×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

রোগের আড়ত বার্ধক্যের শরীর

হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2019-01-25 15:27:56

আর্থিক অসচ্ছলতাই দেশের বয়স্ক নাগরিকদের উপযুক্ত, সার্বিক ও প্রয়োজনীয় পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। অবশ্য অনেকক্ষেত্রে মানসিকতার অভাবও দায়ী। উল্লেখ্য, তিন শতাংশের কাছাকাছি মানুষ পেনশন বা অবসরকালীন ভাতা পেয়ে থাকেন। দশ শতাংশ মানুষ বা বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা নির্ভর করেন তাঁদের পুরনো জমানো অর্থের ওপর। অবশিষ্ট সত্তর থেকে নব্বই শতাংশ বুদ্ধ-বুদ্ধা নির্ভর করেন তাদের সন্তা-সন্ততির ওপর। দুর্ভাগ্যের বিষয় অধিকাংশ সন্তান আবার প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম নন।

ভারতবর্ষের ৯০ শতাংশ বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সামাজিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নেই বললেই চলে। ৪০ শতাংশ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দারিদ্র সীমার নীচে বাস করেন। এবং ৩৩ শতাংশ ঠিক এই সীমারেখার ওপরের সারিতে অবস্থান করেন। ৭৩ শতাংশ অশিক্ষিত এবং একমাত্র শারীরিক পরিশ্রমের কর্মেই নিযুক্ত হতে বাধ্য হন। ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক ৫৫ শতাংশ মহিলা বিধবা। এদের মধ্যে আবার অন্য কোনো আর্থিক সাহায্য নেই। উল্লেখ্য যে, দু’লক্ষশতায়ু ব্যক্তি আমাদের দেশে আছেন।

ভারতবর্ষে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পরিসংখ্যান

ষাট বছর বয়সের বেশি বর্তমানে ৭ শতাংশ। দ্রুতগতিতে এই হার বৃদ্ধি হচ্ছে। আশা করা যায় ২০৫০ সালে এই সংখ্যা শতকরা ২৩ থেকে ৩০ জন হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতবর্ষে মহিলাদের সংখ্যা পুরুষদের থেকে কম। যদিও তাদের গড় আয়ু ৬০-৭০ বছর, যা পুরুষদের গড় আয়ুর তুলনায় সামান্য বেশি।

বার্ধক্যজনিত ব্যাধির কারণ

  • গতিহীনতা।
  • দৃঢ়ভাবে বা স্থিরভাবে থাকতে না পারা বা পড়ে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা।
  • মল-মূত্রের বেগ ধারণে অক্ষম।
  • বুদ্ধি বা মেধার সমস্যা।
  • শরীরে কোনো স্থানে চাপজনিত ঘা বা ক্ষত।

বার্ধক্যজনিত রোগসমূহকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়—বয়স নির্ভর রোগ এবং বয়স সম্পর্কীয় রোগ।

বয়স নির্ভর রোগগুলি বার্ধক্যের স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবেই হয়ে থাকে। যেমন, প্রস্টেট বা পৌরুষগ্রন্ধির বৃদ্ধি, অস্টিও আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস, ছানি বা ক্যাটারাক্ট, চাপজনিত ঘা (প্রেসার সোরস), স্ট্রোক, দুর্ঘটনাজনিত কারণে দেহের তাপমাত্রা কমে যাওয়া, স্মৃতিহ্রাস, পারকিনসনস, মলমূত্রের বেগ ধারণে অক্ষমতা, ক্যানসার-মাল্টিপল মায়োলোমা, প্রস্টেট ক্যানসার, ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিম্ফোমা, কোলন টিউমার, প্যাগেটস ডিজিজ (অস্থির একপ্রকার রোগ) এবং পলিমাইয়ালজিয়া রিউম্যাটিকা প্রভৃতি।

বয়স সম্পর্কীয় রোগ অর্থাৎ বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যে সমস্ত রোগসমূহ হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং বার বার হয় সেগুলি হল—উচ্চ রক্তচাপ, মধুমেহ বা ডায়াবেটিস মেলাইটাস, রক্তনালীর বিশেষত ধমনীল স্থিতিস্থাপকতার গোলযোগ অর্থাৎ অ্যাথেরোস্ক্লেরোটিক রোগ সমূহ যথা—স্ট্রোক, করোনারি ধমনীর (যে ধমনী হৃদযন্ত্রকে রক্ত সরবরাহ তথা পুষ্টি যোগায়) রোগ সমূহ, প্রান্তীয় ধমনীর রোগ ও ক্যানসার প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

১৯৮০ সারে ইন্ডিয়ান কাইন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ-এর পরিসংখ্যান অনুসারে—বার্ধক্যে দৃষ্টির গোলযোগ ৮৮ শতাংশ, লোকোমোটর বা চলাফেরার অক্ষমতা ৪০ শতাংশ, স্নায়ুতনন্ত্রের রোগসমূহ ১৮.৭ শতাংশ, হৃদযন্ত্র ও রক্ত সংবহন তন্ত্র সম্বন্দীয় রোগসমূহ ১৭.৪ শতাংশ, শ্বাসনতন্ত্র সম্পর্কীয় রোগসমূহ ১৬.১ শতাংশ এবং ত্বকের রোগসমূহ ১৩.৩ শতাংশ আক্রান্ত।

যদিও এই শতাংশের পরিসংখ্যান বর্তমানে আরও পরিবর্তিত হয়েছে। ২০০৩ সালে ডঃ শর্মা ও তার সঙ্গী গবেষকদের পর্যবেক্ষণে বার্ধক্যজনিত কারণে সাধারণ মানুষ যে সমস্ত রোগে আক্রান্ত হয় সেগুলি যথাক্রমে –উচ্চ রক্তচাপ ৩৯.৫%, ছানি ৩৫.৩%, সন্ধির প্রদাহ ৩৩.৬৭%, দীর্ঘকালীন ব্রষ্কাইটিস ১৯.৯%, করোনারি ধমনীর রোগসমূহ ১৮.৮%, প্রস্টেটের বৃদ্ধি (বিনাইন) নয় ১৬.২৩%, ডায়াবেটিস ১৫.২৩%, বদহজম ১১.০৩%, ইরিটেবল ৮.৫%।

বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক বিভিন্ন তন্ত্রের অঙ্গসমূহে পরিবর্তনের ফলেই বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। যেমন—

  • হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন পরিবর্তন ও সমস্যা, হৃদযন্ত্র থেকে রক্ত কম পরিমাণে বের হয় এবং হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া স্বাভাবিক হয় না। অর্থাৎ হার্ট ফেলিওরের বিপদ বৃদ্ধি পায়।
  • রক্ত সরবরাহ নালী সমূহের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস ও গ্লাইকোপ্রোটিনের ক্ষয়, ধমনীর প্রাচীরে ক্যালিসিয়াম ও কোলেস্টেরল জমার ফলে ধমনীর প্রাচীর পুরু এবং শক্ত হওয়ার জন্য রক্তনালী সমূহের প্রান্তীয় বাধা এবং সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধি পায়। হৃদযন্ত্রের মাংসপেশি বা মায়োকার্ডিয়ামে রক্ত চলাচলের অভাবে কলাসমূহের ক্ষয়, স্ট্রোক, কিডনি অকেজো হয়। তাছাড়া হৃদয়ন্ত্র, মস্তিষ্ক ও কিডনিতে রক্ত সরবরাহ হ্রাস পায়।
  • রক্তচাপ: সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে বৃদ্ধি পায়। ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেসার ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রান্তীয় রক্ত সরবরাহ নালীর প্রতিরোধ (PVR) বৃদ্ধি পায় এবং কার্বন মনোক্সাইড হ্রাস পায়। এর ফলে আইসোলেটেড সিস্টোলিক উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি হয়।
  • অটোনোমিক পরিবর্তন : সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুর ক্রিয়া এবং রক্তে এপিনেফ্রিন ও নরএপিনেফ্রিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া অন্যান্য স্নায়ুবিষয়ক পরিবর্তনে হৃদযন্ত্র শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী রক্ত সরবরাহ বা সঞ্চালন করতে পারে না।
  • মুখগহ্বর : মুখের স্বাদজনিত অনুভূতি কমে যায়। ক্ষুধামান্দ্য, হজমকারক লালরসের কম নি”সরণ, দাঁত না থাকা বা কম থাকার জন্য খাদ্য চিবানোর সমস্যা প্রভৃতির ফলে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা কম খাদ্য গ্রহণ করেন। এর ফলে পুষ্টির অভাব দেখা যায়।
  • ইসোফেগাস: গ্রাসনালীর স্ফিংকটারে চাপ এবং চলনের হ্রাসের ফলে গ্যাসস্ট্রো-ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD)  এবং ওষুধজনিত ক্ষত খুব বেশি হয়ে থাকে।
  • পাকস্থলি : অম্লরস তৈরি, শ্লৈষ্সিক ঝিল্লিতে রক্ত প্রবাহ, মিউকাস তৈরি, প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন ও বাইকার্বোনেট আয়ন সমূহ থৈরি কমে যায়। এবং পাকস্থলি ও অন্ত্রে ক্ষত (পেপটিক আলসার), বদহজম ও খাদ্যনালীতে রক্তক্ষরণ হওয়ার ঝুঁকি বা বিপদ বৃদ্ধি পায়।
  • ক্ষুদ্রান্ত্র : ক্যালসিয়াম শোষণ ল্যাকটোজ তৈরি হ্রাস এবং জীবাণুর বৃদ্ধির ঝুঁকি বৃদ্ধি হয়। এর ফলে পুষ্টিকারক পদার্থ, ভিটামিন, খনিজ পদার্থের শোষণে ব্যাঘাত ঘটে। ফলস্বরূপ অতিসার বা ডায়রিয়া ও পেট ফেঁপে যায়।
  • বৃহদন্দ্র : মলাশয়ের প্রাচীরে অনুভূতির অভাব ও মলাশয়ের চলন হ্রাসের ফলে কোষ্ঠবদ্ধতা হয়ে থাকে।
  • যকৃৎ : এটি আকারে ছোট হয় এবং রক্ত প্রবাহ কমে। প্লাজমা প্রোটিন তৈরি এবং ওষুধের বিপাক কমে। ফলস্বরূপ যকৃতে ওষুধের বিষক্রিয়া বৃদ্ধি পায়।
  • পিত্তথলি : বাইল অ্যাসিড তৈরি এবং লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিনের কোলেস্টেরল নিষ্কাষণ হ্রাস পায়। ফলস্বরূপ পিত্তথলিতে পাথর সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা বৃদ্ধি পায়।
  • অগ্ন্যাশয় বা প্যাংক্রিয়াস : ইনসুলিন নিঃসরণ হ্রাস হওয়ার ফলে ডায়াবেটিস মেলাইটাস রোগ বা মধূমেহ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • ফুসফুস : স্থিতিস্থাপকতার ক্ষমতা, বিভিন্ন গ্যাস গ্রহণ ও ত্যাগ করার ক্ষমতা, বায়ুগমনের জন্য শ্বাসনালী সমূহের আকার ও ফুসফুস থেকে কফ পরিষ্কার করার ক্ষমতা এবং ফোরসড এক্সপিরেটরি ভলিউম(প্রতি মিনিটে) এবং ফোরসড ভাইটাল ক্যাপাসিটি কম হয়। তাছাড়া কাশির প্রতিবর্তী ক্রিয়া বাড়ে, অক্সিজেনের অভাবে বায়ু গ্রহণের ক্ষমতা হ্রাস পায়। মধ্যচ্ছদা পর্দা ও শ্বাসপ্রশ্বাসের সাহায্যকারী পেশিসর্মহ দুর্বল হয়। এবং বায়ু চলাচলকারী শ্বাসনালীসমূহ ও অ্যালভিওলাই বা বায়ুথলি স্ফীত হ য়ে থাকে। এই সমস্ত কারণে ফুসফুসে জীবাণু সংক্রামণের সম্ভবনা বৃদ্ধি হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট এবং ধূমপান ও  বায়ু দূষণের ফলে ক্ষতিকারক প্রভাবের প্রতি বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে ফুসফুস।
  • অস্থি : অস্থির ঘনত্ব  নতুন অস্থি সৃষ্টি হ্রাস পায়। তাছাড়া অস্থি ভঙ্গুর ও ছিদ্র বিশিষ্ট হয়ে থাকে। ফলস্বরূপ নিতম্ব  ও মেরুদন্ডের অস্থি ভাঙার সম্ভবনা দু’-তিন গুণ বৃদ্ধি পায়। বার্ধক্যজনিত ও মেনোপজের ফলে অস্টিওপোরোসিস বা দুই অস্থি মধ্যবর্তী অংশের বিস্তার হয়ে থাকে।
  • কার্টিলেজ : তরুণাস্থি সরু হয়। স্থিতিস্থাপকতা ও ক্যালসিয়াম জমা হওয়া হ্রাস পেয়ে থাকে।
  • অস্থি সমূহের পেশি, টেন্ডন ও লিগামেন্ট : পেশির পরিমাণ, শক্তির হ্রাস এবং পেশির দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে পেশিসমূহ দুর্বল, সন্ধিগুলি শক্ত হয়। পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা বৃদ্ধি পায় ও অস্থি ভেঙে যাওয়ার বিপদ বেশি থাকে।
  • মস্তিষ্ক : স্নায়ু কোষের সংখ্যা হ্রাস, রক্ত সঞ্চালন, রিসেপটরস-এর (সংবেদনশীল স্নায়ুর প্রান্তভাগ যা নানা প্রকার উত্তেজনায় সাড়া দেয়) সংখ্যা, নিউরোট্রান্সমিটার সমূহ থেকে নিঃসরণ ও উৎসেচকের ক্রিয়া হ্রাস পায়। ফলস্বরূপ বার্ধক্যে স্মৃতির গোলযোগ এবং স্মৃতি হ্রাস, প্রতিবর্তী ক্রিয়া সমূহ মন্থর হয়। তাছাড়া, চলনের সমন্বয়ও মন্থর হয়ে থাকে।
  • সুষুম্নাকান্ড : এখানে স্নায়ুকোষের সংখ্যা ও স্নায়ু পরিবহনের গতি হ্রাস পায়। মেরুদন্ডের অস্থির এবং দুটি অস্থির অন্তর্বর্তী ডিস্কের ক্ষয় হতে থাকে। এর ফলে সুষুম্নাকান্ডের ও স্নায়ুসমূহের মূলে চাপ সৃষ্টি হয়।
  • প্রান্তীয় স্নায়ু : বিভিন্ন ইন্দ্রিয়াদির পরিবহন ক্রিয়া মন্থর হওয়ার ফলে প্রান্তীয় নিউরোপ্যাথি বা স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে।
  • কিডনি : কিডনিতে রক্তের প্রবাহ ও গ্লোমেরুলাস ফিল্টারেশন রেট অর্থাৎ গ্লোমেরুলাসে পরিস্রাবন ক্রিয়া হ্রাস পায়। কিডনির টিউবুলার ও গ্লোমেরুলাসের ক্রিয়া ও আকার হ্রাস পেয়ে থাকে। ফলস্বরূপ বিভিন্ন ওষুধের শরীর থেকে নিষ্কাশনে বিলম্ব হয়। বিশেষত কিডনিতে ক্ষতিকারক প্রভাবযুক্ত ওষুধ সমূহ কিডনির ক্ষতি সৃষ্টি করে।
  • রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিস পদ্ধতি : রেনিন ও অ্যালডোস্টেরনের মাত্রা হ্রাস হওয়ার ফলে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি হয় এবং শরীরে জলাভাবের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
  • মূত্রথলি : মূত্রথলি স্ফিংটার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারায়। এর ফলে প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়। প্রস্রাবের জীবণু সংক্রমণের সম্ভবনা বৃদ্ধি পায়।
  • প্রস্টেট গ্ল্যান্ড : প্রস্টেট বা পৌরুষগ্রন্থির বৃদ্ধি হয় এবং ফলস্বরূপ মূত্রের অবরোধ হয়ে থাকে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ গুণগত ও পরিমাণগত ভাবে অ্যান্টিবডি তৈরির ক্ষমতা হ্রাসের ফলে অটো ইমিউন রোগসমূহ হওয়ার এবং জীবাণু সংক্রামণের (বিশেষত যক্ষ্মা) সম্ভবনা বেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া ভ্যাকসিন সমূহের প্রতি আশানুরূপ সাড়া দেয় না।
  • ত্বক : ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা এবং ঘাম ও তৈলাক্ত পদার্থ তৈরি কমে যায়। এর ফলে ত্বকের শুষ্কতা, বলি, কুঁচকানো এবং বিলম্বে ক্ষত নিরাময় হয়। তাপ সম্পর্কীয় গোলযোগও বৃদ্ধি পায়।
  • চোখ : চোখের জল কম তৈরি হয়। রেটিনার ক্ষয় ও দৃষ্টির সমন্বয় সাধনে গোলযোগ হওয়ার ফলে চোখ শুষ্ক, ছানি পড়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাবার পাশাপাশি ম্যাকুলার কলার ক্ষয় ও গ্লুকোমা প্রভৃতি চোখের রোগ হয়।
  • কান : শ্রবণেন্দ্রিয় স্নায়ুর ক্ষয়, অটোস্ক্লেরোসিস এবং কানের সমস্যা সৃষ্টি হয়। এর ফলে শোনার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
  • ঘুম : ঘুমের সময় ও গভীরতা কমে। এর ফলে ঘুম সম্বন্ধীয় বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়।
  • মানসিক স্বাস্থ্য : একাগ্রতা, স্মৃতি ও বুদ্ধি হ্রাস পেতে থাকে। ফলস্বরূপ স্মৃতিভ্রাংশ বা স্মৃতি হ্রাস হয়।
  • যৌনজীবন : পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌন উত্তেজনা হ্রাস। লিঙ্গে রক্ত সঞ্চালনের সমস্যার জন্য লিঙ্গ স্বল্প সময় দৃঢ় থাকে। অবশ্য সন্তান সৃষ্টিতে কোনো সমস্যা সাধারণ থাকে না।
  • মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজ বা রজঃস্রাব সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হওয়ার ফলে যোনিপথ ছোট, সরু এবং শুষ্ক হয়ে যায়। তাছাড়া যোনিপথের অম্লত্ব হ্রাস করে। এর ফলে সহবাসের সময় কষ্ট হয় এবং জীবণু সংক্রাশণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

বয়স বৃদ্ধি বা বার্ধক্যের কারণে সৃষ্টি হওয়া স্বাস্থ্য সমস্যাকে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনশৈলীর মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্পূর্ণভাবে না হলেও অনেকাংশেই সম্ভব।

সুস্থ থাকার উপায় :

  • হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায় : ধূমপান ত্যাগ করা, খাদ্য বিষয়ে সচেতন থাকা এবং ব্যায়াম করা উচিত।
  • অস্থির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে ব্যায়াম, ধূমপান না করা, পুষ্টিকর খাদ্য বিশেষত ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্যসমূহ খাওয়া প্রয়োজন।
  • গ্লকোজ টলারেন্স এবং সিরাম কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। ব্যায়াম, খাদ্য বিষয়ে বাড়তি সচেতনতা চাই।
  • উচ্চ রক্তচাপ রোধে লবণ আলাদা না খাওয়া, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম প্রভৃতি জরুরি।
  • ফুসফুসের স্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যায়াম করা দরকার। ধূমপান না করা এবং দূষিত পরিবেশ এড়িয়ে চলা উচিত।

সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি

  • শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার প্রচেষ্টা করা প্রয়োজন।
  • স্বাস্থ্যসম্মত ও সুষম খাদ্য খেদে হবে। যাদের শরীরের ওজন বেশি তারা খাদ্যে ক্যালোরি গ্রহণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবেন।
  • ধূমপান ত্যাগ করুন। মদ্যপান না করতে পারলেই ভালো। যদি কুঅভ্যাসপান করুন।
  • মানসিক ও শারীরিকভাবে নিজেকে কোনো কাজে নিযুক্ত রাখুন।
  • যদি শারীরিক অবননতির কারণে কোনও রোগ লক্ষণেল প্রকাশ হয় তবে সে বিষয়ে সত্বর উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন।
  • শারীরিক ও মানসিক চাপ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
  • ঘুম যেন ভালোভাবে এবং উপযুক্ত সময় অনুসারে (বয়সানুসারে) হয় তা লক্ষ রাখতে হবে।
  • সুস্বাস্থ্য রক্ষায় ও শারীর শিক্ষায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে হবে। এই সমস্ত কর্মসূচিতে যে সমস্ত বিষয় শেখানো হবে এবং উপদেশ দেওয়া হবে সেগুলি নিয়মিত অভ্যাস করতে হবে এবং মেনে চলার চেষ্টা আন্তরিবভাবেই করতে হবে।

বৃদ্ধাবস্থায় ডায়াবেটিস সম্পর্কীয় অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস যুক্ত রক্তনালীল কারণে সৃষ্টি হওয়া রোগ সমূহ বহুমুখী চিকিৎসার মাধ্যমে ৬ মাসে হ্রাস করা যায়।

এই চিকিৎসা ‘A ’ থেকে ‘E’ চেকলিস্টের মাধ্যমে করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে।

A—অ্যান্টিপ্লেটলেট থেরাটি-অ্যাসপিরিন।

B----ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রণ—অ্যাঞ্জিওটেনসিন রিসেপটর ব্লকার,  অ্যাঞ্জিওটেনসিন রিসেপটর ব্লকার, অ্যাঞ্জিটেনসিন টু কনভাটিং এনজাইম, বিট ব্লকার।

C----কোলেস্টেরল বা লিপিড নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ। এর মধ্যে লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডস, হাইডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

D----ডায়েট বা খাদ্য, মেডিকেল নিউট্রিশনাল থেরাপি।

E---এডুকেশন বা শিক্ষা। ডায়াবেটিস রোগ সম্বন্ধে যিনি শিক্ষিত তার উপদেশ অনুসারে নিজেই ব্যবস্থা করতে হবে।

ব্যায়াম

প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচ দিন আধ ঘন্টা শারীরিক ব্যায়ম করতে হবে। উল্লেখ্য, শরীর থেকে ঘাম ঝরে এরকম ব্যায়াম করাই শ্রেয়।

প্রচলিত আছে যে, বার্ধক্য একটি অনিরাময়যোগ্য ব্যাধি। তবুও সবসময় ভাবতে হবে যে, বয়স বেড়ে যাওয়া কোনো রোগ নয়, আবার রোগ হলে সবই বার্ধক্যজনিত, এমনটা ভাবা উচিত নয়।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন