×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

ট্যাবলেট ভেঙে খাওয়া কখনোই উচিত নয়

হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2019-01-25 14:19:18

কতকগুলো সমসা নিয়ে ডাক্তারবাবুর কাছে গেলেন এক রোগী। সমস্যাগুলো শুনে ডাক্তারবাবু তাকে কয়েকটি ওষুধ লিখে দিলেন। রোগী ওষুধের দোকানে গিয়ে দেখলেন তাকে যে ওষুধগুলো লেখা হয়েছে তাতে বেশ কয়েকটি ট্যাবলেট আছে। এর মধ্যে একটা ওষুধ বড় সাইজের। এখন প্রশ্ন, রোগীর যদি গিলতে সমস্যা হয় তাহলে কী করবেন? দোকানদারের পরামর্শ, কোনো সমস্যা নয়। বড় ট্যাবলেটগোলু ভেঙে ছোট করে গিলে নিলেই হল। একান্ত সমস্যা হলে গুঁড়ো কেরে নিলেই হবে। তাহলে তো আর কোনো সমস্যা রইল না। কিন্তু না, সমস্যাটা ঠিক এখানেই। যদি ভেঙে টুকরো টুকরো করে ট্যাবলেট খেলে বা গুঁড়ো করে খেলে কাজ মিটে যেত তাহলে ট্যাবলেটটা তৈরি করার পিছনে এত গবেষণার কোনো প্রয়োজনই তো ছিল না। ক্রুড ড্রাগ সাবস্ট্যান্সকে নিয়ে গুঁড়ো অবস্থায় খেয়ে নিলেই তো হত। দরকারই বা কি ছিল এত ডোজ নির্ণঢ করার। শুধু তাই নয়, এক একটি ট্যাবলেট তৈরির জন্য নির্দিষ্ট ভাবে এবং আলাদা ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। প্রত্যেকটি ট্যাবলেট আলাদা আলাদা কার্যপ্রণালীল দ্বার শরীরে কাজ করে। ট্যাবলেট ভেঙে খেলে সেই কার্যপ্রণালীতেই ব্যাঘাত ঘটে। প্রতিটি ট্যাবলেট তৈরির পিছনে একটা বড় গবেষক দলের ভূমিকা কাজ করে। মেডিকেল সায়েন্স এবং ফার্মাসিউট্যিাল সায়েন্স একসাথে মিলে তৈরি হয়েছে একটি শাখা। এরাই ট্যাবলেটের কার্যপ্রণালী ঠিক করার পিছনে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে। ট্যাবলেটের অনেকগুলো ভাগ আছে। যেমন চিবিয়ে খাবার, জিভের নীচে রাখার, বাচ্চাদের জলে গুলে খাবার।

কীভাবে তৈরি হয় ট্যাবলেট

একটি ট্যাবলেট তৈরি করতে গেলে তাতে ক্রুড ড্রাগ সাবস্ট্যান্স-এর সাথে আরও অনেক কিছু মেশানো হয়ে থাকে।

ফিলার :সাধারণত ব্যবহার করা হয় ট্যাবলেটকে সঠিক আকৃতি দেবার জন্য। এক্ষেত্রে ল্যাকটোস, স্যানিটল, স্টার্চ, সরবিটল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বাইন্ডার: ট্যাবলেটের আকার-আকৃতিকে সঠিক অবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য ব্যবহৃত হয়। পলিভিনাইল পাইরলিডন এবং সোডিয়াম কার্বক্সিমিথাইল সেলুলোস এই দু’টোই সাধারণত ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ডিসইন্টিগ্রান্ট: সব থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান ট্যাবলেট তৈরির জন্য। এটারকাজ হল ট্যাবলেটটা শরীরে গিয়ে যেখানে ভাঙতে পারে। এবং কাজ করতে পারে। ডিসইন্টিগ্রান্টস হিসাবে সাধারণত যা ব্যবহার করা হয় তা হল সোডিয়াম স্টার্চ গ্লাইকোলেট, কোরোস্ড-লিষ্কড কার্বক্সি মিথাইল সেলুলোজ ইত্যাদি।

লুব্রিক্যান্ট:  লুব্রিক্যান্ট সাধারণত ব্যবহার হয় ট্যাবলেট পাঞ্চিং মেসিনে সহজে কমপ্রেস করার জন্য। এক্ষেত্রে স্টার্চ অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম স্টিয়ারেট, সোডিয়াম লরিল সালফেট, সোডিয়াম বেনজয়েট ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ড্রাগ সাবস্ট্যান্সেন সাথে সবকিছু মিশিয়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে যেমন ড্রাই গ্রানুলেশন বা ওয়েট গ্রানুলেশন-এর মাধ্যমে গ্রানিউলস তৈরি করা হয়। তারপর তা কমপ্রেশন পদ্ধতির দ্বারা নির্দিষ্ট আকারের ট্যাবলেটে রূপান্তরিত হয়।

কিন্তু ট্যাবলেট তৈরি এখানেই শেষ নয়। এর পরই ট্যাবলেট-এর ওপর একটি নির্দিষ্ট আস্তরণ বা কোটিং দেবার করার কাজ। সেখানেই লুকিয়ে আছে আমাদের প্রশ্নের উত্তর, কেন ট্যাবলেট ভেঙে খাব না।

ট্যাবলেট কোটিং বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন ফিল্ম কোটিং, সুগার কোটিং, এন্টেরিক কোটিং। বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে কিছু পলিমার বা অন্য উপাদান দিয়ে এই আস্তরণ তৈরির কাজ করা হয়ে থাকে।

  • কেন করা হয় এই কোটিং বা আস্তরণ:
  • যাতে সহজেই গলে যায়।
  • বিভিন্ন ড্রাগ সাবস্ট্যান্স-এর স্বাদ বিভিন্ন। খুব তেঁতো বা বিস্বাদ, যেটা ঢেকে রাখার জন্যও  এই কোটিং করা হয়।
  • ড্রাগ সাবস্ট্যান্স যাতে সরাসরি আলো-বাতাসের সংস্পর্শে না আসে সে জন্যও করা হয়।
  • ট্যাবলেটকে বিভিন্ন রকম রং দিয়ে বানানো হয় যাতে সহজে চেনা যায় যা রোগীর সেফটির জন্যও খুব জরুরি।
  • সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কারণ দু’টো হল, গ্যাসট্রিক অ্যাসিডিটি থেকে ড্রাগ সাবস্ট্যান্সকে রক্ষা করা এবং সাসটেইন্ড রিলিজ ড্রাগকে শরীরে দীর্ঘক্ষণ রাখার ব্যবস্থা করা।
  • কেন ট্যাবলেট ভেঙে খাবেন না:

আমাদের পাক পাকস্থিলতি হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড বর্তমান। যার ফলে পাকস্থলিতে অ্যাসিডিক এনভায়রনমেন্ট থাকে। কিছু ওষুধ আছে যা এই পাকস্থিলতি অ্যাসিডিক এনভায়রনমেন্ট-এ এসে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে এবং অ্যাসিডিক পরিবেশ এই সমস্ত ওষুধ কোনোভাবেই অ্যাবসর্ভ বা শোষিত হবে না। সেজন্য বিশেষ ভাবে কোটিং করা হয়ে থাকে। যে কোটিং এই ওষুধকে পাকস্থলির এই অ্যাসিডিক পরিবেশে রক্ষা করবে এবং সযত্নে তাকে ইনটেস্টাইনে পাঠিয়ে দেয় যাতে সে তার কাজ করতে পারে। এবার কেউ যদি কেউ ট্যাবলেট ভেঙে খায় তাহলে ট্যাবলেটের মাঝখানের অংশ ফাকা হয়ে যাবে। যার ফলে সেই ট্যাবলেট খেলে ড্রাগ সাবস্ট্যান্স সহজেই পাকস্থলিতে অ্যাসিডের সংস্পর্শে এসে তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। ওষধ খেয়ে তার কোনো কাজই হবে না।

  • এবার আসি দ্বিতীয় কারণটাতে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ট্যাবলেটে লক্ষ করে দেখবেন ট্যাবলেটের নামের পাশে এস.আর বা ই.আর কথাটি লেখা থাকে। যার অর্থ হল সাসটেইন রিলিজ বা এক্সটেন্ডেড রিলিজ। কিছু কিছু ওষুধ আছে যেগুলো হঠাৎ করে রিলিজ হয়ে পুরোটা একসাথে রক্তে মিশে যায়, তাতে ব্যাড এফেক্ট হতে পারে। আবার কিছু ওষুধ আছে যা এমন ভাবে কোটিং করা থাকে যাতে করে দীর্ঘসময় ধরে অল্প অল্প করে রক্তের সাথে মিশবে এবং কার্যকারিতাও দীর্ঘক্ষণ পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রেও একইভাবে যদি কেউ ট্যাবলেটকে ভেঙে খায় তাহলে যে উদ্দেশ্যে ওষুধ দেওয়া হয় তা অনেকটাই বর্থ হয়ে যায়। যেমন ডায়াবেটিসের জন্য দেওয়া বহুল ব্যবহৃত মেটফরমিন ট্যাবলেট সাসটেইনড রিলিজ বা এক্সটেন্ডেড রিলিজ আকারে পাওয়া যায়। কিন্তু অনেকেই তা ভেঙে খান। সিটা ঠিক নয়।

কখনোই ট্যাবলেট ভেঙে খাবেন না, সেটা ঠিক নয়। ট্যাবলেট খেতে অসুবিধে হলে সেটা আপনার ডাক্তারবাবুকেই জানান।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন