×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

ডায়াবেটিক মেয়েরা তাহলে কি মা হবেন না

ডাঃ সবুজ সেনগুপ্ত (স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ; মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, চার্নক হসপিটাল)
2019-01-25 16:00:13

সমস্ত গর্ভাবস্থা ধরলে ২-৩শতাংশ ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের প্রকোপ দেখা যায়।এর মধ্যেপ্রায় ৯০% গর্ভাকালীন ডায়াবেটিস (যাকে চিকিৎসকেরা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বলে থাকেন যার শুধু গর্ভাবস্থাতেই আবির্ভাবহয়)।বাকি১০% প্রাক-গর্ভকালীন ডায়াবেটিস অর্থাৎ আগে থেকেই ডায়াবেটিসের রোগী ছিল গর্ভবতী। ইনসুলিনের আবিষ্কার হবার পর গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের কুপ্রভাবের চিত্রনাট্য দারুণভাবে বদলে গেছে।আবার এটাও বলতে হবে যে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের প্রকোপও বিশেষ করে এশিয়ান নারীদের মধ্যে প্রচন্ড বেড়ে গেছে।

গর্ভাবস্থায় শরীরে শর্করার বিপাক ক্রিয়াতে অনেক বদল লক্ষ করা গেছে।প্রথম আর প্রধান হচ্ছে ইনসুলিনকে কাজ করতে বাধা দেওয়া।মাতৃত্বের তৃতীয় সোপান (থার্ডট্রাইমেস্টার) গিয়ে শরীরের পেশিতে প্রায় ৫০% কমে যায় এই ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা।ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরন, প্রোল্যাক্টিন এই হরমোন গুলি বেড়ে যাওয়াতে হতে পারে এই বিপত্তি। শরীর এটা কে কবজ করার চেষ্টা করে প্যাংক্রিয়াস থেকে ইনসুলিনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়ে, আর রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রেখে। সঠিক ভাবে আয়ত্তে আনতেনা পারলেই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের আবির্ভাব হয়।

গর্ভের শিশুর কাছে সঠিক মাত্রায় শর্করা এবং বাকি দরকারি জিনিস প্লাসেন্টা দিয়ে শিশুর কাছে পৌঁছয়।কিন্তু বেশি মাত্রায় শর্করা প্লাসেন্টা দিয়ে শিশুর কাছে পৌঁছলেও ইনসুলিন কে প্লাসেন্টা আটকে দেয়।ফলশ্রুতি বেশি মাত্রায় শর্করা গিয়ে শিশুর প্যাংক্রিয়াস থেকে বেশি মাত্রায় ইনসুলিন বের করার জন্য দাবি করে।এর ফলে গর্ভস্থ শিশুর ওজন এবং আকৃতি অনেক বেশি বৃদ্ধি পায় (ম্যাক্রোসেমিয়া)

১৯৮৬ সালে এক মহিলা চিকিৎসক প্রিমিলা হোয়াইট এ নিয়ে যুগান্তকারী গবেষণা চালিয়ে গেছেন এবং সেটা আমেরিকান কলেজ অফ অবস্ট্রেকটিক্স ও গায়ানোকলজি অনুমোদনও করেছে।গর্ভকালীন ডায়াবেটিসকে তিনি অনেক ভাগে ভাগ করেছেন যেটা হোয়াইট ক্লাসিফেকেশন নামে খ্যাত।

নির্ণয়

প্রচন্ড তেষ্টা, প্রচুর খিদে এবং বারবার প্রস্রাবের ইচ্ছে হচ্ছে ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ।এর সাথে ওজন কমে যাওয়া আছে।এগুলোর সাথে রেনডম সুগার লেভেল (মানে যে অবস্থায় আছে সেভাবেই, না খেয়ে) যদি ২০০মিগ্রা/ডি.এল থাকে তবে লুকোনো ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নিতে হবে (আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন, ১৯৬১)।মাতৃত্বের প্রথম সোপান যদি রক্তে শর্করা বেশি থাকে। (হাইপার গ্লাইসিমিয়া) তাহলেও সেটা লুকানো ডায়াবেটিস বলে ধরতে হবে (ওভার্ট ডায়াবেটিস)।গর্ভাকালীন ডায়াবেটিস সাধারণত মাতৃত্বের শেষ দিকের ধাপে দেখা দেয়।

সন্দেহ

  • বয়স ৩৫ বছরের বেশি।
  • অত্যন্ত স্থূল দেহী গর্ভাবতী মা।
  • মা ও বাবা দু’জনেরেই ডায়াবেটিস।
  • গর্ভাস্থ শিশুর ওজন চার কেজি বা তারও বেশি।
  • আগের গর্ভে যদি প্রসবের ঠিক আগে বা হঠাৎ করে গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু হয়।

খালি পেটে রক্ত পরীক্ষায় শর্করার মাত্রা যদি ১১০ মিগ্রার অধিক আর ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার দু’ঘন্টা পরে রক্তে শর্করার পরিমাণ ১৪০মিগ্রার বেশি হলে সাধারণ ডায়াবেটিস হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

আমেরিকান কলেজ অফ অবস্ট্রেটিক্স ও গায়ানোকলজি (এ.সি.ও.জি) বলেছে, সব মহিলাকেই গর্ভাবস্থায় গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের জন্য পরীক্ষা করতেই হবে।

প্রাক গর্ভাকালীন ডায়াবেটিস

প্রায় চার দশক হতে চলল চিকিৎসকরা নিশ্চিত হয়ে গেছেন ডায়াবেটিস, মাতৃত্বের আগে এবং গর্ভাবস্থায় নিয়ন্ত্রণ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।বিকলাঙ্গ (জন্মগত) শিশুর প্রতিরোধ করতে হলে এটা খুব জরুরি।

ডায়াবেটিস মায়ের ওপর কতটা প্রভাব পড়ে

  • রেটিনোপ্যাথি : শর্করার মাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায় তবে খুব ভয়ের কিছু নেই।যাই হোক মাতৃত্বের শুরুতেই চক্ষু বিশেষজ্ঞ দিয়ে ভালো করে চক্ষু পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া দরকার।প্রলিফারেটিভ রেটিনোপ্যাথি নাথাকলে প্রতিটি ট্রাইমেস্টারে একবার পরীক্ষা করালেই চলবে। আর মোটামুটি বা বেশি প্রলিফারেটিভ রেটিনোপ্যাথি থাকলে বারবার পরীক্ষা করতে হবে।
  • নেফ্রোপ্যাথি : ডায়াবেটিক মায়ের যদি স্বাভাবিক (নর্মাল) মাতৃত্ব থাকে, যার কিডনি ভালোভাবে কাজ করছে, তার নেফ্রো প্যাথি হবার ভয় নেই।ডায়াবেটিক মাতৃত্বে বারবার ব্লাড প্রেসার, ক্রিয়েটিনিন লেভেল আর প্রস্রাবে অ্যালবুমিন দেখা অবশ্যই জরুরি।
  • নিউরোপ্যাথি : যে মায়ের আগে থেকেই নিউরোপ্যাথি ছিল ডায়াবেটিক মাতৃত্বে সেটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যেতে পারে।
  • কার্ডিওভাসকুলার : ডায়াবেটিস যার আছে তার যদি করোনারি আর্টারি জনিত কোনো অসুখ থাকে তবে মাতৃত্বের পক্ষে পা বাড়ানো নিষেধ।গর্ভাসঞ্চারের আগেই ইকোকার্ডিওগ্রাফি করে ভালো কার্ডিওলজিক্যাল চেকআপ করিয়ে নেওয়া উচিত।
  • হঠাৎ রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়া (হাইপারগ্লাসিমিয়া)।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের প্রভাব (মা’র ওপর)

  • সংক্রমণ : প্রস্রাবের সংক্রমণ, যোনিদ্বার সংক্রমণ এবং অন্যান্য সংক্রমণ হতে পারে।
  • মিস ক্যারেজ বা গর্ভপাতের পরিসংখ্যান বেড়ে যায়। যদি না ওষুধের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ না করা হয়।
  • হাত-পা ফুলে যাওয়া, প্রস্রাবে অ্যালবুমিন এবং রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া (প্রি এক্ল্যামশিয়া-১০-২০শতাংশ, স্বাভাবিক গর্ভে ৫-৮শতাংশ)।
  • সময়ের আগেই প্রসব বেদনা শুরু হওয়া।
  • হাইড্রালনিওস : জরায়ুর মধ্যে জলের পরিমাণ বেড়ে যায়।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের প্রভাব (শিশুর ওপর)

  • নিজে থেকে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়া (মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত) যা আগেও বলা হয়েছে।
  • বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দেওয়া।এই বিপত্তির পরিসংখ্যান প্রায় ৮গুণ বেশি স্বাভাবিক নন-ডায়াবেটিক মাতৃত্ব থেকে।এক্ষেত্রে যেসব অসুবিধা হতে পারে---                   
  • হার্ট ভেনট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট, হার্ট বড় হয়ে যাওয়া, শেয়ার্কটেশান অব এওর্টা, এ.এস.ডি ইত্যাদি। এছাড়া হতে পারে মস্তিষ্কের খুলি তৈরি না হওয়া (অ্যানেনকেফালি)।শিরদাঁড়ার হাড় জোড়া না লাগা।ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক হওয়া।কিডনির গোলমাল—হাইড্রোনেফ্রোসিস, কিডনি তৈরি না হওয়া।মলদ্বার তৈরি না হওয়া।একটি অ্যামবিলিক্যাল আর্টারি থাকা।
  • হাইপোগ্লাসিমিয়া : এটা জন্মাবার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই হতে পারে।বিশেষ করে বেশি ওজনের শিশুর ভয় তো আরও বেশি।
  • হাইপার বিলিরুবিনিমিয়া : হলদে হওয়া শিশু (জনডিস) নিয়ে বিব্রত শিশু চিকিৎসকদের অভিমত, সময়ের আগে জন্মালে, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এবং মায়ের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ না থাকলে এটা বেশি হতে পারে।
  • রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম :জন্মানোর পর শ্বাস কষ্ট ডায়াবেটিক মায়ের শিশুর ক্ষেত্রে, স্বাভাবিক মাতৃত্বের শিশুর চাইতে অনেক অনেক বেশি।
  • অতিরিক্ত ওজনের শিশু : ৩০% ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ওজনের শিশুর জন্ম হয় (চার কেজি বা তার বেশি ওজনের)।
  • প্রসবে বিপত্তি : স্বাভাবিক প্রসব বড় বাচ্চা হবার দরুন সহজে হতে চায়না।সিজারিয়ান ডেলিভারির পরিসংখ্যান তাই বেড়ে যায়।
  • গর্ভে শিশু মৃত্যুর হার বেশি।

চিকিৎসা

ঝুঁকির গর্ভ বলে রোগীকে বারবার পরীক্ষা করা হয়।রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রিত করার জন্য ইনসুলিন অত্যন্ত জরুরি।

বারবার আলট্রাসাউন্ড করা হয় দেখতে যে শিশুর জন্মগত কোনো ক্রুটি আছে কিনা।১৮ থেকে ২১ সপ্তাহের মধ্যে এ্যানোমেলি বা অ্যাবনর্মালিটি স্ক্যান খুব জরুরি।

ইনসুলিন দ্বারা সুনিন্ত্রিত ডায়াবেটিক মাতৃত্বে প্রসবের জন্য সম্ভাব্য তারিখের দু’সপ্তাহ আগেই ভর্তি করা উচিত।আর সুনিয়ন্ত্রিত না থাকলে নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আরও আগে ভর্তি করা উচিত।

অতিরিক্ত ওজনের শিশু (চার কেজির বেশি) থাকলে কখনো স্বাভাবিক প্রসবের ঝুঁকি না নিয়ে সিজারিয়ান প্রসবের চেষ্টা করা উচিত।আর সেটাও পরিকল্পিতভাবে সকালের দিকে (যাতে ভালোভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়) এবং শিশু চিকিৎসকের উপস্থিতিতে।সিজারিয়ানের সময় এপিডুরাল অ্যানাস্থেশিয়া বেশি বাঞ্ছনীয়।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন