কোলেস্টেরলকে কেন এত ভয়?
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2019-01-25 12:28:18
কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বি জাতীয় পদার্থ। প্রধানত আমাদের লিভারে এই কোলেস্টেরলের তৈরি হয়। খাবারের সঙ্গে আমরা যে কোলেস্টেরল পাই তার পরিমাণ আনুপাতিক হারে খুব কম। রক্তে প্রবাহিত কোলেস্টেরলের বেশিরভাগটাই আসে লিভারের তৈরি হয়ে।
কোলেস্টের আমাদের শরীরের এক অত্যাবশ্যাক পদার্থ। শরীরে প্রত্যেকটি কোষের আবরণে এই কোলেস্টেরল থাকে। ব্রেন এবং নার্ভের কর্মক্ষমতা নির্ভর করে এই কোলেস্টেরলের ওপর। স্টেরয়েড জাতীয় হরমোনও এই কোলেস্টেরল থেকে তৈরি হয় যা কিনা বেঁচে থাকার জন্য একান্তই জরুরি।
তাহলে কোলেস্টেরল বাড়লে আমরা এত শষ্কিত হই কেন? তার কারণ এই অতিরিক্ত কোরেস্টেরল বিভিন্ন ধমনীর দেওয়ালে জমা হতে থাকে এবং ধমনীগুলো সরু হয়ে যায়। ফলে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যংঙ্গে রক্ত সরবরাহ কমতে থাকে। আর এর সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ে আমাদের হার্টে। হার্ট আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই কোলেস্টেরল জমে যাওয়া।
এই চিকিৎসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল জীবনযাপন প্রণালীর পরিবর্তন।
প্রথমত, শরীরের ওজন ঠিক রাখতে হবে।মানুষের উচ্চতা অনুযায়ী ওজনের একটি মাপকাঠি আছে যাকে বি.এম.আই হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এই বি.এম.আই স্বাভাবিকের মধ্যে রাখতে হবে।
দ্বিতীয়, ভুড়ি ও কোমরের পরিসর কমাতে হবে। ছেলেদের এবং মেয়েদের আলাদা মাপ আছে। সেই অনুযায়ী শরীরকে সুসামঞ্জস্য করতে হবে।
তৃতীয়ত, প্রতিদিন ৩০-৪- মিনিট ব্যায়াম তরতে হবে। জোরে হাঁটা, জগিং করা, স্কিপিং করা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা বা কোনো খেলাধুলো নিয়মিত করা অত্যন্ত কার্যকরী।
চতুর্থত, খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রিণ করতে হবে। বেশি খেতে হবে ফল, সবজি, স্যালাদ, টক দই. হালকা মাছ বা চিকেন। কম খেতে হবে ভাত, রুটি, আলু। আর ছাড়তে পারলে ভালো হয় চর্বিযুক্ত মাংস, ঘি-মাখন, ছাঁকা তেলে ভাজা খাবার, ক্রীমযুক্ত খাবার, মিষ্টি ইত্যাদি। ডিম খাওয়া চলতে পারে না-ভেজে। সাদা তেল, স্যাফোলা তেল বা অলিভ অয়েল ভালো। সরষের তেল চলতে পারে। তবে বাদাম তেল, বনস্পতি না খাওয়াই উচিত।
পঞ্চমত, মদ খাওয়া খুব পরিমিত হতে হবে। না খেলেই ভালো। তবে ধূমপান একেবারে বন্ধ।
এইসব করেও যদি রক্তে এল.ডি.এল কোলেস্টেরল না কমে তবে খেতে হবে স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ। এখন অবধি কোলেস্টরল কমানোর যত ওষুধ বাজারে এসেছে, তার মধ্যে স্ট্যাটিনই একমাত্র প্রমাণিত যাতে বড় ধরনের অসুখ এবং মুত্যুর হার অনেক কমানো যায়। স্ট্যাটিন ওষুধশুরু করার আগে ডাক্তারবাবুরা বেশি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেন যে ওষুধটির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে কি না। তারপরও মাঝে মাঝে রক্ত পরীক্ষা করে দেখা উচিত।
অন্যান্য যা ওষুধ ব্যবহৃত হয় এই চর্বি কমানোর জন্য তাদের কার্যকারিতা খুব একটা প্রমাণিত নয়। যাদের স্ট্যাটিন সহ্য হয় না বা স্ট্যাটিনে কাজ হয় না, তাদেরই জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। আর ভালো কোলেস্টেরল অর্থাৎ এইচ.ডি.এল কোলেস্টেরল বাড়ানোর ওষুধগুলোর ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে পাশ্বাপ্রতিক্রিয়ার কারণে। কাজেই ব্যায়াম এবং খাদ্যভ্যাসের কোনো বিকল্প যে নেই তা বোঝাই যাচ্ছে। তবে দীর্ঘদিন স্ট্যাটিন খেলে ডায়াবেটিস হবার সম্ভবনা একটু বাড়ে। কিন্তু সুফলের তুলনায় এই কুফল অকিঞ্চিৎকর। অনেক সময় বলা হয়ে থাকে, স্ট্যাটিন ক্যানসার বা পক্ষাঘাতের প্রবণতা বাড়ায়। কিন্তু এসব এখনও অপ্রামাণিত।
কাজেই কোলেস্টেরলের ব্যাপার শেষ কথা নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা, ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং প্রয়োজনমতো স্ট্যাটিন।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন