কসমেটিক থেরাপি ও প্লাস্টিক সার্জারিতে বদলে ফেলুন নিজেকে
ডাঃ অরিন্দম সরকার
2019-01-28 11:15:57
আজ থেকে সাড়ে তিন হাজার বছর আগেও শুশ্রূতই ছিলেন এর জনক। তিনি তার শুশ্রত সংহিতায় যে বর্ণনা করেছেন আজও সেই পদ্ধতিই যে বর্ণনা করেছেন আজও সেই পদ্ধতিই সর্বাধিক প্রচলিত।
এই পদ্ধতিতে তিনি কপালের চামড়া কেটে নাকে ব্যবহার করার কথা বলেছেন। আজও প্লাস্টিক সার্জারিতে কোনো অঙ্গের ক্রটি দূর করবার জন্য ক্রটিপূর্ণ জায়গার কাছাকাছি অংশ থেকে প্রয়োজনীয় টিস্যু সংগ্রহ করে নিয়ে ওইখানে বসানো হয়। এটি একটি স্থায়ী পদ্ধতি।
অস্ত্রোপচারের পর অস্ত্রোপচারের কোনো দাগ থাকে না।
আমরা প্লাস্টিক সার্জারি ও কসমেটিক সার্জারিকে আলাদা অর্থে ব্যবহার করি ঠিকই কিন্তু কসমেটিক সার্জারি প্লাস্টিক সার্জারিরই একটি অংশ।
প্লাস্টিক সার্জারির সাহায্যে বড় হাঁ-গালকে ছোট করা কিংবা হাসির স্টাইলের পরিবর্তন, গোল মুখকে লম্বা করাও সম্ভব। এই পদ্ধতির সাহায্যে চেহারায় উল্লেখ্যযোগ্য পরিবর্তন আনা সম্ভব কিন্তু বিখ্যাত কোনো মানুষের রূপের আদল আনা সম্ভব নয়।
দেহের অতিরিক্ত মেদ কমাতে লাইপোসাকশন করা হয় প্লাস্টিক সার্জারির সাহায্যে। এই পদ্ধতিতে চিবুক থেকে শুরু করে মুখ, ঘাড়, কোমর, হাত-পা গলা প্রভৃতি বিভিন্ন জায়গার মেদ কমানো যায়। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে মেদ ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে না।
এই পদ্ধতির জন্য বড়সড় কোনো কাটাছেঁড়া করার দরকার নেই। চামড়ায় ছোট একটি ফুটো করে সেখান দিয়ে অতিরিক্ত চর্বি বার করে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতি প্রয়োগর জন্য হাসপাতালে বা নার্সিংহোমে থাকার দরকার নেই। মেদ অপসারণের দু’-তিন দিন পরেই রোগী তার স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন। কোনো অসুবিধে হয় না।
মেদ অপসারণের মতো হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্টও আজকাল খুব জনপ্রিয় হয়েছে। টাক পড়লে সহজেই কসমেটোলজিস্ট ও প্লাস্টিক সার্জেনরা মাথার পেছন থেকে চুল তুলে এনে মাথার টাক পড়া অংশে লাগিয়ে দেন। এই পদ্ধতির জন্যস্থানীয়ভাবে অবশ করা হয় বটে তবে অজ্ঞান করার প্রেয়োজন পড়ে না। হেয়ার গ্রাফটিং করতে সাধারণত তিন থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। টাকে কতটা চুল বসবে তার ওপর নির্ভর করে খরচের হিসেব হয়।
মেয়েদের মুখে অনেক সময় দাড়ি-গোঁফ গজাতে দেখা যায়। এছাড়া অবাঞ্ছিত রোমও দেখা যায়। এগুলোকে সহজেই নির্মূল করা হয় কসমেটিক থেরাপির সাহায্যে।
কসমেটিক সার্জারির সাহায্যে মহিলাদের বক্ষসৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়। অনেক মহিলার স্তনগ্রন্থি ছোট স্তসগ্রন্থি বড় থাকার কারণে খুব বড় হয়ে ঝুলে পড়ে নীচের দিকে। কসমেটিক সার্জারির সাহায্যে স্বাভাবিক আকৃতিতে সহজেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব এবং খরচও বেশি নয়। এছাড়া আকর্ষণীয় সৌন্দর্যপ্রাপ্তি একটি বড় ব্যাপার।
পুড়ে গিয়ে দেহের বিভিন্ন অংশে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয় অনেক সময়ই প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে তা সম্পূর্ণ ঠিক করা সম্ভব। জন্মগত নানা ক্রটিও এভাবে সহজেই সারিয়ে ফেলা যায়।
গ্ল্যামার মানেই তো সুচিত্রা সেন, এলিজাবেথ টেলর তা তো নয়, গ্ল্যামারাস তো প্রণয় রায়কেও বলা চলে।
আপনার নিজের গ্ল্যামারও কি কম? কখনও কি দেখেছেন আয়নার নিজেকে?
আসলে প্রতিদিনের রূপচর্চাই আপনার গ্ল্যামার ধরে রাখে। কিন্তু অনেক সময় নানা কারণে হারিয়ে যাওয়া গ্ল্যামার ফিরিয়ে দিতে কসমেটোলজিস্টের পরামর্শের প্রয়োজন পড়ে।
যেমন কারো মুখে অভিশাপের মতো এটে বসে আছে মেচেতার ছোপ। বহু ওষুধেও লাভ হয়নি। এক্ষেত্রে ফলদায়ক হতে পারে কেমিক্যাল পিলিং, ট্রাই ক্লোরোঅ্যাসেটিক অ্যাসিড বা গ্লাইকোলিক অ্যাসিড পিলিং, সঙ্গে সানস্ক্রিন।
অথবা কারো মুখে ব্রণ, বসন্ত থেকে হওয়া দাগে ক্ষতবিক্ষত কিংবা গর্ত। এতে হতাশ হবার কিছু নেই। বেশ কয়েকটি পদ্ধতির সাহায্যে এগুলোকে সহজেই সরিয়ে ফেলা সম্ভব।
সাবসেশন পদ্ধতিতে একটি বিশেষ ধরনের ত্রিফলা বিশিষ্ট নিডল দিয়ে ডার্মিসের নিচের স্কার টিস্যুগুলোকে কাটা হয় ফলে আটকে থাকা ত্বক কিছুটা উঠে আসে। গর্ত ভরাট হয় প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই।
পাঞ্চ টেকনিকস: একটি ছোট বৃত্তাকার পাঞ্চ ইন্সট্রুমেন্ট দিয়ে স্কারের গর্তটিকে ঘিরে ফেলে কেটে দেওয়া হয়। তারপর জুড়ে দেওয়া যেতে পারে। পাঞ্চ ফ্লোটিং পদ্ধতিতে ওই অবস্থায় রেখে দেওয়া যেতে পারে অথবা ওই স্কারটিকে বাদ দিয়ে নতুন একটি বৃত্তাকার গ্রাফট দিয়ে গর্তটিকে ভরে দেওয়া যেতে পারে।
ডার্মাব্রেশন : একটি স্বাতঃঘর্ণূায়ন যন্ত্র দিয়ে ঘষে তুলে ফেলা হয় ত্বকের অবাঞ্ছিত দাগ, এরপর নতুন ত্বক তৈরি হয় সেখানে।
শ্বেতী : বিভিন্ন রকম গ্রাফটিং প্রক্রিয়ায় বিশেষ করে পাঞ্চ গ্রাফটিং পদ্ধতিতে সত্যিই সারিয়ে ফেলা সম্ভব।
এছাড়াও আছে ইলেকট্রোসার্জারি। অবাঞ্ছিত তিল, জড়ুল, আঁচিল অথবা মহিলাদের মুখের অনাকাঙ্খিত লোম প্রভৃতির ক্ষেত্রে অব্যর্থ হতে পারে এ পদ্ধতিটি। তাই নিজের সৌন্দরর্য বাড়াতে কসমেটিক ও প্লাস্টিক সার্জনদের সাহায্য নিয়ে নিজেকে সহজে সুন্দরী ও গ্ল্যামারাস করে তুলতেই পারেন। বিশেষ করে সামনেই বাঙালির সব থেকে বড় উৎসব শারদীয় পুজো। এই সময়ই তো চাই সুন্দর থাকা, সুন্দর হয়ে ওঠা।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন