×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

এখনও যায়নি সোয়াইন ফ্লু ঘাপটি মেরে বসে আছে

ডাঃ সাথী রায়
2019-01-25 11:20:53

আমরা প্রত্যেকেই জীবনে ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু বা সাধারণ সর্দি-কাশি-জ্বরে অনেকবারই আক্রান্ত হয়েছি। এক ধরনের ভাইরাসই এই ফ্লু হওয়ার জন্য দায়ী। সোয়াইন ফ্লু-ও এক ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা। কিন্তু সেটা সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু থেকে অনেক বেশি বিপজ্জনক হতে পারে। এটা H1N1 নামক ভাইরাস থেকে হয়।

সোয়াইন ফ্লু প্রবল সংতক্রামক রোগ। কারণ এর একসাথে অনেক মানুষকে আক্রান্ত করার ক্ষমতা আছে। সারা বিশ্বের ৭৪ টি দেশ এর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। সাধারণভাবে সোয়াইন ফ্লু খুব দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ে। যা অনেকসময় মানুষের জীবননাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

কীভাবে সংক্রমণ হয়

এটা ছড়ায় একই ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত মানুষের থেকে অন্য মানুষের মধ্যে। হাঁচি-কাশি বা আক্রান্ত মানুষকে স্পর্শ থেকে ছড়ায়। একজন আক্রান্ত মানুষের একটা হাঁচি-কাশি থেকে হাজারটা সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কোনো বদ্ধ জায়গাই এর বেশি করে ছড়িয়ে পড়ার উৎসস্থল। যথা---শ্রেণীকক্ষ, ট্রেন, বাস, শপিং মল, অফিস প্রভৃতি। একজন আক্রান্ত মানুষ সুস্থ মানুষকে আক্রান্ত করার ক্ষমতা রাখে।

আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কাদের বেশি

  • ছোট বাচ্চাদের বিশেষত পাঁচ বছরের নীচের বাচ্চাদের।
  • ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স্ক মানুষদের।
  • গর্ভবতী মায়েদের।
  • যেসব বাচ্চাদের যক্ষ্মা আছে।
  • যাদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কম।
  • যাদের ডায়াবেটিস আছে।
  • এইচ.আই.ভি পজিটিভ রোগীরা।
  • যাদের যকৃত, কিডনি, হার্ট বা ফুসফুসের নানা রোগ আছে।
  • যারা ক্যানসারে আক্রান্ত।
  • যারা প্রচন্ডভাবে মানসিক বা শারীরিকভাবে দুশ্চিন্তগ্রাস্ত।

রকমভেদ

  • লক্ষণবিহীন সোয়াইন ফ্লু —অনেক সোয়াইন ফ্লু-আক্রান্ত মানুষের তেমন কোনো লক্ষণের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় না।
  • জটিলতাবিহীন সোয়াইন ফ্লু—এসব ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার নেই। আক্রান্ত ব্যক্তির সাধারণ জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, নাক দিয়ে জল পড়া, মাথা ব্যথা, ঠান্ডা লাগা, বমি, পায়খানা প্রভৃতি দেখা যায়। শ্বাসকষ্ট খুব একটা দেখা যায় না।
  • সামান্য জটিল সোয়াইন ফ্লু—এক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার আছে। আক্রান্ত ব্যক্তির জটিলতাবিহীন সোয়াইন ফ্লু-র সমস্ত উপসর্গগুলির সাথে বুকে ব্যথা, ব্লাড, প্রেসার কমে যাওয়া, মানসিক বিভ্রান্ত, শরীরে প্রচন্ড জ্বালা ভাব এবং জলের অভাব দেখা দেয়। এছাড়া যাদের ক্রনিক রেনাল ফেলিওর, ডায়াবেটিস, হাঁপানি, হার্টের সমস্যা আছে, তাদের সমস্যাগুলি আরও বাড়তে পারে।
  • ভীষণ জটিল সোয়াইন ফ্লু—এক্ষেত্রে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার আছে। আক্রান্ত ব্যক্তির উপরিউক্ত সমস্ত রকমের লক্ষণাবলীর সাথে ব্লাড প্রেসার অনেক নীচে নেমে যাওয়া, অক্সিজেনের অভাব, এক্স-রে-তে নিউমোনিয়া দেখা দেওয়া, তিন দিনের বেশি প্রচন্ড জ্বর, প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট, তার সাথে হার্টের সমস্যা দেখা দেয়।

কারণ

সোয়াইন ফ্লু হাঁচি-কাশির দ্বারা ছড়িয়ে পড়া ছাড়াও আক্রান্ত মানুষের স্পর্শ করা কোনো জিনিস ধরলেও অন্য সুস্থ মনুষ আক্রান্ত হতে পারে যদি তারা সেই হাত চোখে, নাকে বা মুখে দেয়।

লক্ষণবলী

জ্বর, কাশি, নাক দিয়ে জল পড়া, গলা ব্যথা, পায়ে ব্যথা, পিঠে ব্যথা, গাঁটে ব্যথা, বমি বা বমি বমি ভাব, পাতলা পায়খানা, খিদে না থাকা, শরীর ও মনে অবসন্নতা প্রভৃতি দেখা দেয়।

অন্যান্য ভাইরাস সংক্রমণের মতো সোয়াইন ফ্লু-ও এক ধরনের সংক্রমণজনিত রোগ। যা সাধারণ চিকিৎসায় সারিয়ে ফেলা যায়। কিন্তু আক্রান্ত কিছু রোগী বিপজ্জনক অবস্থায় চলে যায়। যেটাকে বলে এ.আর.ডি বা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম।

চিকিৎসা

অ্যালোপ্যাথি ছাড়াও হোমিওপ্যাথিতেও ভালোভাবে সোয়াইন ফ্লু-র চিকিৎসা করা যায়। অন্যান্য ভাইরাসঘটিত রোগের মতো সোয়াইন ফ্লু-র চিকিৎসাতেও হোমিওপ্যাথি বিশেষভাবে ফলপ্রদ হচ্ছে। হোমিওপ্যাথি ওষুধের সাহায্যে আক্রান্ত মানুষদের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার ফলে তারা সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। সোয়াইন ফ্লু আটকাতেও হোমিপ্যাথি যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে।

সাধারণ ব্যবহৃত হোমিওপ্যাথি ওষুধ

প্রত্যেক রোগীর নিজস্ব ব্যক্তিগত লক্ষণাবলীর ওপরেই তার হোমিওপ্যাথি ওষুধ নির্বাচিত হয়। কয়েকটি হোমিওপ্যাথি ওষুধসমূহ যথা—ইনফ্লুএনজিনাম, জেলসিমিয়াম, মার্ক সল, রাস টক্স, আর্সেনিক, ইউপাটোরিয়াম প্রভৃতি। এইসব ওষুধগুলো আবার রোগ প্রতিরোধ করতেও ব্যবহৃত হয়। তবে উপযুক্ত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শেই ওষুধ গ্রহণ করা উচিত।

প্রতিরোধের উপায়সমূহ

সোয়াইন ফ্লু প্রথম তিন দিন খুবই সংক্রামক অবস্থায় থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই সংক্রামক অবস্থা দশ দিন পর্যন্তও থাকতে পারে।

নিম্নলিখিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলি অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত সোয়াইন ফ্লু-র বিস্তারকে আটকানোর জন্য।

  • হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু পেপার দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নেওয়া উচিত এবং এটা ব্যবহার করার পর ফেলে দেওয়া দরকার।
  • কখনো হাতে বা রুমালে হাঁচা উচিত নয়। তা থেকে অন্যত্র সংক্রমণ হতে পারে। এর জন্য টিস্যু পেপারে বা জামার হাতা ব্যবহার কার ভালো।
  • হাঁচি-কাশি হচ্ছে এমন মানুষ থেকে কয়েখ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা উচিত।
  • চোখ, নাক বা মুখে অযথা হাত দেওয়া বন্থ করুন। কারণ এর ভাইরাস টেলিফোন, কম্পিউটার, টেবিল, চেয়ার, ট্রেন বা বাসের হাতল প্রভৃতি থেকেও চোখ, নাক বা মুখে যেতে পারে।
  • সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধোওয়া উচিত খাবার খাওয়ার আগে বা চোখ, নাক, মুখে হাত দেওয়ার আগে। বিশেষ করে হাঁচি-কাশির পরে।
  • যদি নিজে আক্রান্ত হন, তবে শুধু মাত্র বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়া উচিত। স্কুল, কলেজ, অফিস, কাজের জায়গায় বা রাস্তাঘাটে না যাওয়া দরকার, যাতে অন্যান্য সুস্থ মানুষ আবার আপনার দ্বারা আক্রান্ত না হয়।
  • আক্রান্ত মানুষের হাঁচি-কাশি থেকেই এটা মূলত ছড়িয়ে পড়ে। তাই আক্রান্ত মানুষ থেকে দূরে থাকা দরকার।
  • অকারণে আতঙ্কিত হয়ে ওঠা উচিত নয়। কারণ, উদ্বেগ রোগ প্রতিরোথ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। সোয়াইন ফ্লু-তে সবাই আক্রান্ত হয় না, আর আক্রান্ত হলেই রোগী মারা যায় না। যাদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কম তারাই এতে বেশি আক্রান্ত হয়।
  • বারে বারে অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত।
  • প্রচুর জল পান করা উচিত। নুন-চিনি ছাড়া লেবুর জল বার বার খাওয়া, ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া দরকার।
  • পর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম প্রভৃতি করা উচিত।
  • বেশি মিষ্টি না খাওয়াই ভালো।
  • সূর্যালোক কিছুক্ষণ থাকা ভালো।
  • যদি কোনো সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত জায়গায় যেতে হয় বা কোনও আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে যেতে হয়, তবে একটা সোয়াইন ফ্লু-র পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া অবশ্যই উচিত।

  • সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন