×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

হোমিওপ্যাথির প্রভাব কি কমছে

ডাঃ রামকৃষ্ণ ঘোষ মন্ডল
2019-01-25 11:06:01

বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতিরই যেমন রোগ আরোগ্যের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আছে, সেরূপ প্রতিবন্ধকতা হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিরও রয়েছে। হোমিওপ্যাথিক ওষুধকে শক্তিকৃত করার পর সেটিকে অসীম শক্তির ওষুধরুপে পরিণত করা গেলেও এই ওষুধেরও দ্বারা অনেক রোগের আরোগ্য হলেও তারও একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই সংকটজনক অবস্থায় কিছু সাধরণ রোগেও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সুফল লাভের আশা কম থাকে। সেটা তরুণ ও পুরনো উভয় শ্রেণীর রোগের ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে।

মূত্র যন্ত্র বা পিত্তথলি কিংবা প্রস্টেট, প্যাংক্রিয়াস অথবা লালা গ্রন্থি ইত্যাদি স্থানে জমে যাওয়া বড় পাথর, শরীরের বাইরে বা ভিতেরের বহুদিনের শক্ত বড় টিউমার, জন্ম থেকে থাকা শরীরের ভিতরে বা বাইরে থাকা গঠনগত ক্রটি যেমন, আঙুলের বেশি সংখ্যা, ঠোঁট বা তালুর অসম্পূর্ণ গঠন ইত্যাদি। কেবল হোমিওপ্যাথিক ওষুধই নয়, অন্য কোনো পদ্ধতির ওষুধের দ্বারাও এগুলিকে আরোগ্য করা সম্ভব নয়। এসকল ক্ষেত্রে শল্য চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া দরকার। তবে শরীরের ভিতরের কিছু যন্ত্রের যেমন হৃৎপিন্ড. পিত্তনালী বা অন্য যেকোনো শরীর-যন্ত্রে জন্মগত ছোটখাটো গঠনগত ক্রটির জন্য যদি জন্মের পরই শিশু বেশি সংকটপন্ন না হয় তবে সেক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দ্বারা কয়েক মাসের মধ্যেই সুফল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাওয়া যায়। এ সকল ক্ষেত্রে আধুনিক শল্য চিকিৎসায় আরোগ্য করার সুযোগ থাকলেও দরিদ্রদের পক্ষে এমন ব্যয়সাধ্য শল্য চিকিৎসা করানো সম্ভব হয় না।

আধুনিক শল্য চিকিৎসার মতো ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল চিকিৎসার পরিবর্তে হাসপাতালের নানা সহায়ক ব্যবস্থা ও নার্সিংয়ের সাহায্য নিয়ে রোগের জরুরি অবস্থা কাটিয়ে সাফল্যের সঙ্গে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বহু রোগের ক্ষেত্রেই করা যায়।

দুর্ঘটনাজনিত আঘাত, আগুনে পোড়া ইত্যাদি থেকে সংকটাপন্ন অবস্থায় পৌঁছে যাওয়া রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি অবশ্যই করতে হবে এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় হাসপাতালে রেখে কেবল হোমিওপ্যাথিক ওষুধের সঙ্গে নাসিং, অক্সিজেন ও স্যালাইন ইত্যাদি দিয়েই রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে আর্নিকা, ক্যালেন্ডুলা, হাইপেরিকাম, লিডাম, স্ট্যাফিসেগ্রিয়া, ক্যান্থারিস, সিমফাইটাম, ক্যাল-ফস ইত্যাদি হোমিওপ্যাথিক ওষুধগুলির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

যেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের বা আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসা পাওয়ার অসুবিধা থাকে সেক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দিয়েও অনেক সময় অপ্রত্যাশিতভাবে সুফল পাওয়া যায়। যেমন সেরিব্রাল বা করোনারি থ্রম্বোসিসের আক্রমণের আধ ঘন্টার মধ্যে কিছু হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দিয়ে রোগটিকে স্থিতিশীল অবস্থায় রাখা যায়। এক্ষেত্রে আর্নিকা মন্ট, ব্যারাইটা মিউর, কষ্টিকাম, রওয়ালফিয়া, ব্যারাইটা কার্ব, কেলি ফল ইত্যাদি হোমিওপ্যাথিক ওষুধগুলি ব্যবহার করা যায়।

প্রসূতিদের প্রসবকালীন অনেক সমস্যাই হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দ্বারা সমাধান করা গেলেও কিছু ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতেই হবে। যেমন প্রসূতির জঠরের গঠনগত ক্রুটি, অস্বাভাবিক ওজনের শিশু বিংবা প্রসূতির প্রসবের আগেই প্রচুর রক্তস্রাব, উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভস্থ শিশুর হৃৎপিন্ডের অস্বাভাবিকতা ইত্যাদি থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতেই হবে। প্রসূতিদের ক্ষেত্রে সিমিসিফুগা, কলোফাইলাম, পালসেটিলা, কেলিফস, জেলসিমিয়াম ইত্যাদি ওষুধ সহ ধাতুগত চিকিৎসার দ্বারা প্রসূতির পুরনো রোগের চিকিৎসায় বিশেষ কাজ দেয়।

সুতরাং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের আধুনিক নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্য নিয়ে নাকি কেবল রোগীকে পরীক্ষার দ্বারাই রোগ নির্ণয় করে রোগটি হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দ্বারা আরোগ্য করা সম্ভব কিনা তা স্থির করতে হবে। অর্থাৎ হোমিওপ্যাথির সুযোগ ও সীমাবদ্ধতা অবশ্যই জেনে নিতে হবে। যেমন রোগীর শরীরের কোনও ক্ষত কী করাণে ঘটেছে সেটা স্থির করে অর্থাৎ রোগের নাম জেনেই চিকিৎসা শুরু করতে হবে। কারণ এই ক্ষত ডায়াবেটিস, ক্যানসার, কুষ্ঠ, গ্যাংগ্রিন, সিফিলিস ইত্যাদির জন্য বা অন্য কিছু দূষিত বিষক্রিয়া থেকে ঘটতে পারে। সব ক্ষতই সাধারণ প্রদাহ থেকে হয়েছে, এমনটা ভাবা ঠিক নয়। ক্ষত ও গ্যাংগ্রিনের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় আর্সেনিক এলব, অ্যানথ্রাক্সিন, ট্যারেন্টুলা, কার্শিনেসিন, সিফিলিনাম ইত্যাদি ওষুধগুলি অসাধ্য সাধন করতে পারে।

সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে জ্বর, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, হাম, বসন্ত, উদরাময়, আন্ত্রিক, আমাশা ইত্যাদি তরুণ রোগের চিকিৎসা করা হোমিওপ্যাথিতে থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা জেনে নিয়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা অতি সহজে ও সুলভে করা সম্ভব। এ সকল ক্ষেত্রে হাসপাতালের সুযোগ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। আধুনিক হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল না থাকলেও অ্যালোপ্যাথিক হাসপাতালেই ওই সুযোগ নিতে হবে।

অন্য দিকে পুরনো রোগের অর্থাৎ ক্রনিক ডিজিজের চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিতে স্থায়ীভাবে করা সম্ভব। যেটা অবশ্য বর্তমানে অন্য পদ্ধতিতেও করা সবসময় সম্ভব হয় না। যেমন চর্মরোগ, সোরিয়াসিস, বাত, পুরনো সর্দি-কাশি ও হাঁপানি, বহুদিনের পেটের পীড়া, স্নায়ুরোগ. মূত্র যন্ত্রে ছোট পাথর, অর্শ, ফিসচুলা ইত্যাদি অসংখ্য রোগের চিকিৎসা ক্ষেত্রে। এবং বহু মানুষ এই সব রোগে হোমিওপ্যাথির দ্বারস্থ হচ্ছেন। অতএব হোমিওপ্যাথির প্রভাব কমার প্রশ্নই ওঠে না।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন