×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

ডায়াবেটিস পালাবে

প্রফেসর ডাঃঅরবিন্দ ভট্টাচার্য
2019-01-25 15:44:35

সারা পৃথিবীতে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলছে।আশংকার কথা, তুলনায় বেশি বাড়ছে ভারতেই।সব থেকে বড় কথা, প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে ডায়াবেটিস কখনও সারেনা।তবে নিয়ন্ত্রণে রেখে জীবনটা সুখেই কাটানো যায়।তবে কিছু স্পষ্ট ও বিজ্ঞান ভিত্তিক ধারনা থাকা দরকার।

আমাদের রক্তে নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রবাহিত শর্করা অথবা গ্লকোজই শরীরের শক্তির প্রধান উৎস।ইনসুলিন নামক এক প্রকার হরমোন বিপাক-বিভাজনের মাধ্যমে রক্তে শর্করা বা গ্লকোজের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা ধরে রাখে।স্বাভাবিকভাবে প্রতি ১০ মিলিলিটার রক্তে গ্লকোজের পরিমাণ থাকে ৮০ থেকে ১১০ মিলিগ্রাম। যেকোনও ভাবে ইনসুলিনের ঘাটতি হলে শর্করার বিপাক-বিভাজন এবং দহনে বিঘ্ন ঘটে। ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। এই মাত্রা একটা নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে যে জটিল রোগের সৃষ্ট হয়, তারই নাম ডায়াবেটিস।

এছাড়া এই রোগের সঙ্গে আরও কিছু তথ্য সম্পৃক্ত রয়েছে।জেনেটিক বা বংশগত কারণে এ রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভবনা আছে।স্বভাবতই পারিবারিক ইতিহাসের ও একটা যথেষ্ট ভূমিকা আছে। যারা স্থূলকায় এবং আয়েসী তাদের মধ্যে এরোগের প্রবণতা বেশি।এমনকী শ্বেতাঙ্গদের থেকে কৃষ্ণাঙ্গ দের মধ্যে এ রোগের সম্ভাবনা বেশি বলেও কেউ কেউ মনে করেন।

আবার গ্রাম থেকে শহরবাসীরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন বলেও অনুমান করা হয়।

অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যভাস এবং বেহিসেবী জীবন যাপনের সঙ্গেও এ রোগের সম্পর্ক রয়েছে।

মোটকথা, এ রোগ কাউকে ছেড়ে কথা বলেনা। গরিব-ধনী, স্ত্রী-পুরুষ সকলেরই এ রোগ হতে পারে।

আমাদের পেটের মধ্যে পাকস্থলির বা অগ্ন্যাশয়।এই অবস্থায় জোট বদ্ধ কোষ ‍দিয়ে তৈরি আইলেটস অফ ল্যানগারহানসের বিটা কোষ থেকে অতি প্রয়োজনীয় হরমোন ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। এই ইনসুলিনই রক্তে প্রবাহিত গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।কোন  কারণে অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি থেকে ইনসুলিন তৈরি না হলে, কিংবা কমক্ষরিত হলে অথবা ক্ষরিত ইনসুলিনের কর্মক্ষমতায় ঘাটতি হলেই ডায়বেটিস দেখা দেয়।তাই, এক কথায় বলা যেতে পারে,  এ রোগের মূল কারণই হল ইনসুলিনের ঘাটতি।এই আপেক্ষিক ঘাটতি মেটাতে ইনসুলিন বা কিছু ওষুধ যা ইনসুলিনের কর্মক্ষম বাড়ায়  ও নিঃসরণ সাহায্য করে, সেই সব ওষুধ প্রয়োগ করে এই রোগকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

শুধু বড়দের নয়, ডায়াবেটিস  হতে পারে শিশুদেরও। শিশুদের মধ্যে যে ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যায়, তার নাম জুভেনাইল ডায়াবেটিস বা ডাক্তারি মত অনুযায়ী টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস। এসব ক্ষেত্রে হয় অগ্ন্যাশয়ে বিটা কোষ তৈরি হয়নি অথবা ওই কোষ গুলো ভাইরাস বা ইমিউন প্রক্রিয়ায় নষ্ট হয়ে কোষগুলো তার কার্যক্ষমতা হারিয়েছে, এক্ষেত্রে একমাত্র ইনসুলিন ইনঞ্জেকশনে নির্ভর করেই রোগীকে আজীবন বেঁচে থাকতে হবে।তবে এই রোগীর সংখ্যা খুব কম। বলা যেতে পারে, মোট ডায়াবেটিস রোগীর মাত্র পাঁচ ভাগ এই রোগের শিকার।

আবার কুড়ি থেকে পঁচিশ বছরের নিচের বয়সীরাও এ রোগে  ভুগতে পারে। এতে এদের উচ্চ রক্তচাপ জনিত রোগ ভোগের সম্ভাবনা কম এবং মোটা হবার প্রবণতাও কম থাকে। তবে এদের চোখে এবং কিডনির জটিল রোগে আক্রান্ত হবার একটা সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই দরকার একেবারে প্রথমেই সচেতনতা। ডাক্তার বাবুর নির্দেশমতো  ইনসুলিন নেওয়া এবং সর্বোপরি  খাদ্যাভাসের সাহায্যেই এই  বিপদ এড়ানো যায়।

এছাড়া একটু বেশি বয়সে প্রায় চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশের কাছাকাছি সময় থেকে যে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে তার নাম টাইপ-টু  ডায়াবেটিস। মোট ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে অন্তত ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই ভোগেন এই রোগে। আমরা সাধারণত এই ধরনের ডায়াবেটিস কে বেশি দেখে থাকি। এক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ থেকে কোনও কারণে ইনসুলিন কম নিঃসৃত হয় বা তার কার্যকারিতায় ঘাটতি দেখা দেয়। এক্ষেত্রে ইনসুলিন ছাড়াও অন্য ওষুধ অর্থাৎ ওরাল হাইপো গ্লাইসেমিক এজেন্ট দিয়েও কাজ চালানো যায়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে অবশ্য ইনসুলিনের প্রয়োজন হতেই পারে।

কোনও কোনও গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে সাময়িক ভাবে ডায়াবেটিস দেখা দেয়।যার নাম জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস। এক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য একমাত্র ইনসুলিনই ভরসা। সন্তান জন্মাবার পর সাধারণত এই সমস্যা কমে যায়। তাই গর্ভস্থ অবস্থায় মহিলাদের বার বার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।

অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষের গন্ডগোল ছাড়া অন্য কোনও কারণে যেমন পিটুইটারি বা অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কিছু কিছু হরমোন নিঃসরণের তারতম্যের সঙ্গে এ রোগের সম্পর্ক রয়েছে। যেমন অ্যাক্রোমেগালি, কুশিংসিন্ড্রোম, হাইপার থাইরয়েডিজম ইত্যাদিতে এ রোগ দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত স্টেরয়েড খেলেও রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে।

ডায়াবেটিস উপসর্গ হাজির হয়েছে এ ধরনের সন্দেহ হলেই, এমনকী চল্লিশোর্ধ্ব সব মানুষেরই রক্তের শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা দরকার এবং প্রয়োজনমতো চিকিৎসা করাও জরুরি। বিশেষ করে যাদের পারিবারিক ইতিহাস আছে তাদের অবশ্যই বিশেষ ভাবে সতর্ক হতে হবে, সচেতন থাকতে হবে। তাই বছরে অন্তত একবার পরীক্ষা করা দরকার। সম্ভব হলে দু’-তিন বার করে নিলে আরও ভালো।

স্বাভাবিকভাবে খালি পেটে রক্ত পরীক্ষা করলে দেখা যাবে যে, প্রতি ১০০ মিলি লিটার রক্ত বা প্লাজমায় গ্লুকোজের পরিমাণ ১২৬ মিলি গ্রাম কম এবং ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাবার দু’ঘন্টা বাদে প্রতি ১০০ মিলি লিটার রক্ত বা প্লাজমায় তার পরিমাণ থাকবে ২০০ মিলি গ্রামের কম। তাই বেশি হলেই ডায়াবেটিস বলা হবে। ইদানিং প্রি- ডায়াবেটিক বলে একটা কথা চালু হয়েছে। যেখানে খালি পেটে ১০০মিলি লিটার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ১০০ থেকে ১২৫ মিলি গ্রামের মধ্যে এবং ৭৫ ভাগ গ্লুকোজ খাবার দু’ঘন্টা বাদে ১৫০ মিলিলিটার রক্তে প্লাজমা গ্লুকোজের পরিমাণ ১৪০ মিলিগ্রাম থেকে ১৯৯ মিলিগ্রামের মধ্যে ঘোরাঘুরি করে তাদেরই বলা হয় প্রি- ডায়াবেটিক। অর্থাৎ সতর্ক না হলে যেকোনও সময় এরা ডায়াবেটিসের শিকার হতে পারে। সব ক্ষেত্রেই ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মতো দেহের অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে, হিসেব কষে খাদ্য গ্রহণ করে এবং সুনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করে রক্তে চিনির মাত্রা কে স্বাভাবিক সীমার মধ্যে রাখতে হবে। তাছাড়া ডায়াবেটিস রোগীকে ঠিক মতো ওষুধও ব্যবহার করতে হবে।খালিপেটে রক্ত দেবার জন্য বারো ঘন্টা পেট খালি রেখে সকালে দিতে হবে। আর পোস্ট-প্রান্ডিয়াল (পিপি) রক্ত পরীক্ষার ক্ষেত্রে খালি পেটে ৭৫গ্রাম এনহাইড্রাস গ্লুকোজ এক গ্লাস জলে মিশিয়ে খাবার ঠিক দু’ঘন্টা বাদেই রক্ত দিতে হবে। এই দু’ঘন্টা সময়ের মধ্যে অন্য কিছু খাওয়া চলবেনা এবং ভারি পরিশ্রমের থেকেও বিরত থাকতে হবে। রক্তে গ্লুকোজ ছাড়াও ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন ও কোলেস্টেরল পরীক্ষা করে রাখা ভালো। যাদের ডায়াবেটিস হয়েছে তাদের প্রতিমাসেই অন্তত এক বার করে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত।

ডায়াবেটিস রোগীর নানা রকম উপসর্গ নিয়ে হাজির হতে পারেন।যেমন ধরুন, বারবার খিদে পাওয়া, বারবার জল তেষ্টা পাওয়া এবং বারবার প্রস্রাব হওয়া এই তিনটেই হচ্ছে মূল উপসর্গ।এছাড়া ক্রমশ ওজন কমে যাওয়া, পেটের গন্ডগোল, শারীরিক দুর্বলতা, স্নায়বিক দুর্বলতা, চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ঘোরা, যৌন-উচ্ছ্বাসে শিথিলতা, ঘা-ক্ষত-চুলকানি নিয়ে রোগী ভুগতে পারেন।কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনও উপসর্গই থাকেনা। সেক্ষেত্রে নিয়ম-মাফিক রক্ত পরীক্ষায় হঠাৎ রক্তে বর্ধিত গ্লুকোজের মাত্রা পরিলক্ষিত হয়।ডায়াবেটিস বা রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলেই আজীবন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা উচিত।যেহেতু এই রোগ একেবারে নির্মূল হয়না, তাই একে সুনিয়ন্ত্রিত করতে উপযুক্ত চিকিৎসা, শরীরচর্চা ও নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের  ওপর নির্ভর করতেই হবে।

রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক করার জন্য প্রধানত দুটো কাজ করতে হবে।প্রথমটি হল বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী দেহের ওজন ঠিক রাখা। দেহের ওজন বেশি হলে কম খাদ্য অর্থাৎ কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার খেয়ে এবং উপযুক্ত ব্যায়াম করে প্রথমে অবাঞ্ছিত মেদ কমাতে হবে।

দ্বিতীয়হল, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সঠিক সুষম খাদ্য হিসেব মতো খাওয়া।

আমরা প্রধানত তিন রকমের খাবার অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের ওপর নির্ভর করি। তার মধ্যে সিংহ ভাগ খাদ্যই আসে কার্বোহাইড্রেট থেকে।ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে খাদ্যের শতকরা প্রায় ৫০-৫৫ ভাগ আসবে কার্বোহাইড্রেট থেকে, প্রোটিন থেকে আসবে প্রায় ১৫ভাগ, আর২৫ভাগ আসবে ফ্যাট ও অন্যান্য খাদ্য থেকে। সারা দিনের চা-জলখাবার, ‍দুপুর এবং রাতের খাবার সব মিলিয়ে-মিশিয়েও যেন ওই নিয়মের ব্যতিক্রম না হয়।সব খাবারই আমাদের দেহে শক্তির জোগার দেয়, যা ক্যালোরি উৎপাদনের নিরিখে মাপা হয়।একজন মানুষ প্রতিদিন কত ক্যালোরি শক্তি খাদ্য থেকে গ্রহণ করবে তা নির্ভর করবে তার বয়স, দেহের উচ্চতা ও ওজন এবং প্রতিদিনের কাজের ধারার ওপর।একজন সাধরণ গৃহিণীর ১৫০০ক্যালোরি যুক্ত খাবার খেলেই চলবে। আবার একজন শ্রমজীবী মানুষের ক্ষেত্রে প্রায় ২৪০০ ক্যালোরি যুক্ত খাবার প্রতিদিন প্রয়োজন। অন্যদিকে মেদবহুল ব্যক্তির প্রতিদিন ১০০০-১২০০ ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়া নিরাপদ। তাই, সাধারণ ভাবে বলতে গেলে বলা হয় যারা কম পরিশ্রমের কাজ করেন তাদের প্রতি কেজি ওজনের জন্য প্রায় ৩০ ক্যালোরি এবং যারা খুব পরিশ্রমী তাদের প্রতি কেজি হিসেবে প্রায় ৫০ ক্যালোরি শক্তি উৎপাদনকারী খাবার দরকার। জানা গেছে, এক গ্রাম কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা থেকে প্রায় চার ক্যালোরি এবং এক গ্রাম ফ্যাট বা স্নেহজাতীয় খাদ্য থেকে নয় ক্যালোরি শক্তি উৎপাদিত হয়।

ভাত বা রুটি হজম করতে সময় লাগে। তাই এতে রক্তে শর্করার মাত্রাও বাড়ে ধীরে ধীরে। সুতারাং পছস্দ মতো ও হিসেব কষে ভাত ও রুটি খাওয়া চলবে। ডাল, ভাত, রুটি, সুজি, ছাতু  এসব খাবার ভাগ করে খেলেই হল।

প্রসঙ্গত জেনে রাখুন, আগে ধারণা ছিল, মাটির নিচে উৎপন্ন হয় এমন কোনও কিছু খাওয়া ঠিক নয়, কিন্তু এখনসেসব ধারণা পাল্টে গিয়েছে। তাই আলু, পিঁয়াজ,  আদা কোনওকিছুই এখন আর ব্রাত্য নয়।

অনেকে খুব বেশি মাত্রায় ফল খেতে ভালোবাসেন। তাদের বলা হচ্ছে শশার মতো কম ক্যালোরি যুক্ত ফল পেট ভরে খেতে পারেন। আর পছন্দমতো নানারকমের শাক-সবজি তো খেতেই পারেন।

সব ধরনের টাটকা মাছ খাওয়া চলতে পারে তবে চিংড়ি মাছ কম খাওয়া ভালো। রেড মিট খাওয়া নিরাপদ নয়। পরিবর্তে কম-ওজনের মুরগির মাংস খাওয়া চলবে। ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে মাঝে মধ্যে ডিম খাওয়া যেতে পারে।

একথা ভুললে কখনোই চলবে না যে ডায়াবেটিসের সঙ্গে হৃদযন্ত্র, রক্ত-সংবহনতন্ত্র, কিডনি, চামড়া, চোখ, স্নায়ুতন্ত্রের অনেক জটিল রোগের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সেসব কথা মাথাই রেখেই ধূমপান, মদ্যপান ও মাদকদ্রব্য সেবনের অভ্যাস দ্রুত ত্যাগ করা উচিত। দাঁত, চোখ, মুখ, হাত-পা সহ শরীরের বিভিন্ন অংশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যন্ত জরুরি।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে শরীরের ছোট ছোট সরু সরু রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

রক্তচাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদযন্ত্র ও কিডনির সমূহ ক্ষতি হতে পারে। ডায়াবেটিস চোখের রেটিনা ও নার্ভের ক্ষতি হতে পারে এবং অকালেই ছানি পড়তে পারে। স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতির জন্য শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ অসাড়তার সৃষ্টি হতে পারে। এ রোগে যে কোনও ধরনের ইনফেকশন বাড়ে।

তাই সবক্ষেত্রেই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক সীমার মধ্যে রাখতে হবে। রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে ‘ডায়াবেটিস কোমা’ এবং অতিরিক্ত কমে গেলে ‘হাইপোগ্লাইসেমিক কোমা’ নামক মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি কমে যাওয়াও তাই বিপজ্জনক। ইনসুলিন গ্রহণকারী রোগীদের তাই বেশিক্ষণ উপোস করে থাকতে নেই।

চিকিৎসার জন্য সর্বদাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।

বর্তমানে ইমিউনোথেরাপি, স্টেমথেরাপি, জিন থেরাপিও ভাবা হচ্ছে। শুধু কি তাই, চিকিৎসাবিজ্ঞানের যুগান্তকারী বিপ্লব এসেছে ডায়াবেটিস চিকিৎসায়। হ্যাঁ, এসে গেছে শল্য চিকিৎসা। প্যাংক্রিয়াটিক আইসোলেটস সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন (অগ্ন্যাশয়ের আইসোলেটস সেলের প্রতিস্থাপন) করেও চিকিৎসা করা হচ্ছে। এই শল্যচিকিৎসার ফলে ভবিষ্যতে আর ইনসুলিন বা ডায়াবেটিস সংক্রান্ত আর অন্য কোনও ওষুধ লাগবে না।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন ব্যায়ম অথবা শরীরচর্চার একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। নিয়মিত হাঁটা, সাইক্লিং অথবা সাঁতার। প্রতিদিন ঠিক একই সময়ে অন্তত ৩০ মিনিট থেকে ৪৫ মিনিট সাঁতার কাটুন। যোগব্যায়ামেরও একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। ব্যায়াম উচ্চরক্তচাপ কমায়, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, শরীরের চর্বি কমায় ও সব থেকে বড় কথা শরীর সতেজ, সুস্থ, ঝরঝরে তরতাজা রাখে।

সবশেষে বলি, নিয়ম মেনে ওষুধ ও খাবার খান, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, সিগারেট-বিড়ি, মদ একেবারে কমিয়ে দিন। নিয়মিত শরীরচর্চা করে দেহ ও মনকে সুস্থ রাখুন। দুশ্চিন্তা দূর করুন, মনকে রাখুন টেনশন-ফ্রি।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন