টেনশন বাড়লেই বাড়ে রক্তচাপ
ডাঃ অমরনাথ মল্লিক
2019-01-28 10:16:56
সাধারণ রক্তচাপ সিস্টোলিক ১২০ ও ডায়াস্টোলিক ৮০ বা তার কম থাকে। প্রি-হাইপারটেনশনে সিস্টোলিক ১২০ থেকে ১৩৯ হয় ও ডায়াস্টোলিক ৮০ থেকে ৮৯ হয়ে থাকে। যাদের রক্তচাপ এই প্রি-হাইপারটেনশন পর্যায়ে থাকে তাদের কিন্তু সতর্ক হওয়ার দরকার। জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। যেমন নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস, নুন কম খাওয়া, বিশ্রাম ও রাতে পর্যাপ্ত ঘুম, অয়থা মানসিক উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।
উচ্চরক্তচাপ বা হাইপারটেনশন স্টেজ-ওয়ান বলা হয় যদি সিস্টোলিক প্রেসার ১৪০ থেকে ১৫৯ হয় ও ডায়াস্টোলিক প্রেসার ৯০ থেকে ৯৯ হয়। স্টেজ-টু বলা হয়, সিস্টোলিক ১৬০ বা তার বেশি ডায়াস্টোলিক ১০০ বা তার বেশি হলে।
উচ্চ রক্তচাপ শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্গান যেমন হার্ট, কিডনি প্রভৃতির ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে থাকে।
কারো যদি ডায়াবেটিস বা কিডনির অসুখ থাকে তাহলে রক্তচাপ ১৩০/৮০ মি.মি অফ মার্কারির কম রাখার দরকার হয়। ডায়াবেটিস বা কিডনির অসুখ না থাকলে রক্তচাপ ১৪০/৯০-র কম থাকলেই চলে।
অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের জন্য হাইপারটেনসিভ ক্রাইসিস দেখা যায়। হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে রোগীর মাথা ঘুরে যায়, অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, খিঁচুনি দেখা দিতে পারে বা স্ট্রোক হয়।
ডায়াস্টোলিক ব্লাডপ্রেসার ১২০ বা তার বেশি হয়ে গেলে সমস্যা হয় ও দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
সাধারণ উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের মধ্যে শতকরা নব্বই প্রাথমিক রক্তচাপ বা প্রাইমারি হাইপারটেনশন দেখা যায়। দশ শতাংশ ক্ষেত্রে অন্যান্য অসুস্থতাজনিত কারণে (যেমন কিডনির অসুখ ইত্যাদি) উচ্চ রক্তচাপ দেখা যায়। অনেক সময়ে উচ্চরক্তচাপের ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাবা-মায়ের উচ্চরক্তচাপ থাকলে ছেলেমেয়েদেরও উচ্চরক্তচাপ হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ জনিত বিপদ
- উচ্চ রক্তচাপ জনিত কারণে রেটিনার ক্ষতি হতে পারে। দেখতে অসুবিধে হয়। চোখের ভেতর হেমারেজ হতে পারে। দৃষ্টিহীণতা দেখা যায়।
- উচ্চ রক্তচাপের জন্যে কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়, ক্ষতি হয়। অনেক সময় প্রস্রাবে রক্ত দেখা যায়।
- উচ্চ রক্তচাপ জনিক কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। স্ট্রোক হয়। পক্ষাঘাত হতে পারে। হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে রোগী। মাথা ঘুরে অনেকে পড়ে যায়।
- ব্লাডপ্রেসার বেশি থাকার জন্য হার্টের ক্ষতি হয়, পালমোনারি ইডিমা, হার্ট অ্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হতে পারে।
উচ্চরক্তচাপ জনিত অসুস্থাকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। উপযুক্ত পরীক্ষা করে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরি।
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
- উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে নিয়মিত হাঁটা, হালকা ব্যায়াম করা দরকার।
- অতিরিক্ত নুন খাওয়া উচিত নয়। বেশি ঝালমশলা, ঘি-মশলা যুক্ত খাবার, অতিরিক্ত মাংস ইত্যাদি বর্জন করাই ভালো। পরিমিত আহার ও বিশ্রাম রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার ওষুধ খাওয়া দরকার। ওষুধ খেতে ভুল করলে চলবে না। নিয়মিত ওষুধ খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা উত্তেজনা কমানো দরকার। মানসিক উদ্বেগ, অশান্তি বা দুশ্চিন্তা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় ও সমস্যার সৃষ্টি করে। মানসিক উদ্বেগ, হতাশা, বিষণ্ণতা কাটানো দরকার।
- নেশা, বিশেষ করে সিগারেট, বিড়ি উচ্চরক্তচাপের পক্ষে ক্ষতিকারক। অতিরিক্ত মদ্যপানও ঠিক নয়।
- প্রতিদিন উপযুক্ত বিশ্রাম ও ঘুম প্রয়োজন। নিয়মিত যোগাভ্যাস করলে মানসিক শান্তি বজায় থাকে, ভালেঅ ঘুম হয়।
উদ্বেগ, অশান্তি রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। মনের প্রফুল্লতা উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। অতিরিক্ত টেনশন, রাত জেগে কাজকর্ম পরিহার করলে উপকার হয়। উচ্চরক্তচাপ থাকলে যেমন হঠাৎ মাথা ঘুরে যেতে পারে তেমনি উচ্চ রক্তচাপের রোগী বা বেশিক্ষণ বসে লিখলে বা কম্পিউটারে একভাবে কাজ করলে স্পান্ডাইলোসিস হতে পারে। তার জন্যেও ঘাড়ে, মাথায় যন্ত্রণা হতে পারে ও মাথা ঘুরে যেতে পারে। উচ্চরক্তচাপের রোগীদের স্ট্রোক থেকে বাঁচতে সাবধানতা নেওয়া খুবই জরুরি। অতিরিক্ত মাছ-মাংস খাওয়া, লবণযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া কখনোই উচিত নয়। ঘুম ও বিশ্রাম যেমন প্রয়োজন তেমনি প্রতিদিন আধঘন্টা হাঁটলে খুবই উপকার হয়। উচ্চরক্তচাপ কমাবার ওষুধ প্রতিদিন একই সময়ে খাওয়া দরকার। রোগী ও বাড়ির লোকজন সতর্ক হলে উচ্চরক্তচাপ জনিত অনেক সমস্যাই এড়ানো সম্ভব হয়।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন