×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

হেমারেজিক স্ট্রোক বেঘোরে প্রাণ যেতে পারে

ডাঃ মধুসুদন ভৌমিক
2019-01-24 17:18:51

মাথার খুলির মধ্যে লুকিয়ে থাকে ঘিলু।ঘিলুর ভিতর লুকিয়ে থাকে কোটি কোটি স্নায়ুকোষ।কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রত্যেকটি কোষ দক্ষ প্রশাসক। স্নায়ু গুচ্ছের এক একটি দল এক একটি দপ্তর চালায়।সংবাদগ্রহণ, সমন্বয় সাধন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সিদ্ধান্তের সঠিক রূপায়নের মতো ক্রিয়াকলাপ স্নায়ুতন্ত্র সামলায়।জীবনের যাবতীয় বাহাদুরি স্নায়ুনির্ভর। যে স্নায়ু জীবন সচল রাখে তাকে সচল রাখার জন্য ব্রেনের ভিতর রসদ ভরা ভেন্ট্রিকল, সাইনাস, শিরা, ধমনী ও জালিকার মতো নদী নালা আছে। আছে উইলিসের রক্তপ্রণালী। সেখান থেকে সামনে পিছনে উপরে নীচে ও কোষের দেওয়াল ঘেঁসে রক্তবাহনালীর মাধ্যমে রসদ সরবরাহের ব্যবস্থা আছে।রসদ ভরা রক্তবাহনালী যদি ফেটে যায় তবে ওই নালী ধরে ব্রেনের যে অঞ্চলে রক্ত যাওয়ার কথা সেই অঞ্চলে পৌঁছয়না। যে অঞ্চলে রক্তস্রোতে প্লাবিত হয় সেখানে ওই স্নায়ুকোষের কাজকর্ম শিকেয় ওঠে। মস্তিষ্কমন্ডটি কে জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য হাড়ের বাক্সে সেটি কে লুকানো আছে।তাতেও শেষ রক্ষা হয়না।বদ্ধ এলাকায় ব্রেনে রক্ত ঢুকলে সেখানকার প্লাবিত অঞ্চল ফুলেফেঁপে ঢোল হয়ে বাড়তি রক্তকে জায়গা দিতে পারেনা।ফলে হাড়ের বাক্স তথা ক্রেনিয়ালের ভিতরের চাপ বেড়ে যায়।একে বলে ইন্ট্রাক্রেনিয়াল প্রেসার বা আই.সি.পি।এই চাপ স্নায়ু কোষের গলা চেপে ধরে তার কাজ কর্মে বাধা দেয়।রক্তের তোড়ে অনেক স্নায়ুতন্তু ছিড়ে যায়, রক্ত জমাট বেঁধে সেই রক্তমন্ডের চাপে স্নায়ুকেন্দ্র অকেজো হয়ে পড়ে। মস্তিষ্কের ভিতর রক্তক্ষরণ ইন্ট্রাক্রেনিয়াল হেমারেজ বলে।মস্তিষ্কের পর্দার ভিতর অঘটন ঘটা কে পর্দার স্তর অনুযায়ী তাকে এপিডুরাল, সাবডুরাল ও সাবঅ্যারাকনয়েড হেমারেজ বলে।স্নায়ুকোষের সংসার হেমারেজহলে তাকে ইন্ট্রাপ্যারেন-কাইমাল বা ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমারেজ বলা হয়।

সাধারণত হাড়ের বাক্সে জোরদার আঘাত লাগলে এপিডুরাল ও সাবডুরাল গহ্বরে রক্তপাত ঘটে এবং সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষয়ক্ষতি স্ট্রোক তৈরির পর্যায়ে থাকেনা।কিন্তু ব্রেনমন্ডের ভিতর, ব্রেনের ভিতরকার কুঠরিগুলোতে কিংবা সাবঅ্যারাকনয়েড গহ্বরে হেমারেজ হলে স্নায়ুতন্তুর বিস্তর ক্ষতি হয় এবং অ্যাকিউট স্ট্রোক হয়।যদিও এপিডুরাল স্পাইনাল হেমারেজ স্নায়ুতন্তুতে চাপ সৃষ্টি করে হাত-পা শিথিল করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

ইন্ট্রাপ্যারেনকাইমাল হেমারেজ

ব্রেনমন্ডল তথা ইন্ট্রাপ্যারেনকাইমাল হেমারেজ ব্রেনে হেমারেজের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।সেরিব্রোভাসকুলার অসুখের প্রায় ১৫% মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে হয়।ইউলিসের চক্র থেকে অসংখ্যা সূক্ষ্ রক্তনালী উৎপন্ন হয়ে মস্তিষ্কের গভীরে রক্তসঞ্চালন করে। এইধমনী গুলো কে ল্যাকুনার ধমনী বলে।এদের দেওয়াল খুবই সংবেদনশীল।রক্ত চাপ বেড়ে গেলে এগুলো সহজে ছিঁড়ে যায়।রক্তক্ষরণের দরুন  স্ট্রোক রোগের প্রায় ৫০% ক্ষেত্রে  এই ল্যাকুনার  ধমনী গুলোই বিপদ ঘটায়।ইস্কেমিক স্ট্রোকে এই ধমনীগুলোর দেওয়াল দুর্বল হলেও রক্ত লিক করে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এছাড়াও মস্তিষ্কে আঘাত লাগার কারণে, রক্ততঞ্চনে ক্রটি, ব্রেনটিউমার, কোকেন সেবন, ব্রেনক্যানসার এবং ল্যাকুনার ধমনীতে অ্যামিলয়েড জমা পড়ার কারণেও হেমারেজিক স্ট্রোক হয়।

হাইপারটেনসিভ হেমারেজ

রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে হঠাৎ করে মানুষ জীবন মৃত্যুর দোরাগোড়ায় পৌঁছে যায়।ইস্কেমিক স্ট্রোক সাধারণত ধীরে  ধীরে হয় এবং ঘুমের মধেও হতে পারে।হেমারেজিক স্ট্রোক সাধারণত জাগ্রত অবস্থায় হয় এবং যৌনউত্তেজনা ছাড়াও যেকোনো ধরনের উত্তেজনার মুহূর্তেও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে দেখা যায়।হাঁটাচলা, কথা বলা মানুষ হেমারেজিক স্ট্রোকের ছোবলে নিমেষে ছবি হয়ে যেতে পারেন। আধঘন্টা থেকে নব্বই মিনিটের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তীব্র মাথার যন্ত্রণা, চোখে ধোঁয়া দেখা  ও বমি হতে থাকে।হাইপারটেনসিভ হেমারেজ স্ট্রোক পুটামেন ও ইন্টারনেল ক্যাপসুল মূলত আক্রান্ত হয়। হঠাৎ করে শরীরের একঅর্ধ অসাড় হয়ে যাওয়া এই অসুখের ট্রেডমার্ক।সঙ্গে কথা জড়িয়ে যাওয়া, হতভম্ব হয়ে যাওয়া, হাত-পা অবশ হতে থাকার মতো উপসর্গ রক্তক্ষরণের মাত্রা অনুযায়ী প্রকাশ পেতে থাকে।অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হলে রক্তমন্ডের চাপে হৃৎপিন্ড ও শ্বসনকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হঠাৎ মৃত্যু ঘটতে পারে। সত্যি কথা বলতে হেমারেজিক স্ট্রোক ঝড়ের মতো হাজির হয় ও ৫০% ক্ষেত্রে চিকিৎসা করার সময় টুকুও পাওয়া যায়না।বেঁচে ফেরা রোগীর প্রায়ই পঙ্গু হয়ে বাচে।

মস্তিষ্কের পনস অঞ্চলে রক্তক্ষরণ হলে দু’হাতও দু’পা অসাড় হতে পারে। রোগী দ্রুত কোমাতে চলে যায়। ঘন ঘন বমি হতে থাকলে, মাথার পিছন দিকে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হলে, কথা বলতে না পারলে, একদিকের চোখের পাতা বন্ধ হয়ে থাকলে ও টলমল করে বাচ্চাদের মতো হাঁটতে থাকলে সেরিবেলার হেমারেজ সন্দেহ করতে হয়। থ্যালামাস ও মিডব্রেন আক্রান্ত হলেও রোগী দ্রুত কোমতে চলে যায়। কথা বলা বন্ধ হলে বাম টেম্পোরাল, দেহের একপাশে অনুভূতি না থাকলে প্যারিয়েটাল, হাতের বাহু অবশ হলে ফ্রন্টাল লোব আক্রান্ত হয়েছে ভাবা যেতে পারে।

রক্তবহানালীর দেওয়াল যে কোনো কারণে দুর্বল হলে সেই জায়গাটি সাইকেলের ছেঁড়া টায়ারের ভিতর দিয়ে টিউবের উঁকি মারার মতো ফুলে যায়। একে অ্যানিউরিজম বলে। জন্মসূত্রে ৩-৪% লোকের অ্যানিউরিজম থাকে। সাধারণত ধমনীগুলো যেখানে শাখা-প্রশাখাতে বিভক্ত হয়ে সেখানে আঙুরের মতো বেরি অ্যানিউরিজম দেখা যায়। উচ্চ রক্তচাপের এটি ফেটে গেলে প্রায় ৫০ % মানুষ কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মারা পড়েন। যারা বেঁচে থাকেন তাদের বেশিরভাগ রোগী তৎক্ষণাৎ অজ্ঞান হয়ে যান। জ্ঞান ফিরে এলে শুরু হয় তীব্র মাথার যন্ত্রণা, বমি ও চোখে সরষে ফুল দেখার মতো অবস্থা। মনে রাখতে হবে সাব অ্যারাকনয়েড হেমারেজ একটি বিরল ঘটনা। প্রায় এক লক্ষেরও বেশি স্ট্রোক রোগীদের মধ্যে মাত্র হাতেগোনা ৬-৭টি ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটে। শুধুমাত্র তীব্র মাথার যন্ত্রণার পিছনে প্রতি দশটির মধ্যে একটি ক্ষেত্রে সাব অ্যারাকনয়েড হেমারেজ তথা এস.এ.এইচ-এর হাত থাকে। মামুলি আধকপালি তথা মাইগ্রেনের কারণেও হাত-পা অবশ হওয়ার ঘটনা ঘটে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রোগলক্ষণ দেখেই এস.এ.এইচ-এর আন্দাজ করা যায়। তীব্র মাথঅর যন্ত্রণা, অস্বস্তিকর অবস্থা ও উত্তেজনা দিয়ে অসুখটির সূত্রপাত ঘটে। ঘন্টা ছয়েক পরে রোগীর ঘাড় শক্ত হয়ে যায়। আলোআল অসহ্য ঠেকে। সাব অ্যারাকনয়েড স্পেসের চাপে কয়েকদিন পরেও হেমিপ্লেজিয়া হতে পারে। ধীরে ধীরে কথা বলা বন্ধ হতে পারে। তিন নম্বর ক্রেনিয়াল নার্ভ আক্রান্ত হয়ে অনেক সময় চোখের একদিকের পাতা ভারি হয়ে যায়। এক চোখ বন্ধ করে তাকিয়ে থাকা রোগী মহাভারতের শকুনি মামাকে মনে করিয়ে দেয়। চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটেভ ৬৫ বছর বয়সের ওপরে ও ২০ বছর বয়সের নীচে সাধারণত এস.এ.এইচ হয় না। তবে এস.এ.এইচ-র বেশির ভাগ অ্যানিউরিজম ফেটে হয়। ব্রেনে হুড়মুড়িয়ে রক্ত ঢুকতে থাকে। রক্তের স্রোতে স্নায়ুতন্ত্র ছিঁড়ে নিমেষে জীবন স্তব্ধ হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত জ্ঞান ফিরে আসে। ১০% ক্ষেত্রে জ্ঞানহারা অবস্থা বেশ কয়েকদিন স্থায়ী হয়। অনেক সময় ফুলে  থাকা অ্যানিউরিজম মাঝে মাঝে লিক করে ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়। রোগী সুইচ অফ-অনের মতো একবার জ্ঞান হারায় তো আবার জ্ঞান ফিরে আসে। দিন দুপুরে কর্মক্ষম মানুষ হঠাৎ জ্ঞান ফিরে আসে। দিন দুপুরে কর্মক্ষম মানুষ হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে হাসপাতালে এলে অভিজ্ঞ চিকিৎসক মাত্রেই এস.এ.এইচ সন্দেহ করেন।

এস.এ.এইচ-এর কারণে দেরিতেও স্নায়ুবিদ শিথিলতা দেখা দিতে পারে

স্ট্রোক আক্রান্ত রোগী ধীরে ধীরে প্যারালাইসিসের দিকে এগোতে থাকলে সতর্ক হতে হবে। সাধারণত চারটি কারণে স্নায়বিক দুর্বলতা কয়েকদিন পর দেখা দেয়। অ্যানিউরিজম ফেটে গিয়ে বা লিক করে এমনটি হতে পারে। ধীরে ধীরে ব্রেনে জল জমে অর্থাৎ হাইড্রোসেফালাসের কারণেও দেরিতে স্নায়ুবিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। অ্যানিউরিজম বেলুনের মতো ফুলতে থাকলে আক্রান্ত ধমনীতে ভ্যাসোস্প্যাজম তথা কম্পন শুরু হয়। রক্তপ্রবাহের গতি কমে যায় এবং দুর্বলতা প্রকাশ পায়। রক্তরসের ৯৩% জল ও ৭% প্রোটিন এবং লিপিড থাকে। সোডিয়াম তথা লবণ জলে দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। এস.এ.এইচ-এর কারণে ভেসোপ্রেসিন হরমোন ক্ষরণ কমে যায়। ধমনী ও ব্রেনের ন্যাট্রিউরেটিক ফ্যাক্টর বেশি বেশি ক্ষরিত হয়। নিট ফল হিসেবে ব্রেন থেকে সোডিয়াম আয়ন সেরিব্রাল ইডিমা বাড়িয়ে দেয়। মাথার ভিতরের টেনশন বেড়ে যায়। রক্তপ্রবাহ আরও কমে যায়। নিস্তেজ হতে থাকে স্নায়ু, নিস্তেজ হতে থাকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। স্ট্রোক রোগের এমন রূপকে সেরিব্রাল সল্ট ওয়াস সিন্ড্রোম বলে।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন