×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

বয়স বাড়লেই কেন বাড়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি

হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2019-01-25 15:14:45

স্ট্রোকের ধাক্কায় প্রাণোচ্ছল পৃথিবীটাই বেসামাল। সচল গ্রহটি অক্ষম প্রাণের বোঝায় ক্লান্ত। শুধুমাত্র বেশি বয়েসি কেন, কম বয়েসী বাসিন্দারাও স্ট্রোকের ভয়ে কাঁপছে। স্ট্রোকের কারণ খুঁজতে সকলেই তাই তৎপর।

স্বাভাবিক ভাবেই বিজ্ঞান ও বুজরুকির আলোতে খোঁজাখুঁজি চলছে ও চলবে। হাঁটাচলা কথা বলা সচল মানুষটি মুহূর্তে স্ট্রোকের সুনামিতে খেই হারিয়ে বোবা, কালা ও স্থবির হয়ে, পায়খানা-প্রস্রাবে ভেজা পুতিগন্ধময় শয্যাতে লুটিয়ে পড়লে মানুষের পক্ষে দৃশ্যটি হজম করা কঠিন হয়। এই নরক যন্ত্রণাকে অনেক পূর্ব জন্মের পাপের ফল হিসেবে গণ্য করেন। আপনজন স্ট্রোক হলেই মানুষ পাপতত্ত্ব খারিজ করে বিজ্ঞানের আলোতে কারণ খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্ট্রোকের কারণ জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায়। বয়স, লিঙ্গ, জাতি, বংশগতি ও সংক্রামণের মতো নাগালের বাইরে থাকা কারণগুলো বাদ দিলে বদনেশা, বদঅভ্যাস, বদখাদ্যাভ্যাস ও বদভাবনা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণযোগ্য বিষয়গুলোই স্ট্রোক রোগের প্রধান কারণ জেনে মানুষকে লজ্জিত হতে হয়।

বয়সের থাবা মাঝবয়েসীদের অমসৃণ রক্তরালীতে থ্রম্বাস জমে, রক্তে চর্বির মাত্রা বেড়ে ডিসলিপিডেমিয়াতে আক্রান্ত হয়ে, রিউম্যাটিক হার্ট ডিজিজ, সংক্রামণ ও জন্মগত ক্রুটির কারণে হৃদযন্ত্রের দেওয়ালে ও কপাটিকার থ্রম্বাস তৈরি হয়ে এবং থ্রম্বাস ছিঁড়ে রক্তস্রাতে ভাসতে ভাসতে সেরিব্রাল ধমনীতে আটকে পড়ে, মস্তিষ্কের বাইরের বড় বড় ধমনীতে তৈরি হওয়া থ্রম্বাসের কারণেই বেশিনভাগ স্ট্রোক হয়। শুধু ধমনী কেন, হৃদযন্ত্রের অলিন্দের দেওয়াল টপকে বা থেকে যাওয়া ফোরামের ওভেল হয়ে শিরাতে তৈরি হওয়া থ্রম্বাস ধমনীতে ঢুকেও স্ট্রোক বাধাতে পারে। তাছাড়া ক্যাভারনাস সাইনাস, স্যাজিটাল সাইনাস ও ট্রান্সর্ভাস সাইনাস থ্রম্বোসিস হয়েও স্ট্রোকের মতো হেমিপেরেসিস, চোখের পাতার শিথিলতা ও খিঁচুনি হতে পারে। যুব সমাজে হৃদযন্ত্রে তৈরি হওয়া অ্যামবোলাস, রক্তে চর্বির আধিক্য রোগ তথা স্ট্রোক হওয়ার প্রধান কারণ।

ডাক্তার না হয়েও অনেকে জানেন যে চর্বি  মাখা সুস্বাদু ফাস্টফুড, জাষ্কফুড, যন্ত্রনির্ভল জীবনযাত্রা, শ্রমবিমুখতা, মদের নেশা, ধুমপান ও অত্যধিক মানসিক টেনশন স্ট্রোক রোগকে সুপারি দেয়। লোকে জানেন না এমনও অনেক কারণ আছে যা শুনলে গায়ে কাঁটা দেবে। এখানে স্ট্রোকের শিকার রোগীদের বিশেষ কিছু করারও থাকে না। জানেন কি সিকল সেল অ্যানিমিয়া, গর্ভনিরোধক বড়ির ব্যবহার, বিটা থ্যালাসেমিয়া, হৃদযন্ত্রের কৃত্রিম ভালভ, রক্ত তঞ্চনের ক্রুটি এমনকী অম্বল, অর্জীণতা থেকে স্ট্রোক রোগ হতে পারে? জনালে অবাক হবেন ক্যানসার, এক্ল্যাম্পশিয়া, সিফিলিস, টি.বি., নেফ্রোটিক সিনড্রোম ও ম্যানিনজাইটিসের মতো ভয়ংকর রোগে ভোগা রোগীদেরকে স্ট্রোক রোগ বেশি বেশি টার্গেট করে। আবার কোকেন ও অ্যামফিটামিনের মতো ওষুধও স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। সন্তান জন্ম দেওয়ার মতো আনন্দের মুহূর্তে মায়ের শরীর থেকে গর্ভফুল তথা প্লাসেন্টা বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময়, মায়ের রক্তসংবহন তন্ত্রে চর্বি বা জমাট বাঁধা রক্তের টুকরো ঢুকে মস্তিষ্কে গিয়ে স্ট্রোক বাধাতে পারে। মস্তিষ্কের অতি সূক্ষ লেন্টিকুলোস্ট্রি ধমনীগুলো, বন্ধ হয়ে যাওয়া ধমনীর চারপাশে জালের মতো অসংখ্যা পার্শ্বানালী থৈরি করে মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। এক্স-রে প্লেটে যা ধোঁয়ার কুন্ডলীর মতো দেখায়। জাপানীরা এটিতে ‘মোয়ামোয়া’ রোগ বলেন। আসলে এই মোয় সেই মোয়া নয়, এখান থেকেও স্ট্রোক হতে পারে। ব্রেন টিউমার, ব্রেন ক্যানসার, ব্রেন অ্যাবসেস, হিস্টেরিয়া, মাইগ্রেন ও এনকেফালাইটিসের কারণেও হাত-পা শিথিল হতে পারে। স্ট্রোক রোগের সঙ্গে এমন ঘটনা গুলিয়ে যেতে পারে।

স্ট্রোকের ঝুঁকের বিষয়গুলো কী কী

আক্ষরিক অর্থে স্ট্রোক মানে আঘাত। মানুষ প্রাণীদের মাস্টার। বুদ্ধির ঘরে আঘাত সে সইবে কেন? কী কারণে ও কোন পথে এই আঘাত আসে তা নিয়ে সে বিস্তর গবেষণা করবে। গবেষণার ফসলকে হাতিয়ার করে সে স্ট্রোকের সঙ্গে লড়াই করবে। ঝুঁকির বিষয়গুলো  চিহ্নিত করবে ও সেগুলো এড়িয়ে মস্তিষ্ককে রক্ষা করবে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেরিব্রাল স্ট্রোক আসলে মাস্টার স্ট্রোক। তার আগমন ও ব্রেনের ভেতরে তার বিচরণ সব সময় বোঝা যায় না। কিছু বিষয় আছে যা বুঝতে পারলেও এড়িয়ে চলা অসম্ভব ঠেকে। সেখানে শিকারে শিকারির সামসে বলির পাঁঠার মতো দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া উপায় থাকে না। যেমন হাঁটাহাঁটি পা পা করে জীবনের মধ্যাহ্নের গন্ডি টপকালেই স্ট্রোক রোগের সম্ভবনা বাড়ে। জীবনের সায়াহ্নে ঝুঁকি তুংঙ্গে থাকে। এসব জেনে মানুষ করবেটা কী? বুড়ো থেকে খুঢ়ো হওয়ার কোনো ফর্মুলা নেই। মেয়েদের থেকে ছেলেদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। বেচারা পুরুষ, এক জীবনে নারী হবে কেমন করে? ইউরোপিয়ানদের থেকে এশিয়ানদের ঝুঁকি বেশি জেনেও এশিয়ানদের ইউরোপিয়ান হওয়ার উপায় নেই। পূর্বপুরুষদের স্ট্রোকে মৃত্যুর ইতিহাস থাকলে উত্তরসূরীদেরও ধাক্কা খাওয়ার যথেষ্ট সম্ভবনা থাকে। বংশের বাঁধন ছিড়ে স্ট্রোক এড়ানো অসম্ভব।

হতাশার স্থান নেই। সিংহভাগ স্ট্রোক শুধুমাত্র ঝুঁকি এড়িয়েই রুখে দেওয়া যায়। ঝুঁকি এড়াতে গেলে চাই স্বাস্থ্যসচেতনতা। স্বাস্থ্যজ্ঞান ছাড়া স্বাস্থ্যসচেতনতা সম্ভব নয়। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্যজ্ঞানের কাছে আমআদমিদের স্বাস্থ্যজ্ঞান একেবারে নগণ্য। কিন্তু জনসাধারণের স্বাস্থ্যজ্ঞান যতই তুচ্ছ হোক না কেন, স্বাস্থ্য পরিষেবার সাফল্য ও জনগণের সুস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুরো চিকিৎসাবিজ্ঞান, স্বাস্থ্যসচেতনতাকে সুস্বাস্থ্যের সুইচ মনে করে। এই সুইচের অফ-অনের ওপর সুস্থতা নির্ভর করে। মানুষ সচেতন হয়ে সাপে কাটা রোগীকে ওঝার খপ্পর এড়িয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে এলেই তো চিকিৎসক এ.ভি.এস প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন। কুকুরে কামড়ানো রোগীকে কলা পোড়া খাইয়ে বসে থাকলে, বাচ্চাদের টিকাকরণ কর্মসূচিতে সামিল না করলে, গর্ভবতী মায়েদের দেখভালের দায়িত্ব যোগ্য চিকিৎসকের ওপর না ছাড়লে, বাড়ি বয়ে আসা আশাকর্মীদের বাইপাস করে দালালের হাত ধরে হাসপাতালের গন্ডি টপকে নার্সিংহোমে প্রসব করালে চিকিৎসাশাস্ত্রের সুবিধা পাওয়া অসম্ভব।

জনসাধারণের সাধারণ স্বাস্থ্যজ্ঞান তকমাধারীদের থেকে কোনো অংশে কম যায় না। স্বাস্থ্যবিষয়ক আলোচনা, সেমিনার, পত্রপত্রিকায় লেখালেখি ও সরকারি বিজ্ঞাপন জনগণের স্বাস্থজ্ঞানের পুজি বাড়ানোর লক্ষেই করা হয়ে থাকে। তবুও অসুস্থের অসহায়তাকে মূলধন করে কিছু ব্যবসায়ীদের চটকদারি বিজ্ঞাপন ও দালালচক্রের রমরমা সাধারণ মানুষের মুন্ডু ঘুরিয়ে দিচ্ছে। সুস্থ হওয়ার ও স্বজনখে সুস্থ করে তোলার মরিয়া প্রচেষ্টা ও রোগযন্ত্রের তীব্রতা মানুষের মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। বার বার ঠকেও মিথ্যা আশ্বাসের ফাঁদে পড়ে দুষ্টুচক্রে নাম লেখাতে বাধ্য হচ্ছে। শুধুমাত্র স্বাস্থ্যজ্ঞানকে সম্বল করে রোগীদের রক্তখেকো খ্যাঁকশিয়ালদের বিরুদ্ধে লড়াই করে সুস্থতার শিখর জয় সম্ভব।

স্ট্রোক হওয়ার পিছনে নিরানব্বই শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রক্ত সংবহনতন্ত্রের ত্রুটিরই হাত থাকে। মস্তিষ্কের ভিতর ও বাইরের রক্তনালীর দেওয়ালের অসুস্থতা, হৃদযন্ত্রের গতি ও কপাটিকার ক্রটি স্ট্রোক হওয়ার মূল কারণ। হার্ট ফেলিওর, হৃদযন্ত্রের দ্রুত ও অসম্পূর্ণ সষ্কোচন তথা আর্টারিয়াল ফিব্রিলেশনের মতো যান্ত্রিক ক্রুটির কারণে রক্তবাহনালীর ভিতরেই মন্ডের আকারে রক্ত জমাট বেঁধে যায় ও আগে থেকে জমাটবাঁধা রক্ত স্থানচ্যুত হয়ে রক্তস্রোতে ভাসতে শুরু করে। এখান থেকেই স্ট্রোকের সূচনা হয়। কাজেই যারা হৃদযন্ত্রের অসুস্থতায় কষ্ট পাচ্ছেন , স্ট্রোকের ঝুঁকির লিস্টের প্রথম সারিতেই তারা থাকেন। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞাদের দিয়ে নিয়মিত চিকিৎসা করালে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভবনা অনেকটাই কমে যাবে। নিয়মিত স্বল্প মাত্রায় অ্যাসপিরিন কমে যাবে। নিয়মিত স্বল্প মাত্রায় অ্যাসপিরিন সেবন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন