ফুটপাতের চশমায় চোখটাই যাবে
ডাঃ সৌগত পাল
2018-12-21 12:31:00
পরিষ্কার ভাবে সবকিছু দেখার জন্য কাঁচকে ঘষে দেখার চেষ্টা করত অতীতের মানুষেরা। চশমার ব্যবহারের প্রথম হদিশ পাওয়া যায় ১২৮৭ খ্রিস্টাব্দে অ্যান্ড্রো ডি পোপোজোর পান্ডুলিপিতে। কেউ কেউ মনে করেন ১২৭৮ সালে প্রথম ইতালিতে চশমার ব্যবহার চালু হয়। ১৭২৭ সালে ডাঁটিওলা চশমার প্রচলন শুরু করেন। এডওয়ার্ড স্বারলেট নামক লন্ডনের এক চশমা প্রস্তুতকারক। চশমা কেউ ব্যবহার করেন প্রয়োজনে, কেউ শখে, কেউ মুখের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য। চশমা পরলে বয়স্ক লাগবে ভেবে অনেকে আবার চশমা ব্যবহার করেন না। তবে চোখের প্রয়োজনে পড়লে চশমা পরতে হবে এটাই হল আসল কথা। না হলে পরবর্তীকালে হয়তো চোখ খারাপ হয়ে যেতে পারে যেটা আর সারানো সম্ভব হয় না অনেক সময়। চশমা সাধারণত কাঁচের হয় তবে বর্তমানে ফাইবার বা প্লাস্টিক চশমা বাজারে পাওয়া যায় যা কাঁচের চশমার থেকে অনেক হালকা। বিশেষ করে যে সব বাচ্চার চশমা প্রয়োজন তাদের এই ফাইবারের চশমা অনেকটা সুবিধাহনক। তবে যে ধরনের চশমাই আপনি ব্যবহার করুন সেটা কোনো একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে করতে হবে। ফুটপাত থেকে আমরা যে চশমা কিনি সেগুলো সাধারণত রিডিং চশমা, কাছের পাওয়ারের চশমা। এগুলোতে দূরের কোনো পাওয়ারের চশমা। এগুলোতে দূরের কোনো পাওয়ার থাকে না। আমাদের অনেকেরই চোখের পাওয়ার পরীক্ষা করলে দেখা যাবে দূরের একটা পাওয়ার রয়েছে। কাছের পাওয়ার যখন তৈরি করাতে হয় তখন দূরের পাওয়ার এবং বয়সের জন্য যে কাছের পাওয়ার, সেই দু’টো যোগ করতে হয়। যেমন ধরা যাক কারোর দূরের পাওয়ার রয়েছে +১, বয়স তার চল্লিশ বছর। চল্লিশ বছর বয়সের জন্য তার কাছের পাওয়ার হেবে প্লাস ওয়ান। এবার দূরের আর কাছের পাওয়ার মিলিয়ে দেখলে দেখা যাবে আসলে কাছের পাওয়ারটা হয়ে যাচ্ছে +২। +১-+১=+২ এই পদ্ধতিতে। এবার কারো যদি দূরের পাওয়ার হয় +১, তার সাথে কাছের পাওয়ার যোগ হয়ে হবে কাছের পাওয়ার। কারো যদি দূরের পাওয়ার না থাকে তাহলে শুধু কাছের পাওয়ারেই হয়ে যাবে। ডাক্তারবাবুবে দেখিয়ে নেওয়া উচিত দূরের কোনো পাওয়ার আছে কি না। যদি দূরের পাওয়ার না থাকে তাহলে ফুটপাত থেকে রিডিং গ্লাস কিনেও পড়তে পারেন। এতে ক্ষতি খুব বেশি হবে না। কিন্তু দূরের পাওয়ার থাকলে সেটা অ্যাডজাস্ট করে চশমা পরতে হবে। আমাদের দু’টো চোখের মনির সেন্টারের মধ্যে যে ডিসট্যান্স থাকে সেটাকে ইন্টারপিউপিলিয়ারি ডিসট্যান্স বা আই.পি.ডি বলে। চশমা ভালো সেট করার অন্যতম কাজ হচ্ছে এই দূরত্বটা ঠিকমতো মাপা এবং চশমার লেন্সটা এর ওপর নির্ভর করে করা। আমরা ফুটপাত থেকে যে চশমা কিনছি তাতে আগে থেকেই লেন্সটা ঠিক করা আছে। তাতে আই.পি.ডি-র মধ্যে পার্থক্য হতে পারে। তাই ফুটপাতের চশমা পরলেই অনেক ক্ষেত্রে মাথার যন্ত্রনা বা ফোকাসিং-এর সমস্যা দেখা দিতে পারে। চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে জল পড়া-এই সমস্যাগুলো থেকেই যায়। ফুটপাত থেকে চশমা কিনলে আরো যে সমস্যা হবে সেটা হল, আমরা এখন কম্পিউটার, মোবাইল ডিপেনডেন্ট হয়ে যাচ্ছি। কাজেই একটা মিনিমাম দূরত্বে কাজ করার প্রবণতা বাড়ছে। আগে আমাদের হয়ে দূরের জিনিস দেখার অথবা কাছের জিনিস দেখার কাজ করতে হত। বর্তমানে দুই দশক ধরে ইন্টারনেটের কাজ বা কম্পিউটারের কাজ বেড়ে যাবার ফলে রিডিং গ্লাস বা ফুটপাতের চশমা আর কোনো কাজ করছে না। কারণ ফুটপাতের চশমায় ওই বিশেষ পাওয়ারটা থাকে না যাকে বলে প্রোগ্রেসিভ গ্লাসেস। প্রোগ্রেসিভ গ্লাসের অনেকগুলো মেজারমেন্ট দরকার হয়, সেগুলো ঠিকঠাক না এর চশমা অবশ্য ফুটপাতে সহজে মেলেও না। কাছের পাওয়ার+ দূরের + কম্পিউটারে কম্পিউটারে কাজের জন্য গ্রোগ্রেসিভ গ্লাস নেওয়া উচিত এবং এই ধরনের চশমা চক্ষুবিশেষজ্ঞ বা অপটোমেট্রিস্ট-কে দেখিয়েই করা উচিত। ফুটপাতের চশমা খুব কম দামে পাওয়া যায় বলে এর গুণগত মানের উৎকর্ষ পাওয়া যায় না। গুণগত মান যদি ঠিক না থাকে প্লাস-টু বলে যে পাওয়ারটা কিনছি সেটা হয়তো এক চোখে প্লাস-টু রয়েছে অন্য চোখে হয়তো আরো একটু বেশি বা কম রয়েছে, তার জন্য চোখের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা একটা থেকেই যায়। তাই গুণগত মান, চশমার লেন্সের মেজারমেন্ট, চশমার ফাইবারের কোয়ালিটি বা এইসব লক্ষ্য রেখে চশমা বানালে চোখ ভালো থাকবে এবং দৃষ্টিশক্তিও কোনো সমস্যা হবে না। ডাক্তারের কাছে চোখ দেখাতে এলে তারা রোগীকে প্রথমে একবার দেখেন। এবার ড্রপ দিয়ে চোখের মাসলগুলোকে প্যারালাইসড করে নিয়ে হিডেন কোনো পাওয়ার আছে কি না দেখে চশমার পাওয়ার ঠিক করে দেন ডাক্তারবাবু। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কখনোই ফুটপাদের চশমা নয়। ড্রপ দিয়ে চোখ পরীক্ষা করে চশমা নিতে হবে। ডাক্তারবুববুও যদি ড্রপ না দিয়ে চশমার পাওয়ার দেন তাহলে ভুল হয়ে যাবে পাওয়ারে। বাচ্চাদের পাঁচ-ছ’বছর বয়সে একটা ভিসন স্ক্রিন সব সময় করা উচিত। ভিসন স্ক্রিনে সম্যা থাকলে ড্রপ দিয়ে পাওয়ার পরীক্ষা করে সীটক চশমা পরা উচিত। চশমা পরলে ভিসনের উন্নতি সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন