×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

ম্যানার্সের দফারফা এখন শিক্ষকরাই ভয় করেন ছাত্রদের

হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2019-01-25 14:31:09

অস্তিত্বের প্রয়োজনেই মানুষ নিয়মের অধীন। সামাজিক জীবনের প্রয়োজনেই সমাজ-অনুশাসন। অনন্তকাল কাল একই তাল-লয়ে নিয়মের পথ ধরে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত। এর সামান্যতম ব্যতিক্রম ঘটে যায় কতই না মহাপ্রলয়। সদাচার, সদালাপ সহ নিয়মানুবর্তিতার অভাবে আমাদের জীবন হয় হতাশাগ্রস্ত। হাহাকার, ব্যর্থতা, গ্লানিতে সে জীবন পীড়িত, কুণ্ঠিত। ব্যক্তিজীবন ও সমাজ জীবনে পড়ে এর ছায়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যত মানুষ আহত হয়। বোধ হয় তার থেকে বেশি লোক আঘাত পায় অশোভন ব্যবহারে। সকালবেলায় প্রথম দেখায় ক্ষণে মৃদু হাসির সঙ্গে ‘সুপ্রভাত’ শব্দটি কাউকে উপহার দিলে আমরা কেউই গরিব হয়ে যাব না। ইংরেজ শাসনকালেই ইউরোপীয় সভ্যতার মাপ নির্ধারক ম্যানার্স বা এটিকেটের প্রবেশ আমাদের দেশে। সামাজিক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আবেগ, যেমন শুভরাত্রি, শুভসন্ধ্যা, কুশল জিজ্ঞাসা ছাড়াও সশব্দে হাঁচি বা কাশির পরে দুঃখিত (সরি) শব্দটি উচ্চরণে অনেক গভীর দুঃখের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কবচ আমাদের হাতের মুঠোয় এল। তখন অনুভব হল সত্যিই হয়তো কটু বাক্য প্রয়োগ এবং অন্যের বিশ্বাসের ওপরে হস্তক্ষেপে সৌজন্যবোধ বিঘ্নিত হয়। ব্যবহারের সামান্যি এদিক ওদিক সম্পর্কের টানাপোড়েন কম করে। ইংরেজ কালচারে ভদ্রতার আতিশয্য খানিক বেশিই ছিল বোধ হয়। যেমন বাড়ির মালিক নিজের বাড়িতে প্রবেশ করার সময় বাড়িতে থাকা রাঁধুনি অথবা আয়াকে জিজ্ঞাস করেন‘ ঘরে ঢুকতে পারি কি?’ আবার কারোর স্ত্রী খাবার টেবিলে নুনের পাত্র এগিয়ে দিলে স্বামী বলে ‘ধন্যবাদ’। তবে শুধু বিদেশ নয়, এদেশেও এ ধরনের আতিশয্যের আভাস মেলে। আগে আমাদের দেশেও অতিথি হিসাবে কেউ এল তাকে সম্বোধন করে বলা হত ‘ঘর-বাড়ি নিজের মনে করে ব্যবহার করুন।’ বিদেশী ভাবধারায় টেবিল ম্যানার্স আমাদের জীবনযাত্রায় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। বর্তমানে পাত পেতে খাওয়ার প্রচলন ‍খুব কম বাড়িতেই আছে, কিন্তু সমস্যা যেটা সেটা হল খাওয়ার জন্য আমরা শুধু টেবিল-চেয়ারেই ব্যবহার করছি, ম্যানার্স বাদ দিয়ে। ‘আপনার ব্যবহারই আপনার পরিচয়’ এই আপ্তবাক্যের মানানসই প্রয়োগে অনেকেই অভ্যস্ত ছিলেন এক সময়। একটা সময়ে গুরুজনদের প্রতি, শিক্ষক-শিকক্ষিকাদের প্রতি মান্যতা ও বিনয় প্রদর্শন স্বাভাবিক ছিল। সামান্য মারধোর ও কানমলা খেলে শিক্ষকদের ওপর চড়াও হবার রেওয়াজ তখনও শুরু হয়নি। সামাজিক অবস্থানে প্রতিবেশীদের সুখ-দুঃখে সমব্যথীর ভূমিকা নিতেন। কুশল-বিনিময় প্রাত্যহিক চিন্তা আসত না। নমস্কার-প্রতিনমস্কার অথবা বড় হলে পায়ে হাত দিয়ে প্রণামের প্রথাও গুরুত্ব পেত। বয়স্ক দাদু-দিদার প্রতি সম্মান যেমন ছিল তেমনি ছিল প্রশ্রয়ের জায়গা। সেই জায়গা থেকেই ছোট বাচ্চারা স্বাদ পেত অনেক আলোক বর্ষ দূরের এক কল্প পৃথিবীর, যার সাথে বিরোধ ছিল বন্ধুত্বে অসুবিধে হত না। আজকাল প্রায়শই ইগোর লড়াই হয়ে যায় খেলার মাঠে। ফলে আচার, আবেগ যায় বদলে। খেলা উপভোগ করার অবস্থা নষ্ট হয়। লড়াইয়ের মনোভাব ত্যাগ করে প্রতিপক্ষকে আমারই মতো একজন মানুষ ভাবুন, হার স্বীকার করার মানসিকতা নিয়ে খেলতে যান, দেখবেন পুরো কন্ট্রোলই আপনার।

দিন যাপনের সাথে সাথে প্রাণ ধারণের গ্লানিও বাড়তে থাকল। শুরু হল অরাজকতার উম্মদনা। সমাজ ব্যবস্থার বিবর্তিত রূপে আমরা পেলাম সদাচারের পরিবর্তে অসদাচারের শিক্ষা। এখন শিক্ষকরা ছাত্রদের ভয় করেন, পরীক্ষার সময় নকল করায় বাধা দিলে প্রাণহানির আশষ্কা থাকে। বাবা-মা সন্তানকে শাসন করতে সাহস পায় না কারণ বাচ্চা মানসিক রোগের শিকার হতে পারে অথবা আত্মহত্যার মতো ভয়ষ্কন পরিণতির দিতে এগিয়ে যেতে পারে। বাব-মাকে গালিগালাজ অথবা বন্ধু নামক সমাজবিরোধীদের দিয়ে থ্রেট করাতেও দ্বিধাগ্রস্ত হয় না। স্কুলপড়ুয়া বা দলছুট হয়ে সিগারেট বা মাদকের নেশায় মাতলে কারোর অধিকার নেই তাদের শাসন করার। ‘মাস্টারমশাই আপনি কিন্তু কিছু দেখেননি’ বক্তব্যের প্রতিধ্বনি সর্বত্র। অসহায় সমাজ। শুধু ভাবি ‘ এ কোন সকাল, রাতের চেয়েও অন্ধকার’। কল-কারখানা, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, খেলার মাঠ, ঘরে-বাইরে-সর্বত্র নিয়ম ভাঙার নেশা। সেই নেশায় সামান্য কারণেই ট্রাম-বাস পোড়ে। দিকে দিকে জ্বলে ওঠে হিংসার আগুন। নতুন নতুন বর্বরতায় আমরা আশ্চর্য হেই। উৎসবের মত্ততা, মাইকের চড়া সুর, মেয়েদের প্রতি কটূক্তি থেকে শুরু করে যত্রতত্র থুথু ফেলা অথবা পানের পিক ফেলার প্রবল বদ অভ্যাস আর বদ আচরণে আমরা আহত হই।

প্রতিদিন নিয়ম ভাঙার নেশায় শুধু ছোট নয় বড়রাও পিছিয়ে নেই। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত আচরণকে, আবেগকে অনিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার করে শুধুমাত্র বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা করে আত্মশ্লাঘা অনুভব করি। পাড়ার দোকানে গলা ফাটিয়ে কুৎসিত ভাষায় চিৎকার করি অথবা অন্যের মুখের ওপর সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে বিজয়ীর ভাব করি। অবজ্ঞা দেখানোর প্রয়াসে পা দাপিয়ে চলি অথবা পরিষ্কার রাস্তাকে বাথরুম ভাবতেও কুষ্ঠিত হই না। রাগে অন্ধ হয়ে ছাত্র-ছাত্রীকে প্রহার করি, মিডিয়ায় বসে অসংযত ভাষা প্রয়োগ করে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করি। এতে কিন্তু সভ্যতার সংকট উপস্থিত হয় না। ব্যক্তিগত আচরণে দয়ার বোধ, সহমর্মিতা, ধৈর্য সবই উপেক্ষিত। সরুচি বা সংযম শেখাবার বা মানার দায় কারোর যেন নেই।

অথচ আমাদের দেশে যখন প্রত্যেকের কর্তব্য এক সময় ধর্ম হিসাবে নির্দিষ্ট ছিল, তখন ছোট-বড় আবাল বৃদ্ধ বনিতা যথাসম্ভব নিজের স্বার্থ, প্রবৃত্তি ও পশু-প্রবৃত্তিকে সংযোত করে পরের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার মনোভাব নিত। ফলে মঙ্গলাচরণ স্বাভাবিক ভাবে জায়গা নিত। কিন্তু কাল ও ভাব দুই-ই আপন চালে পরিবর্তনশীল। তাই রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে পারি ‘ভ্রাতৃভাব’ এখন ভাইকে ছেড়ে বাইরে বাইরে ফিরছে। দয়া এখন দীনকে ছেড়ে সংবাদপতত্রে জায়গা করেছে, লোক হিতৈষণা এখন লোককে ছেড়ে রাজসভায় খেতাবের জন্য লোলুপ। বিলাতের বিলাসিতা প্রবেশ করেছে অথচ বিলাতের ঐশ্বর্য নেই। যাদের প্ররোচনায় আমাদের সন্তানসম ছাত্রসমাজ ‘চলছে না চলবে না’ ধ্বনিতে মুখর হচ্ছে অথব ক্লাস বয়কট করছে, তাদের সেই অন্তরালবর্তী নেতারা কোন আচরণবিধিকে মান্যতা দিচ্ছেন বলবেন কি?

তবু আশা, বোধ মরে যায়নি, অবহেলায় চাপা পড়ে আছে। রুচি বিকার থেকে সমূহ মুক্তির পথ খুঁজে বার করতে হবে আমাদের। সুনীতি আর সদাচার শিক্ষাই কর্তব্য, সমাজ হিতকর বিধিসমূহই ধর্ম, সকলের সর্বাঙ্গীন কল্যানের লক্ষে ছাত্র, নেতা, প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব তথা সাধারণ মানুষ সকলেই বিদ্যা, বিনয়, বুদ্ধি, রুচি ও নীতির চর্চা শুরু করুন। সর্বপ্রকার জনহিতকর কাজের জন্য সংযম প্রয়োজন। এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে ঘরে বাইরে কেউই দুষ্কর্মে প্রবৃত্ত আর মচ্চরিত্রতার উদ্দীপক হবে প্রশংসা, দুষ্কর্মের শ্রেষ্ঠ প্রতিষেধক হবে জনসাধরণের ধিক্কার।

আচার-ব্যবহার চারাগাছের মতো, তাকে উপরে আনলে শুকিয়ে যায়, আর না হলে কৃত্রিম উপায়ে রক্ষা করার চেষ্টা করলে অসফল হয়। প্রয়োজনের নিয়ম আর অনুকরণের নিয়মে এক হয় না। উচ্ছৃঙ্খলা মানসিকতা বা রুচি বিকৃতি চিরস্থায়ী হতে পারে না। রাতের অন্ধকারের পরে সকাল আসবেই। নতুন আশা ও অদর্শে আবার অনুপ্রাণিত হবে মানুষ। ধরা দেবে নিয়মের শাসনে। নিয়মানুবর্তিতাই তার অগ্রগতি-উন্নতির সোপান। সামাজিক অগ্রগতির অপরিহার্য অবলম্বন ম্যানার্স।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন