অতিরিক্ত রজঃস্রাবের বিপদ কম নয়
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2019-01-25 13:17:21
অতিরিক্ত রজঃস্রাবের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তাই আলোচনটা যতি বয়সভিত্তিক ভাবে ভাগ করে নেওয়া হয় তাহলে বিষয়টা অনেক পরিষ্কার হয়ে যাবে। বয়সভিত্তিক ভাগগুলো হল—
- পিউবার্টি গ্রুপ বা বয়ঃসন্ধিকাল
- ফার্টিলেজ গ্রুপ
- পেরিমেনোপজাল
- মেনোপজাল
বয়ঃসন্ধিকাল
বয়ঃসন্ধিকালে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ সময় যদি রক্তক্ষরণ বেশি হয় তাহলে সাপোর্টিভ চিকিৎসা করতে হবে। কেননা অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে পলিস্টিক ওভারি হতে পারে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে রুটিন চেক আপ করে দেখতে হয়। পাশাপাশি সনোগ্রাফি করেও দেখে নেওয়া যেতে পারে। এ সময় রোগীকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য ফোলিক অ্যাসিড দেওয়া যেতে পারে। যদি খুব বেশি রক্তক্ষরণ হয় তহলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে হরমোন দিতে হতে পারে। তবে রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে যে ভয় নেই। কারণ তখনও ওভারির সাথে হাইপোথ্যালামাসের বা পিটুইটারির সম্পর্কটা সম্পূর্ণভাবে তৈরি হয়নি, ফলে বেশি রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অনেক সময় পিরিয়ড চলতে হঠাৎ করে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আবার যখন হঠাৎ করে রক্তক্ষরণ শুরু হয় সেটা খুব বেশি হতে পারে। ডাক্তারবাবুরা হরমোন দিতে পছন্দ করেন না, তবে প্রয়োজন মনে করলে অল্প কিছুদিনের জন্য প্রজেস্টেরন দেওয়া হয়।
ফার্টিলেজ গ্রুপ (প্রজননক্ষম শ্রেণী)
ফার্টিলেজ গ্রুপের একটি স্বাভাবিক সমস্যা হল অনিয়মিত কনট্রাসেপটিভ পিল খাওয়া। অর্থাৎ প্রতিদিন নিয়ম করে পিল না খাওয়া। এছাড়া সামাজিক অনুষ্ঠান বা বিবাহ, এরকম কিছু থাকলে বাজার থেকে পিল কিনে খাওয়া অথবা কোর্সটা ঠিকমতো না মেনে চলার কারণে বেশি রক্তক্ষরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ থাইরয়েড ও কোয়াগুলেশন ডিজিজ অর্থাৎ প্লাটিলেট কমে যাওয়া বা রক্ত জমাট বাঁধার নানান সমস্যা ডেকে আনে। প্রেগনেন্সি ডিসঅর্ডারের জন্য রক্তক্ষরণ হতে পারে। গর্ভসঞ্চার হয়েছে কিন্তু খুব বেশি রক্তক্ষরণ হচ্ছে এক্ষেত্রে সাধারণত মিসক্যারেজ হয়ে যায়।
ক্লিনিক্যালি দেখতে হবে আর কী কী কারণে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
পলিপস, ফাইব্রয়েডস, ডি.ইউ.বি (DUB), ইনফেকশন কিংবা হরমোনের মাত্রার তারতম্যের কারণে খুব বেশি রক্তক্ষরণ বা রজঃস্রাব হতে পারে। এছাড়া অ্যাডিনোমায়োসিস থেকেও হতে পারে। ইনফেকশন হলে ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করতে হবে, হরমোনের মাত্রা তারতম্যের জন্য হরমোন চিকিৎসা লাগতে পারে। ফাইব্রয়েড বা টিউমার হলে সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা করতে হবে। পলিপের কারণে বেশি রক্তক্ষরণ হলে সার্জারি বা অপারেশন প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
অনেক সময় অধিক রজঃস্রাব থাইরয়েড ও ক্যানসারের উপসর্গ হতেই পারে। তাই অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ অবহেলা করা উচিত নয়।
এন্ডোমেট্রিওসিস হাইপারপ্লেসিয়া থেকে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হতে পারে।
কোনো কারণই পাওয়া যাচ্ছে না, অথচ বেশি মাত্রায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে, সেক্ষেত্রে ডি.ইউ.বি হতে পারে।
এই সমস্থ ক্ষেত্রে হরমোন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে GNRH Gnalouge
দেওয়া হয় পিরিয়ড বন্ধ রাখতে। রোগী অপারেশনে রাজি না হলে ইঞ্জেকশন দিয়ে ফাইব্রয়েডের চিকিৎসা করা হয়। এতে চুপসে ছোট হয়ে স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু কোনো রোগীর যদি টিউমার থাকে এবং রক্তক্ষরণও হতে থাকে সেখানে মায়োমেক্টমি করে অপারেশন করা হয়।
অপারেশন ল্যাপারোস্কোপি করেও হতে পারে, কিংবা পেট কেটেও করা যেতে পারে। বয়স যাদের বেশি হয়ে গেছে, বাচ্চা হয়ে গেছে তাদের ক্ষেত্রে ইউটেরাস ও ওভারি বাদ দেওয়া হয়।
পেরিমেনোপজাল গ্রুপ
এদের ক্ষেত্রে এন্ডোমেট্রিয়াল বায়োপসি করে দেখে নেওয়া হয়। অপারশেনের যদি প্রয়োজন না হয় তাহলে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যাতে মেনোপজ হয়ে রজঃস্রাব বন্ধ হয়ে যায় ধীরে ধীরে। যেমন MIRENA। অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ যদি প্রজেস্টেরন বা ওষুধ দিয়েও বন্ধ না হয় তখন হিস্টেরেকটমি করা হয়। কোনও পোস্ট মেনোপজাল মহিলার যদি বেশি রক্তক্ষরণ হয় তাহলে তিনটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে---সারভাইক্যাল ক্যানসার, এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার ও কিংবা সারকোমা।
মেনোপজাল গ্রুপ
মেনোপজ হয়ে যাবার পরে হঠাৎ রক্তস্রাব বা ব্লিডিং হলে দেরি না করে অবশ্যই একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। মেনোপজ হয়ে গেছে তার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ কিন্তু জরায়ু ক্যানসারের কারণ হতে পারে। মেনোপজের পর রক্তক্ষরণ থাকলে অবশ্যই সাবধানহতে হবে।
বেশি রক্তক্ষরণ বা অতিরিক্ত রজঃস্রাবের চিকিৎসা করা জরুরি। এই ধরনের সমস্যা হলেই কোনো অভিজ্ঞ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন