হাঁপানির তীব্রতায় কমে যেতে পারে প্রেসার
ডাঃ অভিজিৎ মজুমদার
2019-01-25 11:35:50
ফুসফুসের মধ্যে অবস্থিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুনালী যখন হঠাৎ কোনো উত্তেজনা জনিত কারণে সঙ্কুচিত হয়ে যায় তখন বাইরের বাতাসে ফুসফুসের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে বাধা পায়। ফলে রোগীর হঠাৎ দমবন্ধ করা পরিস্থিতির তৈরি হয়। একেই অ্যাজমা বা হাঁপানি বলে।
কারণ
এই হাঁপানি পিছনে মুখ্য কারণগুলো হল—
- ব্রঙ্কিয়াল স্মুথ মাসল-এর সংকোচন।
- মিউকাস মেমব্রেনের স্ফীতি।
- শ্বাসনালী সহ শ্বাসযন্ত্রে মাত্রাতিরিক্ত শ্লেষ্মা জমে থাকা।
ফুসফুসের মধ্যস্থ ক্ষুদ্র ক্ষদ্র বায়ুনালী সাধারণ দূষিত বাতাস বা বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে সঙ্কচিত হতে পারে, যা সাধারণ ঘটনা। যেমন সিগারেটের ধোঁয়া, সালফার ডাই অক্সাইড প্রভৃতি। প্রধানত ভেগাস নার্ভের সক্রিয়তার কারণেই এটি হয়।
তবে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম অথবা অ্যালার্জির ধাত কিংবা বিভিন্ন ইনফেকশন জনিত কারণেও ফুসফুসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুনালী সঙ্কচিত হয়ে শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে।
অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম
যাদের হাঁপানির প্রবণতা আছে তারা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করলে হঠাৎ হাঁপের টান উঠতে পারে।
অ্যালার্জি
যাদের বিভিন্ন কারণে অ্যালার্জি হবার প্রবণতা আছে তাদের হাঁপানি হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। সাধারণত যে পদার্থগুলোর জন্য অ্যালার্জি হয় তাকে অ্যালার্জেনস বলে। এটি এক ধরনের অ্যান্টিজেন। এখন এই ধরনের অ্যালার্জেন কোনো কারণে শ্বাসনালীর মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করলে অথবা খাদ্যের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করলে (যেমন কারোর দুধ খেলে, কারোর ডিম খেলে অ্যালার্জি হয়) অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি বিক্রিয়া হয় এবং কোষের ক্ষতি করে। যা কারোর কারোর ক্ষেত্রে হাঁপানি রূপে প্রকাশিত হয়। মনে রাখতে হবে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধও কিন্তু কারোর কারোর ক্ষেত্রে অ্যালার্জেন রূপে দেখা দেয়।
ইনফেকশন
বিভিন্ন ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণের ফলেও হাঁপানি হতে পারে। ব্যাক্টেরিয়ার প্রভাবে ব্রাঙ্কিয়াল মিউকাসের প্রদাহ হয়। যা হাঁপানির অন্যতম কারণ।
মানসিক কারণ
বিভিন্ন মানসিক রোগেও হঠাৎ হঠাৎ হাঁপের টান দেখা যায়। যারা অতিরিক্ত মানসিক চাপে ভোগেন তাদের ক্ষেত্রে হাঁপানির প্রভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়।
বংশগত কারণ
যে সব পরিবারে হাঁপানির ইতিহাস আছে তাদের এই রোগ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে সামান্য অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করলেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার আওতায় আসা উচিত যাতে তা সমূলে নির্মল হয়।
লক্ষণ
এই রোগের উল্লেখযোগ্য লক্ষণটি হল হঠাৎ দম বন্ধ হয়ে আসে। শ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে।
- মূলত শেষ রাতের দিকে বেশি হয় অথবা ভোরের দিকে।
- কোনো অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসা মাত্র হাঁপানির অ্যাটাক হয়।
- মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম, মানসিক উদ্বেগ, উত্তেজনাবশত অ্যাটাক হতে পারে।
- হাঁচি-সর্দি জনিত কারণেও হাঁপের টান উঠতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে এবং অনেকক্ষণ ধরে প্রস্রাব করার পর হাঁপের টান উঠতে পারে।
- বিরক্তিকর কাশি এবং বুকে সর্দি জমে থাকলে অনেক সময় হাঁপের টান হয়।
- অনেক সময় রোগীর ইতিহাস নেবার সময় দেখা যায় যে তার দাদ বা প্যাঁচরা হয়েছিল দীর্ঘদিন আগে অথবা ছোটবেলায়। যা বিভিন্ন মলম লাগিয়ে কমানো হয়েছে।
অথবা তার ব্রঙ্কাইটিসের ইতিহাস আছে কিংবা ব্রঙ্কো নিউমোনিয়ার ইতিহাস আছে। এই ধরনের রোগ তাৎক্ষণিক ভাবে বিভিন্ন ওষুধ খেয়ে কমানো হলে পরবর্তীতে তা হাঁপানির রূপ নিয়ে ফিরে আসতে পারে। ফলে ওই সব রোগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করলে তা সমূলে নির্মূল হয়। পরে হাঁপানি বা অন্য সমস্যা আসার সম্ভাবনা থাকে না। মনে রাখতে হবে দাদ জাতীয় রোগ কিন্তু এক ধরনের অ্যালার্জির বহিঃপ্রকাশ।
- হাঁপানি অ্যাটাকের সময় দেহের বর্ণ নীল হয়ে যেতে পারে।
- নাড়ির গতি দ্রুত হয়।
- রক্তের পরীক্ষায় এই ধরনের রোগীদের ইওসিনোফিলিয়া লক্ষ করা যায়।
- কখনও কখনও এই ধরনের রোগীদের চামড়ার বিভিন্ন যেমন আমবাত, দাদ, হাঁপানির সাথে পর্যায়ক্রমে হতে থাকে।
- ফুসফুরে সংকোচন-প্রসারণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস হতে পারে।
- এমনকী রাইট ভেন্ট্রিকুলার ফেলিওর বা হার্টের ক্ষতি হতে পারে। যার পরিণতি ভয়ানক।
চিকিৎসা
যদি রোগের একেবারে প্রথম অবস্থায় অথবা যে সব শিশু হাঁপানির শিকার বলে মনে হচ্ছে কিংবা যাদের বংশগতি হাঁপানির ইতিহাস আছে তারা একেবারে শুরুর দিকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার শরাণাপন্ন হলে তা সম্পূর্ণভাবে সারিয়ে দেওয়া যায়। যদিও হাঁপানি রোগীদের মাত্র পঁচিশ থেকে তিরিশ শতাংশ প্রাথমিক অবস্থায় হোমিওপ্যাথির আওতায় আসে। ফলে বয়স্ক এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগীদের হাঁপানি সম্পূর্ণ নির্মূল না হলেও হোমিওপ্যাথিতে অ্যাটাকের প্রভাব ও প্রবণতা অনেকাংশেই কমিয়ে দেওয়া যায়। এবং যেহেতু হোমিওপ্যাথি ওষুধের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই তাই দীর্ঘদিন হোমিওপ্যাথি ওষুধ ব্যবহার করলে তার কোনো কু-প্রভাব শরীরে পড়বে না। যা হাঁপানি রোগীদের কাছে এক মহাপ্রাপ্তি। সাধারণত যে ওষুধগুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো হল এন্টিম টার্ট, আর্সেনিকাম অ্যালব, ইপিকাক, ক্যালি বাইক্রোম, মসকাস, ন্যাট্রাম সালফ, নাক্স ভম, লাইকোপোডিয়াম, কার্বোভেজ, ব্লাটা অরিয়েন্ট, এপিস, ব্রায়োমাইন, গ্রিনডেলিয়া, লোবেলিয়া, ড্রোসেরা, স্পঞ্জিয়া, পোথোস ফোয়েটিডাস, ব্রায়োনিয়া প্রভৃতি। এছাড়াও আরও অনেক ওষুধ আছে তবে কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন