নলজাত শিশুরা আপনার-আমার মতোই স্বাভাবিক
ডাঃ ঐন্দ্রী সান্যাল
2019-01-28 11:08:59
নলজাতকদের নিয়ে আমাদের আসীম কৌতূহল না, কৌতূহলের কিছুই নেই। ওরা ভিনগ্রহী নয়। আপনার-আমার মতো স্বাভাবিক সন্তান। কিন্তু কেন এভাবে পৃথিবীর আলো দেখে সে নিয়েই এই লেখায় আলোকপাত।
- আমার স্বামী-স্ত্রী কেরিয়ারমুখী হওয়ার কারণে বহু বছর বিয়ে হলেও সন্তান প্ল্যনিং করিনি। তবে গত এক বছর ব্যাপী আমরা ভীষণভাবে সন্তান চাইলেও স্বাভাবিক নিয়মে সন্তান না আসায় চিকিৎসক IVF করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু আই.ভি.এফ-এর সফলতার হার নিয়ে সংশয় থাকায় এগোতে পারছি না। কী করব?
IVF-এর সফলতার ক্ষেত্রে বয়স খুবই জরুরি বিষয়। মহিলার বয়স যদি ৩৫-৩৮ বছরের কম হয় তাহলে অনেকের ধারণা থাকে সন্তান সম্ভাবনার চান্স মাত্র ৩০ শতাংশ। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানান এক্ষেত্রে প্রেগনেন্সির সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। তবে চল্লিশ-ঊর্ধ্ব মহিলাদের ক্ষেত্রে সন্তান সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। বর্তমান আই.ভি.এফ-এর সফলতার হার বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বহু নতুন পদ্ধতি চলে এসেছে। যেমন Recombinant ইঞ্জেকশন, Mild Stimulation, Blastocyst, Laser As- sisted Hatching, PGS Embryoscopy, ERA প্রভৃতি। এই অত্যাধুনিক পদ্ধতিগুলি প্রয়োগ করে এখন আই.ভি.এফ-এর সফলতার হার ক্রমশ বাড়ছে।
- দীর্ঘ ৮ বছর বিয়ের পর একাধিকার চেষ্টা করা সত্ত্বেও স্বাভাবিক নিয়মে সন্তান না এলে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর পরামর্শে আই.ভি.এফ করানোর সিদ্ধান্ত নিই। তবে শুনেছি এক্ষেত্রে যমজ (টুইন) বা তার বেশি সংখ্যক সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই কি?
বছর খানেক আগেও এই সম্ভাবনা প্রবল থাকলেও এখন উন্নতমানের আই.ভি.এফ ল্যাবে সর্বাপেক্ষা দুটি, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটি এমব্রায়ো বা ভ্রূণের স্থানান্তকরণ ঘটানো হয়। ফলে যমজ সন্তানের সম্ভাবনা খুবই কম।
- আমার স্ত্রী উচ্চ রক্তচাপের রোগী। এরই সঙ্গে ওর জরায়ুর আকার সঠিক না হওয়ায় চিকিৎসক জানিয়েছেন ও কখনোই সন্তান ধারণ করতে পারবে না। এই কথা শোনার পর থেকে আমরা মানসিকভাবে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছি। আমাদের কি সন্তান দত্তক নেওয়া ছাড়া বিকল্প কোনও উপায় নেই?
অবশ্যই উপায় আছে, তবে সেটি একটু জটিল। বর্তমানে বহু সেলিব্রিটি দম্পতি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও সারোগেসির দিকে ঝুকঁকছেন। আপনারা সারোগেট মাদারের সাহায্যে আই.ভি.এফ পদ্ধতিতে সন্তান সুখ লাভ করতে পারেন। তবে সেই সারোগেট মাদার পরিবারের সদস্যও হতে পারেন, প্রয়োজনে সারোগেট ক্লিনিক থেকেও পছন্দ অনুযায়ী সারোগেট মাদার নিতে পারেন।
- বিয়ের বহু বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর সন্তান না আসায় চিকিৎসকের পরামর্শে আই.ভি.এফ করাই। তবে এক্ষেত্রেও একাধিকবার ইমপ্ল্যান্টেশন ফেলিওর হওয়ার দরুন আমার স্ত্রী মানসিক দিক দিয়ে খুবই ভেঙে পড়েছে। আমরা কি সন্তানলাভ থেকে চিরজীবন বঞ্চিত থাকব?
সাধারণত Repeated Implantation Failure (RIF)হলে চিকিৎসকেরা ERA করানোর পরামর্শ দেন। এর পুরো অর্থ হল Endometrial Receptivity Arry। এটি হল একপ্রকার পরীক্ষা যার সাহায্যে Windows of Implantation (WOI) নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ ঠিক কোন সময় এন্ডোমেট্রিয়ামে ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করলে প্রেগনেন্সি আসার সম্ভাবনা প্রবল থাকে তা জানা যায়। তাই আপনারা অযথা হতাশ না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে ERA টেস্টটি করিয়ে তবেই আই.ভি.এফ করান।
- শুনেছি IVF করালে নাকি পুরোপুরি বিশ্রামে থাকতে হয়। কিন্তু আমার স্ত্রী এক বহুজাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মচারী। তাই তার পক্ষে টানা ৯ মাস বিশ্রাম নেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমাদের করণীয় কী?
হ্যাঁ, এটা অনেকেরই ধারণা আছে যে, IVF করালে ভাবী মাকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হয়। কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। যখন মায়ের ইউটেরাসে বা জরায়ুতে এমব্রায়ো (ভ্রূণ) ইমপ্ল্যান্টেশন করা হয় সেই সময় কেবলমাত্র ১ সপ্তাহের একটু বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। একবার প্রেগনেন্সি এসে গেলে সাধারণ প্রেগন্যান্ট মহিলারা যেমন বিশ্রামে নেন এক্ষেত্রেও তা-ই নিতে হয়। বাড়তি বিশ্রামের কোনও প্রয়োজন নেই। তাই আপনার স্ত্রী নির্দ্বিধায় প্রেগনেন্সির সময় অফিস করতে পারেন, শুধু ভারী জিনিস তোলা বা ওই ধরনের কাজ যেন তিনি না করেন।
- আমার স্বামীর পর্যাপ্ত শুক্রাণু না থাকায় চিকিৎসক ডোনার ম্পার্মের মাধ্যমে IVF করানোর কথা বলেন। কিন্তু এ ব্যাপারে আমার স্বামী নিমরাজি। এছাড়া কি অন্য কোনও উপায় নেই?
এক্ষেত্রে আপনার স্বামীর টেস্টিসের ডাক্টে যদি ব্লক থাকে তাহলে সেটি সার্জারি করিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। এছাড়া টেসা ইকসি পদ্ধতিতে নিজস্ব স্পার্ম বা শুক্রাণু দিয়েই IVF করা সম্ভব, এক্ষেত্রে ডোনারের প্রয়োজন পড়ে না। তবে পদ্ধতিটি কিছুটা খরচ সাপেক্ষ।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন