×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

জরায়ুর ক্যানসার সারাতে আদা

হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2019-01-25 15:37:37

আদা খাই কেন? খেতে ভালো লাগে তাই। সে চায়ে দিয়ে হোক, কিংবা বিয়ারে। আর রান্নায় দিলে তো কথাই নেই। যে কোনো বিস্বাদইমুহূর্তে বদলে যাবে সেরা স্বাদে। আবার বিস্কুট, কুকিজের মতো মুখরোচকেও দিব্যি জুড়ে আছে এর স্বাদ, গন্ধ। এক কথায় বলতে গেলে রসনার সঙ্গে এর সম্পর্ক ওতপপ্রোতভাবে জড়িয়ে। কিন্তু আপাত সাধারণ আকারের এই শিকড়ের কাছে মানুষের শরীর যে কেতখানি ঋণী, তা ক’জন জানি।

আদা। নামটা শুনলেই চোখের সামনে তরিতরকারি আর রান্নাঘরের ছবিই ভেসে ওঠে। কিন্তু শরীরগত সুস্থতা বা ওষুধ-বিষুধ? না, তেমন ভাবি না। কারণ আমাদের অজ্ঞতা। অথচ চিন ঠিক খোঁজ রেখেছে। বিগত দু’হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে চিনের স্বাস্থ্য এবং ওষুধ বিশেষজ্ঞরা আদার ওষধি গুণ সম্পর্কে সচেতন। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সমাধানে আদার নানাবিধ ব্যবহার চিনই আবিষ্কার করেছে বহুদিন আগে। শরীরে কর্মক্ষমতা জোগান দেওয়া আর দেহের পরিপাক ক্রিয়াকে মসৃণ রাখা, আদার এ দুটো গুণ সর্বজনবিতি। তবে এর বাইরেও আদার সঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্যের সম্পর্ক আরও নিবিড়।

আদা মানুষের শরীরে রক্তের সংবহনের ধারা স্বাভাবিক ও অক্ষুণ্ন রাখে। আদার অভ্যন্তরস্থ ক্রোমিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম আর জিষ্ক মূলত এই কাজটা করে থকে। শুধু তাই নয়, ওই তিন উপাদান অত্যাধিক ঠান্ডা লাগা, মাত্রাতিরিক্ত ঘাম, জ্বর ইত্যাদি রোধেও কাজ করে। দেখা গেছে নৌবাহিনীর মানুষজনকে জলপথে দীর্ঘযাত্রা জনিত বমিভাব থেকে সুস্থ রাখতে আদা দারুণ কার্যকরী।

শরীরের পক্ষে উপযোগী এবং উপকারী পুষ্টি সঠিকমাত্রায় শোষণে শরীরকে সাহায্য করে আদা। আবার সেই পুষ্টিকে শক্তি বৃদ্ধির কাজে লাগানোতেও সাহায্য করে। গ্যাসট্রিক আর প্যাংক্রিয়াটিকে এনজাইম নিঃসরণেও সাহায্য করে আদা। সেই এনজাইমের গুণেই শরীর তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণ করতে পারে।

আজ থেকে হাজার বছর আগেও সারা এশিয়ে জুড়ে আদা ব্যবহৃত হয়ে এসেছে ঠান্ডা লাগা, জ্বর-সর্দির ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক প্রতিষেধক হিসাবে। আমেরিকাস্থিত মেরিল্যান্ড মেডিক্যাল সেন্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্পষ্ট উল্লেখ করেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ঠান্ডালাগা জনিত জ্বর-সর্দির চিকিৎসায় আদা অত্যন্ত উপকারী। পরিষ্কার করে ছাড়ানো, টুকরো টুকরো করে নেওয়া আদা দু’ চা-চামচ পরিমাণ গরম জলে ফেলে, খানিকক্ষণ ভিজিয়ে রেখে খানিকক্ষণ, এবার সেই জলটা খেয়ে নিতে হবে। দিনে দু’-তিনবার এটা করলে ঠান্ডা লাগা বা জ্বরভাব সেরে যাবে।

যে কোনো খাবার হজম করতে আর খাদ্য পরিপাকে আদার জুড়ি মেলা ভার। এর ফলে গ্যাসট্রিক বা পেটের যে কোনো সমস্যা থেকে রেহাই মেলে। আবার শরীরের ফোলাজনিত যে সমস্যা অ্যাসিপিরিন বা আইব্রুফেন কমায়, সেই সমস্যা নিরসনেও আদা সাহায্য করে। ফলে শরীরের ব্যথা-যন্ত্রণাও কমিয়ে দেয় আদা।

মিনেসোটা বিশ্বাবিদ্যালয়েল এক গবেষণা প্রমাণ করে দিয়েছে, আদা কোলন ক্যানসারের বাড়বৃদ্ধি ঠেকিয়ে রাখতে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে। শ্বাসকষ্ট বা কাশিজনিত যে কোনো সাধারণ সমস্যা প্রতিহত করতে পারে আদা। ফুসফুসে জমে থাকা মিউকাসকে সরিয়ে দিয়ে ফুসফুসের স্বাভাবিক স্ফীত প্রতিস্থাপনেও আদার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এর ফলে শ্বাসের সমস্যাও শরীর থেকে বিতাড়িত হয়।

জরায়ুর ক্যানসার সারাতে আদা অব্যর্থ ভূমিকা পালন করে। ক্যানসারের কোষগুলোও মেরে ফেলতে পারে আদা।

আদা শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও বেশি বাড়িয়ে দিতে পারে। দিনে এক টুকরো করে আদা খেলে তার প্রভাব হৃদযন্ত্রের আর্টারিতে জমে থাকা চর্বিজাতীয় উপাদান অপসৃত হয়।  ফলে স্ট্রোকের আশষ্কা কমে যায়। তাছাড়া পেটের ভেতরকার জীবাণুঘটিত সমস্যার সমাধানে আদা বেশ কার্যকরী। প্রায় পঁচাত্তর ভাগ ক্ষেত্রেই এ কাজে আদার সাফল্যের নজির মিলেছে। এছাড়া মনিং সিকনেস কাটাতেও আদার সাফল্য লক্ষণীয়। মূলত এসব কারণেই আয়ুর্বেদশাস্ত্র আদার ওষধি গুণকে যারপরনাই স্বীকৃতি দিয়েছে।

এসবের বাইরেও নিত্যদিনের প্রাত্যহিক গোলযোগ মেটাতেও ডাক পড়ে সেই আদার।

যেমন ধরুন, দুপুরে খাওয়ার আগে হয়তো পেট ভার। ভাত খাওয়ার আগে একটু তাজা আদার টুকরো খেয়ে ফেলুন। খানিক বাদে পেটের খিদে চাঙ্গা হয়ে উঠবে। আবার শরীরের অভ্যন্তরস্থ যে কোনো কাজকেই স্বাভাবিক রাখতে পারে আদা।

পেটের যেকোনো সমস্যায় কাজ দেয় আদা। সে গ্যাসট্রিক হোক বা পেটে খিঁচ ধরা। এক টুকরো আদাতেই বাজিমাত।

গা বমি-বমি ভাব হলে ছোট টুকরো আদা মুখে রাখলে শরীর ফের স্বাভাবিক হতে বাধ্য

অস্থিসন্ধির যন্ত্রণাতেও কাজ দেয় আদা। স্নানের জলের সঙ্গে আদার তেল মিশিয়ে স্নান করলে পেশি এবং অস্থি সতেজ, নির্ভার থাকে।

অপারেশনের ঠিক পরেই মাথা ঘুরতে পারে, গা বমি ভাব হতে পারে। এক টুকরো আদা চেবালেই সব যন্ত্রণার শান্তি।

সর্দি-কাশিতে গলা-নাক সব বন্ধ হয়ে গেলে আদা দেওয়া চা কিন্তু মন্ত্রের মতো কাজ করবে।

স্বামী-স্ত্রী স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনে শৈথিল্য দেখা দিলে এক বাটি স্যুপে আদা মিশিয়ে খাওয়া অভ্যেস করলে ফিরে আসবে পুরনো উষ্মতা।

তবে সব সময়ই বা শরীর সারাতে কেন! চেনা রান্নাঘরে অচেনা স্বাদ আনাতেও আদার বিকল্প নেই। যেমন ধরুন, বাসমতি চালের ভাত রান্না করলেন। পাশে খুব সুন্দর করে, পরিষ্কার করে ছোট্ট কুচি আদা, রসুন, সবুজ লষ্কা কেটে মিশিয়ে রাখুন। ভাতের পাত্রের মুখ খোলা মাত্র ওই ‍মিশ্রণ ভেতরে ঢেলে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। দেখবেন যা গন্ধ বেরিয়েছে, তাতে খিদে দ্বিগুণ হবে।

জ্যুসারের ভেতর পাতলা গ্রেট করা অল্প আদা, গাজর, আপেল আর পাতিলেবুর জ্যুস দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ইতাজা হবে।

খাবারের শেষ পাতের ডেজার্টেও গ্রেট করা আদা মিশিয়ে খেলে একেবারে অন্যরকম স্বাদ মিলবে।

আদা কতটা খাবেন? সত্যি, কোনো মাপ নেই কিন্তু। রান্নায় কতটা দেওয়া হয়, তার নির্দিষ্ট মাপ থাকে না। স্বাদ অনুযায়ী। আবার অল্প করে আদা এবং মধু মিশিয়ে দিনে অনেকবার খাওয়া যায়, ঠান্ডা লাগা সারাতে। একই কারণে দু’ টেবিল-চামচ ছড়ানো, ছোট কুচির আদা গরম জলে ফেলে খাওয়া চলে দিনে বার তিনেক। শুকনো কাশিতেও ছোট কুচি আদা মুখে রাখেন অনেকেই। আবার চায়েও আদা চলতে পারে। তাই একে এড়ানো যায় না। উচিতও নয়। শরীরে যতটা সহ্য হয়, ততটাই গ্রহণ করতে পারেন বিনা দ্বিধায়। এর উপকার বই অপকার নেই কিন্তু তবে হ্যাঁ, শরীর কতটা নিচ্ছে, সেটা আগে বুঝে নিন ভালো করে।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন