×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

কাদের আছে স্ট্রোকের সম্ভাবনা

ডাঃ অরবিন্দ মুখার্জি (বিশিষ্ট নিউরোলজিস্ট, ক্যালকাটা হসপিটাল)
2019-01-25 17:14:47

ধমনীর মধ্যে দিয়ে রক্ত সব সময় মস্তিষ্কে পৌঁছয় কিন্তু সেই ধমনী বা তার শাখা-প্রশাখার কোনো গন্ডগোল হলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটে এবং স্ট্রোক হয়।

যখন মস্তিষ্কের অল্প জায়গা জুড়ে খুব কম সময়ের জন্য রক্ত সঞ্চালন ব্যন্দ্বহত হয় তখন তাকে ট্রান্সয়েন্ট ইসকিমিক অ্যাটাক বা টি.আই.এ বলে অর্থাৎ মিনি স্ট্রোক।

স্ট্রোকের কারণে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটে, কখনও বা দেহের একদিক প্যারালিসিস হয়ে যায়। আমাদের জীবনের নানা জটিলতা, চাপ, স্ট্রেস বিভিন্ন ধরনের রোগ-সহ স্ট্রোক হবার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে।

স্ট্রোক হবার পেছনে কতগুলো কারণকে দায়ী করা হয়, যেমন অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপান, হাই ব্লাডপ্রেসার, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ। কিছুক্ষেত্রে বংশগত কারণকে দায়ী করা হয়। এছাড়া অতিরিক্ত স্ট্রেস, টেনশন, জীবনযাত্রার ধরনও দায়ী।

কারণগুলোকে একটু বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে স্ট্রোক হবার পেছনে এরা কতখানি দায়ী। যেমন ব্লাডপ্রেসার। দীর্ঘদিন ধরে হাই ব্লাডপ্রেসারের সমস্যা ব্রেন স্ট্রোক হবার সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে। হাই-ব্লাডপ্রেসারের কারণে দু’ধরনের স্ট্রোক হয়, ইস্কিমিক এবং হেমোরেজিক।

মস্তিষ্কে রক্তে সরবরাহকারী ধমনীগুলোতে ক্লট হওয়ার কারণে যে স্ট্রোক হয় তাকে ইস্কিমিক স্ট্রোক বলে।

স্ট্রোকে যখন মস্তিষ্কের মধ্যে রক্তক্ষরণ হয় তখন তাকে ডাক্তারি পরিভাষায় হেমোরেজিক স্ট্রোক বলে।

হাই ব্লাডপ্রেসার ব্রেন স্ট্রোকের অন্যতম বড় কারণ। রক্তচাপ যত বাড়তে থাকে তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে ব্রেন স্ট্রোকের সম্ভাবনা। উচ্চরক্তচাপ বা হাইপারটেনশন যে কোনো মানুষের স্ট্রোক হবার সম্ভাবনাকে দু’শো কুড়ি শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।

তাই নিয়মিত ব্লাডপ্রেসার চেক-আপ করা এবং ওষুধ খাওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। কারণ হাইপারটেনশন স্ট্রোকের অন্যতম বড় কারণ।

একাধিক কেস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে বেশির ভাগ মানুষ বুঝতেই পারেন রা তার হাইপারটেনশন বা হাই ব্লাডপ্রেসারের সমস্যা আছে। যতক্ষণ না স্ট্রোক বা অন্য কোনো সমস্যা আসে। এমন অনেকে আছেন যারা হাইপারটেনশনের রোগী হয়েও নিয়মিত ডাক্তার দেখান না বা ব্লাডপ্রেসার কত আছে তা পরীক্ষা করে দেখেন না। ফলে স্বাভাবিক ভাবে তাদের মধ্যে স্ট্রোক হবার সম্ভাবনা অনেকখানি বেড়ে যায়।

ডায়বেটিস থাকলে সতর্ক হতে হবে। কোলেস্টেরলের সঙ্গে ডায়বেটিস থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই ডায়বেটিস রোগীদের সতর্ক থাকতে হবে। ডায়বেটিসের কারণে টি.আই.এ হতে পারে। এতে রোগীর হঠাৎ করে কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিটের জন্য ট্রানজিয়েন্ট ইস্কিমিক অ্যাটাক হতে পারে।

ব্লাডসুগার চেক করিয়ে নিয়মিত ওষুধের পাশাপাশি কীভাবে ব্লাডসুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সেটাও দেখা উচিত। নিয়মিত এক্সারসাইজ, হাঁটাচলা, দৌড়ানো এগুলো করতে হবে। অ্যারোবিক্স করা যেতে পারে, যোগ-প্রাণায়ম নিয়মিত করুন। নুন কম খাওয়া উচিত। ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করতে হবে। জাষ্কফুড খাওয়া বন্ধ করতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। অ্যালকোহল ও সুগারযুক্ত খাবার থেকে ট্রাইগ্লিসারাইড ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি হয় এবং ফ্যাটসেলগুলোতে জমা হয়। এই উপাদান শরীরে বেড়ে গেলেই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল গ্রহণ করলে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। বহু ধরনের ফ্যাট আছে যেগুলো বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। যেমন স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট ইত্যাদি।

বছরে একবার কোলেস্টেরলের অবস্থা জানতে লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করা উচিত। পাশাপাশি থাইরয়েড পরীক্ষাও দরকার।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ রাখতে প্রতিদিন ত্রিশ মিনিট জোরে জোরে হাঁটুন, অ্যারোবিক্স ও যোগা করুন। মদ খাবেন না এবং ধূমপান কোনো অবস্থাতেই চলবে না।

ব্রেন স্ট্রোকের কী কী লক্ষণ থাকে

ব্রেন স্ট্রোকের তেমন কোনো লক্ষণ নেই বললেই চলে। তবে কখনও স্ট্রোক হওয়ার আগে কিছু কিছু লক্ষণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। যদি দেখা যায় হঠাৎই রোগীর শরীরে একটা অংশে প্যারালিসিস হয়ে গেছে বা শরীরের কোনো অংশ যেমন হাত বা পা হঠাৎই অস্বাভাবিকভাবে ঝিনঝিন করছে তখন ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনার কথা মাথায় রাখতে হবে। অনেক সময় ব্রেন স্ট্রোক হবার আগে মাথা ও ঘাড়ে ব্যথা, মাথা ঘোরার মতো বহিঃপ্রকাশ হয়।

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে খুব কম ক্ষেত্রেই যেহেতু বুঝতে পারা যায় তাই সব সময় সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। যেমন রক্তচাপ বা প্রেসার সব সময় চেক করুন। ১৪০/৯০-এর বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। নিয়মিত ওষুধ খান। ওজন যাতে না বাড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। ফ্যাটযুক্ত খাবার ও কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে এমন খাবার এড়িয়ে চলুন।

নুন খাওয়ার পরিমাণে নজর দিন। নুন রক্তচাপের সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে। যারা বসে কাজ করেন তারা দিনে তিরিশ থেকে চল্লিশ মিনিট শরীরচর্চা করুন।

খাবার-দাবার

খুব সহজেই কারণগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে স্ট্রোক হবার সম্ভাবনাকে কমিয়ে ফেলা যায়। ডায়েটের ওপরও নজর দেওয়া প্রয়োজন। ভাজা খাবার, অতিরিক্ত নুন, মাত্রাতিরিক্ত তেল, পাঁঠার মাংস খাওয়া কমাতে হবে। ফল ও শাকসবজি বেশি করে খেতে হবে। সামুদ্রিক মাছ খাওয়া ভালো কারণ সামুদ্রিক মাছে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে তাই হৃদরোগ ও স্ট্রোকের সমস্যা কমিয়ে দেয়।

পরিবারে যদি হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কোনো ইতিহাস থাকে তাহলে অতিরিক্ত সতর্ক হওয়া উচিত নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে। তবে একেবারে ভীত হবারও কিছু নেই। বর্তমানে অনেক উন্নত ওষুধ বাজারে এসেছে যেগুলোর ব্যবহারে ব্লাডপ্রেসার, সুগার, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আর্টারির টোন ঠিক রাখার ওষুধও আছে। ফলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলতে পারলে স্ট্রোকের মতো অসুখ থেকে রক্ষা পাওয়া অনেকটাই সহজ।

কীভাবে ভালো থাকবেন

  • স্ট্রেস, টেনশন এবং হাইপারটেনশন থেকে দূরে থাকুন।
  • ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন।
  • ফ্যাটজাতীয় খাবার কম খান।
  • জীবনশৈলীতে পরিবর্তন আনুন।
  • নিয়মিত হাঁটুন ঘাম ঝরিয়ে।
  • শারীরিক কর্মকান্ডে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
  • প্রতিদিন সকালে যোগা ও প্রাণায়াম করুন।

  • সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন