×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

অদল-বদল করে সবই খাবেন

ডা: অভিজিৎচন্দ (বিশিষ্ট এন্ডোক্রিনোলজিস্ট)
2019-01-25 15:50:13

একবিংশ শতাব্দীতে ডায়াবেটিস মহামারি হতে চলেছে।এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এইরোগ সম্পর্কে জনসচেতন গড়ে তোলার জন্য নিরলস চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকরা।এবং গণমাধ্যমের মানুষজন।একথা অনস্বীকার্য যে ডায়াবেটিসের সু-চিকিৎসায় ওষুধের মতোই সঠিক আহার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ।অথচ এ সম্বন্ধে সাধারণ মানুষ এখনো যথেষ্ট সচেতন নন।বিজ্ঞানের দ্রুত অগ্রগতির জন্য পুরনো দিনের চিন্তা ধারর অনেক পরিবর্তন এসেছে ঠিকই, তবে তা মানুষের কাছে এখনো পুরোপুরি পৌঁছয়নি।ফলে অনেকের মনেই সৃষ্টি হয়েছে অহেতুক ভয়।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে মানুষের প্রথমেই একটা হতাশা চলে আসে আর এর অন্যতম প্রধান কারণ এবুঝি ‘সব খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল’ মনে হওয়া।আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র যদিও এরকম কথা কোথাও বলেনি।ডায়াবেটিসে খাদ্যের মূলমন্ত্র হল পর্যাপ্ত ক্যালোরির খাদ্য খাওয়া এবং কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যান্টের পরিমাণ ঠিক রাখা।কোনো খাবারই সারা জীবনের মতো বর্জনীয় নয়।শুনলে অবাক লাগবে, সাধারণ সুষম আহারের সঙ্গে ডায়াবেটিসের আহারের খুব বেশি তফাত নেই।

প্রথমে আসি ক্যালোরি, অর্থাৎ খাবার থেকে কতটা এনার্জি আসবে তার কথায়।প্রধানত উচ্চতা, ওজন এবং সারাদিনের পরিশ্রম অনুযায়ী দৈনিক কতটা ক্যালোরির প্রয়োজন তা নির্ধারণ করা হয়।উচ্চতা অনুযায়ী দেহের ওজন যদি ঠিক থাকে তাহলে সারাদিনে যতটা ক্যালোরি ব্যয় হয় ততটুকু ক্যালোরির খাবারই খাওয়া উচিত। যাতে দেহের ওজনের বিশেষ হেরফের না হয়। যাদের দেহের ওজন বেশি তাদের ক্ষেত্রে প্রতিদিনের ক্যালোরি ব্যয়ের থেকে একটু কম ক্যালোরির খাবার খাওয়া উচিত যাতে করে প্রতিদিনই একটু করে ক্যালোরির ঘাটতি পড়ে।এর ফলে ধীরে ধীরে দেহের ওজন কমতে থাকে।যারা খুব রোগা, তাদের ওজন ফেরানোর জন্য প্রতিদিনের ক্যালোরি ব্যয়ের থেকে একটু বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।গর্ভাবস্থায় বা দুগ্ধ দান কালে মায়েদের কিছু বেশি ক্যালোরিরই প্রয়োজন হয়।

সারাদিনের খাবার থেকে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাট থেকে সঠিক পরিমাণ ক্যালোরি আসাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত সারাদিনের ক্যালোরির শতকরা পঞ্চাশ থেকে ষাট ভাগ কার্বোহাইড্রেট, কুড়ি ভাগ প্রোটিন এবং বাকিটা ফ্যাট থেকে আসা দরকার। আমাদের বাঙালিদের কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট প্রধানত আসে এই সব খাবার থেকে

  • কার্বোহাইড্রেট : ভাত, রুটি, ডাল, আলু, চিনি।

চার ক্যালোরি এনার্জি রয়েছে প্রতি গ্রাম কার্বোহাইড্রেটে।

  • প্রোটিন : মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল।

চার ক্যালোরি এনার্জি রয়েছে প্রতি গ্রাম ওজনে।

  • ফ্যাট : তেল, মাখন, ঘি।

নয় ক্যালোরি এনার্জি রয়েছে প্রতি গ্রাম ফ্যাটে।

তবে প্রায় সব খাবারেই কম-বেশি পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট তিন টি উপাদানই বর্তমান থাকে।

প্রথমে আসি কার্বোহাইড্রেটের কথায়।প্রধানত ভাত, রুটি, ডাল, মধু, ফল আমাদের কার্বোহাইড্রেট যোগায়।এক্ষেত্রে কতকগুলো ভ্রান্ত ধারণা ঠিক করেদেওয়া প্রয়োজন।

প্রথমে কথা হল ডায়াবেটিসে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম খাওয়া উচিত, একথাভুল। কারণ আগেই বলা হয়েছে সারা দিনের ক্যালোরির পঞ্চাশ থেকে ষাট শতাংশ আসে কার্বোহাইড্রেট থেকে। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মোট কত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট খাওয়া হচ্ছে সেটা তত গুরুত্বপূর্ণ নয়।ভাত, ফল ডায়াবেটিসে খাওয়া যাবেনা, একথাভুল।ভাত, রুটির মধ্যে ক্যালোরির বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই।তবে রুটির সুবিধেটা হল খাবার মাপঠিক রাখা সহজ এবং আটার রুটিতে ফাইবার বেশি থাকায় পেট পরিষ্কার থাকে এবং সগারের মাত্রা ঠিক রাখতে কিছু টা সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস রোগীরাও ফল (এমনকীমিষ্টিফলও), আলু খেতে পারেন।তবেকিছু খাবার যেমন, আলু, কলাইত্যাদিতেক্যালোরিরপরিমাণবেশি।অর্থাৎসমপরিমাণঢেঁড়স, কপি, বেগুন ইত্যাদি সবজিতে যা ক্যালোরি থাকে আলুতে তার থেকে অনেক বেশি রয়েছে। সেই অর্ধেক ক্যালোরি যুক্ত খাবার খেয়ে পেট ভরাতে গেলে সারাদিনের মোট ক্যালোরির পরিমাণ অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পায়। সেটা বাঞ্ছনীয় নয়।তেমনি পেয়ারা, আপেল, কমলা লেবুর থেকে কলায় ও আমে ক্যালোরি বেশি। তবে প্রতি দিনের ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বজায় রেখে এগুলো মাত্রা রেখে খেলে কোনো ক্ষতি নেই ।তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে মাত্রা বজায় রাখাটাই একান্ত প্রয়োজন। অর্থাৎ প্রতিদিনের খাবারের সঙ্গে কোনো দিন আম খেলে রোজগার খাবারের রুটিন থেকে কোনো একটা সমক্যালোরির কার্বোহাইড্রেটকে বাদ দিতে হবে।এর জন্য ‘ফুডএক্সচেঞ্জ’ ব্যাপারটা বোঝা দরকার।কোন খাবারের বদলে কতটা অন্য খাবার খেলে, প্রতিদিনের ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট ও প্রোটিনের মাপ বজায় রাখা যায়, এটাই জানায় ‘ফুডএক্সচেঞ্জ’ তালিকা। (এই রকম একটি তালিকা এইলেখার সঙ্গে দেখানো হয়েছে)। ফলের ব্যাপারে একটি অতিরিক্ত কথা জানাই।ফলের রসের থেকে গোটা ফল যেখানে খাওয়া যায়, সেটাই খাওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ, গোটাফল খেলে তার ফাইবারটাও খাওয়া হয়।

এবার আসছি প্রোটিনের কথায়।আমাদের খাবারের সাধারণত মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ ইত্যাদি থেকে আমরা প্রোটিন পাই। এসবের মধ্যে পাঁঠার মাংসে ক্যালোরি ও ফ্যাট বেশি। ফলে এধরনের মাংস এড়িয়ে চলাই ভালো। তবে একেবারে খাওয়া যাবেনা, এমন কোনো কথা নেই।মাছের ক্ষেত্রে বড়-ছোট দুই-ই খাওয়া চলে। মাছের তেলে বিশেষ একধরনের ফ্যাট থাকে (ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড), উপযুক্ত পরিমাণে যা শরীরের পক্ষে ভালো। রক্তে কোলেস্টেরল বেশি থাকলে ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে খাওয়া ভালো।দুধ খেলে স্কিমড মিল্ক (যে দুধ থেকে ক্রিম বার করে নেওয়া হয়েছে) খাওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।এতে খাবার ফ্যাটের পরিমাণ কমে।

এবার ফ্যাটের কথা।এটা আমরা মূলত রান্নার তেল, ঘি, মাখন, বাদাম ইত্যাদি থেকে পাই।ফ্যাট বেশি আছে এমন খাবার যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো।কারণ এই ধরনের খাবারে ক্যালোরির পরিমাণ অত্যধিক বেশি।দ্বিতীয়ত, যেসব খাবারে ফ্যাট বেশি আছে, সাধারণত সেইসব খাবার বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা থাকে।বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার বেশি পরিমাণে খেলে, ওজন বাড়ায় প্রবণতা দেখা যায় এবং শরীরে ফ্যাট যত বেশি হয়, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করা ততই মুশকিল হয়ে পড়ে।এছাড়া যাদের রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, তারা এসব খাবার যত কম খাবে ততই ভলো।আমাদের বাঙালিদের যা দেহের গড়ন তাতে গড়ে মাথা পিছু দিনে চারচা-চামচ তেল খাওয়া যেতে পারে।রান্নার তেল হিসাবে সমপরিমাণ রিফাইন্ড, সরিষা এবং সানফ্লাওয়ার তেল ব্যবহার করা ভালো।অল্প পরিমাণ ঘিও ব্যবহার করা যেতে পারে।

যেসব শাক সবজি ইচ্ছে মতো খাওয়া যেতে পারে, তা হল  করলা, বেগুন, কারিপাতা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, পিঁয়াজকলি, লাউ, শশা, ঢেঁড়স, ধনেপাতা, বরবটি, শিম, ডাঁটা, শালগম, ওলকপি, ধনেপাতা, লেটুস।

পরিশেষে নমুনা হিসেবে একটি চোদ্দশো ক্যালোরির খাদ্য তালিকা দেওয়া হল। এই খাদ্য তালিকায় যা খাবারের উল্লেখ আছে তার পরিবর্তে পছন্দ সই খাবারও বেছে নেওয়া যেতে পারে, ফুড এক্সচেঞ্জ তালিকা দেখে।তবে একটি সিরিয়ালের বদলে সমক্যালোরির আরেকটি সিরিয়াল, একটি ফলের বদলে সমক্যালোরির অন্যফল, এই ভাবেই খাবার বদলালে সারাদিনের মোটক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের অনুপাতের বিশেষ কোনো পরিবর্তন না করে, রুচি অনুযায়ী স্বাদ বদলানো যেতে পারে।

ভোরবেলা         : এক কাপ চা (চিনিছাড়া), মারি বিস্কুট, দুধ।

প্রাতরাশ           : তিন পিস পাঁউরুটি (মাঝারি), এক গ্লাস স্কিমড মিল্ক, একটা ডিম।

বেলা ১০-১২টা    : কলবার বরা (স্প্রাউটেডমুগডাল-পঞ্চাশগ্রাম)।

মধ্যাহ্নে            : পঁচাত্তর গ্রাম চালের ভাত, অর্ধেক বাটি ডাল, এক বাটি সবজি, মাছ-ষাট গ্রাম, টকদই পঞ্চাশ গ্রাম।

বিকেলে            : এক কাপ চা (চিনিছাড়া), দুটো মারি বিস্কুট, একটা ফল।

রাত্রে               : পঁচাত্তর গ্রামের ভাত বা মাঝারি সাইজের দু’-তিনটি রুটি, অর্ধেক বাটি ডাল, এক বাটি সবজি, মাছ ষাট গ্রাম, স্কিমড মিল্ক এক গ্লাস।

  • রান্নার তেল        : সারাদিনে তিন-চারচা-চামচ।
  • মদ্যপান এড়িয়ে চলাভালো।করলেও কখনোই অতিরিক্ত নয়।

  • সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন