×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনবেন না

ডাঃ ডি. কর
2019-01-25 16:34:33

সকালে মাঠে বা পার্কে যে সব মধ্যবয়সী বা বয়স্ক পুরুষ ও মহিলা নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণ করেন, তাদের প্রায় প্রত্যেকেই সুগার রোগী।ডায়াবেটিস এদের প্রত্যেককে  বাধ্য করেছে ভোরের শয্যা ত্যাগ করে মাঠে নামতে।আজকের দিনে সবাই প্রতি পদে যে পরিমাণ শারীরিক ও মানসিক চাপে থাকেন, তাতে বার্ধক্যে যদি কারো সুগার না থাকে, তিনি দারুণ সৌভাগ্যবান। পঞ্চাশ বছর বয়সের পর ডায়াবেটিস আজ যেন আমাদের সকলের সঙ্গী।আগাম সতর্ক করতে গিয়ে অনেকের মুখেই শুনেছি ‘এখনখাই, পঞ্চাশ হলেই তো সুগার হবে, তখন খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করব, হাঁটাহাঁটি করব, রোজ দু’বেলা ওষুধ খেয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেব’।কিন্তু যখন ডায়বেটিস ধরা পড়ে তখন এরাই প্রশ্ন করেন, ‘সত্যিই কি সারাজীবন ওষুধ খেয়ে কাটতে হবে? এই খরচ কমানোর কি কোনো উপায় নেই?’

ডায়বেটিস কী

আমাদের রক্তে সুগার বা শর্করার পরিমাণ নির্দিষ্ট মাত্রায় থেকে বেশি হলে বলা হয় ডায়বেটিস বোঝা যায়—বেশি খিদে পাবে, জলতৃষ্ণা বাড়বে এবং রাতে প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়বে।

ডায়বেটিস কেন হয়

খুব সহজে করে বললে ইনসুলিন নামক হরমোন রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। এই ইনসুলিন প্যাংক্রিয়াস থেকে নির্গত হয়। কোনো কারণে এই ইনসুলিনের পরিমাণ কমতে থকালে রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়তে থাকে, হয় ডায়বেটিস।অত্যধিক মানসিক চাপ বা টেনশন ইনসুলিন নিঃসরণ কমায়।

প্রকারভেদ

ডায়বেটিস কে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়—টাইপ-ওয়ান, টাইপ-টু ও জেস্টেশনাল ডায়বেটিস।টাইপ-ওয়ান ডায়বেটিস বা জুভেনাইল ডায়বেটিস চল্লিশ বছরের কম বয়সী লোকেরা এই ডায়বেটিসে আক্রান্ত হন।এক্ষেত্রে ইনসুলিন তৈরি হয়না।টাইপ-টুডায়বেটিস বয়স্ক লোকেদের হয়, এটাই অতি কমন ডায়বেটিস।এর নির্দিষ্ট কোনো কারণ পাওয়া যায় না।বংশগত কারণই এর মূল  কারণ।জেস্টেশনাল ডায়বেটিস অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় মহিলাদের ডায়বেটিস।

লক্ষণ

যে লক্ষণ গুলো আপনার মনে প্রথম সন্দেহ জাগাতে পারে সেগুলো হল প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, জলতৃষ্ণা ও খিদে বেড়ে যাওয়া।এক্ষেত্রে মিষ্টি বা মিষ্টিজাতীয় খাবারের প্রতি প্রবণতা বেড়ে যায়।সেই সঙ্গে বাড়ে শারীরিক দুর্বলতা ও অলসতা। ওজন কমতে থাকে।বমি ভাব, বমি, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দেখা দেয়। বিভিন্ন চর্মরোগের প্রবণতা বাড়তে থাকে।মানসিক ভাবে খিটখিটে হয়ে যান বা সহজেই রেগে যান।অনেক দিন ধরে সুগার বেশি হলে বাতের ব্যথা বাড়ে ও চোখের দৃষ্টি কমতে থাকে।

পরীক্ষা

সুগারের পরীক্ষার বিষয়টা সবার জানা।সকালে খালি পেটে (ফাস্টিং) ও ভাত খাবার দু’ঘন্টা পরে (পোস্টপ্যান্ডিয়াল)।এছাড়া করা হয় গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট, ইউরিন, HbA1c ইত্যাদি।

কুপ্রভাব

রক্তে দীর্ঘদিন ধরে সুগারের পরিমাণ বেশি থাকলে অনেক কুপ্রভাব পড়ে।ডায়বেটিসের এই জটিলতা মানুষকে ধীরে ধীরে শেষ করে দেয়।তাই সুগার কে বলা হয় সাইলেন্ট কিলার। এই কারণেই ডায়বেটিস ধরা পড়ার প্রথম দিন থেকেই ডাক্তাররা রোগীকে সতর্ক করতে থাকেন।অনেক রোগীই প্রথম দিকে ডায়বেটিসকে গুরুত্ব দেননা, খাওয়া-দাওয়া নিয়ম মেনে করেন না, নিয়মিত ওষুধ খান না।পরের দিকে এদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যায়।তখন লক্ষ্য লক্ষ্য  টাকা খরচ  করেও  কোনো লাভ হয়না।প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত যে ডায়বেটিস আস্তে আস্তে চোখ, কিডনি ও সমগ্র স্নায়ুতন্ত্র কে খারাপ করে দেয়।কাজেই  অনিয়ন্ত্রিত সুগারকে যেমন করে হোক নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে।না হলেই বিপদ।

আবার  বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েও বিপদ ঘটে।সেখানে সুগার বেশি কমে যেতে পারে, তখন রোগীর জীবন নিয়ে টানা টানি হয়।

সুগার  কমে কীভাবে

যারা অনেক দিন ধরে সুগারে ভুগছেন, তাদেরই হঠাৎ করে সুগার কমে যেতে পারে।হঠাৎ সুগার কমার মূল কারণ গুলো মনে রাখবেন।ওষুধ খেলেন বা ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিলেন অখচ খাবার খেতে দেরি করলেন, উপবাস চলাকালীন ওষুধ খেয়ে নিলেন।অত্যধিক পরিশ্রম করলে, ওষুধের মাত্রা বেশি হলে হঠাৎ করে সুগার কমে যেতে পারে।কিন্তু এক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ বেশি খেলেও সে ভয় থাকেনা।

সুগার কমার লক্ষণ

সুগার হঠাৎ করে স্বাভাবিকের থেকে কমতে থাকলে শরীর অবস্থিত করবে, দ্রুত ঘামতে থাকবে, ঠান্ডা ঘাম বেরোবে, মাথা ও শরীর  ঝিমঝিম করবে, মাথা ঘুরবে, খুব তাড়াতাড়ি জ্ঞান হারাবে।

কী করবেন

এমন অবস্থায় রোগী কে মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়াতে হবে, যেমন চিনি, গুড়, ক্যাডবেরি, গ্লুকোজ ইত্যাদি।আর রোগী যদি খাবার অবস্থায় না থাকেন তা হলে অতিশীঘ্র নিকটবর্তী হসপিটালে নিয়ে যাবেন।না হলে রোগীকে বাঁচানো  যাবেনা।মনে রাখবেন সুগার বাড়ে ধীরে  ধীরে, চিকিৎসার সময় ও সুযোগ পাওয়া যায়।কিন্তু সুগার কমে অতিদ্রুত, সামান্য সময় নষ্ট হলেই আর  চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া যাবেনা।

ডায়বেটিসে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা অত্যন্ত সন্তোষজনক। ‘হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ডায়বেটিস সারে’ এ কথা বলতে পারবনা তবে দেখা গেছে টাইপ-টু ডায়বেটিসে প্রথম থেকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করলে সুগার নরমাল হবার পর ওষুধনা খেয়েও অনেক বছর ভালো থাকা যায় যদি খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখেন। অনেক সময় দেখাযায় অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ বা ইনসুলিন নিয়েও সুগারস্বাভাবিক হয়না বা ওঠা-নামা করে, সেক্ষেত্রে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার সঙ্গে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সুগার কনট্রোল আনা যায়।তবে অভিজ্ঞাতা থেকে বলতে পারি, টাইপ-ওয়ান ডায়বেটিসে ইনসুলিনের ব্যবহার করা উচিত।সুগারের চিকিৎসা জটিল, কনস্টিটিউশনাল মেডিসিনের সঙ্গে থেরাপিউটিক মেডিসিন দিতেই হয়, না হলে সুগার কনট্রোল করা যায়না।থেরাপিউটিক মেডিসিনের মধ্যে সিজিয়ামজাম, শেফালেন্ডাচিরতা, ভিসকাম খুব ভালো কাজ করে।সুগারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় তিনটি কথা মনে রাখতে হবে—প্রথম থেকে সুগারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করলে প্যাক্রিয়াসের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে পারা যায়, ফলে চিকিৎসার শেষে রোগী ওষুধ ছাড়া অনেক দিন ভালো থাকেন।অনেক পুরনো রোগীদের প্যাংক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন তৈরি হয়না, আইলেট অফ ল্যাঙ্গারহেন্স নষ্ট হয়ে যায়, তখন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় কাজ হয়না, বাইরে থেকে হরমোন নিতেই হবে।সুগার ফল করলে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার চেষ্টা না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হসপিটালের জরুরি বিভাগে চলে যেতে হবে।

হোমিওপ্যাথিক ওষুধের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া কনট্রোল করতেই হবে।খুব সহজ ভাবে মনে রাখতে হবে—ভাত, রুটি, আলু, মিষ্টি পরিমাণে কম খেতে হবে। সবুজ শাক-সবজি, ডাল, মাছ, মুরগির মাংস, দুধ. দই, ছানা, পনির পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে।যাতে দুর্বল না হয়ে পড়েন।নচেৎ অন্যান্য রোগের আক্রমণ বেড়ে যাবে।কাজেই সুগার মানেই আপনাকে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা করতেই হবে এমন কথা নয়।অন্যান্য রোগের মতো সুগারের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করেও বহু রোগীকে সুস্থ রাখা সম্ভব।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন