এক্সপায়ারি ডেট পেরিয়ে গেলে বিপদ ডেকে আনতে পারে ওষুধ
অমিতাভ সিংহ রায়
2019-01-25 10:37:54
‘এক্সপায়ারি ডেট’ পেরিয়ে গেলেই কি ওষুধ খারাপ হয়ে যায়? এটা একটা বড় প্রশ্ন। এক্সপায়ার্ড কথাটা থেকে বুঝে নেওয়া যায় যে এক্সপায়ার্ড ওষুধ মানে নষ্ট হয়ে যাওয়া ওষুধ। যেকোনো ওষুধেই তার লেবেলের ওপর ওষুধটির ম্যানুফ্যাকচারিং ডেট ও এক্সপায়ারি ডেট উল্লেখ করা তাকে। এক্সপায়ারি ডেট হল ওষুধটির কার্যকারিতার অন্তিম সমসসীমা। যে সময়সীমার মধ্যে ওষুধটি ব্যবহার্য অবস্থায় থাকে সেই সময়সীমার মধ্যে ওষুধটি ব্যবহার করলে সেটি তার সর্বোচ্চ থেরাপিউটিক এফেক্ট দিতে সক্ষম। এক্সপায়ারি ডেট হল ওষুধটির ‘সেলফ লাইফ’-এর অন্তিম লগ্ন। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে তাহলে এই ‘সেলফ লাইফ’ কী? প্রত্যেকটি ওষুধের তার নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে তার কার্যক্ষমতা স্থির হয় এবং যার একটি সময়সীমা থাকে। যে সময়সীমার মধ্যে ওষুধটি সব থেকে ভালো কাজ করে। এই সময়সীমা পেরিয়ে গেল ওষুধটি তার কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলে। ওষুধের এই ‘সেলফ লাইফ’ অবশ্য ওষুধের স্টোরেজ কন্ডিশনের ওপরেও অনেকটা নির্ভর করে। সমস্ত ওষুধই শুকনো বা ড্রাই পরিবেশে রাখতে বলা হয় বা বলা হয় আলো থেকে দূরে রাখতে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ‘রুম টেম্পারেচার’-এর কথা উল্লেখ থাকে। যদি এই সমস্ত নিয়ম না মেনে চলা হয় সেক্ষেত্রে ওষুধের কার্যক্ষমতা ওপর একটা প্রভাব পড়ে। অনেক ওষুধ আছে যেগুলো ২ ডিগ্রি থেকে ৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় অর্থাৎ ওষুধের কাজ সঠিক মাত্রায় পেতে গেলে শুধু এক্সপায়ারি ডেট দেখলেই হবে না সব কিছুর ওপরেই লক্ষ্য রাখতে হবে।
এক্সপায়ারি ডেট পেরিয়ে গেলেই যে সেই ওষুধটি সাথে সাথে নষ্ট হয়ে যাবে ব্যাপারটা কিন্তু সেরকম নয়। নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষা করার পরেই কোনো ওষুধের এক্সপায়ারি ডেট ঠিক করা হয়। যাতে একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা ঠিক করা যেত পারে ওষুধটি ব্যবহার কারর জন্য। তবে এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই যে, একবার এক্সপায়ারি ডেট পেরিয়ে গেলে সে ওষুধ আর ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু ব্যাপারটা হল কেন ব্যবহার করা যাবে না—
- এক্সপায়ারি ডেট পেরিয়ে গেলে ওষুধটিতে রাসায়নিক পরিবর্তন হতে পারে। যা বিপদ কে আনতে পারে।
- ওষুধের কার্যক্ষমতা হারিয়ে যায়।
- ওষুধটি রাসায়নিক বস্তু স্থায়ী অবস্থায় থাকে না।
‘একবার এক্সপায়ারি ডেট পেরিয়ে গেলে সেই ওষুধ বিপদমুক্ত ও কার্যকরী অবস্থায় থাকে না এবং যদি কিছু হয় তার জন্য কেউ দায়ী থাকবে না’—এই সতর্কবার্ত আমেরিকার ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (US-FDA) থেকে স্পষ্টভাবে বলা আছে। আমেরিকার ‘ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্স’ থেকে ১৯৮০-র মাঝামাঝি সময়ে একবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কীভাবে ওষুধের ব্যবহার্য সময়সীমাকে আরও দীর্ঘায়িত করা যায়। কিন্তু তারা যে সমস্ত গাইডলাইন পেশ করেছিলেন তা আমেরিকার ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ বাতিল করে দেয়। সুতরাং এই ব্যাপারে কোনোরকম তর্কে না গিয়ে নিজের সুরক্ষা জন্য কখনোই এক্সপায়ারি ডেট পেরিয়ে যাওয়া ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়।
নির্দিষ্ট কিছু শব্দ যা ব্যবহার করা হয়ে থাকে এক্সপায়ারি ডেট বোঝানোর জন্য। তা হল—
- ‘বেস্ট বিফোর জানু ২০১৬’ –অর্থাৎ ৩১ জানয়ারি ২০১৬ তারিখের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে।
- ‘ইউজড বাই জানু ২০১৬’—অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে।
- ‘এক্সপায়ারি ডেট জানু ২০১৬’—অর্থাৎ ৩১ জানুঢয়ারি ২০১৬ তারিখের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে।
‘দ্যা ড্রাগ অ্যান্ড কসমেটিক অ্যাক্ট, ১৯৪৫’- এর সেকশন-৯৬-তে পরিষ্কারভাবে নির্দেশ দেওয়া আছে যে ওষুধের মোড়কের ওপর বা লেবেলের ওপর স্পষ্টভাবে ওষুধটির ম্যানুফ্যাকচারিং ডেট, এক্সপায়ারি ডেট উল্লেখ থাকতে সাথে। সাথে ওষুধটির ব্যাচ নম্বরের উল্লেখ থাকতে হবে।
মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে কী পরিবর্তন হয়
ওষুধ এক্সপায়ারি ডেট অতিক্রমা করলে তার ‘সেলফ লাইফ’-এর অন্তিম পর্যায়ে চলে যায়। ইন্ডিয়ান ফার্মাকোলজিক্যাল কমিউনিকেশন, দ্য সেন্ট্যাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইশন-এর মতে, ‘সেলফ লাইফ’ হল ওষুধটির সর্বোচ্চ কার্যক্ষমতা সময়কাল। যে সময়ের মধ্যে ওষুধটি ফিজিক্যালি এবং কেমিক্যালি স্টেবল অবস্থায় থাকবে। যদি ওষুধটিকে নির্দিষ্ট অবস্থায়, সঠিক তাপমাত্রা স্টোর করা হয়। যেমনটা নির্দেশ দেওয়া আছে ফার্মাকোপেডিয়াতে। সুতরাং মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে ওষুধটি আর ফিজিক্যালি এবং কেমিক্যালিই স্থায়ী অবস্থায় থাকে না। তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। এই পরিবর্তন তখনও হতে পরে যদি ওষুধটি সঠিক তাপমাত্রায় স্টোর করা না হয়। যেমন ধরা যাক কোনো ওষুধকে হয়তো ডিপ ফ্রিজে রাখার কথা, কিন্তু তা রাখা হয়নি। তাহলেও তার কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। প্রত্যেকটি ওষুধের লেবেলেই নির্দেশ দেওয়া থাকে, তা কোন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। ওষুধ মেয়াদ-উত্তীর্ণ হয়ে যাবার পর বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আবার যদি ওষুধ সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করা হয় তাহলেও তার কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় বিভিন্ন ভাবে। যেমন হাইড্রোলাইসিস, অক্সিডেশন, অতিরিক্ত আলোর প্রভাবে ফোটোলাইসিসের কারণেও ওষুধ নষ্ট হয়ে যায়।
কী সাবধানতা নেবেন
- ওষুধ কেনার সময় অবশ্যই ‘এক্সপায়ারি ডেট’ দেখে নেবেন।
- ওষুধের লেবেলের ওপর বড় হরফে এক্সপায়ারি ডেট লিখে রাখুন যাতে ভুল না হয়ে যায়।
- বাড়িতে ওষুধ সবসময় শুকনো জায়গায় রাখবেন। মাথায় রাখবেন, রোদের আলো যেন না পায়।
- বিভিন্ন স্টেরাইল ড্রপ আছে যা একবার সিল খুললে আর বেশিদিন ব্যবহার করা যায় না। কতদিন ব্যবহার করা যাবে তা লেবেলের ওপর লেখা থাকে। নির্দেশমতো ব্যবহার করুন।
- ওষুধ মেয়াদ-উত্তীর্ণ হয়ে গেলে তা নষ্ট করে ফেলুন।
- এমন কিছু ওষুধ আছে যা মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাবার পরও যদি খাওয়া হয় তাহলে তা ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনতে পারে।
সুতরাং কোনোরকম বিতর্কে না গিয়ে কখনো মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহারের ঝুঁকি নেবেন না।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন