অত্যধিক মোবাইল ফোনের ব্যবহারে হ্রাস পায় শুক্রাণুর সংখ্যা
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2019-01-25 14:09:41
তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় মোবাইল ফোন এনেছে বিপ্লব। কার্যত এটা বিশ্বকে হাতের কাছে এনে দিয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল ফোন এখন এক অপরিহার্য সামগ্রীতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু অন্য সব আবিষ্কারের মতো এটার ও ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক রয়েছে। তাই মোবাইল ফোনের অত্যধিক ব্যবহার আমাদের স্বাস্থের ওপর কতখানি প্রভাব ফেলতে পারে সেটা জানা দরকার। অনেকেই জানেন না যে, মোবাইল ফোন যখন ব্যবহৃদ হচ্ছে না, অর্থাৎ যখন ফোসটি স্ট্যান্ড-বাই মোডে আছে, তখনও বেতার তরঙ্গ প্রবাহ অব্যাহত থাকে।
যদিও মোবাইল ফোনের ব্যবহারে ব্রেন ক্যানসার হ তে পারে কি না তা নিয়ে বির্তক চলছে। তবু অতি সম্প্রতি এমন কিছু কিছু অসুখ ডাক্তারবাবুদের নজরে আসছে যা অদূর ভবিষ্যতে যথেষ্ট কারণ হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
মেডিকেল জার্নাল ল্যান্সেট-এর একটি রিপোর্টে প্রকাশ, স্পেনের এক ৩৪ বছর বয়সী মহিলা ডাক্তারবাবুর দ্বারস্থ হয়েছিলেন দু’হাতের কজ্বিতে ব্যথার কারণে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, ওই মহিলা ঘটনা আগের দিন একটানা ৬ ঘন্টা ধরে তার আত্ময়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে ম্যাসেজ করেছিলেন (হোয়াটস অ্যাপ সার্ভিসের মাধ্যমে)। এই অসুখটিকে ডাক্তারবাবুরা নাম দিয়েছে ‘হোয়াটস অ্যাপাইটিস’।
- ব্ল্যাকবেরি থাম্ব : বুড়ো আঙুলের টেন্ডনে ইনফ্ল্যামেশনের ফলে আঙুলে ব্যথা হয়। এটা প্রতিরোধের উপায় হল ব্ল্যাকবেরি ফোন টেক্সট করার সময় বুড়ো আঙুলের বদলে মাঝে মাঝে অন্য আঙুলের ব্যবহার।
- স্টিফ নেক সিনড্রোম : একটানা ঘাড় বেঁকিয়ে মোবাইল বক বকম করলে এমনটি হতে পারে। মাঝে মাঝে ফোনটি এক হাত থেকে অন্য হাতে পাল্টালে এ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- সেলফোন এলবো : কনুই ভাঁজ করা অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ব্যবহার করলে আপনার নার্ভে টান পড়ে, তখন কনুইয়ে ব্যথা হয়। হ্যান্ডস-ফ্রি সেট ব্যবহার করলে সুফল মেলে।
- নোমোফোবিয়া : শতকরা ৫০ জন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর মধ্যে এমনটি হতে পারে। এটি এক ধরনের মোবাইল আসক্তি। এটির অর্থ হল ‘নো মোবাইল ফোবিয়া’ অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তিটি সবসময় ভয় পায় এই বুঝি তার মোবাইলটি হারিয়ে গেল।
- রিংজাইটি : এটি এক ধরনের অ্যাংজাইট অর্থাৎ মানসিক অস্থিরতা। আক্রান্ত ব্যক্তিটির ছোটখাটো যেকোনো শব্দে মনে হয় যে তার ফোন ভাইব্রেট করছে। যদি ৩০ মিনিটের মধ্যে কোনো ফোন কল না আসে, তবে ব্যক্তিটি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এটি অত্যধিক মোবাইল আসক্তির কুফল। শতকরা ৩০ জন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর মধ্যে এটি দেখা যায়।
- ফ্যান্টম রিংগী : শতকরা ২০-৩০ জন মোবাইল ব্যবহারকারীর মধ্যে এটি দেখা যায়। আক্রন্তব্যক্তির প্রায়ই মনে হয় তার ফোনটা বুঝি বাজছে, কিন্তু ভালো করে পরীক্ষা করে দেখা গেল বাস্তবে তা নয়। অর্থাৎ ভুতুড়ে ব্যাপার!
- সোসাল সাইট অ্যাডিকশন : স্মার্ট ফোনের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ধীরে ধীরে ফেসবুক, ট্যুইটার ইত্যাদি সোসাল সাইচে আসক্ত হয়ে পড়ছি এবং তার ফলশ্রুতিতে অনিদ্রা ও অন্যান্য ঘুমের অসুখ দেখা দিতে পারে।
- পারিবারিক অশান্তি : বাবা-মায়ের সঙ্গে শিশুর দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ হল মোবাইল। মোবাইল ফোনের অত্যধিক ব্যবহারের ফলে শিশুটি দেরীতে ঘুম থেকে ওঠে এবং সম্পূর্ণ অপ্রস্ত্তুত অর্থাৎ হোমওয়ার্ক ঠিকঠাক প্রস্তুত না করেই স্কুলে ছোটে।
মোবাইল ফোনের আর একটি ক্ষতিকর দিক হলো মানসিক চাপ অর্থাৎ স্ট্রেস। মোবাইল ফোনের দৌলতে আপনার সঙ্গে 24*7 যোগাযোগ করার সুযোগ থাকছে। কাজেই নির্বিঘ্নে একটু আরাম করার সুযোগ অনেকেরই মেলে না।
সর্বদা মোবাইল ফোনের সঙ্গে থাকার কারণে মনোসংযোগে ঘাটতি সৃষ্টি হয়। বিশ্বের অনেক দেশে গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল কথা বলা নিষিদ্ধ করার এটা অন্যতম কারণ। গাড়ি ড্রাইভ করার সময় ফোনে কথা বললে শুধু নিজের জীবন নয়, অন্যদের জীবনও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট মোতাবেক, মোবাইল ব্যবহারের ফলে ট্রাফিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি।
- শ্রবণশক্তি হ্রাস : কানের ভিতেরে পর্দা খুবই সংবেদনশীল। তাই দীঘূক্ষণ ধরে ফোনে কথা বললে, মোবাইল থেকে যে ইলেকট্রো ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড কর্ণকুহরে কুপ্রভাব ফেলে, তার ফলে আংশিক বধিরতা, এমনকী কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ বধিরতারও কারণ হতে পারে।
- বন্ধ্যাত্ব : পুরুষরা সাবধান। যদিও বিষয়টি বিতর্কিত। কিন্তু কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে মোবাইল ফোন থেকে নির্গত রেডিয়েশনের প্রভাবে বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যায়।
- এছাড়া মোবাইল ব্যবহৃত ক্রোমিয়াম, নিকেল এবং কোবাল্ট থেকে কারো কারো অ্যালার্জি হতে দেখা যায়। একে বলে ‘সেল ফোন ডার্মাটাইটিস’।
- ইনফেকশন : মোবাইল ফোন শুধুমাত্র দরকারি ডাটা স্টোর করে না, এটি অনেক সময় লক্ষ জীবাণুও বয়ে বেড়ায়। যমন ই.কোলাই (যা থেকে বমি ও ডায়রিয়া হতে পারে) এবং স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস (বিভিন্ন চর্মরোগ সৃষ্টি করতে পারে)।
প্রতিরোধের উপায়
- ইলেকট্রনিক কারফিউ : অর্থাৎ কিনা ঘুমোতে যাওয়ার ৩০ মিনিট আগে মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে কোনো ইলেকট্রনিক উপকরণ ব্যবহার না করা। অনেকেরই ঘুমোতে যাওয়ার আগে সেলফোন নিয়ে খুটখাট করার বদঅভ্যাস আছে। এটি আগে পরিত্যাগ করতে হবে।
- ফেসবুক হলিডে : ৩ মাস অন্তর অন্ততপক্ষে ৭ দিনের জন্য ছুটি নিন।
- সোসাল মিডিয়া ফাস্ট : সপ্তাহে কমপক্ষে একটি সম্পূর্ণ দিন উপবাস করুন। অর্থাৎ সোসাল মিডিয়া থেকে ২৫ ঘন্টা বিশ্রাম নিন।
- মোবাইল ফোন তখনই ব্যবহার করুন যখন আপনি মোবাইল। অর্থাৎ মোবাইল ফোনের ব্যবহার পরিমিত ব্যবহার অভ্যস্ত হন।
- সারাদিনে দু’ঘন্টার বেশি সময় মোবাইল কথা বলবেন না।
- সারাদিনে একবারের বেশি মোবাইল ব্যাটারি রিচার্জ করবেন না।
- মনে রাখবেন, আপানার মোবাইল অজস্র অদৃশ্য জীবাণু লুকিয়ে আছে। তাই তাকে প্রতিদিন জীবাণুমুক্ত করতে ভুলবেন না।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন