পাঁচ বছরেও বাচ্চা কথা বলছে না? অটিজম হতে পারে
প্রবীর কর্মকার
2018-12-21 12:09:56
অটিজম একটি বিশেষ নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার যার প্রধান বৈশিষ্ঠ্য হল স্পমগ্নতা অর্থাৎ নিজের খেয়াল বা ইচ্ছের মধ্যে থাকা। এই সমস্যায় আক্রান্ত বাচ্চাদের মধ্যে কথাবার্তা বোঝা ও বলার ক্ষমতা কম থাকা, সামাজিক মেলামেশার সমস্যা ও মানসিক বিকাশের সমস্যা বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
অটিজম সাধারণত মেয়েদের থেকে তিন গুণ বেশি ছেলেদের মধ্যে দেখা যায়। ভারতবর্ষ সহ সকল উন্নয়নশীল দেশেই এই সমস্যা ক্রমবর্ধমান।
প্রধান লক্ষণ কী কী
- সমবয়সীদের সাথে মেলামেশার ক্ষেত্রে অসুবিধে।
- অন্যের চোখের দিকে না তাকানো বা কম দেখা।
- অমনোযোগিতা।
- ব্যথার অনুভব কম থাকা।
- এক জায়গায় ঘুরতে থাকা, যেকোনো জিনিসকে ঘোরানো বা ঘুরন্ত কোনো বস্তুকে (যেমন পাখা, গাড়ির চাকা) দীর্ঘক্ষণ ধরে দেখতে থাকা।
- অন্যের কথায় মনোযোগ না দেওয়া বা বধির ভাব করা।
- বয়স অনুপাতে কথাবার্তা বলার ক্ষমতা কম থাকা
কারণ
অটিজমের প্রকৃত কারণ এখনও অজানা। তবে বিশ্বজুড়ে গবেষকদের মতামত অনুযায়ী জিনগত কারণ, মেটাবলিজম ইত্যাদির কারণে অটিজম হয়। অটিজমের মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশের পরিপূর্ণ বিকাশ হয় না।
চিকিৎসা
যেহেতু অটিজম বাচ্চার সমস্যা নানা রকম থাকে, তাই কোনো একজন চিকিৎসক এই চিকিৎসা করেন না। অনেক ধরনের চিকিৎসক এর সাথে যুক্ত থাকেন।এরা হলেন সাইকিয়াট্রিস্ট, সাইকোলজিস্ট, স্পীচ থেরাপিস্ট, স্পেশাল এডুকেটর, বিহেভিয়ার থেরাপিস্ট ও অকুপেশনাল থেরাপিস্ট।
স্পীচ থেরাপিস্টের ভূমিকা
অটিজেমের চিকিৎসায় স্পীচ থেরাপিস্ট একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। কারণ বাচ্চার বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে কথাবার্তা বলার অক্ষমতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। একজন স্পীচ থেরাপিস্ট বিশেষ ভৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে বাচ্চার কথাবার্তা বোঝার ও বলার ক্ষমতা বাড়িয়ে জীবনযাত্রার মান উন্নত করেন।
অটিজম কি পুরো ঠিক হয়ে যায়
না। অটিজম কোনো রোগ বা ব্যাধি নয়, এটি বাচ্চার একটি বিশেষ অবস্থা যা সারজীবন থাকে। কিন্তু কম বয়সে (দু’-তিন বছর বয়সের মধ্যে) চিকিৎসা শুরু করলে বেশির ভাগ বাচ্চারই জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব।
বাবা-মায়ের করণীয় কী
বাচ্চার দু’বছর বয়সেই কোনোরকম অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করলেই বাবা-মায়ের প্রথম কাজ কোনো বিশেজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করানো।
অনেক সময় দেখা যায়, বাচ্চার বয়স দু’বছর, কিছু কথাও বলতে শুরু করেছিল (যেমন বাবা, টাটা) কিন্তু এখন আর বলছে না। চোখের দিকে তাকায় না, অমনোযোগী হয়ে থাকে। এমনটা হলে কিন্তু সাবধান। রিগ্রেষন বা কথা বলতে বলতে তা বন্ধ হয়ে যাওয়া অটিজমের লক্ষণ। তাই যত শীঘ্র সম্ভব কোনো সাইকোলজিস্ট বা স্পীচ থেরাপিস্টের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। যত কম বয়সে চিকিৎসা শুরু করা হবে উন্নতির সুযোগ ততই বেশি থাকবে।
অনেক সময় এমনও হয় যে, পাঁচ বছর হয়ে গেল বাচ্চার বয়স। কোনো কথা বলে না। সাইকোলজিস্ট বলেছে অটিজম আছে। প্রশ্ন হল, সেক্ষত্রে স্পীচ থেরাপি করে লাভ হবে কি?
হ্যাঁ, স্পীচ থেরাপির মাধ্যমে বাচ্চার কমিউনিকেশন স্কিলের উন্নতি করা হয। এর জন্য স্পীচ থেরাপিস্ট নানারকম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করেন। এর মধ্যে একটি হল এ.এ.সি। যে পদ্ধতিতে বাচ্চা কথা না বলতে পারলেও অন্যের সাথে যোগাযোগ করে ইশারা, ছবি বা অন্য কোনো মাধ্যম দিয়ে, যা পরোক্ষভাবে বাচ্চার কথা না বলতে পারলেও স্পীচ থেরাপি করে কমিউনিকেশনের সার্বিক উন্নতি করা সম্ভব।