শুধুই কি একটা স্বপ্ন

ডাঃ স্বপন কুমার গোস্বামী
2018-12-21 11:29:40

যক্ষ্মার চিকিৎসার উন্নতি ফলে যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা কমাবার লক্ষমাত্রা স্থির করে ২০১৫ সালে ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল’ নির্ধারিত হয়েছে। টিবি কনট্রোল প্রোগ্রাম জোরদার করায় ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০১২ সালে যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা শতকরা ৪২ ভাগ কমানো গেছে। ২০০০ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ৩৭ মিলিয়ন যক্ষ্মারোগী নতুন চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময় লাভ করেছে। ২০১৪ সালের মে মাসে ‘ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলি গভর্নমেন্ট’ আগামী ২০১৬  থেকে ২০৩৫—এই কুড়ি বছরের মধ্যে যক্ষ্মারোগ মুক্ত পৃথিবী দেখতে নতু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যাতে আগামী দিনে আর কেউ যেন যক্ষ্মায় মারা না যায়। পৃথিবীর জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ মানুষ যক্ষ্মা রোগের শিকার। প্রতি বছর বিশ্বের এক শতাংশ মানুষ নতুন করে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে। সাধারণ মানুসকে যক্ষ্মার বিরুদ্ধে সচেতন করতে প্রতি বছর ২৪ মার্চ ‘বিশ্ব যক্ষ্মা দিবন’ পালন করা হয়। ১৮৮২ সালের ২৪ মার্চ ডাঃ রবার্ট কখ যক্ষ্মার কারণ হিসেবে মাইকোব্যাক্টে রিয়াম টিউবারকিউলোসিস জীবাণু আবিষ্কার করেন। সেই দিনটি স্মরণে রখে যক্ষ্মার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপি সেই দিনটি স্মরণে রেখে যক্ষ্মার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সংগ্রাম করার প্রথম ধাপে জনচেতনা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। যক্ষ্মার চিকিৎসায় অগ্রগতি সত্ত্বেও ২০১৩ সালে ৯ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ১.৫ মিলিয়ন যক্ষ্মারোগীর মৃত্যুও ঘটেছে। ২০১৫ সালের যক্ষ্মা দিবসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যক্ষ্মার বিরুদ্ধে সর্বব্যাপী সংগ্রাম ঘোষণা করেছে ‘কলিং ফর নিউ কমিটমেন্ট অ্যান্ড নিউ অ্যাকশন ইন দি গ্লোবাল ফাইট এগেই নস্ট টিউবারকিউলোসিস’। এইচ.আই.ভি বা এইডস-এর পরে যক্ষ্মা এককভাবে পৃথিবীর সর্বাধিক মানুষের মৃত্যুর কারণ। উন্নয়নশীল দেশে আরো পাঁচটি রোগের সঙ্গে যক্ষ্মায় ভুগে নিম্নবিত্ত মানুষজনের শতকরা ৯৫ জন মারা যায়। দশ থেকে চুয়াল্লিশ বছর বয়ষ্ক মহিলাদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ যক্ষ্মা। ২০১৩ সালে ৫ লক্ষ ৫০ হাজার শিশু যক্ষ্মার কবলে পড়েছে। এবং ঠিকমতো চিকিৎসা না করায় যক্ষ্মা আক্রান্ত ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবির শিকার। যক্ষ্মা প্রতিষেধক ওষুধে এদের রোগ নিরাময় হচ্ছে না। ফলে এরা জনস্বাস্থ্যর বিপদ ঘনিয়ে তুলছে। টিবি নিয়ে সাধারণের মধে অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যেগুলো  নিয়ে আলোচনা করা দরকার। টিবি যে কোনো সময় যে কোনো লোকের হতে পারে যদি সে যক্ষ্মার জীবাণু মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস-এ আক্রান্ত হয় এবং তার দেহের রোগ প্রতিণেধক ক্ষমতা কমে যায়। টিবি পারিবারিক বা বংশগত রোগ নয়। নিয়মিত চিকিৎসায় যক্ষ্মা পুরোপুরি নিরাময় হয়। টিবি রোগীর হাঁচি-কাশি-থুতু থেকে জীবাণু নির্গত হয়ে সুস্থ লোককে আক্রমণ করে। টিবি হলে খুব ভালোমন্দ খেতে হয়, না-খেলে রোগ সারে না—এ ধারণা ঠিক নয়। টাটকা ফলমূল, শাকসবজি সহ স্বাভাবিক সুষম নিত্যদিনের খাবারই যথেষ্ট। টিবি রোগীর মদ ও সিগারেট খাওয়া উচিত নায়। টিবি রোগের ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে সুগার, প্রেসার প্রভৃতি অন্য রোগের ওষুধ খাওয়া যেতেই পারে। গর্ভবতী জননীও টিবি রোগের ওষুধ খেতে পারে। এতে গর্ভস্থ ভ্রণের ক্ষতি হয় না। টিবি রোগক্রান্ত মা শিশুকে দুধ অবশ্যই খাওয়াবেন। টিবি হয়েছে বলে দুধ খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে না। তবে প্রতিষেধক হিসেবে হাঁচি-কাশির সময়ে মুখে কাপড় চাপা দিয়ে মা সাবধান হবেন। টিবি রোগীর বাসনপত্র ও বিছানা আলাদা করার দরকার নেই। কারণ আধুনিক ওষুধে থুতুতে যক্ষ্মার জীবাণু ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে মরে যায়। ফলে চিকিৎসা শুরু হবার দু’মাস পর থেকে টিবি রোগী আর ছোঁয়াছে থাকে না। তখন থেকে রোগী অফিস, স্কুলকলেজ যেতে পারে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে ৬ থেকে ৮ মাস সঠিক মাত্রায় ওষুধ খেতেই হবে। মাঝপথে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা চলবে না। যক্ষ্মা একেবারে একশোভাগ নিরাময় হয়। এ রোগ পুনরাক্রমণের ভয় থাকে না। তারপরে টিবি রোগী বিয়েও করতে পারে। যক্ষ্মারোগের সাধারণ লক্ষণ মোটামুটি সকলের জানা। দীর্ঘদিন রোগে ভোগা, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, কাশির ওষুধ খেয়ে কাশি ভালো না হওয়া, কাশির সঙ্গে রক্ত ওঠা, ওজন কমে যাওয়া, অবসাদ, ক্লান্তি, দুর্বল বোধ করা, ঘুসঘুসে জ্বর, রাতে প্রচুর ঘাম হওয়া, নিঃশ্বাসের কষ্ট, খিদে না হওয়া প্রভৃতি যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হবার লক্ষণ। এসব লক্ষণ দেখা দিলেই ডাক্তারের কাছে গিয়ে রক্ত,থুতু ও এক্স-রে পরীক্ষা করা দরকার। যক্ষ্মারোগ সারা পৃথিবীর মানুষের সমস্যা। যক্ষ্মার আক্রমণে আমরা বহু মনীষীকে অকালে হারিয়েছি। এদের মধ্যে রয়েছে ম্যাকসিম গোর্কী, ফ্রানজ কাফকা, ডি.এইচ. লরেন্স, সমারসেট মম, ইউজিন ও নিল, জর্জ আওরয়েল, আলেকজান্ডার পোপ ফলটেয়ার, সুকান্ত ভট্টাচার্য, পল গঁগ্যা, নেলসন ম্যান্ডেলা প্রমুখ আরো বহু ক্ষয়রোগ হয়েছিল। তাই যক্ষ্মাকে রাজরোগ বলা হয়। ভারতে প্রতি বছর ২ মিলিয়ন মানুষ যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয় এবং ৩ লক্ষ মানুষ মারা যায়। যক্ষ্মার এই ভয়াবহ আক্রমণের কবলে পড়া মানুষ কাজকর্ম করতে পারে না। ফলে কোটি কোটি শ্রমদিবস নষ্ট হয়। শিশুদের পড়াশুনো বন্ধ হয়। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের কথা, টিবি রোগ হওয়ার জন্য প্রায় এক লক্ষ মহিলাকে তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। টিবি রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১৯৯৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুসারে রিভাইসড ন্যাশনাল  টিবি কনট্রোল প্রোগ্রাম বা আর.এন.টি.সি.পি চালু হয়েছে। এই ব্যবস্থায় টিবি রোগীর চিকিৎসার জন্য সমস্ত সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও টিবি ক্লিনিকে DOTS (ডাইরেক্ট অবজার্ভেশন ট্রিটমেন্ট শর্ট কোর্স) বা স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রত্যক্ষ তদারকিতে চিকিৎসা করা হয়। রোগীদের পুরো সময়ের চিকিৎসা করা হয় বিনামূল্যে। টিবি চিকিৎসার প্রথম পর্যায়ের নাম ইনটেনসিভ ফেজ। এই সময়ে আই.এন.এইচ., রিফ্যামপিসিন, পাইরিজিনামাইড ও ইথামবিউচল দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। যক্ষ্মা চিকিৎসা কেন্দ্রে সপ্তাহে তিনবার এসে ওষুধ খেতে হয়। ছ’মাস এই ভাবে চিকিৎসা করার পরের চার মাস ‘কনটিনিউয়েশন ফেজ’-এ আই.এন.এইচ ও রিফ্যামপিসিন খেতে হয়। ডটস্ চিকিৎসায় পূর্ণ মেয়েদের ওষুধ সরবরাহ সুনিশ্চিত থাকার মাঝপথে আর্থিক কারণে বা ওষুধের অভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয় না। তবে এই কর্মসূচিত টিবি রোগী থেকে সমাজেসেবী প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ডাক্তারদের সহযোগিতা অপরিহার্য। নতুন যক্ষ্মারোগীর রোগ ধরা পড়লে তার বিবরণ সরকারকে জানতে হবে যাতে তার যথাযথ তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করা যায়। রোগ লুকিয়ে মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ না হয়। এরপরে প্রয়োজন টিবি রোগীর যত্ন ও পুনর্বাসন। একজন মানুষ টিবি রোগে আক্রান্ত হবার খবরে রীতিমতো মুষড়ে পড়ে ও হীনম্মন্যতায় ভোগে। হতাশা গ্রাস করে। তার জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মায়। অথচ টিবি রোগ সম্পূর্ণ সেরে যায় এবং রোগীর স্বাভাবিক জীভন যাপনে কোনো বাধা নেই। তাই টিবি রোগী হিসেবে চিহ্নত হলেই তার প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া সমাজের কর্তব্য। তাকে বয়কট নয়, তাই চাই সহানুভূতি। টিবি রোগীর প্রতি সমাজের আচরণ একেবারে স্বাভাবিক হতে হবে। কেউ যেন রোগ লুকিয়ে চিকিৎসা বন্ধ করে এম.ডি.আর বা মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট অনুযায়ী সাধারণ পুষ্টিকর পথ্যই যথেষ্ট, এটা রোগী ও তার পরিজনদের বোঝাতে হবে।যেখানে সেখানে থুতু ফেলার অভ্যেস বন্ধ করতে হবে, যাতে যক্ষ্মা জীবাণু ছড়িয়ে না পড়ে। টিবি রোগীর সামাজিক সম্মান যেন ক্ষুণ্ণ না হয়। সমাজে সে যেন একঘরে মনে না করে। তার প্রতি যেন বৈষম্য না করা হয়। রোগীকে তার রোগ সম্বন্ধে, রোগের চিকিৎসার অগ্রগতি বিষয়ে অবহিত করতে হবে। প্রয়োজন রোগীর পছন্দমতো দ্বিতীয় চিকিৎসকের পরামর্শ নেবার স্বাধীনতা দিতে হবে। টিবি রোগীর যেন সমাজের ওপর আস্থা বজায় থাকে। তার রোগ সঙক্রান্ত ব্যক্তিগত তথ্য যেন গোপন থাকে। তার আত্মবিশ্বাস বজায় রাখতে হবে। রোগী যেন অবহেলিত বা বঞ্চিত মনে না করে। সামাজিক কাজকর্মে রোগীর অংশগ্রহণ অবাধ করা দরকার। তার আর্থিক নিরাপত্তা, খাওয়া-দাওয়ার নিশ্চয়তা এবং চাকরির নিরাপত্তা যেন বজায় থাকে। মনে রাখা দরকার, ভারতে প্রতি ৩ মিনিটে ২ জন যক্ষ্মারোগীর মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুর মিছিলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন